23/10/2025
সাবেক শিবির নেতা রায়হানের মুক্তি দাবি ও হাটহাজারী থানা ওসির রহস্যজনক ভূমিকায় জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
হাটহাজারীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে স্কুলছাত্র তানভীর হত্যার ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের আড়াল করা ও ভিকটিমের নির্দোষ চাচাতো ভাই রায়হানকে গ্রেফতার করে একাধিক মিথ্যা মামলায় আসামি করা এবং ওসির রহস্যজনক ভূমিকায় হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
হাটহাজারী পৌরসভার আলীপুর রহমানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীরকে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা গত ২১ অক্টোবর নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ খুনিদের ধরতে টালবাহানা করেছে, প্রকৃত আসামিদের আড়াল করেছে এবং ভিকটিমের নির্দোষ চাচাতো ভাই মোঃ রায়হানকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর তাকে নির্যাতন করা হয় এবং একাধিক মামলায় আসামি করে দ্রুত আদালতে পাঠানো হয়। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়ার এ রহস্যজনক ভূমিকা হাটহাজারীবাসী বিস্মিত ও ক্ষুব্ধভাবে লক্ষ্য করেছেন।
ওসির বিতর্কিত এ ভূমিকার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হাটহাজারী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক শোয়াইব চৌধুরী ও সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল মালেক চৌধুরী।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ২১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) হাটহাজারী পৌর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীদের হাতে স্কুল শিক্ষার্থী তানভীর নৃশংসভাবে নিহত হয়। হাটহাজারী মডেল থানা থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও পুলিশ রহস্যজনকভাবে নিরব থাকে। কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে জনরোষের মুখে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে দুইজনকে ‘সন্দেহজনক আটক’ হিসেবে মিডিয়ায় প্রকাশ করা হলেও অপর একজনের নাম গোপন রাখা হয়।
অপরদিকে, নিহত তানভীরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সাইফুর রহমান তানভীরের মৃত্যুকে অসুস্থতাজনিত বলে প্রচার করেন এবং ‘অকাল মৃত্যু’ লিখে শোকব্যানার টানানোর কারণে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার অধ্যক্ষের অফিস ঘেরাও করে। পরে পুলিশ অধ্যক্ষকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও এক পর্যায়ে দেখা যায়, পুলিশ তাঁকে থানায় নেয়নি।
এ খবর জানতে পেরে নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই ও হাটহাজারী কলেজ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোঃ রায়হান তার আরেক চাচাতো ভাই শরীফসহ থানায় যান এবং পুলিশের এসআই হাসানকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা অধ্যক্ষকে থানায় না এনে ছেড়ে দিলেন কেন?” তখন এসআই হাসান জানান, “অধ্যক্ষের দায়িত্ব আমাদের, তিনি পালিয়ে যেতে পারবেন না; যখন ডাকব, তখন তিনি চলে আসবেন।”
এরপর রায়হান পুলিশের গাড়িতে থাকা আটক তিনজনকে দেখে তাদের ছবি তোলেন। এসময় থানার সেকেন্ড অফিসার নাজমুল সাহেব রায়হানকে কড়া মেজাজে কথা বলেন, যার জেরে কিছু বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ রায়হানকে আটক করে থানার লকআপে নিয়ে যায়।
মূলত নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই মোঃ রায়হান পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওসির সাথে কথা বলতে বুধবার দুপুরে থানায় যান। তিনি দেখেন, থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আটক ব্যক্তিদের চেহারা গণমাধ্যম বা সাধারণ মানুষের সামনে প্রকাশ করা হচ্ছে না এবং খুনিদের ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এই অবস্থায় রায়হান খুনিদের মুখের ছবি সংরক্ষণের চেষ্টা করলে থানার ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার মিথ্যা অভিযোগ এনে গ্রেফতার দেখান। পরবর্তীতে তাঁকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু নির্বাচনের দিন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দ্বারা এসপির ওপর হামলার একটি মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয়— যা প্রকৃত খুনিদের আড়াল ও নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানির অপচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “চাচাতো ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবিতে এগিয়ে আসা এক শিক্ষিত তরুণকে পুলিশ কর্তৃক এভাবে ফাঁসানো শুধু অমানবিকই নয়, বরং আইনের শাসনের প্রতি আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
বিবৃতিতে তাঁরা রায়হানের নিঃশর্ত মুক্তি, তানভীর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রকৃত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।