07/07/2025
"স্ত্রীর সাথে সময় কাটালে মা কেন কষ্ট পায়?"
ছেলেটা যখন স্ত্রীকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে, তখন তার মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মুখে কিছু না বললেও বুকের ভেতরটা যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। এটা শুধু ছেলেটার মায়ের নয়, হাজারো মায়ের অনুভব। সন্তানের মুখে হাঁসি দেখলেই যেসব মায়েরা শান্তি খুঁজে পান, তারাই বা কেন সন্তানের সুখ দেখে অশান্ত হন?
প্রশ্নটা কঠিন, কিন্তু উপেক্ষা করার মতো নয়।
বাবা বা শ্বশুর তো কখনো এমন দৃশ্য দেখে কষ্ট পান না। তাহলে মায়ের কষ্টটা কোথা থেকে আসে?
এই কষ্টের শিকড় অনেক গভীরে। অনেক সময়, এক নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায় তার আর্থিক নির্ভরতা। মেয়েরা আজও অনেক ক্ষেত্রে নিজের নামে কিছুই রাখে না। বাবা-মায়ের ঘর থেকে স্বামীর ঘরে, আর সেখান থেকে সন্তানদের ঘরে আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু আশ্রয় মানেই নিরাপত্তা নয়। সেই নিরাপত্তাহীনতাই হয়তো একদিন সন্তানকে নিজের শেষ আশ্রয় মনে করায়।
বিয়ের আগে সন্তান মায়ের ছায়ায় থাকে, তার কথা শোনে, ভালোবাসে। বিয়ের পর এই সম্পর্কটায় বদল আসে। মা অনুভব করে, হয়তো তার জায়গাটা কেউ দখল করে নিচ্ছে। হয়তো নিজের সবটুকু দিয়ে যাকে গড়ে তুলেছেন, তার ভালোবাসার ছায়া আর তার গায়ে পড়ে না। তখনই মায়ের ভিতর এক অদৃশ্য ভয় ঢুকে পড়ে—ভালোবাসা হারানোর ভয়, নির্ভরতার মাটি সরে যাওয়ার ভয়।
এই ভয় কাটাতে হলে দরকার নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন।
মায়ের নামে একটি একাউন্ট হোক, স্ত্রীর জন্য মাসিক সঞ্চয়ের ব্যবস্থা থাকুক—এই ছোট উদ্যোগগুলো বড় পরিবর্তনের পথ খুলে দিতে পারে।
আমি নিজে আমার স্ত্রীর নামে একটি একাউন্ট খুলে সেখানে মাসে কিছু টাকা জমা রাখতাম। আমি তাকে বলেছি, যদি কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যেতে চাও, তাহলে যেন অন্তত টাকার অভাবে আটকে না পড়ো।
আমি রোজগার করি, আর তুমি ঘরের কাজ করো
অথবা তুমি রোজগার করো আমি ঘরের কাজ করি—এই দুইটাই সমান মূল্যবান। তুমি যদি আমার জীবনের অংশ হও, তাহলে আমার সম্পদেও তোমার অধিকার থাকা উচিত।
আমি চেষ্টা করি ঝগড়াকে এড়াতে। তার মুখে রাগ থাকলেও আমি মাথা নিচু করে শুনি। হয়তো ইচ্ছায়, হয়তো বাধ্য হয়ে—তবু হার মানি।
এই লেখাটা যদি আমার স্ত্রী পড়ে, আশা করি শেষ লাইনটা পর্যন্ত না পড়ে। পড়লে হয়তো নতুন ঝগড়া শুরু হবে!
শেষ কথা:
মায়েদের চোখে জল শুকাতে হলে, নারীর হাতে দিতে হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবি। ভালোবাসা তখনই টেকে, যখন তার ভিত মজবুত হয় সম্মান আর সমতায়।
#জীবনেরকথা ( কপি পোস্ট )