09/07/2025
আদুভাইদের দল নাকি অভিজ্ঞ সৈনিকের ব্যাটালিয়ন? মিরাজ "তরুণ দল" বলতে কি বুঝিয়েছেন? আন্তর্জাতিক ম্যাচ মানেতো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা না, যে ভালো খেললে চকলেট আর খারাপ খেললে "বয়স কম" বলে ছাড় পাওয়া যাবে।
"শিক্ষার কোনো বয়স নাই, চলো সবাই স্কুলে যাই"– এটা হয়তো উন্নয়নমুখী সমাজের মানবিক শ্লোগান। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর পরও যদি কেউ নিজেকে ‘শেখার পর্যায়ে’ দাবি করেন, তখন প্রশ্ন উঠে– এটা কি বিনয়, না দায়িত্ব এড়ানোর এক কৌশলী ফর্মুলা?
মেহেদী হাসান মিরাজ সম্প্রতি বললেন, "আমাদের দলটা তরুণ।" কথাটা শুনে যেন কারও কারও মনে পড়ে গেল সেই পুরনো হাস্যরস, “গরু-ঘোড়া এক পালিতে তাড়ালে তো মাঠ নষ্ট হবেই।”
কিন্তু, সত্যি কি তাই?
মেহেদী হাসান মিরাজ নিজে খেলছেন ১০ বছর ধরে। অংশ নিয়েছেন দুইটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, দুইটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং তিনটি এশিয়া কাপে। মুস্তাফিজুর রহমানের অভিজ্ঞতা তার চেয়ে কম নয়, দশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছেন, আইপিএল খেলেছেন এক দশক। তাসকিন আহমেদ খেলছেন ১১ বছর, আর লিটন দাসও এক যুগের কাছাকাছি পেশাদার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। এরা কি তবে 'তরুণ'?
এই চারজনই এখনকার দলের সিনিয়র কাণ্ডারি, যারা বারবার বলছেন, “আমরা এখনও তরুণ।”
তাহলে ‘তরুণ’ শব্দটা কি এখন বয়সের হিসেব নয়, বরং একটা মানসিক আবরণ? যেন প্রতিবার ব্যর্থতার পর বলার সুযোগ থাকে– “এই তো, শেখার সময়।”
এবার যাদের মিরাজ সম্ভবত 'তরুণ' বলছেন, তাদের অভিজ্ঞতাটাও দেখা যাক।
নাজমুল শান্ত (৮ বছর), নাঈম শেখ (৬ বছর), হাসান মাহমুদ (৫ বছর), শামীম পাটোয়ারি (৪ বছর)। পরিসংখ্যানতো বলছে, তারা কেউই একেবারে নতুন মুখ নন।
আর নতুনদের ভেতর যারা আছেন– রিশাদ হোসেন আড়াই বছরে দুইটি আইসিসি টুর্নামেন্টে, তানজিম সাকিব ও তানজিদ তামিম দুই বছরে তিনটি বড় ইভেন্টে খেলেছেন।
জাকের আলী এক বছরের মধ্যেই খেলেছেন দুইটি আন্তর্জাতিক আসরে। এমনকি নাহিদ রানা, তানভীর ইসলাম কিংবা পারভেজ ইমনরাও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অর্থাৎ এই দলে এমন কেউ নেই, যাকে আপনি 'অভিজ্ঞতাহীন' বলে চালাতে পারেন।
ফলে প্রশ্ন উঠতেই বাধ্য– তাহলে মিরাজ 'তরুণ' বলতে কী বোঝালেন? কারণ যে দলে এমন ক্রিকেটার আছেন, যাদের বয়স ২৫–৩০ এর মধ্যে, যারা ৫–১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং একাধিক আইসিসি ইভেন্ট খেলে ফেলেছে, তাদের ‘তরুণ’ বলা কি আদৌ যৌক্তিক?
তার ওপর যে দলের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ, সেই শ্রীলঙ্কার স্কোয়াডের গড় বয়স আরও কম!
তাদের দলের তিন প্রধান ক্রিকেটার হাসারাঙ্গা, আসালাংকা, কুশল মেন্ডিস এই তিনজনই মিরাজ, শান্ত, মুস্তাফিজদের আন্ডার-১৯ ব্যাচমেট। অথচ আজ তারা শুধু জাতীয় দলে পারফর্মারই নন, নেতৃত্বেও প্রতিষ্ঠিত।
অন্যদিকে বাংলাদেশে তাদের বয়সী ক্রিকেটারদের এখনো বলা হচ্ছে ‘তরুণ’, যেন বয়সটা কাটতেই চাইছে না।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম যেন এক ‘চিরতরুণ’ ক্লাসরুম– সবাই ‘আদুভাই’, এখনও ক্লাস সেভেনে পড়ে। কোচ বা বোর্ড যেন প্রতিবার বলে চলেছে– “এইটা শিখো, ঐটা বোঝো… সময় আছে, শিখে যাবে…”
কিন্তু ক্রিকেট তো আর ক্লাসরুম নয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচ মানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা না, যে ভালো খেললে চকলেট আর খারাপ খেললে "বয়স কম" বলে ছাড়। এখানে প্রয়োজন পারফরম্যান্স। প্রয়োজন ম্যাচ জেতানো মাইন্ডসেট।
মিরাজদের বোঝা উচিত, জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার মানেই আপনি 'বড়' হয়ে গেছেন। এখানে বয়স দিয়ে দায়িত্বের মানদণ্ড ঠিক হয় না। চাপ নিতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে, উন্নতির জন্য লড়াই করতে হবে। না হলে বারবার "তরুণ ছিলাম", "শেখার সময় ছিল", "ভবিষ্যৎ আছে" বলে আর কতদিন চালানো যাবে?
বাংলাদেশ দল এখন দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত দোলাচলে– যেখানে অভিজ্ঞরা দায়িত্ব নেয় না, আর তরুণরা সুযোগ পেলেও ‘তরুণ’ পরিচয়েই ঢেকে রাখে ব্যর্থতা। এমন না হলে হয়তো মিরাজের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের মুখে 'তরুণ দল' শোনার পর হাসি পেত না।
"জনস্বার্থে প্রচারিত"