24/01/2023
আজ মহান ১০ মাঘ মাইজভান্ডারী ত্বরিকার মহান দিকপাল #গাউসুল_আযম__হযরত_শাহ_সূফী__মাওলানা_সৈয়্যদ_আহমদ_উল্লাহ_কাদেরী_মাইজভান্ডারী (ক.)'র ১১৭ তম ওরসে পাক!
"মাইজভান্ডার শরীফ কুল কিনার বিহীন এক অনন্ত মহাসাগর,
যার কোন কিনার নেই কুল নেই"।
🌹বাণী-গাউসে জামান আল্লামা হযরত শাহসুফী সৈয়দ তৈয়্যব শাহ্ (রাঃ)।🌹
#সংক্ষিপ্ত_পরিচিতিঃ
#জন্ম_ও_বংশ_পরিচয়ঃ
মাইজভান্ডারী দরবার শরীফের আধ্যাত্নিক সরাফতের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.)’র পুর্বপুরুষ সৈয়দ হামিদ উদ্দীন গৌড়ি ১৫৭৫ সালে ইসলাম প্রচার মানসে চট্টগ্রামে আগমন করে পটিয়া থানার কাঞ্চননগরে বসতি স্থাপন করেন। তার এক পুত্র সন্তান সৈয়দ আবদুল কাদের (রহঃ) ফটিকছড়ি থানার আজিম নগরে ইমামতির দায়িত্ব নিয়ে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর প্রপৌত্র মওলানা সৈয়দ মতিউল্লাহর পবিত্র ঔরসে ১৮২৬ সালে, হিজরী ১২৪৪, ১২৩৩ বাংলা ১ মাঘ, বুধবার জোহরের সময় হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম সৈয়দা খায়েরুন্নেছা বিবি।
#বিদ্যার্জনঃ
চার বছর বয়সে গ্রাম্য মক্তবে তাঁর শিক্ষাজীবন আরম্ভ হয়। ১২৬০ হিজরীতে তিনি উচ্চশিক্ষাার্থে কলকাতা গমন করেন। ১২৬৮ হিজরীতে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। এই সময় তিনি হাদিস, তাফসীর, ফিকাহ, মানতিক, বালাগাত, উছুল, আক্বায়েদ, ফালছাফা, ফরায়েজ ইত্যাদি শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শীতা অর্জন করেন।
#কর্মজীবনঃ
হিজরী ১২৬৯ সালে তিনি যশোর জেলায় কাজী (বিচারক) পদে যোগদান করেন। কিন্তু বিচারিক কাজের প্রতি অনীহার কারণে ১২৭০ হিজরীতে কাজী পদ থেকে পদত্যাগ করে কলকাতার মুন্সি বু-আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদার্রেছের পদে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি একই সাথে তিনি মুন্সেফী অধ্যয়নের কাজও চালিয়ে যান। তার চারিত্রিক গুণাবলী ও জ্ঞানের ব্যাপকতায় মুগ্ধ কলকাতাবাসী তার ওয়াজ শুনার জন্য উন্মুখ ছিলো।
#আধ্যাত্বিক জীবনের দীক্ষাঃ
তার পীরে তরিকত ছিলেন পীরানে পীর দস্তগীর গাউছুল আজম মহি উদ্দীন আবদুল কাদের জীলানীর (রহঃ) বংশধর শেখ সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী লাহোরী (রহ) । অপরদিকে তার পীরে তরিক্বতের বড় ভাই হযরত শাহ সৈয়দ দেলাওর আলী পাকবাজ (রহ) এর কাছ থেকে কুতুবিয়তের ফয়েজ অর্জন করেন। একদিন জোহরের নামাজের পর হযরত শাহ ছুফী সৈয়দ আবু শাহামা লাহোরী (রহ) তার মুরীদানদের নিয়ে নিজ হুজুরায় ধর্মালোচনা করছিলেন। ঠিক সে সময়েই হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক) পাল্কীযোগে কোন এক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য সেই ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হযরত লাহোরী (রহঃ) নিজ অর্জিত ‘লাল’ (আধ্যাত্বিক স্তর বিশেষ) অর্পণের জন্য দীর্ঘদিন যাবত
উপযুক্ত শিষ্যের খোঁজে ছিলেন। তিনি কালবিলম্ব না করে আপন মুরীদ শাহ এনায়েত উল্লাহ সাহেব এর মাধ্যমে পাল্কী- আরোহী হযরত ক্বেবলাকে (কঃ) সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানালেন। হযরত ক্বেবলাও (কঃ) তার মাহফিলে যোগদানের কর্মসূচীর উপরে খোদায়ী রহস্য ও রহমতপূর্ণ এই বেলায়তী আমন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে তার আহবানে সাড়া দেন। হযরত আবু শাহামা মুহাম্মদ ছালেহ লাহোরী (রহ) হযরত ক্বেবলাকে (কঃ) সম্মানের সাথে অভ্যর্থনার পর নিজ তরিক্বতের বাইয়াত প্রদান করেন এবং তার জন্য খাস পানাহারের আয়োজন করেন। দেখতে দেখতে পাত্রপূর্ণ খাদ্য নিঃশেষ হলেও হযরত ক্বেবলার চাহিদা যেন মিটলো না, তিনি আরো পেতে আগ্রহী। কিন্তু তার পীরে ত্বরিক্বত মৃদু হেসে বললেন, ‘হে প্রিয়তম, আমার রান্না ঘরে আপনার জন্য রক্ষিত সবকিছুই পরিবেশন করা হয়েছে। এর অধিক প্রয়োজনে আপনি সহস্তে পাক করে খাবেন।’ এই রূপক বাক্যের মাধ্যমে পীরে ত্বরিক্বত হযরত আবু শাহমা (রহঃ) বুঝিয়ে দেন যে, তিনি হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীকে (কঃ) তার সমস্ত আধ্যাত্বিক নেয়ামত ও খোদায়ী শক্তি অর্পণ করেছেন। আরো অধিক কামালিয়ত তথা আধ্যাত্বিক উচ্চাসন লাভের নিমিত্তে হযরত ক্বেবলাকে (কঃ) ‘নিজ হস্তে পাক করে’ তথা সাধনা ও রিয়াজতের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। এরপর সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক) আপন পীরের তত্ত্বাবধানে নিজেকে আধ্যাত্বিক সাধনায় নিয়োজিত রাখেন। এই বিরল অথচ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকে আমরা একদিকে যুগপৎ ভাবে পীর ও মুরীদ-হযরত আবু শাহমা (রহঃ) ও হযরত আহমদ উল্লাহ (কঃ) এর আধ্যাত্বিক উচ্চাসনের বিষয়টি যেমন জানতে পারি তেমনি ত্বরিক্বত চর্চা ও আধ্যাত্বিক জগতে সফলতার জন্য হক্কানী পীরের হাতে বাইয়াত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও তার তত্ত্বাবধানে আধ্যাত্বিক সাধনার গুরূত্বও সমভাবে উপলদ্ধি করতে পারি।
#ওফাত ও ওরশঃ
গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) ৭৯ বছর বয়সে ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে, ১৩১৩ বঙ্গাব্দে ১০ মাঘ সোমবার দিবাগত রাতে ইহধাম ত্যাগ করেন। প্রতি বছর ৮, ৯ ও ১০ মাঘ তার ওফাত দিবস উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী ওরস শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশের লক্ষ- লক্ষ আশেক ভক্তের সমাগম ঘটে। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে এই মহান ওলীর ফয়ুজাত দান করুন। আমিন।
#তথ্যসূত্রঃ দৈনিক আজাদী