19/02/2025
শ্বশুরবাড়িতে "রানী" হয়ে থাকার সাইকোলজিক্যাল ট্রিকস।
প্রথমে বলে দিই শ্বশুরবাড়িতে রানীর মতো থাকা মানে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা বা শুধু ভালোবাসা পাওয়া বিষয়টা একদমই তা নয়। সত্যিকার অর্থে, একজন নারী যখন বুদ্ধিমত্তা, মানসিক শক্তি, আর কৌশল প্রয়োগ করে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে পারে, তখনই সে সত্যিকারের "রানী" হয়। যেখানে তাকে সম্মান করা হবে, তার মতামত গুরুত্ব পাবে, এবং সে নিজেও মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকবে।
১/ নিজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করুন, পরিস্থিতিকে নয়। সবকিছু আপনার ইচ্ছামতো চলবে না এটাই স্বাভাবিক। কেউ অবহেলা করতে পারে, কেউ বা আপনার মূল্যায়ন নাও করতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন? যদি কেউ আপনাকে ছোট করতে চায়, সাথে সাথে রেগে না গিয়ে ভাবুন "সে এটা কেন করল?" ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে পারলেই আপনি মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।
২/ মানুষের মন বুঝতে শিখুন।
প্রত্যেক মানুষ আলাদা, সবার মানসিকতা একরকম নয়। শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ, দেবর—সবাইকে পর্যবেক্ষণ করুন। কেউ রাগী হলে তাকে শক্ত কথা বলার দরকার নেই, বরং তার ভাষায় কথা বলুন। কেউ আবেগপ্রবণ হলে, তাকে আবেগ দিয়ে জয় করুন। যখন বুঝতে পারবেন কে কীভাবে চিন্তা করে, তখন সম্পর্কগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আনা সহজ হবে।
৩/ যু'দ্ধ নয়, কৌশলতার সাথে স্মার্ট থাকুন।
অনেক সময় সরাসরি যুক্তি দিয়ে কাউকে বোঝানো যায় না, বরং বুদ্ধি খাটাতে হয়। ধরুন, শাশুড়ি আপনাকে অবহেলা করে। সরাসরি এর প্রতিরোধ না গড়ে ধৈর্য ধরে তার পছন্দ-অপছন্দ বুঝুন, তার ভাষায় কথা বলুন। সময়ের সাথে সাথে দেখবেন, সম্পর্কের দৃশ্যপট বদলে গেছে।
৪/ রহস্যময় থাকুন, সবাইকে সব বলবেন না।
যে মানুষ খুব সহজেই নিজের সবকিছু উন্মুক্ত করে দেয়, সে অল্পতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতি, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, শ্বশুরবাড়ির ছোটখাটো সমস্যাগুলো সবার সঙ্গে আলোচনা করবেন না। রহস্যময় থাকলে মানুষ আপনাকে গুরুত্ব দেবে, আপনাকে নিয়ে ভাববে, আর আপনাকে সম্মান করবে।
৫/ বেশি ভালো না, বেশি খারাপও না, একটা ব্যালান্স রাখুন। অতিরিক্ত ভালো হয়ে গেলে মানুষ আপনাকে ব্যবহার করবে, আবার বেশি কঠোর হলে সবাই দূরে সরে যাবে। তাই ব্যালান্স বজায় রাখুন। অপ্রয়োজনীয় কাজে "না" বলুন, কিন্তু দরকার হলে সহায়তা করুন।
৬/ স্বামীকে নিজের দিকে রাখুন, কিন্তু কৌশলে।
অনেক নারী স্বামীকে শ্বশুরবাড়ির লোকদের বিরুদ্ধে সরাসরি দাঁড়াতে বলে, যা সম্পর্কের ক্ষতি করে। বরং স্বাভাবিকভাবে তাকে বোঝান যেন সে বুঝতে পারে আপনি তার পাশে থাকলে সে মানসিকভাবে শান্ত থাকবে। পুরুষেরা সাধারণত চাপিয়ে দেওয়া কথার চেয়ে কৌশলী ও বিনয়ী আচরণে বেশি প্রভাবিত হয়।
৭/ নিজের গুরুত্ব তৈরি করুন, অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে স্বাবলম্বী হোন।
শুধু রাঁন্নাবান্না বা সংসারের কাজ করলেই হবে না। যদি আপনার আলাদা পরিচয় থাকে, একটা দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনাকে সবাই গুরুত্ব দেবে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলে সম্মান এমনিতেই বেড়ে যায়।
৮/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, কিন্তু চাটুকারিতা নয়।
মানুষ চায়, তাকে মূল্য দেওয়া হোক। তাই শ্বশুরবাড়ির কেউ যদি আপনাকে সাহায্য করে, আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কিন্তু চাটুকারিতা করবেন না। সত্যিকারের প্রশংসা করুন, যা তাদের মন থেকে আপনাকে ভালোবাসতে শেখাবে।
৯/ আত্মবিশ্বাসী থাকুন, কিন্তু অহংকারী নয়।
নিজেকে ছোট মনে করবেন না, আবার অহংকারীও হবেন না। আত্মবিশ্বাসী নারীকে সবাই সম্মান করে, কিন্তু অহংকার করলে মানুষ দূরে সরে যায়।
১০/ পরিবারের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠুন।
নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলুন যেন আপনি শ্বশুরবাড়ির জন্য অপরিহার্য হয়ে যান। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত হোন, দায়িত্ব নিন। আপনি না থাকায় যখন আপনার অভাব অনুভব করবে, তখনই বুঝবেন আপনি সত্যিকারের "রানী" হয়ে গেছেন।
চূড়ান্ত কথা।
শ্বশুরবাড়িতে রানীর মতো থাকতে হলে যু'দ্ধ নয়, কৌশল দরকার। ধৈর্য ধরুন, কৌশলী হন, আত্মবিশ্বাস রাখুন, এবং সবার মনের জায়গা দখল করুন। রানী হওয়ার মানে সবার উপরে ওঠা নয়, বরং এমন একটা অবস্থান তৈরি করা, যেখানে আপনাকে কেউ অবহেলা করতে পারবে না।