20/06/2025
জীবনের গল্প: হাসিমুখে দুঃখ ভোলা এক রহস্যভরা জীবন
কলিজাওয়ালা খাঁন সাহেব
সন্ধ্যাটা তখন নরম আলোয় ভেসে যাচ্ছে।
ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে বসে একটা মেয়ে—নাম তার "নিভা"।
চোখে গভীর ক্লান্তি, মুখে এক চিলতে হাসি।
কেউ দেখলে বলবে, “ভালোই আছে!”
কিন্তু তার চোখদুটি শুধু বলে— "আমি আসলে ভালো নেই…"
নিভার গল্পটা শুরু হয়েছিলো এক ছোট্ট গ্রামে।
বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক, মা একজন আদর্শ গৃহিণী।
দারিদ্র্য ছিল, কিন্তু ভালোবাসার অভাব ছিল না।
নিভা ছোটবেলায় খুব হাসিখুশি ছিল, স্বপ্ন দেখত বড় হয়ে ডাক্তার হবে।
কিন্তু সেই স্বপ্নগুলো একে একে ছিন্ন হতে লাগলো,
যেদিন বাবা স্ট্রোকে বিছানায় পড়লেন…
বাড়ির খরচ, ওষুধ, ছোট ভাইয়ের স্কুল—সব কিছু একা সামলাতে গিয়ে
নিভা নিজের বই-খাতা বন্ধ করে দিলো।
কেউ পাশে দাঁড়ায়নি তখন।
বন্ধুরা ব্যস্ত ছিল নিজেদের জীবন নিয়ে।
আত্মীয়রা বলতো,
"তোমরা গরিব, আমাদের সাহায্য করতে পারবো না।"
তারপর মা…
যে নিজের না খেয়ে মেয়েকে খাইয়ে দিত,
সে-ও হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে।
নিভা তখন ১৭।
দিনে একটা দর্জির দোকানে কাজ করে, রাতে মানুষের বাসায় বাসন মাজে।
মেয়েটা কাঁদে না।
কারণ কাঁদার সময় নেই।
একদিন এক ধনী লোকের বাসায় কাজ করতে গিয়ে কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা হয়।
সে রাতে নিভা সারারাত ঘুমাতে পারেনি।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল, কিন্তু মুখে তখনও হাসি ছিল।
একটাই কথা বারবার মনে পড়ে—
"তুই কাঁদলে মা বুঝে যাবে, তোর কষ্ট হচ্ছে…"
এভাবেই কেটে গেছে ছয় বছর।
আজ নিভা ২৩।
মা নেই, বাবা হারিয়েছেন স্মৃতিশক্তি,
আর ছোট ভাই এখনো একটা চাকরির জন্য দৌড়াচ্ছে।
নিভা এখন একটা গার্মেন্টসে কাজ করে।
দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ, বেতন সামান্য।
তবুও, সে হাসে।
চায়ের দোকানে বসে মোবাইলের ছবি গ্যালারিতে পুরনো একটা ছবি দেখে—
ছবিতে বাবা-মা আর ছোট নিভার মুখে প্রাণভরা হাসি।
তার চোখে পানি আসে…
কিন্তু পাশের কেউ যেন না দেখে, সে চা-য়ের কাপটা মুখে তোলে,
আর একবার হাসে…
এই মেয়েটি কোনো গল্পের চরিত্র না।
সে আমাদের চারপাশেই আছে—
রিকশাওয়ালার মেয়ের মতো, কাজের মেয়ের মতো, কিংবা হয়তো এই লেখাটা পড়া তোমার মতো।
তুমি যখন অন্যের হাসিমুখ দেখো, ভেবো না তার জীবনে দুঃখ নেই।
সব হাসির পেছনে লুকানো থাকে একেকটা যুদ্ধের ইতিহাস।
এবং, কিছু মানুষ চিরকাল হাসিমুখেই সেই দুঃখগুলো লুকিয়ে রাখে,
কারণ…
তাদের কাঁদার সময় নেই।