17/09/2024
জনস্বার্থে পোষ্ট। সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো।
==================================
বিশ্ব-ভূমন্ডলে যা রয়েছে তার সবই সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ (সুবহানুতা’লা)। এর মধ্যে একমাত্র মানুষই হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। বাকী সব প্রাণী মানব কল্যাণের জন্য সৃষ্টি ।
ছবিতে যে দুটি সাপ দেখছেন এরা মারাত্মক বিষধর সাপ ও বিষাক্ত সাপ । একটি সামুদ্রিক সাপ ( Yellow bellied sea snake) অন্যটি সমতল ভূমির (Red necked-keelback)। বিষের বিবেচনায় রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার চেয়ে এদের স্থান অনেক উপরে। এরা প্রকৃতিতেই বাস করে। মানব কল্যানে সহায়ক।
আমাদের দেশে প্রায় ৯৪ প্রজাতির সাপ দেখা যায়। শুনে আশ্চর্য হবেন যে, এদের মধ্যে মাত্র ২৪% সাপ Deadly-venomous মারাত্মক বিষাক্ত। আবার কিছু Mildly-venomous বা হালকা বিষাক্ত। বাকি সবই Non-venomous বা নির্বিষ। এই ৭৬% সাপ মানুষকে কামড়ালেও মানুষ মারা যায় না। তবে ভয়ে হার্ট স্ট্রোক করে এদের দংশনে মৃত্যুর আশাংকা নেই। আমি সাপ নিয়ে যতটুুকু পড়াশুনা করেছি বা জেনেছি তাতে এই সমীক্ষাই পেয়েছি।
বেশ কিছুদিন যাবত যোগাযোগ সামাজিক মাধ্যমে চন্দ্র বোড়া বা রাসেল’স ভাইপার সাপ নিয়ে সত্য মিথ্যার আলোকে অজ্ঞ ব্যাক্তিরা না জেনেই এই সাপ নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে আতঙ্কে রাখছে। সারাদেশ আজ রাসলে’স ভাইপারের আতঙ্কে ভুগছে। যা গুজবে পরিনত হয়েছে।
এই সাপ নিয়ে বেশ কিছু পোষ্টে লক্ষ্য করেছি, যে যার মতন মনগড়া তথ্য দিচ্ছে। কেউ বলছে মানুষ দেখা মাত্রই তেড়ে আসে। সারা দেশে এই সাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা ৬০-৮০ টি ডিম পাড়ে। কেউ বলছে ৫০-৭০টি বাচ্চা দেয়। এদের কামড়ে মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত। কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়। এরা প্রকৃতিতে মানুষের কোন কাজে আসে না। ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার কিছু ভিডিওতে দেখতে পেলাম মাটি খুড়ে সাপের ডিম বের করে সেগুলি নষ্ট করা হচ্ছে। অন্য প্রজাতির বেশ কয়েকটি সাপ মেরে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে রাসেল’স ভাইপার বলে।
আমার ব্যাক্তিগত প্রফেশনের বাহিরে আমি একজন স্বেচ্ছাসেবক আমাকে বিভিন্ন বণ্যপ্রানী নিয়ে পড়াশুনা করতে হয়েছে। তাদের অভ্যাস, চরিত্র, খাবার, বাসস্থান ও প্রজনন নিয়ে জানতে হয়েছে। তাদের খুব কাছাকাছি যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। অনেক বণ্যপ্রাণীকে নিজের হাতে ধরার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্য অধিকাংশই সাপ। জীবনের অর্ধেক সময় হেলে দুলে ঘুরে বেড়িয়েছি। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য সাপের সামনে পড়েছি। অথচ আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে আজ পর্যন্ত কোন দূর্ঘটনার শিকার হয়নি।
এবার আসুন রাসেল’স ভাইপারের গল্প শুনিঃ
রাসেল’স ভাইপার সাপটির প্রথম মুখোমুখি হই শরিয়তপুরে। দূর থেকে বুঝা যাচ্ছিলো না এটি সাপ। বরেন্দ্র ভুমির চরাঞ্চলে এরা বেশীর ভাগ সময় কাটায়। কচুরীপানার সাথে মিশে নদীর স্রোতে কোন এক চরে উঠার জন্য মাঝে মাঝে নদীতে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। এদের মূল আবাস স্থল খড়ের ডিপি, শুকনো পাতা বালুর চর ও ধানক্ষেতে ইদুরের গর্ত।
যারা বলছেন এরা তীব্র রাগি ও মানুষকে দেখে তেড়ে এসে কামড় দেয়, তারা না জেনেই বলছেন। যত প্রজাতির সাপ আমাদের দেশে আছে রাগের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে রাসেল’স ভাইপার সাপ ৩০ নাম্বারেরও নীচে। আর বিষের তীব্রতায় পঞ্চম। তার মানে এই সাপের আগেও আরো চার প্রজাতির সাপ রয়েছে যারা বিষের তীব্রতায় রাসেল’স ভাইপারের চেয়েও এগিয়ে।
এই সাপের প্রধান খাদ্যের মধ্যে রয়েছে ইদুর। ইহা ছাড়া ব্যাঙ ও পোকা-মাকড় খায়। এরা ইদুর খুব পছন্দ করে বলেই ধান ক্ষেতে বেশী দেখা যায়। এরা খুবই অলস প্রজাতির সরিসৃপ প্রাণী। পেটে খাবার থাকলে দুই তিন দিন একই জায়গায় কুন্ডলি পাকিয়ে মাথা নীচের দিকে গুজে শুয়ে থাকে। দেখে মনে হবে গরুর শুকনো গোবর। এরা এমনটাই কেমোফ্লেজ যে, বালু ও শুকনো পাতার রঙ্গের সাথে মিশে থাকে। এরা যে কোন প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলে ফোঁস-ফোঁস শব্দ করে। তাই আমরা একটু সচেতন হলে এদের দংশন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
এরা কৃষকের বন্ধু। বিঘার পর বিঘা জামিতে যে পরিমান ধান ইদুর গর্তে নিয়ে জমা করে, তাতে এই সাপ না থাকলে কোন কৃষকই ধান ঘরে তুলতে পারবে না। তাই আমাদের স্বার্থে এই সাপকে প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে হবে। সাপ নিধন করাটা সমাধান নয়। সাপ থেকে বেঁচে থাকার উপায়ই হচ্ছে নিজের জীবন রক্ষা করার সমাধান।
রাসেল’স ভাইপার মনে করে এ পর্যন্ত যত সাপ মারা হয়েছে তার ৮০ ভাগই হচ্ছে মানুষের জন্য উপকারী ও নির্বিষ সাপ। গুজবে কান দিয়ে এমন করে যদি সব সাপ মেরে ফেলা হয় তাহলে একবার ভাবুনতো আমাদের অবস্থান প্রকৃতিতে কোথায় দাঁড়াবে। আর প্রকৃতি হারাবে তার নিজস্ব ভারসাম্য।
নির্বিচারে খেঁকশিয়াল, পেচা, বেজি, ব্যাঙ ইত্যাদি নিধন করায় আজ প্রকৃতি ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। ব্যাঙ মশার লার্ভা খেয়ে জীবন ধারন করে। ব্যাঙের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আজ ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়েছে। বেজি সাপের বাচ্চা খায়। পেচার খাবারও সাপের বাচ্চা। এক প্রাণী অন্য প্রাণী খেয়েই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে বলেই আমরা সেই প্রাণীদের উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকি। এটাই আল্লাহর বিধান।
বড় বড় গাছ কেটে ফেলার দরুন বাজ বা চিল জাতীয় পাখিগুলি আজ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এই পাখিগুলির আবাসস্থল ও প্রজননের জন্য উচু গাছগুলিই ছিলো ভরসা। গাছ কাটার দরুন এদের বংশ বিস্তার কমে যাচ্ছে। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এই বাজ জাতীয় পাখিগুলি। অধিকাংশ বাজ বা চিল জাতীয় পাখির প্রধান খাদ্য সাপ। আজ এই পাখিগুলির আবাসনের ব্যাবস্থা করা যেত তাহলে সাপের উপদ্রব এতোটা হতো না।
এখন বর্ষাকাল এর একদম শেষের দিকে । খাল-বিল, নদী-নালা, জমি, সমতল ভুমি সব জায়গাতেই পানি বেড়ছে এখন আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে সাপের গর্তগুলিও পানিতে। যার জন্য সাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এটা নতুন কিছু নয়। তাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। বাঁচার জন্য তারা উচু ও শুকনা স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। সেপ্টম্বরের পর থেকে সাপ দেখা যাবে না দেখা গেল ও খুবই কম দেখা যাবে কিছু কিছু সাপ খাবারের সন্ধানে দেখা যেতেও পারে। তখন তারা শীত নিদ্রায় চলে যাবে।
আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ। না জেনে না বুঝে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একের পর এক বন্যপ্রানী নিধনের প্রতিযোগিতায় নেমে এদের বংশ ধ্বংস করছি। তাই এদের নিধন করে সমস্যার সমাধান হবে না। এদের কবল।
কোথাও সাপ দেখা গেলে নিচের নাম্বারে যোগাযোগ করুন
01812492472
Wahid The Rescuer
Snake rescue time Bangladesh