08/12/2025
২৯ মার্চ ১৯৭১, ভিসনিউজ লন্ডনের ক্যামেরাম্যান বিল ম্যাককনভিল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি শহর থেকে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে তিনি রেকর্ডে যা লিখেছিলেন, তা হুবহু অনুবাদ করে আপনাদের জ্ঞাতার্থে প্রচার করা হলো।
অনুবাদিত —
[পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের বাতাসে পূর্বাঞ্চলের সেই সংকটময় পরিস্থিতির কোনো লক্ষণ নেই, যা দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেলেও, করাচির পাঞ্জাবি জনগোষ্ঠী পূর্বের মতোই স্বাভাবিকভাবে প্রার্থনা করছে এবং রোদে স্নান করছে। সংবাদপত্রগুলো পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে (যিনি গত ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন), দেশের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করেছে।
আমাকে লন্ডন থেকে এই প্রতিবেদন ধারণ করার জন্য করাচিতে পাঠানো হয়েছে, কারণ ভিসনিউজের অন্যান্য ক্রুরা পূর্বাঞ্চলে সংবাদ পরিবেশনের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকা পড়েছিলেন।
সিনপসিস: করাচির জিন্নাহ সমাধি। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন স্বাধীন বাঙালি আন্দোলন দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অথচ পশ্চিমাঞ্চলে কোনো সংকটের লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এখানে, এক হাজার মাইল দূরে, মানুষ তাদের নিয়মিত প্রার্থনা সম্পন্ন করে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। তাদের জীবনযাত্রা তুলনামূলকভাবে সমৃদ্ধ...বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের তুলনায়।
পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর একটি প্রধান অভিযোগ যে, পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা সত্ত্বেও, করাচির সুযোগ-সুবিধাগুলো তাদের নেই এবং তাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান এখানকার মানুষের চেয়ে অনেক নিচু। এই ক্ষোভই আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সমর্থন এনে দিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমাঞ্চলে নয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দৃঢ়ভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
খবর পাওয়া গেছে যে সেনাবাহিনী এখন পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এখানে করাচিতে মানুষ এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে তাদের শান্তি ও নিরবচ্ছিন্নতার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়েছে বলে প্রায় উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারগুলো সৈকতে জড়ো হয়েছে, বাচ্চারা খেলা করছে, ক্রিকেট খেলছে এবং রোদে স্নান করছে। কিন্তু তাদের দেশের পূর্বাঞ্চলে, যেখানে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দশ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে, যাতে ২০০ শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। তবে সেখানে ঠিক কী ঘটছে তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। সব খবরই এখনও কঠোরভাবে সেন্সর করা হচ্ছে। পাকিস্তান সরকার দাবি করেছে যে পূর্বাঞ্চলেও, এখানকার মতোই, সম্পূর্ণ শান্তি বিরাজ করছে।
রোদ চড়াচড় করছে করাচির নিশ্চিন্ত মানুষদের ওপর...আর পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কঠোর হাত আছড়ে পড়ছে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর...আওয়ামী লীগের সদস্যপদ বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে...তাদের নেতা, শেখ মুজিব, গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে এবং দলটির ঢাকার কার্যালয়গুলো পুলিশ দখল করেছে]।
অনুবাদ শেষ।
ভিডিও কৃতজ্ঞতা Reuters Pictures