30/06/2025
📚 #মোহিনী_মিস - বাংলা উপন্যাস ✔
🔯 কল্পনা ও লেখুনীতে - খুশবো
#পর্ব ১৯: যারা চুপ থাকে, তারাও দেখে...................................................................................
অপরিচিত সাক্ষাৎকার.....
মোহিনীর পডকাস্ট স্টুডিওতে সেইদিন এক অদ্ভুত অতিথি আসে—
একজন মধ্যবয়সী মহিলা, গায়ে হালকা শাড়ি, চোখে কাঁচের ফ্রেম।
— “আপনি কে?”
— “আমার নাম অনুষা। আমি মীরাদের ফ্ল্যাটে কাজ করতাম...”
— “আপনি...?”
— “হ্যাঁ, আমি সব দেখেছি। কিন্তু বলিনি। আজ বলতে এসেছি।”
মোহিনী স্তব্ধ হয়ে যায়।
খণ্ড খণ্ড স্মৃতি অনুষা বলতে থাকে—
“সেই রাতে মীরা খুব অস্থির ছিল।
বারবার ফোন চেক করছিল।
আমি বলেছিলাম, ‘আপনি ঘুমান তো!’
সে বলেছিল— ‘আজকে ঘুমাতে পারলে বেঁচে যাব।’”
⎯ “আমি তখন বুঝিনি, এই কথাটার মানে কী...
পরদিন সকালে যখন পত্রিকায় তার মৃত্যুর খবর পড়ি, তখনও বলিনি কিছু।
আমার ভয় করছিল।”
⎯ “কিন্তু এখন ভয় পাই না। এখন মনে হয় সত্যি বলা দরকার।”
মোহিনী অনুষার সাক্ষাৎকার পোস্ট করার ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যেই—
রাফির তরফ থেকে একটি আইনি নোটিশ আসে।
⎯ “আপনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে অভিযুক্ত করছেন।”
⎯ “এই সাক্ষাৎকার সত্য-মিথ্যার বিচার করবে আদালত।”
অভ্র বলে—
“তুমি কি ভয় পাচ্ছো?”
মোহিনী বলে—
“সত্য বলার জন্য ভয় পাওয়ার বয়স আমার পেরিয়ে গেছে।”
সন্ধ্যায়, এক নারী এসে স্টুডিওর বাইরে দাঁড়ায়।
তাকে দেখে অফিসের সবাই থমকে যায়।
মোহিনী গিয়ে জিজ্ঞেস করে—
“আপনি কে?”
সে মৃদু হাসে—
⎯ “আমি রাফির বর্তমান স্ত্রী।”
⎯ “তুমি জানো, রাফি মীরাকে বিয়ে করতে চাইতো, কিন্তু পারেনি?
আমি জানি। এবং আমি তার জন্য ওকে ঘৃণা করি না।”
⎯ “তবে একটা কথা বলবো, মীরা শুধু রাফির ভুল ছিল না...
সে নিজেও নিজের শত্রু ছিল।”
⎯ “যদি কখনো তার ডায়েরি পেয়ে যাও, বুঝবে।”
মোহিনী বলে—
“আপনি কি জানেন ডায়েরি কোথায়?”
নারী উত্তর দেয়—
“ওটা ছিল লাল রঙের, একটা শাড়ির প্যাকেটে গুছানো...”
⎯ “আমি জানি না এখন কোথায় আছে। তবে ওটা যদি কেউ পায়, সব বদলে যাবে।”
রাতে মোহিনী অফিসে ফিরে নিজের ডেস্কে বসতেই একটি ছোট লাল রঙের প্যাকেট দেখতে পায়।
⎯ কোনো প্রেরক নেই।
খুলে দেখে ভিতরে একটি পুরনো ডায়েরি, প্রথম পাতায় লেখা—
“আমার নাম মীরা।
এই গল্প কেউ জানে না।
আর যদি জানেও, তারা শুধু অংশ জানে।
পুরোটা আমি রেখে যাচ্ছি এখানে।”
১ম পৃষ্ঠা:
“সায়ন্তনকে ভালোবেসেছিলাম।
কিন্তু ও সবসময় আমার ভয়কে ভয় পেত।
সে চেয়েছিল আমি তার মতো হয়ে উঠি।
আমি পারিনি।”
২য় পৃষ্ঠা:
“রাফি আমাকে চেয়েছিল, কিন্তু নিজের মতো করে।
ওর ভালোবাসা নয়, ছিল নিয়ন্ত্রণ।”
৩য় পৃষ্ঠা:
“আমি শুধু চেয়েছিলাম কেউ শুনুক,
কেউ জিজ্ঞেস করুক— ‘তুমি কেমন আছো?’
কেউ করতো না।”
৪র্থ পৃষ্ঠা:
“শেষ রাতে আমি তিনজনকে ফোন করেছিলাম—
সায়ন্তন, রাফি, আর আমার কলেজের এক শিক্ষক।
কেউ ধরেনি।”
৫ম পৃষ্ঠা:
“আমি জানি, আমার গল্প হয়তো কেউ পড়বে না।
তবু লিখলাম।
কারণ গল্পরা শেষ না হলে তারা ঘুরে ফিরে আসে।”
ডায়েরির শেষে লেখা—
“আমি মরবো না।
আমি অদৃশ্য হবো।
আর সেই অদৃশ্যতার মধ্য দিয়ে আমি দেখবো—
তোমরা কে কিভাবে গল্প বলো।”
মোহিনী ডায়েরি বন্ধ করে ফেলে।
তার হাতে যেন আগুন জ্বলছে।
সে ফিসফিস করে—
“তুমি এখনো কথা বলছো, মীরা।
তোমার গল্প এখন আমি বলবো।”
পরদিন সকালে মোহিনী একটি নতুন পর্বের ঘোষণা দেয়—
⎯ “এই সিরিজের পরবর্তী নাম ‘ডায়েরির পাতায় মীরা’।
আমি পরপর পড়বো সেই সব পৃষ্ঠা,
যা কেউ শুনেনি, আর শোনার সাহসও করেনি।”
⎯ “এই গল্প শোনার পর হয়তো কেউ পালাবে,
কেউ মুখ ফিরিয়ে নেবে,
কিন্তু আমি বলবোই।”
⎯ “কারণ যারা চুপ থাকে, তারাও দেখে।”
“একটা ডায়েরি শুধু কাগজ নয়—
তা একটা জীবনের আর্তনাদ।
যার শব্দগুলো নীরবতার চেয়ে জোরে বাজে।”
⏭️ পরবর্তী পর্ব (২০):
মোহিনী যখন প্রথম ডায়েরি পড়া শুরু করে,
তখন কেউ একজন লাইভ চ্যাটে কমেন্ট করে—
“তুমি যা বলছো, তার একাংশও সত্যি না।”
— আর শুরু হয় নতুন বিতর্কের ঝড়।
#মোহিনী_মিস #গল্প #উপন্যাস