19/08/2025
মো রবিউল হোসেন
তারিখ ১৮/০৮/২০২৫
গল্প: রক্তের দামে টাকা
গ্রামের নাম ছিল চাঁদপুর। আগে এই গ্রামে রক্তের টান ছিল সবকিছুর ওপরে—ভাই ভাইয়ের পাশে, মামা ভাগ্নের রক্তে মিল, প্রতিবেশী যেন পরিবার। কিন্তু সময় বদলেছে, আর এখন বদলে গেছে মানুষের টানও।
চৌধুরী বাবু একসময় গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। মানুষ বলত, “চৌধুরীবাবুর একটা কথা মানে গ্রামের আইন।” তিন ছেলে, দুই মেয়ে—সবাই শহরে। চৌধুরীবাবু ও তাঁর স্ত্রী বটতলার পুরনো বাড়িতে থাকেন। একসময় পরিবার একসাথে থাকত, আজ তাঁদের জীবনের অংশ কেবল ফোনের স্ক্রিনে সীমাবদ্ধ।
একদিন চৌধুরী বাবু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তার বলল—হার্টের অবস্থা ভালো না। শহরে বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। স্ত্রী ছুটে ফোন করলেন তিন ছেলেকে।
প্রথম ছেলে বলল,
—“বাবার চিকিৎসা তো করতেই হবে, কিন্তু আমার ব্যবসার লোন চলছে মা, এখন টানাটানি।”
দ্বিতীয় ছেলে,
—“আমি তো নতুন জবে ডুকলাম মা, তবে আমার কাছে ১০০০/ টাকা আছে এটা পাটাবো কি মা, মা বললো ওটাতে কিছু হবে না আচ্ছা আমি দেখি কি করা যায় ।”
তৃতীয় ছেলে,
—“আমার ছোট বাচ্চার স্কুল ভর্তি, বাবার চিকিৎসার খরচ খুব বেশি পড়বে। এত টাকা আমার পক্ষে এখন দেওয়া কঠিন।”
বৃদ্ধা মা ফোন নামিয়ে চুপচাপ বসে থাকলেন।
পাশের বাড়ির রিকশাওয়ালা জয়নাল খবর পেয়ে নিজের জমানো দশ হাজার টাকা হাতে নিয়ে এল। বলল,
—“চাচা, ছোটবেলায় আপনি আমার মায়ের চিকিৎসার খরচ দিয়েছিলেন, মনে আছে? আজ আমার পালা।”
গ্রামের আরও কয়েকজন এগিয়ে এল। শহরে ভর্তি হলেন চৌধুরী বাবুর। গ্রামে থেকেও অচেনা হয়ে যাওয়া সেই মানুষগুলো আবার মানুষ হয়ে উঠল।
তিন ছেলে হাসপাতালের বিল শুনে একদিন এল, চোখ বড় বড় করে বলে উঠল,
—“কে দিল এত টাকা?”
বৃদ্ধ হেসে বললেন,
—“টাকা রক্তের ছেলেরা দেয়নি, হৃদয়ের ছেলেরা দিয়েছে।”
মনে রাখতে হবে ---
আজকের দিনে অনেক সময় রক্তের সম্পর্ক পেছনে পড়ে যায়, আর টাকার টান হয়ে ওঠে সবকিছুর মূল। কিন্তু মানুষ যদি চায়, হৃদয়ের টান দিয়ে আবারও সম্পর্কের মান ফিরিয়ে আনতে পারে।