14/10/2024
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
🕐 ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি ১৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. মঙ্গলবার:
💠 “গাউসুল আযম শাইখ আবু মীর মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (ক.)”-এর ওফাত দিবস স্মরণে পবিত্র ‘ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহুম’।
✅ গাউসুল আযম শাইখ আব্দুল কাদের জিলানী (ক.) হলেন একজন সুন্নি মুসলিম ধর্মপ্রচারক, তপস্বী, মরমী, আইনজ্ঞ এবং হাম্বলী মাযহাবের ধর্মতত্ত্ববিদ।তিনি ইসলাম ধর্মে অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলামের অন্যতম প্রচারক হিসাবে সুবিদিত। সুফিরা তাঁকে 'বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী' নামে ব্যক্ত করেন। আধ্যাত্মিকতায় উচ্চমার্গের জন্য বড়পীর, ইরাকের অন্তর্গত 'জিলান' নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করায় জিলানী, সম্মানিত হিসাবে আবু মোহাম্মদ মুহিউদ্দীন প্রভৃতি উপাধি ও নামেও তাকে সম্বোধন করা হয়।
🔷 নাম:
সম্মানসূচক মুহিউদ্দিন অনেক সুফিদের কাছে "ধর্মের পুনরুজ্জীবক" হিসাবে তাঁর মর্যাদা নির্দেশ করে। গিলানি (আরবি আল-জিলানী) তাঁর জন্মস্থান, গিলানকে বোঝায়।
🔷 জন্ম:
শাইখ আব্দুল কাদের জিলানী (ক.) হিজরি ৪৭০ সনের রমজান মাসের ১ তারিখে বাগদাদ নগরের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ মুছা জঙ্গী এবং মাতার নাম সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তাঁর পিতা ছিলেন ইমাম হাসান ইবনে আলী (রাদ্বি.)’র বংশধর ও মাতা ছিলেন ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (রাদ্বি.)’র বংশধর।
🔷 শিক্ষা:
তিনি তাঁর জন্মের প্রদেশ গিলানে প্রাথমিক জীবন কাটিয়েছেন। ১০৯৫ সালে আঠারো বছর বয়সে তিনি বাগদাদে যান। সেখানে তিনি আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী এবং ইবনে আকিলের অধীনে হাম্বলী মাযহাব অধ্যয়ন করেন। তিনি আবু মুহাম্মদ জাফর আল-সাররাজের কাছে হাদিস অধ্যয়ন করেন। শিক্ষা শেষ করে তিনি বাগদাদ ত্যাগ করেন। তিনি ইরাকের মরুভূমিতে পঁচিশ বছর তপস্যা করেন।
🔷 ধর্ম প্রচার:
শিক্ষা-দীক্ষায় পূর্ণতা অর্জনের পর তিনি নিজেকে পবিত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন মাহফিলে তিনি ইসলামের আদর্শ যুক্তিপূর্ণ ভাষায় বর্ণনা করতেন। তার মহফিলে শুধু মুসলমান নয়, অনেক অমুসলিমও অংশগ্রহণ করতেন। তাঁর বক্তব্য শুনে অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
সুফিবাদের কাদেরিয়া তরিকা (সুফি তরিকা):
তিনি কাদেরিয়া তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন, এর অনেকগুলি শাখার সাথে, বিস্তৃত, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এবং এটি যুক্তরাজ্য, আফ্রিকা, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বলকান, রাশিয়া, ফিলিস্তিন, চীন, এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকায় পাওয়া যাবে।
🔷 বই:
তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের পণ্ডিত ছিলেন। তার রচিত বহু গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
• কিতাব সিরর আল-আসরার ওয়া মাযহার আল-আনওয়ার (রহস্যের গোপন বই এবং আলোর প্রকাশ)
• ফুতুহ আল গাইব (অদৃশ্যের রহস্য)
• ক্বসীদায়ে গাউসিয়া
• আল-ফুয়ুদাত আল-রব্বানিয়া (প্রভুর অনুগ্রহের প্রকাশ)
• পনেরোটি চিঠি: খামসাতা 'আশারা মাকতুবান
• কিবরিয়াত এ আহমার
• জান্নাত ও জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
• মহিমান্বিত প্রতিভাস (আল-ফাতহ আর-রব্বানী)
🔷 ওফাত বরণ:
হিজরী ৫৬১ সালের ১১ রবিউসসানী হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (ক.) ওফাত লাভ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তাঁর ওফাত দিবস সারা বিশ্বের সূফীরা প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকেন এবং তাঁর ওফাত দিবস ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহুম হিসেবে পরিচিত। প্রতি আরবি মাসের ১০ তারিখ দিবাগত রাত গেয়ারভী শরীফ পালন হয়।
🔷 জন্মদিন এবং ওফাত দিবস উদ্যাপন:
১ রমজান গাউসুল আযম আবদুল কাদের জিলানী (ক.)’র জন্মদিন হিসাবে উদযাপিত হয় এবং তাঁর ওফাত বার্ষিকী ১১ রবিউস সানিতে পালিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে, তাঁর উরস বা ওফাতবার্ষিকীকে গেয়ারভী শরীফ বা সম্মানিত দিবস বলা হয়।
[তথ্যসূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া]