11/10/2025
বর্তমানে নারী ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত নাম, বাংলাদেশের টাইগ্রেস পেসার মারুফা আক্তার। গতি এবং সুইংয়ের সংমিশ্রণে তার একেকটা বল যেন একেকটা তেজি ঘোড়া। কিন্তু তার জীবনের গল্পটিও কম তেজি নয়।
বর্তমানে তার সাফল্যের জয়জয়কার বিশ্ব ক্রিকেট পাড়ায়। তবে এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘ লড়াই, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ জুড়ে আছে কষ্ট, অপমান আর অদম্য ধৈর্যের গল্প।
নীলফামারীর সৈয়দপুরের এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম মারুফার। ছয়জনের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তাকে নামতে হয়েছিল জীবনের কঠিন লড়াইয়ে। নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করতেন তার বাবা। সেই কর্দমাক্ত মাঠেই মারুফা লাঙলের হাল ধরতেন বাবার পাশে দাঁড়িয়ে। তখন কে জানতো, একদিন এই হাতেই ধরা পড়বে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বপ্ন!
তাদের জীবনে দারিদ্র্য এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে, একসময় ভালো পোশাক না থাকার কারণেই কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেতেন না তারা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মারুফা বলেন, "আমার বাবা একজন কৃষক। আমাদের ওইরকম পয়সাকড়ি ছিল না। আব্বা যখন বাসায় ছিল না, বাজারে যেত তখন মাকে এসে অনেকে অনেক কথা বলতো। অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে যেগুলা নেওয়ার মতো না। আমার মা রুমে গিয়ে কান্না করতো। আমি আবার গিয়ে এক কোণায় কান্না করতাম যে আমার জন্য এতকিছু হচ্ছে। কোথাও যদি বিয়ে বা কোনোকিছু (অনুষ্ঠান) হয়, দাওয়াত দেয় না? আমাদেরকে সেটাও দিতো না। বলতো ওদের ড্রেস নাই, ওইখানে গেলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না। এরকম বলতো অনেকে। একটা সময় ছিল যখন আমরা ঈদেও নতুন জামা কিনতে পারিনি।"
এমন কষ্টই হয়তো তাকে বানিয়েছে আজকের ‘স্টিল নার্ভড’ মারুফা। সমাজের অবজ্ঞা, অর্থের অভাব কিংবা অপমান, কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। নিজের ভেতরের জেদটাই ছিল সবচেয়ে বড় অস্ত্র। টাইগ্রেস এ পেসার আরো বলেন, "আমি ভাবতাম ঠিক আছে, আমি একদিন ভালো কিছু করে দেখাব। এখন আমরা যেরকম অবস্থাতে এসেছি, অন্যরা এখন সেরকম জায়গায় নেই। আমি যেভাবে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট করছি, অনেক ছেলেরাও হয়তো সেভাবে পারছে না। এটা অন্যরকম একটা শান্তি দেয়। ছোটবেলায় ভেবেছি মানুষ কবে আমাদের এভাবে দেখবে, হাততালি দিবে, এখন টিভিতে (নিজেকে) দেখলে লজ্জা লাগে (হাসি)।"
আজ মারুফা শুধু বাংলাদেশ দলের হয়ে বল করেন না, তিনি স্বপ্ন দেখান হাজার তরুণীকে, যে সীমাবদ্ধতা যতই বড় হোক, মনোবলই পারে তা ভাঙতে। আজকের মারুফা আক্তার কেবল এক ক্রিকেটার নন, তিনি এক প্রেরণার প্রতীক। কর্দমাক্ত মাঠের লাঙল থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চের জার্সি, এই পথটা সহজ ছিল না। কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন, “স্বপ্ন পূরণের জন্য ড্রেস নয়, মনোবলই আসল পোশাক।”
"জনস্বার্থে প্রচারিত"