MR Jisan

MR Jisan ___ღ۵জীবনের প্রতিটা ‘মুহূর্ত’ নিজের সাথে মানি’য়ে নাও দেখবে জীবন-সুন্দর-|♡ 🩷🪽

02/11/2024

না বলা ভালোবাসা

পর্ব-১

:মা আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। কমপক্ষে এইচএসসি পরিক্ষা দিয়ে বিয়ে করি মা?

: আমি জানি তুই আরো পড়তে চাস। কিন্তু মা তোর বাবার শরীরের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজ আছে তো কাল নেই। আর তেমন ভালো কোন সমন্ধও আসছে না। তাই আর না করিস না মা

: ঠিক আছে আমি বিয়ে করবো। কিন্তু মা আমার আলেম ছেলেকে বিয়ে করার খুব ইচ্ছে ছিল। একটা আলেম ছেলের সাথে বিয়ে দিলে হয় না?

: খোঁজতো আর কম করা হলো না। যেই শোনে তুই কালো সেই বিয়েতে না করে দেয়। বল তিসা আমি কি করবো? তুই না করিস না এই বিয়েতে ( কাদঁতে কাদঁতে)

: ঠিক আছে মা। কিন্তু এই ছেলে এত বড় লোক। সে কি আমার মত কালো মেয়েকে বিয়ে করবে?

: ছেলে তার বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করবে আর ছেলের বাবা মায়ের তোকে পছন্দ হয়েছে।

: মা আর একবার একটু চেষ্টা করা যাবে না? আমি খুব ইচ্ছে একজন আলেমকে বিয়ে করার

: তোর বাবা আর কোন ছেলে দেখতে চাইছে না। এই ছেলেকেই পছন্দ করেছে। আচ্ছা তুই একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখ। জোড় করে চাপিয়ে দিবো না।

এত সময় যেই মেয়ের বিয়ের কথা চলতে ছিল তার নাম তিসা। এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। কলেজে পড়লেও দ্বীনদার মেয়ে। কলেজে কখনো বেপর্দা হয়ে যায় নি। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। ওর বাবা হার্টের রুগী। এর আগে একবার ব্রেন স্টোর্ক করেছিল। তিসার বড় ২ টা বোন আছে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তিসার অনেক ভালো জায়গা থেকে বিয়ে আসে কিন্তু ও কালো এজন্য কেউ বিয়ে করতে চাইনা। কালো হলেও তিসার চেহারা অনেক মায়াবী। বড় পাপড়ি বিশিষ্ট টানাটানা চোঁখ, ঘন কালো লম্বা লম্বা চুল তার চেহারাকে আরো আকর্ষণীয় করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের চাহিদা ফর্সা মেয়েদের প্রতি। তাই তিসাকে প্রথম দেখাতে কেউ পছন্দ করেনা। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা) বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন। এজন্য তিসা একজন দ্বীনদার আলেমের জীবণসঙ্গীনি হতে চায়।

: মুরাদ

: জ্বি আব্বু

: তোমার আর তিসার বিয়ের কথা চলছে এটা কি জানো?

: আব্বু জানি কিন্তু আমার ইচ্ছে কওমি মাদ্রাসার মেয়েকে বিয়ে করার। আর একটু উজ্জ্বল বর্ণ হলেই হবে। কিন্তু তিসা কলেজে পড়ে আর তোমরাই বললে যে তিসা দেখতে কালো। আমার এই বিয়েতে মত নেই।

: তিসা কলেজে পড়লেও অনেক দ্বীনদার পরহেজগার মেয়ে। আর কালো হওয়া তো কোন দোষের নয়।

: তাও আব্বু আমার তো কোন কিছুর অভাব নেই। আমি একটা নেককার পরহেজগার মেয়ে চাই। কিন্তু তিসাতো কালো এইটা আমি মেনে নিতে পারছিনা।

: মুরাদ তুমি কোরআন হাদিস পড়ো কিন্তু এই বিষয়ে এমন করছো কেন?

তুমি জান না হাদিসে বিয়ের জন্য মেয়ে নির্বাচনের জন্য দ্বীনদারিতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর রূপ ক্ষণস্থায়ী তাই এইটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। আমি চাই তুমি এই মেয়েকেই বিয়ে করো।

: ঠিক আছে তোমাদের কথায় মেনে নিলাম। একটু কালো হলে সমস্যা নেই।

এত সময় মুরাদ আর ওর আব্বুর কথা চলছিলো। মুরাদের বাবার বিরাট বড় বিজনেস। মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করে। কোন কিছুর অভাব নেই মুরাদের। বিরাট বড় আলিশান বাড়ি। আর মুরাদএর চেহারা দেখলে যে কেউ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। এত দিন বিজনেসের উপর পড়াশোনা করতে ছিলো। কিছু দিন আগে শেষ হয়েছে। মুরাদ কলেজে পড়াশোনা করলেও নামাজ, রোজা, আলেমদের সাথে উঠা বসা করে। তাই হয়তো ওর কওমি মাদ্রাসার মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো। আর মুরাদ দেখতেও সুদর্শন পুরুষ, এজন্য একটা ফর্সা মেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করার ইচ্ছে থাকায় তিসার সাথে বিয়ের মত দিলো।

ফজরের আজান হচ্ছে। সাইমা ঘুম থেকে উঠে পড়লো। অজু করে সালাত আদায় করলো তারপর কোরআন তেলাওয়াত করতে বসলো। পড়তে শুরু করলো সূরা নিসা। প্রথম আয়াতেই পড়লো

"হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।"

সাইমা রাফির সাথে বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। ২ দিন পরে ইসলামিক আইন অনুযায়ী ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে। ওর ২টা বোন চলে এসেছে। সাইমা শুধু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড রাইসাকে বিয়ের কথা জানিয়েছে। হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক হওয়ায় কাউকে জানাতে পারিনি।

আজকে বিয়ের দিন। সকাল থেকেই বাড়িতে দাওয়াত করা মেহমান আসতে শুরু করেছে। মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ার খুব বেশি আয়োজন করতে পারিনি।

রাফির বাড়িতে বিয়ের ধুম ধাম আয়োজন চলছে। তবে সেটা ইসলামিক নিয়মের মধ্যেই আছে। বিয়েতে অপচয় আর ইসলাম পরিপন্থি কোন কাজ না হয় এ দিকে রাফির বাবা লক্ষ্য রেখেছেন।

সাইমার খালাতো বোনরা খুব একটা ধার্মিক না। বিয়েতে এমন আনুষ্ঠানিকতা তাদের পছন্দ হয়নি। ওরা চেয়েছিল আতশবাজি- পটকা ফোটাতে কিন্তু এই গুলো করা বেদআত তাই ওদের কেউ করতে দেয় নি।

সাইমাকে ওর বড় ২ বোন গোসল করাতে নিয়ে গেলো। এখানেও সাইমার খালাতো বোন মারুফার আপত্তি।

: আপু সাইমাকে গাঁয়ে হলুদ দিলে না?(মারুফা)

: কেন? এসবের কি দরকার আছে?(সাইমার বোন)

: এই গুলো না করলে কি আর বিয়ের মজা আসে? এখনকার প্রতিটা বিয়েতেই এসব অনুষ্ঠান করা হয়। আর আপনারা তো আরো অন্য কিছুও করতে দিলেন না

: কি কি করতে চাও তোমরা??

: এইযে গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান, সারা বাড়ি লাইটিং, মিউজিক, জামাই যখন আসবে তখন গেটে টাকা ধরবো, তার হাত ধুয়ে দিবো আরো কত্ত কিছু করা যায়। কিন্তু আপনারা এই গুলো করতে আগেই নিষেধ করে দিলেন।

: শোন মারুফা! ইসলামে এই গুলো করার কথা বলা হয়নি। এই গুলো বিয়ের জন্য বেদআত। আর এসব খরচ করে কোন লাভ নেই। বিয়ে সল্প খরচে করার কথা এসেছে। আর এই কাজ গুলোতে গোনাজ ছাড়া কোন সাওয়াব হবে না।

: আপনাদের সাথে কথা বলে পারবোনা। যা ভালো হয় করেন

সাইমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে সাইমার বোন। এর মধ্যে সাইমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাইসা চলে এসেছে। হাতে অনেক গুলো বই। আর ১টা নীল ডায়েরি।

সাইমা: কিরে এত দেরী করলি কেন?

রাইসা: ইসস একটু দেরী হয়ে গেলো। প্লিজ কিছু মনে করিস না।

সাইমা: এত্ত গুলো বই!

রাইসা: হুম তোর জন্য নিয়ে আসলাম। এই বই গুলো অনেক ভালো দাম্পত্য জীবন সুখী করার জন্য ইসলামিক ভাবে অনেক সুন্দর সুন্দর টিপস দেয়া।

সাইমা: বাহ খুব খুশি হলাম

রাইসা: আমি তো জানি আমার ফ্রেন্ড বই পড়তে খুব ভালোবাসে। আর শোন এই যে এই নীল ডায়েরী, শুধু তোর জন্য। ডায়েরী লিখতে ভালোবাসিস তাই অনেক খুজেঁ কিনলাম।

সাইমা: মাশা আল্লাহ। এর আগের গোলাপী ডায়েরীর থেকেও এটা বেশি সুন্দর।

রাইসা: এই ডায়েরীতে আজ থেকে লিখা শুরু করবি। বিয়ের পর লিখার জন্য এইটা দিলাম। অন্য গুলোতে লিখলেও এই ডায়েরীতে শুধু বিয়ের পরের দাম্পত্য জীবনের কথা গুলো লিখবি। এটা আমার আবদার

সাইমা: ঠিম আছে।

কিছু সময় পরেই বর যাত্রী চলে আসলো। অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এবার পিতার বাড়ি থেকে বিদায় নেয়ার পালা। সাইমাকে কালো বোরকা আর হিজাব পড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাইসা ওর হাত ধরে রুম থেকে বের করে নিয়ে গেলো।

বাইরে যেয়ে সাইমা রাফিকে চিনতে পারেনি। এর আগে রাফিকে কোন দিন দেখেনি। রাইসা রাফিকে চিনিয়ে দিলো। সাইমা তো রাফিকে দেখে আকাশ দেখে পড়ল। মাশা আল্লাহ। এত সুন্দর ছেলে। তাও আবার জুব্বা পড়েছে সাথে পাগড়ীও আছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমি তো এমনই একজন চেয়েছিলাম। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া। কলেজে পড়া ছেলে হলেও সুন্নতি লেবাস।

রাফিরকে প্রথম দেখেই সাইমার ভালো লেগে গিয়েছে। কিন্তু তার মনে অনেক প্রশ্ন রাফি কি তার মতো কালো মেয়েকে মেনে নিবে?

বিদায় পর্ব শেষে সাইমাকে নিয়ে চলে আসা হলো। রাফির নিজের একটা প্রাইভেট কার আছে। সেই কারেই বিয়ে হলো। অনেক সুন্দর করে সাজানো ছিল যেমনটা সাইমা চাইতো। গোলাপ আর গাঁদা ফুল দিয়ে কার সাজানো। না চাইতেই এত কিছু পেয়ে সাইমা আল্লাহর কাছে বার বার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছে। কিন্তু রাফির হয়তো সাইমার প্রতি কোন আগ্রহ নেই। এই পর্যন্ত একটা বারও সাইমার দিকে তাঁকিয়েও দেখিনি। এই সব ভাবতে ভাবতে সাইমা একসময় বিরাট একটা বাড়ির সামনে চলে আসলো। দেখতে যেন রাজপ্রাসাদ। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এত বড় বাড়িতে তার বিয়ে হয়েছে সে ভাবতেও পারছেনা।

(বিদ্রঃঃ তিসার নাম অধরা রাখা হইছে।)

Address

Chittagong

Telephone

+8801615846004

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when MR Jisan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share