18/11/2024
পুলিশের ওপর আস্থা ফেরেনি, প্রত্যাশা অনেক
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পার হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি। একেবারে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে তিন মাসের মাথায় দৃশ্যমান উন্নতি হলেও পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা এখনো ফেরেনি। উপরন্তু মানুষের প্রত্যাশ্য বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের একটা অংশ এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ফলে পুলিশি কার্যক্রমে গতি কিছুটা বাড়লেও বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ফেরানো এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে।
অক্টোবর–নভেম্বর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলেও বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদস্যদের অনেকে এখনো মামলার ভয়ে আছেন। আবার বিভিন্ন স্থানে নতুন পদায়ন হওয়া মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বা সদস্যদের অনেকে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। যেমন ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অর্ধেকের বেশি নতুন মুখ। আভিযানিক দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কনস্টেবলদের অনেকে আছেন, যাঁরা ঢাকার এলাকাগুলো এখনো ভালোভাবে চেনেন না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বিষয়টি স্বীকার করে ৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ঢাকার প্রায় সব পুলিশকে আমরা পরিবর্তন করছি। তাদের কিন্তু অলিগলি চিনতেও সময় লাগবে। তাদের ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক করতে সময় লাগবে।’
আবার বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও রেঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেসব কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বড় অংশ বিগত সরকারের আমলে পদবঞ্চিত। তাঁদের দীর্ঘদিন ‘অপারেশনাল’ কার্যক্রমের বাইরে রেখেছিল সাবেক সরকার। তাঁদের অনেকেই এলাকাভিত্তিক অপরাধ ও অপরাধীদের ধরন এবং কার্যপরিধি ও এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি।
পুলিশি কার্যক্রমে গতি ফেরাতে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থার সংকটকে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। তাঁরা বলছেন, ১৫ বছর ধরে পুলিশকে দলীয় পেটোয়া বাহিনীর মতো ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা সরকার। সর্বশেষ জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ১০০ দিন পার হলেও মানুষের মনে পুলিশ সম্পর্কে এখনো নেতিবাচক ধারণা রয়ে গেছে। অনেকে এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা করছেন। কারও কারও মধ্যে পুলিশের বৈধ নির্দেশনা না মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি দৃশ্যমান। মামলা–জরিমানা করেও যানবাহনকে শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন
সরকারের ১০০ দিন: কথা বলার স্বাধীনতা আর যেন না হারায়
১৫ নভেম্বর ২০২৪
সরকারের ১০০ দিন: কথা বলার স্বাধীনতা আর যেন না হারায়
আবার বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও রেঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেসব কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বড় অংশ বিগত সরকারের আমলে পদবঞ্চিত। তাঁদের দীর্ঘদিন ‘অপারেশনাল’ কার্যক্রমের বাইরে রেখেছিল সাবেক সরকার। তাঁদের অনেকেই এলাকাভিত্তিক অপরাধ ও অপরাধীদের ধরন এবং কার্যপরিধি ও এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি।
এ ছাড়া ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন–পরবর্তী গণরোষের মুখে পড়ে বিপর্যস্ত পুলিশকে সাহস জুগিয়ে উজ্জীবিত করার জন্য দক্ষ নেতৃত্বেরও ঘাটতি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর সঙ্গে রয়েছে পছন্দের লোককে গুরুত্বপূর্ণ পদে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন পক্ষের তৎপরতা। এটা করতে গিয়ে পেশাদার কর্মকর্তাদের অনেককে বিগত সরকারের দোসর বা সুবিধাভোগী তকমা দিয়ে কোণঠাসা করার অভিযোগও রয়েছে। এমন তকমার কারণে আগের সরকারের সময়ে বঞ্চিত হওয়া সত্ত্বেও কারও কারও প্রত্যাশিত পদোন্নতি-পদায়ন আটকে গেছে বলে জানা গেছে।