The Cox's Bazar

  • Home
  • The Cox's Bazar

The Cox's Bazar beautiful view of Cox's bazar

09/07/2025
09/07/2025
06/07/2025

আজকের যুগে বই পড়া আর শেখার জন্য লাইব্রেরিতে যাওয়ার দরকার হয় না। শুধু একটা ভালো ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই আপনি বিশ্বের যে কোনো কোণায় বসেই হাজার হাজার বই এক ক্লিকে পড়তে বা ডাউনলোড করতে পারেন একদম ফ্রি! আপনি শিক্ষার্থী হন, গবেষক, বইপ্রেমী, কিংবা নিজেকে নতুন কিছু শেখাতে চান এই সাইট গুলো আপনাকে দেবে উন্নতমানের বই, জার্নাল, এবং শিক্ষনীয় কনটেন্ট।

1. Internet Archive
পুরাতন বই, অডিও, ভিডিও, ফিল্ম, ম্যাগাজিন এমনকি ওয়েবসাইট আর্কাইভও পাওয়া যায় এখানে।
শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য অন্যতম সেরা রিসোর্স। লাইব্রেরির মতো করে বই “borrow” করে পড়া যায়।
🔗 https: //archive. org

2. PDFDrive
৮ কোটিরও বেশি বই এক ক্লিকে ডাউনলোডযোগ্য। ফিকশন, নন-ফিকশন, টেক্সটবুক– সবই পাওয়া যায়।
🔗 https: //www.pdfdrive. com

3. ManyBooks
৫০,০০০+ ক্লাসিক ও সমকালীন বই, বিভিন্ন ইবুক ফরম্যাটে (Kindle, PDF, ePub)।
🔗 https: //manybooks. net

4. Project Gutenberg
৬০,০০০+ পাবলিক ডোমেইন বই, যেমন Shakespeare, Austen, Dickens – কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই পড়া ও ডাউনলোড সম্ভব।
🔗 https: //www.gutenberg. org

5. Library Genesis (LibGen)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় একাডেমিক ও গবেষণা বইয়ের ভান্ডার। ISBN, নাম, লেখক দিয়ে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
🔗 https: //libgen. is

6. Open Library
“প্রত্যেক বইয়ের একটি পৃষ্ঠা” – এই ধারণা থেকেই তৈরি। অনেক বই অনলাইনে পড়া বা borrow করা যায়।
🔗 https: //openlibrary. org

7. Bookboon
শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক বই, এবং প্রফেশনালদের জন্য soft skills গাইড পাওয়া যায় এখানে।
🔗 https: //bookboon. com

8. Smashwords
ইন্ডি লেখকদের বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। রোমান্স, থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন সহ নানা ধরণের ফ্রি বই এখানে পাওয়া যায়।
🔗 https: //www.smashwords. com

9. Standard Ebooks
উচ্চমানের টাইপোগ্রাফিতে ক্লাসিক বই ডিজিটালি উপস্থাপন। ePub ও Kindle ফরম্যাটে সহজে ডাউনলোডযোগ্য।
🔗 https: //standardebooks. org

10. LibGen (Alternative Mirror)
মূল LibGen কাজ না করলে এই মিরর সাইটটি ব্যবহার করতে পারেন।
🔗 https: //libgen. rs

11. Sci-Hub
বিশ্বজুড়ে একাডেমিক রিসার্চ পেপার বিনামূল্যে পড়ার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম।
🔗 https: //sci-hub. se

12. Anna’s Archive
একটি ওপেন মেটা সার্চ ইঞ্জিন – LibGen, Z-Library, Sci-Hub একত্রে খুঁজে দেয়।
🔗 https: //annas-archive. org

13. PDFRoom
সহজ ও ক্লিন ইন্টারফেসে নানা বিষয়ের বই, সাথে থাকে প্রিভিউ অপশনও।
🔗 https: //pdfroom. com

14. DocDownloader
Scribd, Slideshare, Academia ইত্যাদি লকড ফাইলকে PDF ফরম্যাটে আনলক করে ডাউনলোড করতে সাহায্য করে।
🔗 https: //docdownloader. com

15. PDFDrive. to
PDFDrive-এরই আরেকটি clean ও দ্রুততর ভার্সন, অনেক সময় মূল সাইট কাজ না করলে এটি কার্যকর হয়।
🔗 https: //www.pdfdrive. to

এই ওয়েবসাইটগুলো আপনাকে বিনামূল্যে বই এবং শিক্ষামূলক রিসোর্স দেবে। পড়াশোনা, গবেষণা অথবা নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে এগুলো আপনার জন্য অনেক সহায়ক হবে। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা বেড়ে যাবে।

©️Citation and Copyright
Shahriar Abrar Himel
Oberlin College '28, USA 🎓

02/07/2025

মাইকেল মধুসূদন দত্তের দাম্পত্য জীবন

মধুসূদন দত্ত মনে করতেন, বাঙ্গালী মেয়েরা সৌন্দর্য অথবা গুণের দিক দিয়ে ইংরেজ মেয়েদের একশো ভাগের এক ভাগও নয় ৷ বাঙ্গালী মহিলারা অশিক্ষিত বলে তাদের সঙ্গে স্বামীদের সম্পর্ক কখনো পরিপূর্ণ হয়ে উঠে না ৷ তিনি প্রথম দৃষ্টিতে প্রেমে পড়ায় বিশ্বাসী ছিলেন ৷ যেকালে ছেলেরা অভিভাববকের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হতেন, মধুসূদন সেকালে প্রেম করে বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর ৷ ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র হওয়ায়, ইংরেজ সাহিত্যিকদের জীবনী পড়ে পড়ে তিনি মনে মনে এই পণ করেছিলেন ৷

মা-বাবার একমাত্র আদরের সন্তান হওয়ায় সীমাহীন আদরে মানুষ হলেও, মূল্যবোধ এবং মনোভাবের দিক দিয়ে তিনি যে পিতামাতার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন সেদিকে তাঁর পিতামাতা সচেতন ছিলেন না ৷ তাঁর পিতা রাজনারায়ন যশোর থেকে কলকাতায় এসে ওকালতি করে গরীব অবস্থা থেকে ধনী হয়েছেন ৷ কলকাতার শিক্ষিত ধনীদের সাথে তার উঠাবসা ৷ মধু তার একমাত্র ছেলে ৷ ছেলের জন্য তিনি কলকাতায় সবচেয়ে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন ৷ ইংরেজিতে তুখোড়, ভালো ছাত্র হিসেবে স্কলারশীপ পেয়েছে ৷ কিন্তু প্রচলিত ধর্ম, পূজা পার্বন, সামাজিকতায় ছেলের অনীহা রাজনারায়নকে শঙ্কিত এবং চিন্তিত করে তোলে ৷

সে যুগে বাঙ্গালি সমাজে উঠতি বয়সী তরুণদের আচরণে বা মানসিক কোন সমস্যা দিলে, অভিভাবকগণ বিয়েকে আচ্ছা দওয়াই মনে করতেন ৷ নব্য ধনীর একমাত্র পুত্র হওয়ায় পাত্রী পেতে তেমন কোন সমস্যা হলো না ৷ কিন্তু বিয়ের কথা শোনে তিনি খুশি না হয়ে ঘাবড়ে গেলেন ৷ তাঁর বয়স তখন ঊনিশ ৷ যদিও এই বয়সে তাঁর সহপাঠী বন্ধুরা অনেকে বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁর চিন্তাধারা ছিলো ভিন্ন ৷ তাঁর স্বপ্ন, প্রথম দেখাতে কোন "নীননয়না"র প্রেমে পড়বেন এবং পরে তাকে বিয়ে করবেন ৷ তখনো এমন কারো দেখা পেয়েছেন বলে মনে হয় না, আর পেলেও কিছু করার ছিলো না ৷ যেহেতু পিতার আয়ের উপর নির্ভরশীল তাই পিতার আদেশ অমান্য করার মত কোন হিম্মত তাঁর ছিলো না ৷

তিনি যখন যে আবদার করেছেন, মা-বাবা তার সবটাই পূরণ করেছেন ৷ জীবনে এই প্রথম তিনি সত্যিকারের একটা সমস্যার মুখোমুখি হলেন ৷ অতি আদরের সন্তান হলেও বাবার সামনে সরাসরি কথা বলার সাহস ছিলো না ৷ মা কে বলেছিলেন, কিন্তু মা বুঝতে পারলেন না, ছেলে কেন পরীর মত সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবে না! সব ছেলেই বিয়ের আগে এমন না না করে, বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যায়; তাই মা জাহ্নবী দেবীও তাঁর কথাকে গুরুত্ব দিলেন না ৷ মা-বাবা এবং অন্যদের কাছে এটি কোন সমস্যা না হলেও, তাঁর কাছে এটি ছিলো জীবন মরণ সমস্যা ৷ সমস্যা সমাধানে মধু ভিন্ন পথ বেছে নেন ৷

তিনি ভাবলেন, মিশনারিদের কাছে গিয়ে তিনি যদি খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন, তাহলে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি শিকার হবে ৷ ধর্মান্তরিত হওয়ায় বিয়ে ভেঙ্গে যাবে ৷ খৃষ্টান সমাজ এবং ইংরেজ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাবেন ৷ সুপ্রতিষ্ঠিত লোকদের ছেলেরা খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলে মিশনারিরা সম্মানের বিষয় হিসেবে গণ্য করত ৷ এতে তাঁর বিলেত গিয়ে ইংরেজ কবি গিয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হবে ৷ তিনি কলকাতার যে কলেজে পড়তেন সে কলেজের নাম হিন্দু কলেজ হলেও এটি খৃষ্টান মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত হত ৷ সে সুবাধে খৃষ্ট ধর্মের প্রতি আগেই তাঁর দূর্বলতা ছিলো ৷

১৮৪৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি বিয়ের মাত্র ১৫ দিন পূর্বে ওল্ড মিশন চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন । তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি । মধুসূদন দত্ত পরিচিত হন "মাইকেল মধুসূদন দত্ত" নামে ৷ ধর্মান্তরের মাধ্যমে আয়োজিত বিয়ের ফাঁস থেকে মুক্তি পেলেন, ডিলট্টির সাথে তাঁর ইংল্যান্ড যাওয়া ঠিকও হলো, কিন্তু রাজনারায়ন তাকে আশ্বস্ত করলেন তিনি নিজ খরচে মধুকে বিলেত পাঠাবেন ৷ ছেলে ধর্মান্তরিত হওয়ায় সামাজিক রোষানলের ভয়ে সরাসরি সম্পর্ক না রাখলেও তিনি তাঁর পড়ালেখার খরচ বহন করতেন ৷ ভেবেছিলেন, এক সময় ছেলে ভুল বুঝতে পেরে স্বধর্মে ফিরে আসবে ৷ জন্ম দিলেও তিনি ছেলের মন বুঝতে ব্যর্থ হন ৷

ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও রাজনারায়ন তিন বছর তাঁর পড়ালেখার খরচ বহন করেন ৷ তিনি যখন বুঝতে পারলেন ছেলেকে ফেরানোর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ, তখন টাকা-পয়সা দেওয়া বন্ধ করে দেন ৷ রাজনারায়নের আর কোন সন্তান ছিলো না, ওদিকে জাহ্নবী দেবীরও আর সন্তান হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই ৷ তাই আরেকটি সন্তানের জন্য রাজনারায়ন শিবসুন্দরী নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন ৷ বিয়ের কয়েক দিন পরেই শিবসুন্দরী মারা যায় ৷ লেখাপড়ার খরচ বন্ধ হতে পারে সেটা মাইকেল ধর্মান্তরিত হওয়ার পর পরই বুঝেছিলেন ৷ চিরকাল বিলাসের মাঝে বড় হওয়া মানুষ এবার কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হলেন ৷

জীবিকার জন্য তিনি "মাদ্রাজ মেইল এ্যান্ড ফিমেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম অ্যান্ড বয়েজ ফ্রী ডে" তে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ৷ যেসব ইউরোপিয়ান বা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান যথেষ্ঠ সঞ্চয় না রেখে অপ্রাপ্ত সন্তান রেখে মারা যেত তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য এটি স্থাপিত হয়, দেশীয় ভাষায় যাকে বলে অনাথ আশ্রম ৷ তাঁর বেতন ছিলো মাত্র ৪৬ টাকা ৷ এই প্রতিষ্ঠানেরই অনাথ ছাত্রী রেবেকা ৷ শৈশব থেকে কবি যে নীল নয়নার স্বপ্ন দেখতেন, এবার যেন তার বাস্তব অবয়ব সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ রেবেকার সাথে পরিচয়ের পর তাঁর প্রেমে পড়তে রোমান্টিক মাইকেলের দেরি হয়নি ৷ এবার বিয়ের পালা ৷

তখন পর্যন্ত ইংরেজ এবং এ্যাংলো ইন্ডিয়ান শ্বেতাঙ্গরা দেশীয় মেয়েদের বিয়ে বা রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করলেও কোন দেশী কৃষ্ণাঙ্গ ছেলে শ্বেতাঙ্গ মেয়েদের বিয়ে করেনি ৷ সেকালে বর্ণ বিদ্বেষ চরম ছিলো ৷ শ্বেতাঙ্গ সমাজ কৃষ্ণাঙ্গ সমাজকে মানুষের মর্যাদা দিতে কুন্ঠাবোধ করত ৷ তাই এটি ছিলো অসম্ভব ব্যাপার ৷ স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ এ্যাংলো ইন্ডিয়ান সমাজ বিয়েতে বাধা দিলো ৷ অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অরফ্যান অ্যাসাইলামের হেড মাষ্টার জেসি রে এবং পরিচালক রবার্ট পসনেটের সহায়তায় ১৮৪৮ সালে ৩১ শে জুলাই কবি রেবেকাকে বিয়ে করেন ৷

বিয়ের পর সংসারের চাপে কবির অর্থকষ্ট বাড়ছিলো ৷ খৃষ্টান হওয়ার পরেও যিনি বাবার কাছ থেকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হাত খরচ পেতেন (মায়ের কাছে থেকে যা নিতেন তার কোন হিসাব নেই ) মাসে পঞ্চাশ টাকার চেয়েও স্বল্প আয় দিয়ে তাঁর পক্ষে কি সংসার করা সম্ভব! যদিও সংসারে নিদারুণ অভাব, তবু মাইকেল রেবেকার ভালোবাসায় কোন অভাব ছিলো না ৷ তাদের প্রণয়ের ফসল হিসেবে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান ব্যর্থা ব্লানশ ৷ সন্তান জন্মের পর আর্থিক অনটনে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন ৷ লেখালেখির অভ্যাস আগেই ছিলো, তাই বাড়তি আয়ের জন্য পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন ৷

সন্তান জন্মদানের পর রেবেকার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছিলো ৷ তাই, স্বাস্থ্য পুনরূদ্ধরারের আশায় রেবেকা তাঁর জন্মস্থানে নাগপুরে স্বজনদের কাছে বেড়াতে যান ৷ দাম্পত্য জীবনের এক বছর সাত মাসের মধ্যে এই প্রথম স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন থেকে দূরে অবস্থান করছেন ৷ কবির কাছ থেকে রেবেকা এই প্রথম দূরে অবস্থান করলেও এই সময় এমন এক ঘটনা ঘটে যা পরবর্তীতে তাদের দু'জনকে চিরদিনের মত দূরে সরিয়ে দেয় ৷

১৮৫১ সালে দ্বিতীয় কন্যা ফীবির জন্ম ৷ একই বছর কবির মা জাহ্নবী দেবী মারা যান ৷ জাহ্নবী দেবীর মৃত্যুর পর তাঁর পিতা রাজনারায়ন সন্তানের আশায় আরো দু'টি বিয়ে করেন ৷ ওদিকে রেবেকা তৃতীয় বারের মত গর্ভবতী হন ৷ এতে কবির অভাববোধ তীব্রতর হতে থাকে ৷ তিনি অনাথ আশ্রম ছেড়ে মাদ্রাজ স্কুলে জয়েন করেন ৷ সহকর্মী জর্জ হোয়াইটের সঙ্গে তাঁর পূর্ব থেকেই বন্ধুত্ব ছিলো ৷ শিক্ষকতার পাশাপাশি জর্জ হোয়াইট কবি যে অনাথ আশ্রমে কাজ করতেন তার পরিচালক মন্ডলীর সদস্য ছিলেন ৷

রেবেকা যখন প্রথম স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যান, তখন জর্জ হোয়াইটের স্ত্রী মারা যায় ৷ স্ত্রী মারা যাবার কয়েক দিনের মধ্যে চল্লিশোর্ধ্ব জর্জ হোয়াইট ষোল বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে করেন ৷ জর্জ হোয়াইটের প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন ছেলে-মেয়ে ৷ তার বড় মেয়ে অ্যামেলিয়া হেনরিয়েটা সাফাইয়ার বয়স সতের ৷ বয়সের কারনে বা বিমাতা সুলভ স্বভাবের কারনে, জর্জ হোয়াইটের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের সাথে সম্পর্কটা ভালো ছিলো না ৷ বন্ধু সহকর্মীর সন্তানদের বিমাতার সংসারে অশান্তির ভূক্তভোগী হতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই কবির দরদ উথলে উঠে ৷ দুঃখ কাতর হেনরিয়েটাও এই সহানুভূতি গ্রহণ করতে দ্বিধা করেননি ৷ এই সহানুভূতি থেকে ক্রমে দু'জনের মধ্যে প্রণয়সম্পর্ক গড়ে উঠে ৷ এরই মাঝে রেবেকা চতুর্থ বারের মত মা হন ৷

স্ত্রী এবং চারটি সন্তানকে নিয়ে কবি যখন মাদ্রাজে সংসার গুচিয়ে বসেছেন, তখন কলকাতা থেকে বন্ধু গৌরদাস তাঁর পিতার মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠান ৷ পিতার প্রতি যতই মনঃকষ্ট থাকুক, পিতা নেই; এমন সংবাদে যে কোন সন্তানই বিচলিত হয় ৷ গৌরদাস আরো জানান, তাঁর বাবার সম্পত্তি নিয়ে অন্যরা কাড়াকাড়ি করছে ৷ জাহ্নবী দেবী ছাড়া রাজনারায়নের অন্য তিন স্ত্রীর ঘরে কোন সন্তান হয়নি, তাই মাইকেলই ছিলেন একমাত্র উত্তরাধিকারী ৷ সম্পত্তি ভোগ দখলের আশায় তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে কেউ কেউ রটিয়ে দেন মাইকেল মারা গেছেন, কেউ রটিয়ে দেন রাজনারায়ন তাকে ত্যাজ্য করেছেন ৷ এমতাবস্থায় চিঠি পেয়ে তিনি গৌরদাসকে লিখেন—

"প্রিয়তম গৌর, তুমি তো জানো কলকাতায় যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়! দারুণ খরচসাপেক্ষ, বিশেষ করে আমার মতো হতভাগার জন্য! তবে তুমি যদি আশ্বাস দাও যে, বাবার সম্পত্তি থেকে আমার যাবার খরচ উশুল হবে, তা হলে কলকাতা, আমার পুরোনো কলকাতার উদ্দেশ্যে পাল তুলতে রাজি আছি ৷"

গৌরদাসের চিঠি থেকে সম্পত্তির পরিমাণ এবং তা পাওয়ার ভরসা পেয়ে, তিনি দ্বিতীয় বারের মত কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন ৷ ঠিক এমন সময়েই তাঁর সুখের সংসারে ঝড় উঠে ৷ সে ঝড় তাকে এতদূর নিয়ে যায় যে বাকি জীবন তিনি প্রিয়তমা স্ত্রী রেবেকা আর চার সন্তানের কাছে ফিরতে পারেননি ৷ সহকর্মী জর্জ হোয়াইটের মেয়ে হেনরিয়েটার প্রতি যে তাঁর যে সহমর্মিতা প্রেমে রূপ নিয়েছিলো তা জানাজানি হয়ে যায় ৷

সমাজ, সংসার, আত্মীয়, স্বজন সবার বাধাকে তুচ্ছ করে শ্বেতাঙ্গ রেবেকা নাম পরিচয়হীন, কৃষাঙ্গ নিঃস্ব কবিকে বিয়ে করেছিলেন ৷ যার ভালোবাসা যত গভীর তার ঘৃণাও তত গভীর ৷ কবির এমন বিশ্বাসঘাতকতায় রেবেকা মানসিকভাবে মারাত্মক আহত হন ৷ তাই কবি বেশ কয়েকবার কলকাতায় আসার আহবান করলেও রেবেকা তাঁর ডাকে সাড়া দেননি ৷ কবির যেসব শ্বেতাঙ্গ বন্ধু-বান্ধব মাদ্রাজে তাকে বিয়েতে সহায়তা করেছিলেন, স্ত্রীর প্রতি প্রবঞ্চনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁর আর তাদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর উপায় ছিলো না ৷ তাই অসম্মানের ভয়ে তিনিও মাদ্রাজে যেতে পারেন নি ৷ বার বার রেবেকার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে কবি হেনরিয়েটাকে কলকাতায় আসার আমন্ত্রণ জানায় ৷

১৮৫৮ সালের কোন এক সময় হেনরিয়েটা কলকাতায় আসেন ৷ প্রায় ছয় বছর প্রণয়লীলা চলার পর কবির সাথে তাঁর মিলন হয় ৷ কলকাতায় আসার পর কবি পৈতৃক সম্পত্তি পুনরূদ্ধার করেন, লেখক হিসেবে তাঁর আসনও মোটামুটি পাকাপোক্ত হয় ৷ কিন্তু তিনি যে মাদ্রাজে সহায়হীন স্ত্রী এবং সম্বলহীন চার চারটি সন্তান রেখে এসেছিলেন তাদের কোন খোঁজ খবরই রাখলেন না ৷ সে সময় মাদ্রাজকে পরবাস বলা হত ৷ কলকাতা করে জাহাজে করে মাদ্রাজে যেতে হত বলে, কবির কোন শুভাকাংখী বন্ধু তাঁর ঐ সন্তানদের কোন খোঁজ খবর রাখেননি ৷ আর কবি ছাড়া কেউ তাদের ব্যাপারে জানত না বিধায় তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷

জগত সংসারে কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা সুখে থাকলে ভূতে কিলায় ৷ কবিও তাদের একজন ৷ কেবল কর্পদকহীন কবি খ্যাতি নিয়ে তিনি সুখী হতে চাননি ৷ আইনজীবী হিসেবে পিতাকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে দেখেছেন, তাই তিনিও আইন পড়ায় মনোনিবেশ করলেন ৷ তখন কলকাতায় প্রায় ৩০ জন ব্যরিষ্টার এবং ৮৪ জন অ্যাটর্নী ছিলেন ৷ কিন্তু তাদের সবাই ইংরেজ বা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ৷ কবি ভাবলেন, তিনি যদি বিলেত থেকে ব্যারিষ্টার হয়ে আসতে পারেন তাহলে, প্রচুর অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি প্রথম বাঙ্গালী ব্যরিষ্টার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে পারবেন ৷ তাঁর ঘাড়ে বিলেত যাবার সেই পূরনো ভূত চেপে বসলো ৷

তাঁর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বিলেত যাবার জন্য তিনি কিছু পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করলেন ৷ যে সকল আত্মীয়- স্বজন তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করেছিলো, সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়ের একটা অংশ প্রদান করার শর্তে তাদেরকে কিছু সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব অর্পণ করে স্ত্রী সন্তানদের কলকাতায় রেখে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান ৷ তাঁর যেসব জ্ঞাতি ভাইদের কাছে তিনি সম্পত্তি দেখাশোনার ভার দিয়েছিলেন তারা চুক্তি মোতাবেক কোন অর্থতো প্রদান করেনি, উল্টো বিভিন্নভাবে হেনরিয়েটা এবং তার সন্তানদের ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করতে লাগলো ৷ তারা ভেবেছে, মাইকেল দেশ ছাড়া, এই অবস্থায় যদি তাঁর স্ত্রী সন্তানদের দেশ ছাড়া করা যায় তাহলে সম্পত্তি আবার তারা ভোগ দখল করতে পারবে ৷

এই পরিস্থিতিতে নিরুপায় হয়ে কবি কলকাতা ত্যাগ করার সাড়ে নয় মাস পর ১৮৬৩ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকে হেনরিয়েটা কলকাতা ত্যাগ করে লন্ডনের পথে যাত্রা করেন ৷ পরিবার লন্ডনে যাবার ফলে কবির বিপদ বেড়ে যায় অনেকগুণ ৷ অর্থাভাবে তাঁর ব্যরিষ্টারি পড়ায় ভাটা পড়ে ৷ লন্ডনের চেয়ে ফ্রান্সে জীবন যাত্রার ব্যয় কম হওয়ায় লন্ডন ছেড়ে তিনি ফ্রান্সের ভার্সাইতে বাস করতে শুরু করেন ৷ সেখানে প্রায় আড়াই বছরের মত বাস করলেও তিনি কোন কাজ পাননি ৷ বাড়িওয়ালা, পাড়ার দোকানদার, দাতব্য সংস্থা সহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চলতে থাকেন ৷ জ্ঞাতি ভাই এবং অন্যান্যদের কাছে পাওনা টাকা চেয়ে পত্র পাঠালেও তাদের কোন সাড়া পাননি ৷ অবশেষে বিস্তারিত জানিয়ে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাহায্য কামনা করেন ৷

বিদ্যাসাগর মাইকেলের জ্ঞাতি ভাইদের কাছ থেকে কোন সদুত্তর না পেয়ে নিজের পকেট থেকে তাঁর জন্য টাকা পাঠান ৷ এরপর বিদ্যাসাগরকে সম্পত্তির পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দান করে সেগুলো বিক্রি করে দিতে বলেন ৷ তিনি সম্পত্তি বিক্রি না করে বন্ধক রেখে কবির জন্য টাকা পাঠাতে শুরু করেন ৷ কিন্তু কবির ঋণ এবং আর্থিক চাহিদার পরিমান এত বেশি ছিলো যে উপায়অন্ত না পেয়ে বিদ্যাসাগর তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হন ৷ অবশেষে বিদ্যাসাগরের আন্তরিক সহযোগিতার ফলে ১৮৬৭ সালে ব্যরিষ্টারি পাশ করে তিনি কলকাতায় আসেন ৷ হেনরিয়েটা পাঁচ মাসের গর্ভবতী থাকায় তাকে লন্ডনে রেখে আসতে হয় ৷

কবির অনেকগুলো নেশার মাঝে সবচেয়ে বড় নেশা ছিলো ঘন ঘন বাড়ি পরিবর্তন করা ৷ যখনই একটু আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতেন, তখনই তিনি বাড়ি পরিবর্তন করতেন ৷ আয়ের সাথে সাথে তাঁর বাড়ি ভাড়ার ব্যয় বৃদ্ধি পেত ৷ যার কারনে আমৃত্যু তিনি অর্থকষ্টে ভূগেছেন ৷ দেশে আসার পর তাঁর জন্য বিদ্যাসাগর যে বাড়ি ভাড়া করেছিলেন তাতে না উঠে তিনি বিলাসবহুল স্পেন্সেস হোটেলে উঠেন ৷ তখনো তিনি ব্যরিষ্টার হিসেবে কলকাতা বার এসোসিয়েশন থেকে ওকলতির লাইসেন্স পাননি, হাতে কোন মামলাও নেই, এমতাবস্থায় স্পেন্সেস হোটেলের মত বিলাস বহুল ঘরে থাকা যে তাঁর জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত, বিদ্যাসাগর তাকে এ কথা বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হন ৷ তিনি চাইছিলেন কবি আগে প্রতিষ্ঠিত হোক ৷

বেহিসেবী কবি ব্যরিষ্টারি পড়তে গিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি খুইয়েছেন ৷ ব্যরিষ্টার হিসেবেও তিনি তেমন একটা সাফল্য অর্জন করতে পারলেন না ৷ আদালতে যুক্তি তর্কের পরিবর্তে তিনি কবিতা শুনিয়ে থাকেন ৷ তাঁর চেয়ে দেশী উকিলদের মক্কেল এবং আয় বেশি ৷ স্পেন্সেস হোটেলে প্রথম দিকে তাকে খুব খাতির করলেও, ঋণ বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে সেখানে সম্মানে টান পড়ে ৷ তবুও তাঁর বাবুগিরি একটুও কমেনি ৷ এধরনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারনে বিদ্যাসাগরের সাথে তাঁর সম্পর্কের চিড় ধরে ৷

কবি যখন কলকাতায় বাবুগিরিতে ব্যস্ত, হেনরিয়েটা তখন লন্ডনে সদ্য প্রসূত সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন ৷ অব্যাহত আর্থিক অনটনের কারনে হতাশা ও নিঃসঙ্গতা থেকে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন ৷ কবি নিজেও মদ পান করতেন, হেনরিয়েটা পূর্ব থেকেই কবিকে সঙ্গ দিতে গিয়ে অল্প বিস্তর মদ পান করতেন ৷ কবির অনুপস্থিতে এবার পুরোপুরি আসক্ত হয়ে পড়েন ৷ এ সময়ে হেনরিয়েটা শারিরীক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ সংকটে পড়ে মাতাল হলেও তিনি কান্ডজ্ঞান হারাননি ৷ তিনি কলকাতায় ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন ৷

১৮৬৯ সালের দিকে হেনরিয়েটা সন্তানদের নিয়ে দেশে ফিরে আসেন ৷ ব্যারিষ্টার স্বামীর যে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সে আশায় গুঁড়োবালি ৷ দু' বছর আইন ব্যবসা করেও কবি এক পয়সা সঞ্চয়তো দূরের কথা ঋণ থেকেই মুক্ত হতে পারেন নি ৷ এই দুই বছরে কবি অনেক মোটা হয়ে গেছেন ৷ হেনরিয়েটা কবিকে হোটেল ছাড়তে রাজি করান ৷ সন্তানদের ভবিষৎ নিরাপদ করার স্বপ্নে হোটেলের বিলাসিতা ছেড়ে তিনি কবিকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে উঠেন ৷ বাড়ির ব্যাপারে কবি সব সময়ই বিলাসী ছিলেন ৷ কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়ার মত একটা ঘর হলেই চলবে, এমন ধারাণায় তিনি বিশ্বাস করতেন না ৷

লাউডন স্ট্রীটে যে পাড়ায় তিনি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন সে এলাকাটা ছিলো কলকাতার সবচেয়ে বিলাস বহুল পাড়া ৷ এপাড়ায় একজনও দেশী লোক ছিলো না ৷ বাড়ি ভাড়া ছিলো চারশ টাকা ৷ কবি এ বাড়ি সাজিয়েছিলেন অত্যাধুনিক আসবাবপত্র এবং বিলাসিতার নানান উপকরণ দিয়ে ৷ বিলাসিতার উপকরণ এবং চাকর চাকরাণী রাখতে গিয়ে তাঁর অনেক খরচ হত ৷ ব্যরিষ্টারি করে তিনি যা আয় করতেন তার চেয়ে বেশি ব্যয় করার কারনে তার কোন সঞ্চয় ছিলো না ৷ দীর্ঘদিন থেকে অতিরিক্ত মদপান এবং অনিয়মের কারনে তাঁর স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হতে থাকে ৷ স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার কারনে তাঁর কাজ করার ক্ষমতা কমে যায় ৷

তাঁর স্বাস্থ্য এত দ্রুত ভেঙ্গে পড়ছিলো যা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি ৷ গলায় ঘা দেখা দিয়েছিলো ৷ মাঝে মাঝে গলা দিয়ে রক্ত পড়ত ৷ জ্বর হতো কখনো কখনো ৷ ভালো করে নড়াচড়ার ক্ষমতাও তাঁর লোপ পাচ্ছিলো ৷ ওদিকে সময়মত বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় একটার পর একটা বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হচ্ছিলো ৷ শেষে তাঁর আশ্রয় জুটলো বস্তিতে ৷ নিদারুণ অনটন, রোগ কাতর দেহ এবং সর্বোপরি সন্তানদের ভবিষৎ সম্পর্কে উদ্বেগ তাকে একান্তভাবে বিপন্ন করে তোলে ৷ এই পরিস্থিতিতে কবি মরিয়া হয়ে তের বৎসর বয়সী কন্যা শর্মিষ্ঠার বিয়ে ঠিক করেন ৷ শর্মিষ্ঠার বিয়ের পর কবি এবং হেনরিয়েটা উভয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷

শর্মিষ্ঠার স্বামীর বাড়িতে হেনরিয়েটার এবং আলিপুর হাসপাতালে কবির চিকিৎস্যা চলতে থাকে ৷ হাসপাতালে তিনি সাত অথবা আট দিন ছিলেন ৷ এরই মাঝে তিনি হেনরিয়েটার মৃত্যুর সংবাদ পান ৷ ১৮৭৩ সালের ২৬ জুন হেনরিয়েটা যখন মারা যান তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৩৭ বছর ৷

রেবেকা ছিলেন গরীব গোলন্দাজের মেয়ে ৷ মাত্র সাড়ে বার বছরে পিতা মারা যাওয়ায় তাঁর স্থান হয়েছিলো অনাথ আশ্রমে ৷ পড়ালেখাও তেমন ছিলো না ৷ কোনো দিন স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে মানুষ হননি বলেই হয়ত চাহিদাটাও বেশি ছিলো না ৷ আর তাছাড়া মাইকেলের যে চাল-চুলো নেই, সব জেনে শোনেই তিনি কবিকে বিয়ে করেছেন ৷ তাই, কবির দারিদ্র্যতার সাথে মানিয়ে নিতে তাঁর কোন কষ্ট হচ্ছিলো না ৷

হেনরিয়েটার পিতা জর্জ হোয়াইট ছিলেন সাহিত্যের শিক্ষক ৷ সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর মোটামুটি ধারণা ছিলো ৷ পরবর্তীতে তিনি বাংলাও শিখেছিলেন এবং বিভিন্ন সময় লেখালেখিতে কবিকে সহায়তাও করেছিলেন ৷ তাঁরও তেমন বেশি চাহিদা ছিলো এমন বলা যায় না ৷ কিন্তু মাইকেল ছিলেন অন্য দশ জনের চেয়ে একটু আলাদা ৷ তিনি অর্ধেক বাস্তব আর অর্ধেক কল্প জগতে বাস করতেন ৷

রেবেকা যদি তাঁর বাস্তব জীবনের যোগ্য সঙ্গীনী হয়ে থাকেন, তাহলে হেনরিয়েটা ছিলেন তাঁর কল্প জগতের যোগ্য সঙ্গিনী ৷ খৃষ্ট ধর্মানুসারে একাধিক স্ত্রী রাখার বিধান নেই ৷ এখনো ইংরেজ সমাজে দশটা গার্লফ্রেন্ড রাখার অনুমতি থাকলেও একটার বেশি বৌ রাখার অনুমতি নেই ৷ খৃষ্ট ধর্মে তালাক দেওয়ার বিধান ছিলো না ৷ পরবর্তীতে আইন করে তালাক দেওয়ার বিধান চালু করা হয় ৷

রেবেকা কবিকে ডিভোর্স দেয়নি বলে, হেনরিয়েটাকে তাঁর জীবনসঙ্গী হিসেবে পরিচয় দিলেও চার্চে গিয়ে তাকে বিয়ে করতে পারেন নি ৷ কিন্তু তাঁর প্রতি কবির ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না ৷ তাইতো হেনরিয়েটার মৃত্যুর সংবাদ শোনে কবি ব্যাকুল হয়ে বলেছিলেন , "বিধাতা, তুমি একই সাথে আমাদের দু'জনকে নিলে না কেন?"

কবির আক্ষেপ হয়ত বিধাতা শুনেছিলেন ৷ হেনরিয়েটার মৃত্যুর মাত্র তিন দিন পর ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷ আর রেবেকা মারা যান তারও অনেক বছর পরে ১৮৯২ সালে ৷

25/06/2025

🔴পলাশির যুদ্ধের সাত-সতেরো 🔴

১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব আলীবর্দি খান মারা যান। এরপর তাঁর পৌত্র সিরাজ-উদ- দৌলা বাংলার সিংহাসন আরোহন করেন।

সিংহাসন আরোহনের কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সাথে তাঁর বিরোধ বাঁধে, যার চূড়ান্ত পরিনতি হল ১৭৫৭ সালের, ২৩ শে জুন পলাশির যুদ্ধ।

এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধের কারণগুলি পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন বর্তমান নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরের প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত পলাশীর প্রান্তরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং বাংলার নবাব সিরাজ উদ্ দৌলার মধ্যে সংঘটিত হয় পলাশীর যুদ্ধ।

এ যুদ্ধ প্রায় আট ঘণ্টার মতো স্থায়ী ছিল এবং প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতার কারলে বাংলার নবাব কোম্পানি কর্তৃক পরাজিত হন।

এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ও ধ্বংসাত্মক ।

এর ফলে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলাকে কেন্দ্র করেই ক্রমান্বয়ে সমগ্ৰ ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তার করে পরবর্তীতে তারা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপনে সক্ষম হয়।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রায় সমগ্ৰ ভারতবর্ষ গ্রাস করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে এশিয়ার অন্যান্য অনেক অংশও ভারতীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

২৩শে জুন ১৭৫৭ সাল। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিনটি অন্যসব দিনের চেয়ে ছিল কিছুটা আলাদা। ২৬৮বছর আগে এদিনে ভাগিরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে বাংলা-বিহার- উড়িষ্যাসহ পুরো উপমহাদেশের স্বাধীনতার কবর রচিত হয়েছিল।

বাংলার নবাব আলীবর্দী খান মারা যান ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল। নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ই এপ্রিল বাংলার মসনদে আরোহণ করেন নবাব আলীবর্দী খান এর কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলা।

সিরাজউদ্দৌলার বয়স তখন মাত্র ২২ বছর। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই নবাব দেখেন চারিদিকে দেশীয় বণিক, বিশ্বাসঘাতক ও ইংরেজ বেনিয়াদের চক্রান্ত।

যার পরিণতিতে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাস্ত হন। ফলে প্রায় ২০০ বছরের জন্য বাংলা স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নদিয়া জেলার পলাশীর প্রান্তরে রবার্ট ক্লাইভ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ চক্র এই কালো দিবসের জন্ম দেয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে এই স্বার্থান্বেষী ষড়যন্ত্রীদের শিকার ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং তার বিশ্বস্ত সেনাপতি বকসী মীরমদন, প্রধান আমাত্য মোহনলাল কাশ্মিরী ও নবে সিং হাজারী।

কলঙ্কজনক এই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অধ্যায় সৃষ্টির পেছনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বিশ্বাসঘাতক জগৎ শেঠ, মীরজাফর, মাহতাব চাঁদ, উমিচাঁদ বা আমির চন্দ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, ইয়ার লতিফ, রায়দুর্লভ, ঘসেটি বেগমের ক্ষমতার লোভ।

রাজা রাজবল্লভ, মহারাজ নন্দকুমার, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়, রানী ভবানী প্রমুখের কৌশলী চক্রও এর পেছনে প্রচ্ছন্ন ছিল।

ইতিহাসবিদ ব্রিজেন গুপ্ত যুক্তি সহকারে ঐতিহাসিক হিলের মত খণ্ডন করে বলেছেন, নবাবের ‘অহমিকাবোধ' এবং ‘অর্থলোভ' নয়, ঐশ্বর্য ও ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার মোহে মত্ত ইংরেজরাই পলাশির যুদ্ধের জন্য দায়ী।

২৩ জুন, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা ও ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লর্ড ক্লাইভের মধ্যে এক বহু ঘটনাবহুল যুদ্ধ বাধে ।

এতে নবাব বাহিনীর পক্ষে সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ছিল মাত্র ৩ হাজার।

যুদ্ধের ময়দানে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও তার অনুসারী প্রায় ৪৫ হাজার সৈন্য নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

ফলে যুদ্ধে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির পরাজয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের সেবাদাসদের সাহায্যে এভাবেই বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

এরপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছর এদেশে শাসন শোষণ করে। কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদ এদেশ থেকে ইংল্যান্ডে পাচার করে। বাংলা থেকে লুটকৃত পুঁজির সাহায্যে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটে। আর এককালের প্রাচ্যের স্বর্গ সোনার বাংলা পরিণত হয় শ্মশান বাংলায়, ।

এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল ধ্বংসাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। পলাশীর যুদ্ধের এই নৃশংস ও কলঙ্কজনক ঘটনার মাধ্যমে কলকাতা কেন্দ্রিক একটি নতুন উঠতি পুঁজিপতি শ্রেণী ও রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে।

ইংরেজও তাদের এ দেশীয় দালালগোষ্ঠী দেশবাসীর ওপর একের পর এক আগ্রাসন চালায়। ফলে দেশীয় কৃষ্টি- সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে।

বিখ্যাত পর্তুগিজ ঐতিহাসিক বাকসার পলাশীর যুদ্ধকে গুরুত্বের দিক থেকে পৃথিবীর সেরা যুদ্ধগুলোর অন্যতম মনে করেন।

বহু কারনের সমষ্টিগত ফলস্বরূপ ইংরেজরা নবাবকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সৈন্যবাহিনী নিয়ে মুর্শিদাবাদের পথে অগ্রসর হয়।

সিরাজও তার বাহিনী নিয়ে পলাশীর পথে অগ্রসর হন। ২৩ জুন সকাল ৮টার দিকে যুদ্ধ শুরু হয়। ইংরেজদের বাহিনীর তুলনায় নবাবের বাহিনীর আকার অনেক বড় হলেও মীরজাফর, ইয়ার লতিফ এবং রায় দুর্লভের অধীনস্থ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সৈন্য নিষ্ক্রিয় দাঁড়িয়ে থাকে।

মীর মর্দান, মোহনলাল, খাজা আব্দুল হাদী খান, নবে সিং হাজারীর নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা এবং ফরাসী সৈনিকদের একটি দল যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

যুদ্ধ চলাকালে বৃষ্টিতে নবাব এবং ফরাসীদের কামানের গোলায় ব্যবহৃত গানপাউডার ভিজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু ইংরেজরা তাদের গান পাউডার সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়।

জানা যায়, ক্লাইভ দিনে যুদ্ধ চালিয়ে রাতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে বেলা তিনটার দিকে কামানের গোলার আঘাতে মীরমদন নিহত হলে নবাব ভেঙে পড়েন এবং মীর জাফরের কাছে পরামর্শ চান। মীরজাফর নবাবকে যুদ্ধ বন্ধ করে পরবর্তী দিনে নতুন উদ্যমে যুদ্ধ করার পরামর্শ দেন।
মোহনলালের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও নবাব যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দেন। নবাবের সৈন্যরা পিছু হটে আসে। মীরজাফরের বার্তা পেয়ে ইংরেজরা নবাবের অপ্রস্তুত বাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে।

ফলে প্রায় ২০০ বছরের জন্য বাংলা স্বাধীনতা হারায়। প্রতি বছর সে জন্য ২৩ জুন পলাশী দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৭৫৭ সালের এইদিনে পলাশী প্রান্তরে রবার্ট ক্লাইভ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ চক্র এই কালো দিবসের জন্ম দেয়।

বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ফলাফল বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এর ফলে কেবল বাংলা বা ভারতবর্ষ নয় বরং পুরো পৃথিবীর ইতিহাসই প্রভাবিত হয়েছে,
যা হয়তো লর্ড ক্লাইভ বা মীর জাফরও কোনদিনও ভাবতে পারেনি।আসলে পলাশীর যুদ্ধের ফলে বাংলায় তাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার দুয়ার খুলে যায়। পুরো বিশ্ব রাজনীতিতেই এযুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল।

1. পলাশীর যুদ্ধের ফলে ১৭৫৭ সালে বাংলায় বৃটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে ভারতবর্ষ পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে ২৫ শতাংশ অবদান রাখত।

আর এর অর্ধেকই আসত বাংলা থেকে অর্থাৎ বিশ্ব অর্থনীতির ১২.৫ শতাংশ আসত বাংলা থেকে। সেসময় ব্রিটিশরা বিশ্ব অর্থনীতির মাত্র ২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত।

আর ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যায় তখন বিশ্বে ভারতীয় অর্থনীতি ছিল মাত্র ২ শতাংশ আর বৃটিশরা এসময় বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ বলে বিবেচিত হতো।

এথেকেই বোঝা যায় কী বিপুল পরিমাণ সম্পদ বাংলা ও ভারতবর্ষ থেকে লুট হয়েছে।পলাশীর যুদ্ধ বিজয়ের পর লর্ড ক্লাইভের সময়ে বাংলার বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়ে যায়।
এমনকি এসময় এত পরিমাণ সম্পদ বৃটেনে পাচার হতো যে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ মাসের জাহাজ জট সৃষ্টি হতো, আর পুরো ভারতের কী বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুট হয়েছে তা সহজেই বোঝা যায় ।

2. আর এখন ঐতিহাসিক কালপর্বে চিন্তা করলেও এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর ফলেই ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। এর সাথে জন্ম নেয় কাশ্মীর সমস্যা ।

3. অপরদিকে ভারত একটি বিশাল আয়তন ও অর্থনীতির অধিকারী হওয়ায় এবিশাল সামরিক ব্যয় বহন করতে তেমন চাপের সৃষ্টি হয় না। (দেশ তার বাজেটের তারপরও ৩ শতাংশের মতো অর্থ সামরিক খাতে ব্যয় করে থাকে।) তবে ভারতও তাদের শ্রেণিবৈষম্যের কারণে প্রত্যাশিত উন্নতি করতে পারেনি। তারপরও আমাদের দেশটি ব্রিটেনকে অর্থনৈতিকভাবে পেছনে ফেলেছে কিন্তু তা করতে ভারতের প্রায় অনেকটাই সময় লেগে গিয়েছে ।
এথেকে বোঝা যায় যে, বৃটিশ শোষণ ও এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের ভাঙন না ঘটলে দেশগুলো আরও এগিয়ে থাকত। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি ভারতে বৃটিশরা শাসন না করত তাহলে ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতো ১৭ শতাংশের মতো যা বর্তমানে গড়ে ৭ শতাংশের মতো। কিন্তু এখনও ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তাদের বিশাল যুব সমাজের কারণে অফুরন্ত সম্ভাবনার দেশ ( দেশ তিনটির জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ লোকই যুবক)।

4. আবার সমসাময়িক সময়ে (১৭৫০ সালের দিকে) বৃটিশরা আমেরিকাতেও তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে এবং শক্তিশালী প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
আবার একই সময়ে বাংলায় বৃটিশরা পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের পর ব্যাপক লুটপাট চালায় সুতরাং এধারণা অমূলক নয় বাংলা থেকে লুট হয়ে যাওয়া বিপুল সম্পদের একটা বড় অংশ আমেরিকার এই উন্নতিতে সহায়তা করেছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে বৃটিশরা করের বোঝা বাড়িয়ে দিলে আমেরিকা নিজের স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।
সুতরাং আমেরিকার উন্নতিতে বাংলা শোষণের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।

5. ১৭৭০ সালের দিকে বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ঘটে, যা ইতিহাসে ছিয়াত্তোরের মন্বন্তর নামে খ্যাত। এর ফলে বাংলার এক- তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। ১৭৫৭ সালের দিকে সমগ্র বাংলার জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটির মতো যা এই সময়ে কমে ২ কোটি হয়ে যায়। বাংলার জনশক্তিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

6. এরপর ব্রিটিশরা বাংলা ও ভারতবর্ষে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পর চীনে আফিম রপ্তানি শুরু করে। এতে চীনারা আফিমে বুম হয়ে যায় যা তাদের ব্যাপক অর্থনৈতিক অবনতি ঘটায়, কেননা এর ব্যায় নির্বাহের জন্য তাদের ব্যাপক অর্থ ব্যয় করতে হতো এবং এর ফলে তাদের লজ্জাজনক ১০০ (১৮০০-১৯০০) বছরের সূচনা হয়।

বৃটিশরা এই আফিম ভারতীয়দের দিয়ে উৎপাদন করত।স্বভাবতই এসময় বৃটিশ ও চীনাদের মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হয় যা ইতিহাসে আফিমের যুদ্ধ নামে খ্যাত। আবার এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বৃটিশ সৈনিকরা ছিল ভারতীয়। এর ফলে চীনের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয় এবং চীনারা এসময়ে বিশ্ব প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যায়, অবশ্য তাদের বৈদেশিক ব্যবসা বিমুখতাও এর জন্য কিছুটা দায়ী।

7. এসময় ভারতে ব্রিটিশরা ব্যাপক হারে স্কুল- কলেজ গড়ে তোলে যদিও ভারতকে শোষণ করার জন্য তারা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল তারপরও ভারতীয়রা এর দ্বারা উপকৃত হয় এবং পরবর্তীতে এই ভারতীয়রাই বৃটিশদের পতনের কারণ হয়ে দাড়ায়।

এখন ভারতে যদি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠত তাহলে হয়তো ভারতীয় উপমহাদেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য পশ্চিমা আধুনিক শিক্ষা থেকে পিছিয়ে যেত। তবে ধারণা করা হয় যে, যদি ভারতীয়রা নিজেদের সম্পদ নিজেদের কাজে লাগাত তবে জ্ঞান চর্চায় পশ্চিমাদেরও পেছনে ফেলত।

৪. এরপাশাপাশি বৃটেনে এসময় শিল্প বিপ্লব ঘটে। আর এর জন্য প্রয়োজন ছিল বিপুল অর্থের যা ভারত থেকে লুট করা সম্পদ দিয়ে যোগান দেয়া হয়। আবার তারা ভারত থেকেই তাদের শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ করত যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলো এদেশের কৃষকদের দিয়ে জোর করে নীল চাষ করানো, যদিও এতে ভারতের উভমুখী ক্ষতি হয় কেননা শিল্প বিপ্লবের ফলে ভারতের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়(বৃটেনে উদ্ভাবিত বস্ত্র কলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে ভারতীয়দের ২০০ জনের সমান পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হতো) তবে এর ফলে বৃটেন বিপুল অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং বৃটেন এর ফলে ইউরোপ তথা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র
এসময় ব্রিটেন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী স্থল ও নৌবাহিনী গঠন করে এবং বিশ্বব্যাপী ব্রিটেন তার এই প্রভূত ক্ষমতার প্রদর্শন দেখায়।১৮০০-১৯০০ সালের মধ্যে ব্রিটেন ও রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এসময় বৃটিশরা রাশিয়ার পূর্বাংশের একটি বড় অংশ দখল করে নেয় এবং বিপুল ক্ষতির বিনিময়ে রাশিয়া বৃটিশদের পরাজিত করে।এর ফলে রাশিয়াকে তখন আলাস্কা বিক্রি করে দিতে হয় যা এখন আমেরিকাকে বর্তমানে কৌশলগতভাবে সহায়তা প্রদান করছে।

9. আবার আমেরিকা ১৮০০ সালের দিকে তার সাম্রাজ্য বিস্তারের সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় আমেরিকা একটি ক্ষুদ্র সাম্রাজ্য ছিল এবং কানাডা দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর কানাডা ছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে। বৃটেনের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে আমেরিকাকে উল্টো বৃটেন দখল করে নেয়।

আফ্রিকা ও ভারত থেকে পাচার করে আনা বিপুল সম্পদের ফলেই কানাডায় এই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। এর ফলে আমেরিকাকে কানাডার পরিবর্তে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হতে হয় এবং এর ফলে আমেরিকা অধিকতর লাভবান হয়।

কেননা এঅংশ ছিল খনিজ ও কৃষিতে সমৃদ্ধ যা পরবর্তীতে আমেরিকার শিল্প বিপ্লবে সহায়তা করেছিল। এর ফলে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে আসে। এজন্য আমেরিকা তার পার্শ্ববর্তী স্পেনিশ, ফ্রেন্স,রেড ইণ্ডিয়ান ও মেক্সিকানদের ভূমি দখল করে যা ছিল আমেরিকার জন্য আর্শীবাদ স্বরূপ এবং বর্তমান মানচিত্রে এসে পৌছায়। (ব্রিটিশদের ভারত শোষণের পরোক্ষ প্রভাব)

10.ব্রিটিশদের ভারত শাসনের ফলে গ্রেট গেমের ও বাফার রাষ্ট্রের ধারণা সৃষ্টি হয় ,যা বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিকেও প্রভাবিত করেছে। যেমন ব্রিটিশ ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আফগানিস্তান বাফার রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করত।
পরিশেষে বলা যায় পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারার প্রসার ঘটাতে শুরু করে। 'আইনের শাসনে'র ধারণার প্রবর্তন করে। ফলে ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায় নবজাগরণ ঘটে। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার বলেছেন, 'On 23rd June, 1757, the middle ages of India ended and her modern age began.
.....

Address


Telephone

+8801632457357

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when The Cox's Bazar posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to The Cox's Bazar:

  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share