23/11/2025
বেফাঁস বক্তব্য দিয়ে তোপের মুখে জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী
আশরাফ আহমেদ, চট্টগ্রামঃ
বেফাঁস বক্তব্য দিয়ে দলের ভেতর বাইরে প্রবল তোপের মুখে পড়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। স্বয়ং জামায়াতে ইসলামীর আমির ড, শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে তার দেয়া বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দল থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের কথা শোনা যচ্ছে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যটি ভাইরাল হয়েছে। নেটিজনরাও তাকে তুলোধুনা করে ছাড়ছেন। তার এই বক্তব্য জামায়াতের একটি অংশ সহজভাবে গ্রহন করেননি। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীও শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে এটি তার একান্ত নিজের মতামত বলে বিবৃতি দিয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের চট্টগ্রামের নির্বাচনি দায়িত্বশীলদের সমাবেশে ছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে শাহজাহান চৌধুরী ভরা মজলিশে বলেন,"প্রশাসনের যারা আছে, তাদের অবশ্যই আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে। আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা দেবে। পুলিশ আপনার পিছনে পিছনে হাঁটতে হবে... আপনাকে প্রটোকল দেবে"।
এ সময় কেন্দ্রীয় এক নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশ আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম সকাল বেলায় জেনে নেবে, আর আপনাকে প্রোটোকল দেবে। টিএনও (ইউএনও) সাহেব যা উন্নয়ন এসেছে, সমস্ত উন্নয়নের হিসেব যিনি নমিনি (জামায়াতের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী) তার থেকে খুঁজে বের করতে হবে।
তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দলে ভেতর বাইরে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দলের ভেতর থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তার এ বক্তব্য নিজস্ব এবং এক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রামের জোনের প্রধান মুহাম্মদ শাহজাহান।
রোববার (২৩ নভেম্বর) এক প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বক্তব্যটি আমরা দেখেছি। এটা একান্তই উনার বক্তব্য। এটার ব্যাখ্যা উনি ভালো দিতে পারবেন। তার এই বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ ঘটনায় আমরা অভ্যন্তরীণভাবেও আমাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তবে নিজের এই বক্তব্য নিয়ে ভিন্নমত পোষন করেছেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি রোববার বলেন, দায়িত্বশীল সমাবেশে মানবিক নেতা ড. শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে আমি যে বক্তব্যটি রেখেছি- সেটা আমাদের টোটাল প্রশাসন আমাদের দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে কাজ করবে এবং আমাদের দেশের বর্তমান ইন্টেরিম গভমেন্টের অধীনে দেশের স্বার্থে পুলিশদেরকে কাজ করতে হবে। আমি এটি বোঝাতে চেয়েছিলাম। আমার এই বক্তব্যকে খন্ডিত করে প্রচার করে একটি পক্ষ ফ্যাসিস্টদের সহযোগিতা ও উস্কানি দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
অনেকেই বলছেন সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় শাহজাহান চৌধুরীর ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড নাখোশ । সম্প্রতি নগরীর জামাল খান সড়কে বাম ছাত্র সংগঠনের জামায়াত বিরোধী মিছিলে জামায়াত কর্মী আকাশের এক নারী কর্মীকে লাথি মারার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই জামায়াত কর্মী শাহজাহান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
তার আগে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা এবং আহলে সুন্নাত জামাতের অনুসারীদের নিয়ে অপতথ্য দিয়ে বক্তৃতা করে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে।
এছাড়া নগরীর বির্জা খালের সংস্কার নিয়ে চসিক,মেয়র ডা.শাহাদাত হোসেনের সাথেও বাকবিতন্ডায় জড়িযে পড়েন।
এদিকে শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানের বেশ আলোচনা হচ্ছে।
এম এইচ তামিম লিখেছেন,নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেয়া শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী বটফোর্সদের সমালোচনার ঝড়।
তিনি বরাবরের মতোই ভারতীয় আধিপত্য এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। গতকালের একটি বক্তব্যের কিছু অংশ কাট করে মিডিয়ায় সরগরম চলছে। তিনি বলেছেন প্রশাসনকে আমাদের কথায় উঠতে বসতে হবে।
নুরুল আলম রানা লিখেছেন,দেশটাতো জামাতের বাপ দাদার। এরা নাকি দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। এদের মধ্যে এখনো রাজাকারে চরিত্র বিদ্যমান। আল্লাহ ওদের হেদায়েত দান করুক আমিন।