Mr. Mridha

Mr. Mridha I am very simple man.

It's me....
22/09/2025

It's me....

Good morning.....
21/09/2025

Good morning.....

নীলাভ ঢেউ আর তোমার গিলে যাওয়া সকালPart-3ঢেউ ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছে। নৌকাটা দুলছে এক দিক থেকে আরেক দিকে। আকাশে কালো মেঘ জম...
20/09/2025

নীলাভ ঢেউ আর তোমার গিলে যাওয়া সকাল

Part-3
ঢেউ ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছে। নৌকাটা দুলছে এক দিক থেকে আরেক দিকে। আকাশে কালো মেঘ জমে গেছে, বিদ্যুৎ কেটে যাচ্ছে সমুদ্রের বুক জুড়ে।

রিয়া ভয় পেয়ে আরিফকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল—
“আমি… আমি ভয় পাচ্ছি!”

আরিফ তাকে বুকের ভেতর টেনে নিল।
“চুপ, আমি আছি। কিছু হবে না।”

কিন্তু ভেতরে তার নিজেরও বুক ধড়ফড় করছে। নৌকাওয়ালা হাল ধরতে ব্যস্ত, কিন্তু ঝড় যেন আরও জোরে এসে আঘাত করছে।

---

ঠিক সেই মুহূর্তে রিয়ার চোখ থেকে ফসকে বেরিয়ে গেল এক স্বীকারোক্তি—
“আরিফ… যদি আজ সত্যিই কিছু হয়ে যায়, তবে জেনে রেখো—আমি তোমার ওপর ভরসা করেছি। অনেকদিন পর প্রথমবার।”

আরিফ চমকে তাকাল তার দিকে।
“রিয়া…”

তার কণ্ঠ ভিজে উঠল।
“আমিও তো ভাবিনি এত দ্রুত তোমার জন্য এভাবে অনুভব করব। নাদিয়ার পর আমি মনে করেছিলাম আর কখনও পারব না। কিন্তু তুমি আমার ভেতরের অন্ধকারে আলো জ্বালিয়েছ।”

ঝড়ের শব্দের মাঝেই তাদের চোখ একে অপরের চোখে আটকে গেল। যেন চারপাশের ভয়, দুলুনি, বিদ্যুৎ—সব মিলিয়ে গলে গেল শুধু সেই মুহূর্তে।

---

একটা বড় ঢেউ এসে নৌকায় আছড়ে পড়ল। দুজনেই ভিজে গেল, কিন্তু একে অপরকে শক্ত করে ধরে থাকল।

অবশেষে কিছুক্ষণ পর ঝড় ধীরে ধীরে কমতে শুরু করল। নৌকা নিরাপদে তীরের দিকে এগোতে লাগল।

---

ভেজা শরীর, কাঁপা হাতে তারা তীরে নামল। সমুদ্র তখনো গর্জন করছে, কিন্তু আকাশে ফাঁক দিয়ে আলো উঁকি দিচ্ছে।

রিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“এটা মনে হলো যেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম।”

আরিফ তার দিকে তাকাল, মৃদু হেসে বলল—
“না, এটা মনে হলো জীবনের মুখে প্রথমবার দাঁড়ালাম।”

রিয়া নীরব হয়ে তার হাত ধরল। আর সেই মুহূর্তেই দুজন বুঝল—তাদের সম্পর্ক এখন আর শুধু ভ্রমণের কৌতূহল নয়, বরং একে অপরের গভীর সত্য হয়ে উঠছে।

ঝড় পেরিয়ে যখন তারা সান্তোরিনির সেই ছোট্ট গ্রামে ফিরল, তখন সন্ধ্যার আলো নেমে এসেছে। সাদা দেয়ালের ওপর কমলা রোদ পড়ছে, বাতাসে সাগরের লবণ গন্ধ ভাসছে।

রিয়া আরিফের পাশে হাঁটছিল, কিন্তু দুজনের ভেতরেই এক অদ্ভুত নীরবতা। মনে হচ্ছিল কথা বললেই হয়তো আবার আবেগ ভেঙে পড়বে।

অবশেষে রিয়া থেমে দাঁড়াল এক খোলা ছাদওয়ালা ক্যাফের সামনে। টেবিলে মোমবাতি জ্বলছে, দূরে সমুদ্র দেখা যায়।
“চলো, একটু বসি,” সে বলল।

---

কফির ধোঁয়া উঠছিল। দুজনের চোখ একে অপরের দিকে গিয়ে আটকে থাকছিল বারবার।

রিয়া ধীরে ধীরে বলল,
“আজকের ঝড়টা আমাকে বদলে দিল মনে হয়। ভেবেছিলাম, ভয় আমাকে কেবল দূরে ঠেলে দেবে। কিন্তু দেখো… আমি ভয় পেয়েই তোমার দিকে ছুটেছি।”

আরিফ গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
“রিয়া, আমি জানি না আমাদের গল্প কোথায় গিয়ে শেষ হবে। কিন্তু আমি এটুকু জানি—তোমার হাতটা যদি আমার হাতে থাকে, তবে আমি সব ঝড় পার হয়ে যেতে পারব।”

রিয়া এক মুহূর্ত দ্বিধা করে তার হাত বাড়িয়ে দিল। এবার আরিফ সেটাকে শক্ত করে ধরে রাখল।

---

হঠাৎ দূরে আতশবাজি ফুটল—হয়তো কোনো উৎসব চলছে। আকাশে রঙিন আলো, সাগরের জলে প্রতিফলন। সেই আলোয় রিয়া হেসে উঠল, অনেকদিন পর এমন মুক্ত হাসি।

সে ফিসফিস করে বলল,
“হয়তো জীবনের সব ঝড়ই দরকার হয়, যাতে সত্যিকারের মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়।”

আরিফ তার কণ্ঠে উত্তর দিল—
“তাহলে আমরা একসাথে বাকি ঝড়ের অপেক্ষায় থাকব।”

---

সেই রাতটা হয়ে উঠল একেবারে অন্যরকম। কোনো প্রতিশ্রুতি কাগজে লেখা হলো না, কোনো শপথ উচ্চারিত হলো না—কেবল চোখের ভেতর ভেসে উঠল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।

ভ্রমণের আনন্দ যেন একটু একটু করে ফিরে আসছিল। রিয়া আরিফকে নিয়ে ঘুরছিল গ্রীক দ্বীপের সরু গলিতে, হাতে হাত রেখে। নীল-সাদা ঘর, ছোট্ট দোকান, রঙিন ফুলে সাজানো বারান্দা—সব মিলিয়ে যেন রূপকথার শহর।

কিন্তু আনন্দের মাঝেই হঠাৎ এক অচেনা ছায়া নেমে এলো।

---

তারা এক স্থানীয় উৎসবে যোগ দিয়েছিল। চারপাশে নাচ, গান, খাবারের উৎসব। রিয়া রঙিন কাপড় কিনছিল এক দোকান থেকে। তখনই সে অনুভব করল, কেউ তাকে লক্ষ্য করছে।

চোখ ঘুরিয়ে দেখল—একজন লম্বা, দাড়িওলা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে কয়েক কদম দূরে। চোখ সরিয়ে নিলেও সেই দৃষ্টি যেন তাকে অনুসরণ করছে।

রিয়া কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“আরিফ… তুমি কি খেয়াল করেছ? কেউ যেন আমাদের অনুসরণ করছে।”

আরিফ ভ্রু কুঁচকালো। চারপাশে তাকাল, কিন্তু ভিড়ের ভেতর মানুষটা হারিয়ে গেল।
“হয়তো তোমার ভুল লাগছে।”

কিন্তু রিয়া জানত, এটা তার কল্পনা নয়।

---

সেই রাতে হোটেলে ফেরার পথে আবার সেই ছায়া দেখা গেল। এবার স্পষ্ট। পথের কোণে দাঁড়িয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিয়ার বুক ধকধক করে উঠল।
“সে-ই লোকটা!”

আরিফ এবার আর নিরব থাকল না। সরাসরি এগিয়ে গেল সামনে।
কিন্তু কাছে যেতেই লোকটা দ্রুত চলে গেল অন্ধকার গলির ভেতর।

---

রিয়া কাঁপা গলায় বলল,
“সে কে? কেন আমাদের পিছু নিচ্ছে?”

আরিফ তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
“আমারও মনে হচ্ছে এ শুধু কাকতাল নয়। হয়তো তোমার অতীত, নয়তো আমার। যেভাবেই হোক, সত্যিটা আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে।”

---

সাদা-নীল দ্বীপের শান্ত সৌন্দর্যের ভেতর এভাবে ঢুকে গেল এক অচেনা রহস্য।
এবং দুজনেই বুঝল—এই ভ্রমণ শুধু প্রেমের গল্প নয়, এখন হয়ে উঠতে চলেছে এক অজানা পরীক্ষার সূচনা।
ভ্রমণের আনন্দ যেন একটু একটু করে ফিরে আসছিল। রিয়া আরিফকে নিয়ে ঘুরছিল গ্রীক দ্বীপের সরু গলিতে, হাতে হাত রেখে। নীল-সাদা ঘর, ছোট্ট দোকান, রঙিন ফুলে সাজানো বারান্দা সব মিলিয়ে যেন রূপকথার শহর।

কিন্তু আনন্দের মাঝেই হঠাৎ এক অচেনা ছায়া নেমে এলো।

তারা এক স্থানীয় উৎসবে যোগ দিয়েছিল। চারপাশে নাচ, গান, খাবারের উৎসব। রিয়া রঙিন কাপড় কিনছিল এক দোকান থেকে। তখনই সে অনুভব করল, কেউ তাকে লক্ষ্য করছে।

চোখ ঘুরিয়ে দেখল—একজন লম্বা, দাড়িওলা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে কয়েক কদম দূরে। চোখ সরিয়ে নিলেও সেই দৃষ্টি যেন তাকে অনুসরণ করছে।

রিয়া কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“আরিফ… তুমি কি খেয়াল করেছ? কেউ যেন আমাদের অনুসরণ করছে।” আরিফ ভ্রু কুঁচকালো। চারপাশে তাকাল, কিন্তু ভিড়ের ভেতর মানুষটা হারিয়ে গেল।
“হয়তো তোমার ভুল লাগছে।” কিন্তু রিয়া জানত, এটা তার কল্পনা নয়।
সেই রাতে হোটেলে ফেরার পথে আবার সেই ছায়া দেখা গেল। এবার স্পষ্ট। পথের কোণে দাঁড়িয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিয়ার বুক ধকধক করে উঠল। “সে-ই লোকটা!”

আরিফ এবার আর নিরব থাকল না। সরাসরি এগিয়ে গেল সামনে। কিন্তু কাছে যেতেই লোকটা দ্রুত চলে গেল অন্ধকার গলির ভেতর।

রিয়া কাঁপা গলায় বলল, “সে কে? কেন আমাদের পিছু নিচ্ছে?”

আরিফ তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
“আমারও মনে হচ্ছে এ শুধু কাকতাল নয়। হয়তো তোমার অতীত, নয়তো আমার। যেভাবেই হোক, সত্যিটা আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে।”
সাদা-নীল দ্বীপের শান্ত সৌন্দর্যের ভেতর এভাবে ঢুকে গেল এক অচেনা রহস্য।
এবং দুজনেই বুঝল—এই ভ্রমণ শুধু প্রেমের গল্প নয়, এখন হয়ে উঠতে চলেছে এক অজানা পরীক্ষার সূচনা।

Good Morning
20/09/2025

Good Morning

নীলাভ ঢেউ আর তোমার গিলে যাওয়া সকালPart-2রিয়া হাত ধরে রাখতেই আরিফের চোখে যেন একরাশ অন্ধকার ভেসে উঠল। সে কিছুক্ষণ নীরব রই...
19/09/2025

নীলাভ ঢেউ আর তোমার গিলে যাওয়া সকাল

Part-2

রিয়া হাত ধরে রাখতেই আরিফের চোখে যেন একরাশ অন্ধকার ভেসে উঠল। সে কিছুক্ষণ নীরব রইল, যেন শব্দ খুঁজছে, অথচ প্রতিটি শব্দ তার কাছে ভারী হয়ে উঠছে।

অবশেষে গভীর শ্বাস নিয়ে বলল “আমি একসময় শুধু ফটোগ্রাফার ছিলাম না… আমি ছিলাম কারও স্বপ্নের অংশ।”

রিয়া চুপচাপ তাকিয়ে আছে। “আমার জীবনে ছিল একজন—নাদিয়া। আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি, একসাথে ছবি তুলতাম। ও বলত ‘ক্যামেরা তো শুধু চোখ, কিন্তু ছবির ভেতরের অনুভূতি আসবে আমাদের ভালোবাসা থেকে।’ আমি বিশ্বাস করতাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন… গাড়ি দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।”

আরিফ থেমে গেল। তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল। “ক্যামেরাটা তখনও আমার হাতে ছিল, কিন্তু ছবিতে শুধু ফাঁকা রাস্তা ধরা পড়ল। সেই থেকে আমি ছবিতে আলো খুঁজি, কারণ অন্ধকারটা আমার ভেতরেই রয়ে গেছে।”

রিয়া নিঃশব্দে শুনছিল। তার চোখ ভিজে উঠেছিল, কিন্তু সে কিছু বলল না। শুধু আস্তে করে আরিফের হাতটা আরও শক্ত করে ধরল।
“তাহলে এতদিন ধরে তুমি ছবি তুলছ—নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে?” রিয়া নরম গলায় জিজ্ঞেস করল। আরিফ মৃদু হাসল। “হয়তো। কিন্তু আজ তোমার চোখে আলো দেখছি—যেটা কোনো লেন্সে বন্দি করা যায় না। সেটা মনে করিয়ে দেয়, আমি এখনো বেঁচে আছি।”

রিয়া বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা টান অনুভব করল। যেন দু’জনের ক্ষত একই সুতায় বাঁধা, আর সেই সুতাই তাদের একে অপরের কাছে টেনে আনছে।
সূর্যাস্তের মুহূর্তে তারা দু’জন চুপচাপ বসে রইল। সোনালি রোদে ভেসে যাচ্ছিল তাদের মুখ, সমুদ্র তখন একেবারে গাঢ় লাল হয়ে উঠেছে। রিয়া ফিসফিস করে বলল “হয়তো আমরা দু’জনেই আমাদের অতীত হারিয়েছি… কিন্তু হয়তো একে অপরের ভেতরে একটা নতুন ভবিষ্যৎ খুঁজে পাব।”

আরিফ কোনো উত্তর দিল না। শুধু ক্যামেরা নামিয়ে রাখল পাশে। কারণ সেই মুহূর্তটা ছবি দিয়ে নয়, হৃদয়ে ধরে রাখা উচিত। রাতটা নিঃশব্দে কেটে গেল, কিন্তু দু’জনের মনেই ছিল এক ধরনের ঢেউ। রিয়া নিজের ডায়েরিতে লিখছিল, আরিফ হয়তো তার ক্যামেরা হাতে পুরনো ছবিগুলো দেখছিল।

পরদিন সকালে তারা একসাথে বের হলো কাছের পাহাড়ি পথে। সেখান থেকে পুরো সান্তোরিনি দেখা যায় সাদা-নীল ঘর, সমুদ্র, আর আকাশের সঙ্গে মিশে যাওয়া আলো।

রিয়া বলল, “জানো, আমি ভাবিনি আবার কারও সাথে এতটা খোলামেলা হবো। তুমি যেন আমার বন্ধ দরজার সামনে এসে নিঃশব্দে নক করেছ।” আরিফ একটু হেসে উত্তর দিল, “আর তুমি দরজা খুলেছ।” তাদের এই শান্ত মুহূর্ত ভেঙে দিল হঠাৎই এক অচেনা ডাক। “রিয়া?”

রিয়া ঘুরে তাকাতেই জমে গেল। কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে আছে একজন চেনা মুখ, তবু দূর অতীতের মতো। সে মানুষটা এগিয়ে এলো। উচ্চতায় লম্বা, চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক। “রিয়া, তুমি… এখানে?” আরিফ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। সে বুঝতে পারল, এ মানুষটি রিয়ার অতীতের অংশ—হয়তো সেই বাগদানের গল্পের নায়ক। রিয়ার ঠোঁট শুকিয়ে গেল। “আনিস…”

আনিস মৃদু কণ্ঠে বলল, “আমি কখনো ভাবিনি আবার তোমাকে দেখব। আমি… অনেক কথা বলতে চাই।”
পরিস্থিতি হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল। আরিফ ক্যামেরাটা কাঁধে সরাল, কিন্তু লেন্সের পেছনে লুকাতে চাইল না। সে বুঝল, রিয়ার চোখে এখনো অস্থিরতা কাজ করছে। রিয়া দোটানায় পড়ে গেল একদিকে নতুন আলো, অন্যদিকে পুরনো ছায়া।

আনিস সরাসরি তাকাল তার দিকে। “তুমি কি এখনও আমাকে ঘৃণা করো? নাকি এখনও মনে করো আমি শুধু তোমাকে সাজসজ্জার মতো ব্যবহার করতাম?” রিয়া কিছু বলতে পারল না। তার ঠোঁট কাঁপছিল। আরিফ নীরবে দাঁড়িয়ে রইল। হয়তো তার মনে হলো এখন রিয়ার হাতে আছে পছন্দের দরজা খুলে দেওয়ার ক্ষমতা।
আকাশে তখন মেঘ জমে আসছিল। আলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। তাদের সামনে তিনটে ছায়া দাঁড়িয়ে—একটা রিয়া, একটা আরিফ, আরেকটা আনিস।

আর এই মুহূর্ত থেকে গল্পে নতুন বাঁক খুলে গেল।

সমুদ্রের ওপর কালো মেঘ জমছে, বাতাসে হালকা ঠাণ্ডা। তিনজনের মধ্যে নিস্তব্ধতা এমনভাবে ছড়িয়ে আছে, যেন চারপাশের সব শব্দ থেমে গেছে।

রিয়া একবার আরিফের দিকে তাকাল, তারপর আনিসের দিকে। দুজনের চোখের ভেতর দুই রকম প্রশ্ন—একজন জানতে চাইছে, “তুমি কি আমার সাথে থাকবে?” আরেকজন বলতে চাইছে, “তুমি কি আবার ফিরতে পারো?”

আনিস ধীরে এগিয়ে এসে বলল “রিয়া, আমি জানি আমি তোমার সঙ্গে অন্যায় করেছি। কিন্তু আমি বদলেছি। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে আমি শিখেছি, জীবন মানে কাউকে হারানো নয়—বরং কাউকে আঁকড়ে ধরা। আমি চাই তুমি আবার একটা সুযোগ দাও।”

রিয়ার বুক কেঁপে উঠল। “তুমি কি মনে করো এত সহজ? আমার ভেতরকার ভাঙা জায়গাগুলো কি আবার জোড়া লাগানো যায়?”

আরিফ এতক্ষণ নীরব ছিল। এবার শান্ত গলায় বলল,
“রিয়া, তোমার উত্তরটা শুধু আনিসকে নয়, আমাকেও বদলে দেবে। কিন্তু উত্তরটা দিতে হবে তোমার মনের জন্য, কারও জন্য নয়।”
বাতাস তখন আরও জোরে বইছে। সমুদ্র যেন অস্থির হয়ে উঠেছে। রিয়া চোখ বন্ধ করল, যেন নিজের ভেতরের কণ্ঠ শুনতে চাইছে। তার মনে পড়ল আনিসের সঙ্গে কাটানো প্রথম দিনের হাসি। ভেঙে পড়া রাতগুলো, যখন সে বুঝেছিল নিজের জায়গা নেই। আরিফের সান্ত্বনা, তার ভেতরের ক্ষতকে আলোর মতো বোঝা।
চোখ খুলতেই সমুদ্রের রঙ আরও গাঢ় নীল হয়ে গেছে। রিয়ার গলায় যেন আটকে থাকা শব্দ ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল“আনিস, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি সত্যিই বদলেছ। কিন্তু আমি আর আগের মতো নেই। আমি আর কারও ছায়া হয়ে বাঁচতে পারব না।” আনিসের মুখ থমকে গেল। “মানে?”

রিয়া দৃঢ় স্বরে বলল “মানে, আমি এখন নিজের রঙে বাঁচব। আর সেই রঙকে কেউ মুছে দিতে পারবে না।”
আনিস কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর মৃদু হেসে বলল, “হয়তো এটাই তোমার সত্যি। আমি তোমাকে হারালেও, তোমাকে বদলাতে পেরেছি—এটাই আমার শিক্ষা।” সে ধীরে ধীরে সরে গেল।

আরিফ কিছু বলল না। শুধু রিয়ার পাশে এসে দাঁড়াল। রিয়া তার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল “আমি জানি না ভবিষ্যতে কী আছে। কিন্তু আমি জানি, আজ তোমার পাশে দাঁড়ালে আমি নিজের মতো থাকতে পারব।”

আকাশে তখন হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই বৃষ্টির ভেতর দাঁড়িয়ে দুজনের মনে হলো এটা কোনো শেষ নয়, বরং এক নতুন শুরু।
বৃষ্টি প্রথমে টুপটাপ করছিল, তারপর একেবারে ঝমঝমিয়ে নেমে এলো। সাদা দেয়ালগুলো ভিজে চকচক করছে, নীল গম্বুজে জলধারা ঝরছে, আর সমুদ্র একেবারে অস্থির হয়ে উঠেছে।

রিয়া আর আরিফ ছুটে গিয়ে আশ্রয় নিল কাছের এক ছোট্ট কফিশপের বারান্দায়। ভেতরে উষ্ণ আলো, বাইরে ঝরনার মতো বৃষ্টি।

রিয়ার ভেজা চুল কপালে আটকে আছে। সে হেসে বলল
“আমার সব সময় মনে হতো বৃষ্টিতে দৌড়ে আসা মানে জীবনের কাছ থেকে একটু মুক্তি নেওয়া।”

আরিফ তার দিকে তাকিয়ে রইল। চোখ সরাতে পারছিল না।
“মুক্তি তো তুমি নিজেই খুঁজে নিয়েছ, রিয়া। আর হয়তো আমাকেও শিখিয়ে দিচ্ছ।”
এক মুহূর্ত নীরবতা। শুধু বৃষ্টির শব্দ চারপাশ ভরে রেখেছে।

রিয়া আস্তে বলল, “তুমি জানো, আমি খুব ভয় পাই। কারও ওপর ভরসা করতে।”

আরিফ মৃদু হেসে উত্তর দিল “তাহলে ভরসা করো না। শুধু পাশে থেকো। আমি চাই না তুমি বাধ্য হয়ে কিছু দাও—তুমি শুধু নিজের মতো থেকো। আর আমি থাকব, যতক্ষণ তুমি চাইবে।”

রিয়ার চোখ ভিজে উঠল, কিন্তু সেটা বৃষ্টির জল, নাকি অশ্রু কেউ জানল না।
তারা দু’জন এক কাপ কফি ভাগ করে নিল। বাইরে বৃষ্টি আরও তীব্র হচ্ছিল, অথচ তাদের ভেতর যেন ধীরে ধীরে শান্তি গড়ে উঠছিল। রিয়া হঠাৎ হাত বাড়িয়ে কাপের পাশে আরিফের আঙুল স্পর্শ করল। তারপর ফিসফিস করে বলল “হয়তো আমি আবার বিশ্বাস করতে পারি।”আরিফ কিছু বলল না, শুধু তার হাতের ওপর হাত রেখে নীরব প্রতিশ্রুতি দিল। বৃষ্টি যখন থামল, রাত ঘনিয়ে এসেছে। তারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাকাল। আকাশে কিছু তারার ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।

রিয়া নরম গলায় বলল “আজকের দিনটা মনে হয় আমার জীবনের একেবারে নতুন অধ্যায়।”

আরিফ উত্তর দিল “তাহলে চল, এটাকে আমাদের দুজনের গল্পের অধ্যায় বানাই।” বৃষ্টির রাত কেটে গেল, ভোরের আলো নেমে এলো সান্তোরিনির সাদা-নীল ঘরগুলোর উপর। রিয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গভীর শ্বাস নিল। মনের ভেতর এখনো গুঞ্জন করছে গত রাতের প্রতিশ্রুতি “আমি শুধু পাশে থাকব, যতক্ষণ তুমি চাইবে।”

তার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটল, কিন্তু চোখে ছিল অচেনা ভয়ের রেখা। সে কি সত্যিই আবার কাউকে ভরসা করতে পারবে? নাকি এই গল্পও ভেঙে যাবে কোনো একদিন?

সকালে আরিফ এলো ক্যামেরা নিয়ে। “আজ একটা নৌভ্রমণে যাব?” সে প্রস্তাব দিল। রিয়া প্রথমে চমকালো, তারপর মাথা নেড়ে রাজি হলো।

তারা ছোট্ট এক নৌকায় চেপে সমুদ্রের দিকে এগোল। নীলাভ জল, চারপাশে খাড়া পাহাড়ি দেয়াল, আর আকাশে ঝিলমিল রোদ—সব মিলিয়ে যেন স্বপ্নের মত দৃশ্য।

আরিফ ছবি তুলছিল, কিন্তু হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল,
“তুমি জানো, প্রতিটি ছবিতে একটা অদৃশ্য প্রশ্ন থাকে।”

রিয়া কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, “প্রশ্ন?”

“হ্যাঁ,” আরিফ বলল, “প্রতিটি ছবি যেন জিজ্ঞেস করে—‘তুমি এই মুহূর্তটাকে ধরে রাখতে চাও নাকি যেতে দিতে চাও?’ আমি কখনও নিশ্চিত হতে পারি না।”

রিয়া নরম গলায় উত্তর দিল, “তাহলে আমি চাই আজকের মুহূর্তটা ধরে রাখা হোক।”

নৌকাটা সমুদ্রের মাঝখানে পৌঁছতেই হঠাৎ বাতাস জোরে বইতে শুরু করল। আকাশে মেঘ জমছে। মাঝেমধ্যেই ঢেউ নৌকার গায়ে আছড়ে পড়ছে।
রিয়া আঁকড়ে ধরল নৌকার প্রান্ত। চোখে ভয়। “আরিফ… যদি কিছু হয়ে যায়?”

আরিফ হাত বাড়িয়ে তাকে ধরে বলল,“কিছু হবে না। আমি আছি।”

কিন্তু তার নিজের চোখেও এক ঝলক উদ্বেগ ফুটে উঠল। সমুদ্রটা হঠাৎ যেন অচেনা হয়ে গেছে।

দূরে তীর ভেসে উঠছে, কিন্তু পৌঁছতে সময় লাগবে। নৌকাও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। রিয়া বুঝতে পারল—আজ শুধু তাদের সম্পর্ক নয়, তাদের সাহসও পরীক্ষা দিচ্ছে।

Prompt "Creat a image of a young man (face same as it uploaded picture) Hyper-realistic cinematic portrait on a deep bur...
18/09/2025

Prompt
"Creat a image of a young man (face same as it uploaded picture) Hyper-realistic cinematic portrait on a deep burgundy backdrop. Maroon velvet blazer, black silk shirt, slim trousers. Leaning on elegant chair, one arm draped, confident gaze. Rich waves with highlights. Golden spotlight, dramatic shadows, ultra-detailed fabrics, skin tones, luxury editorial vibe. 85mm lens, 9:16 Instagram style."

Prompt is here MD Zubayarul Islam
18/09/2025

Prompt is here MD Zubayarul Islam

নীলাভ ঢেউ আর তোমার গিলে যাওয়া সকালরিয়া সকালবেলা সূর্য উঠতেই জেগে উঠল। সান্তোরিনির সাদা মাথার ঘরগুলো একে একে নীলাভ আলো ...
18/09/2025

নীলাভ ঢেউ আর তোমার গিলে যাওয়া সকাল

রিয়া সকালবেলা সূর্য উঠতেই জেগে উঠল। সান্তোরিনির সাদা মাথার ঘরগুলো একে একে নীলাভ আলো খাচ্ছিল, আর সমুদ্র থেকে উঠা গা ঘেঁষে আসা হাওয়া তার টু-শোল্ডার টারকোয়েজ ড্রেসের গায়েজটা মৃদু করে নাচালো। এ শহরটা গোধূলি, আকাশ, আর চায়ের কফির গন্ধ রিয়ার খুব পছন্দ। কিন্তু আজ তার মনে শান্তি ছাড়াও একটা অচেনা উচ্ছ্বাস ছিল, যেমন মানুষ নতুন কোনো গল্পের প্রথম পাতায় আঙুল রাখতে চায়।

ফটোগ্রাফার আরিফ আগেই বলেছিল, "শূন্য সকালে ছবি তুলবো—আলোর ভাষা আলাদা, সবকিছু স্বীকৃত।" আর রিয়া জানত, ক্যানভাস শূন্য থাকলে আলোর গল্প লেখা সহজ হয়। তাই চলে এলো—হলিডে প্ল্যান নয়, নিজের জন্য আল হয়ে উঠতে।

আরিফ ক্যামেরা হাতে গ্যালারির ভিতর থেকে বাইরে দেখল রিয়ার ধীর ধীর হাঁটা, ড্রেসের ভাঁজগুলো বাতাসে হালকা করে ভাসছে। সে একটা মৃদু হাসি দিল এবং ভিউফাইন্ডার তুলে নিল, কিন্তু ক্লিক করার আগেই থামল। রিয়া যেন ছবির ভেতর না—একটা জীবন্ত গান। আরিফে একটা অজানা লড়াই খেলে গেল: কবে ক্যামেরা দিয়ে ছবি নেবে আর কবে শুধু এই মুহূর্তটা নিজের চোখে ধরে রাখবে?

"তুমি খুশি তো?" রিয়া হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, তাকিয়ে নীল জলের দিকে চোখ রেখে। "খুশি? হ্যাঁ। কিন্তু আরেকটু—" আরিফ কথা থামিয়ে নিল, হাতের কাঁটার ওপর ক্যামেরা বেঁধে নিল। "আরেকটু হাসো, এমন যেন তুমি সমুদ্রের রহস্যটা জানো।"

রিয়ার চোখে রোদ ঠান্ডা করে পড়ল। সে হাসল একটা ছোট্ট, অপরিণত হাসি যার ভেতর ছিল গোপন কোনো কথা। তারা আলোর সামনে খেলতে লাগল। আরিফ ফটোগ্রাফির ভাষায় বলল, "তুমি নিশবে বলে যাও আমি শোনা চাই।" রিয়া ভাবল, নিশবে বলবে কী? শোনাবে না, চাইলেই কী বলার আছে?

ঘন্টাগুলো এগিয়ে গেল। তারা পরস্পরের কাছে ঘুরে ফিরল ক্যামেরার ক্লিকে, কথার ঝটপটেই। কখন যে দূরবীন হয়ে গিয়েছে সময়, কেউ বুঝল না। অবশেষে দুপুরের ধুলো তোলা বাতাসে তারা বসে নিল, এক পাথরের ধারে।

"তুমি কেন একা এসেছিলে?" আরিফ জিজ্ঞেস করল, অপ্রত্যাশিত কৌতূহল নিয়ে। "একলা? আমি তো নিজের সঙ্গেই আসি সবসময়," রিয়া বলল। "কিন্তু মানুষ মাঝে মাঝে নিজের কথাগুলো বলার জন্য দূরে জায় এখানে শব্দ কম, অনুভূতি বেশি।"

আরিফ চুপ করে রইল। রিয়ার চোখে ছিল কোনো পুরোনো গল্পের আভাস—হয়তো কিছু হারানোর দাগ কিংবা কিছু পাওয়ার নিশান। আরিফ তখন বুঝল, তার ফটোগ্রাফি শুধু আলো-কাঠামো ধরার কাজ নয়—এখানে অনুভূতিকে ওদের ক্যানভাসে ঢুকাতে হবে। সে ক্যামেরাটা নামিয়ে রিয়াকে বলল, "তুমি চাইলেই বলো, আমি শুনব।"

রিয়া একটু নড়ল, তারপর ধীরে ধীরে শুরু করল "বাবা বলত, মানুষের জীবনটা দুই রকম একটা যে ভালোবাসে, আর একটা যে বাঁচে। ভালোবাসাটা সব সময় শব্দে আসে না, অনেক সময় তা এক কাপ কফির মতো গায়ে গা লাগানো। সেই কফির গা ঘেঁষে থাকা গরমটাকে মানুষ ভুলে যায় না।" তার কথাগুলো মৃদু। আরিফ মনে মনে লিখে নিল এগুলো ছবি নয়, জীবনের ছোট ছোট সংরক্ষণাগার।

দিন শেষে তারা একটি ছোট কফিশপে গিয়ে বসল। গাছপালার ছায়ায় রিয়া নিজের টুপি খুলে নিল, আরিফ কখনও কখনও তাকিয়ে থাকল, চোখে একটা প্রশ্ন। "এখানে তুমি কী খুঁজে পেতে চেয়েছ?" সে হঠাৎ জানতে চাইল।
"শান্তি," রিয়া উত্তর দিল। "আর সত্যি কথা বলতে পারার সাহস।"

আরিফ জানত সত্যি কথা বলাটা সহজ ছিল না। কিন্তু ক্যামেরা ছাড়াও, কথাও একটা সেতু হতে পারে। সে বলল, "কখনও কখনও আমরা সাঁতার কাটতে গিয়ে ভয় পাই কিন্তু জল যথেষ্ট গভীর হলে, ওর ভিতর লুকিয়ে থাকা রঙগুলোই আমাদের হারিয়ে ভালোবাসতে শেখায়।"

রিয়ার চোখে হাসির ফুল ফুটল "শুনতে ভালো লাগলো। তুমি মিষ্টি কথা বলো, কিন্তু তোমার ক্যামেরাতেই তোমার মিষ্টতা লুকিয়ে আছে।"

রাত নেমে এলো। সান্তোরিনির আকাশ রাজকীয় তারার মত জ্বলে উঠল। তাদের আলাপটা আর শুধুই ফটোগ্রাফি বা ভ্রমণকথা এখন তা জীবন, হারানো স্মৃতি, এবং কিভাবে নতুন প্রভাত গড়ে ওঠে এসব নিয়ে গভীর হল। রাত শেষ হল, কিন্তু তাদের কথা থামল না; তারা জানাল গাড়ির ধারে দাঁড়িয়ে। আলোর অতল থেকে বেরিয়ে আসা শব্দগুলো উড়ন্ত পাখি, দূর পাহাড়ের বাতাস সব মিলেছে এক সুরে।

"শুরুটা কি কবিতার মত হয়েছে?" রিয়া হেসে বলল।
"হয়তো," আরিফ মৃদু কণ্ঠে বলল, "আর শেষটা? শেষটা তুমি করো—কখনো কখনো গল্পকারই গল্পের পরের পাতা খুলে দেয়।"

রিয়া কাঁধ একটু তুলে নিল। "আমি যদি বলি আমরা আবার দেখা করব?" তাঁর চোখে ছিল এক অনিশ্চিত আশা।
আরিফ ক্যামেরাটা চেয়ে নিল না, বরং হাত বাড়িয়ে নিল "আবার দেখা করা একটা প্রতিশ্রুতি হয়ে উঠুক, যেমন ছবিতে বারবার ক্লিক করা প্রতিটি ক্লিকে কিছুটা আলোর নতুন রং আসে।"

তারা আলিঙ্গনে মিলল না কিন্তু বাক্যগুলো তাদের মধ্যে আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ল। রিয়া জর্ডানের মতো নিঃশ্বাস নিয়ে হালকা করে হাসল, আর যে হাসিটা ছিল আলোর প্রতিফলন। তারা জানত না ভবিষ্যতে কী হবে, কিন্তু আজকের সন্ধ্যাটা তাদের মধুর স্মৃতির তালিকায় জুড়ে গিয়েছিল একটা নীল ড্রেস, সাদা দেয়াল, আর দুইটি মন যে একসাথে কোনো গান শুনেছে।

পরদিন তারা আবার আলাদা পথে চলল আরিফ নিয়ে গেল তার ক্যামেরা, আর রিয়া নিয়ে গেল তার স্মৃতি। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন সমুদ্রের ঢেউ কানে এসে ধাক্কা করে, রিয়া মনে করে আরিফের কথাগুলো "জল গভীর হলে, ওর ভিতর লুকিয়ে থাকা রঙগুলোই আমাদের হারিয়ে ভালোবাসতে শেখায়" কতটা সত্য ছিল। আর আরিফ মাঝে মাঝে পুরনো ছবিগুলো খুলে দেখলে, রিয়ার সেই হালকা হাসিটা ফিরে পায় যেমন কোনো পুরনো গান ফের বাজে।

এভাবেই তারা দুই অচেনা আত্মা একটি ছোটো গল্পে মিলল। গল্পটা বড় না হলেও যথেষ্ট ছিল; কারণ ভালো গল্পগুলো আর কি চায়? শুধু দু’টি মনকে একটি সন্ধ্যায় কাছাকাছি করে রাখা আর সেই কাছাকাছিই অনেক সময় জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

শেষে রিয়া জানত, সে আবার সমুদ্রের কাছে ফিরে আসবে; আরিফ জানত, সে আর একবার সেই নীলাভ ভোরে ক্যামেরা তুলবে। আর গল্পটা? গল্পটা চুপচাপ রয়ে গেল আলোর ভেতরে, বাতাসে, এবং দু’জন মানুষের চোখের কোচে অলৌকিকভাবে সব সময় টিকে থাকার জন্য।

সকালবেলায় রিয়া আবার জানালার ধারে এসে দাঁড়াল। সাদা দেওয়ালের ভেতর দিয়ে ঢুকে আসা আলো তার চোখে লেগে উঠল। আগের রাতের কথা এখনো মনের ভেতর কেঁপে কেঁপে বাজছিল। যেন প্রতিটি শব্দই নতুন করে ডানা মেলছে।

হোটেলের নিচে ছোট্ট গলিতে আরিফকে দেখতে পেল সে ক্যামেরা হাতে, যেন কারও খোঁজ করছে। রিয়ার বুক ধড়ফড় করে উঠল, মনে হল সেই খোঁজটা হয়তো তারই জন্য।

সে নামতে নামতে ভাবল এত দ্রুত কারও সাথে এমন এক অদ্ভুত বন্ধন গড়ে ওঠা কি সম্ভব? না কি এটা শুধুই ভ্রমণের জাদু, যেখানে মানুষ একে অপরকে দ্রুত চিনে ফেলে?

সে আসলে রিয়ার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিল। ছবি তোলার কাজের অজুহাত দিলেও তার ভেতরে অন্যরকম টান কাজ করছিল। রাতের কথাগুলো, রিয়ার হাসিটা সব যেন নতুন কোনো অধ্যায় লিখতে চাইছে।

রিয়াকে দেখতে পেয়ে আরিফ মৃদু হেসে বলল
“আজ সমুদ্রের পাশে গেলে কেমন হয়?”

রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিল,
“সমুদ্র তো শুধু জল না, ওর ভেতর অনেক গল্প থাকে। যদি সেই গল্পগুলো শুনতে পাও, তবে চলি।”

তারা দু’জন সমুদ্রের ধারে হাঁটতে লাগল। ঢেউ এসে বারবার পায়ের আঙুলে লাগছিল, যেন তাদের মধ্যে লুকোনো কোনো গোপন কথোপকথন। রিয়া হাত বাড়িয়ে জলের ছিটে ধরল, হাসতে হাসতে বলল “জানো, আমি ছোটবেলায় সব সময় ভাবতাম ঢেউগুলো আসলে কারও বার্তা নিয়ে আসে। হয়তো অন্য তীর থেকে।”

আরিফ তাকিয়ে রইল তার মনে হল, রিয়া শুধু ঢেউয়ের কথা বলছে না, বরং নিজের হৃদয়েরও এক টুকরো বার্তা ফেলে দিচ্ছে সমুদ্রের ভেতর।

সে হঠাৎ বলল, “তাহলে আজ একটা প্রতিশ্রুতি দিই—যতবার ঢেউ তীরে আঘাত করবে, ততবার মনে করব আমরা আবার দেখা করব।” রিয়া একটু থমকালো, তারপর চোখ নামিয়ে বলল—
“তাহলে এই সমুদ্রই আমাদের সাক্ষী থাকুক।”

সূর্য ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছিল, আকাশে কমলা আর বেগুনি রঙের মিশ্রণ। সমুদ্র যেন রঙগুলো নিজের ভেতর গিলে নিচ্ছিল। তারা দু’জন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, যেন কথার দরকারই নেই—শুধু নীরবতা আর ঢেউ-ই যথেষ্ট।

হঠাৎ রিয়া বলল “আরিফ, যদি আমাদের গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যায়?”

আরিফ মৃদু হেসে উত্তর দিল “তাহলে এই দৃশ্যটাই শেষ পাতা হয়ে থাকবে। কিন্তু আমি মনে করি, কিছু গল্প শেষ হয় না—শুধু অন্য পাতায় গোপনে চলতে থাকে।”

রিয়া আর কিছু বলল না। শুধু ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে ফিসফিস করে বলল “হয়তো সত্যিই এ গল্পের শেষ নেই…”

রাত নামার আগেই তারা শহরে ফিরল। সান্তোরিনির সরু গলিগুলোতে বাতি জ্বলে উঠেছে, চারদিকে যেন রঙিন পরীর আলো ঝুলে আছে। সাদা দেয়াল আর নীল দরজার ফাঁকে ফাঁকে দোকান, ক্যাফে, ছোট্ট বাজার—সব এক অদ্ভুত উষ্ণতায় ভরে উঠছে।

রিয়া হাঁটতে হাঁটতে থেমে গেল এক দোকানের সামনে। কাচের ভেতরে ঝুলছে রঙিন কাচের লণ্ঠন। সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বলল,
“দেখো, আলো যখন কাচের মধ্যে পড়ে, তখন সব রঙ আলাদা আলাদা হয়ে বেরোয়। মানুষের জীবনও কি এরকম না? একই আলো কিন্তু ভেতরের কাচ আলাদা বলে প্রতিটি মানুষ আলাদা রঙে জ্বলে ওঠে।”

আরিফ চুপ করে শুনছিল। ক্যামেরাটা তার কাঁধে ঝুলছিল, কিন্তু এই মুহূর্তে ছবি তুলতে ইচ্ছে করল না। শুধু রিয়ার কথাগুলো মনে গেঁথে রাখতে চাইল।

“তুমি কি সবসময় এমন ভাবো?” সে জিজ্ঞেস করল।

রিয়া হাসল, “হয়তো… অথবা আমি শুধু নিজের ভেতরের কথাগুলো জিনিসের মধ্যে খুঁজে পাই।”

হঠাৎ তারা এক গলিতে ঢুকে পড়ল, যেখানে স্থানীয় এক বৃদ্ধ গ্রিক সঙ্গীত বাজাচ্ছিল গিটার দিয়ে। চারপাশে কয়েকজন মানুষ নাচতে শুরু করেছে। রিয়া থেমে গেল, তার চোখে উচ্ছ্বাসের ঝিলিক।

“চলো, নাচি,” সে বলল। আরিফ অবাক হয়ে গেল “আমি তো নাচ জানি না।” “জানো না, তবুও পারবে। এখানে তো কেউ বিচার করছে না,” রিয়া হাত বাড়িয়ে দিল।

আরিফ একটু দ্বিধা করলেও শেষমেশ রিয়ার হাত ধরল। তারা দু’জন ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। সুর, হাসি আর আলো মিলে চারপাশ যেন এক উৎসবে পরিণত হলো। রিয়ার হাসি, বাতাসে দুলতে থাকা তার চুল, আরিফের কানে সেই মুহূর্তে যেন গান হয়ে বাজতে লাগল।

নাচ শেষে দু’জন আবার হেঁটে চলল। রাত আরও ঘন হয়ে এসেছে। তারা সমুদ্রের ধারে গিয়ে বসলো, পাশে এক ছোট্ট লণ্ঠনের আলো।

রিয়া ধীরে বলল,
“জানো, আমি অনেক কিছু হারিয়েছি জীবনে। মাঝে মাঝে মনে হয় নতুন কাউকে কাছে আসতে দিলে, আবার হারাবার ভয় কাজ করে। তবু আজ মনে হচ্ছে, ভয়টা একটু কমে গেছে।”

আরিফ চুপ করে থাকল। কিছু কথা শব্দ দিয়ে বলা যায় না। শুধু হাতের কাছে থাকা মানুষটির উপস্থিতিই যথেষ্ট।

সে শুধু বলল,
“যা হারিয়েছে, তা হয়তো তোমার ভেতরেই নতুনভাবে রঙ হয়ে থেকে গেছে। আজ তুমি যেভাবে আলো আর রঙের কথা বলছিলে, সেটা হয়তো সেই হারানোর রঙ থেকেই এসেছে।”

রিয়া তার দিকে তাকাল। চোখে ছিল বিস্ময় আর অদ্ভুত এক স্বস্তি। রাতের সমুদ্র গর্জন করছিল, আর তার ভেতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল এক নতুন গল্পের স্রোত যা তারা দু’জন মিলে লিখছে, ধীরে ধীরে, কোনো তাড়া ছাড়াই।
Part 1
Next.....coming....

29/06/2023
20/05/2023

সে কিন্তু কোন লোভ ক‌রে নাই।

Address

Chandpur
Chittagong

Telephone

+8801711716976

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mr. Mridha posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Mr. Mridha:

Share