31/03/2024
🌹⭐🌟⭐🌟🌹
*👉🏻লাইলাতুল কদরের শ্রেষ্ঠ ১২ টি সহজ আমল, যেগুলো তুলনামূলক সহজ ও গোছানো। ইনশাআল্লাহ্ সকলেই আমল করতে পারবেন।*
👇🏻👇🏻👇🏻
─────────────────────
*❖ (০১) আট/দশ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় পড়া (বিশেষত শেষ রাতে)*
─────────────────────
লাইলাতুল কদরের প্রধান আমল হলো, কিয়াম তথা নামাজে দণ্ডায়মান হওয়া। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে (ইবাদতের জন্য) দণ্ডায়মান হবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’’ [সহিহ বুখারি: ১৯০১, সহিহ মুসলিম: ৭৬০]
─────────────────────
*❖ (০২) বেশি বেশি সূরা ইখলাস পাঠ করা*
─────────────────────
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই এই সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।’’ [সহিহ বুখারি: ৫০১৩]
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০ বার শেষ করবে, তার জন্য জান্নাতে আল্লাহ্ একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’’ [সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৯, হাদিসটি সহিহ]
─────────────────────
*❖ (০৩) সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার সহ আরো অন্যান্য যিকির বেশি বেশি করা*
─────────────────────
*❖ (০৪) একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ কমপক্ষে ১০০ বার পড়ার চেষ্টা করা।*
─────────────────────
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার পড়বে—
ﻟَﺎ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠّٰﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻭَﻟَﻪُ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻰْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।]
অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা কেবল তাঁরই; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
► সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
► তার জন্য ১০০ সওয়াব লেখা হবে;
► তার ১০০ গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে;
► ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে এবং (সন্ধ্যায় বা রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে)
► ওই দিনের হিসেবে কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে বেশি পড়বে।’’ [সহিহ বুখারি: ৩২৯৩, আবু দাউদ: ৫০৭৭]
─────────────────────
❖ *(০৫) কদরের রাতের বিশেষ দু‘আটি মনোযোগের সাথে বেশি বেশি পড়া।*
─────────────────────
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব?’ নবীজি বলেন, তুমি বলো—
*ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲْ*
[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা’অ্ফু ‘আন্নী]
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [মুসনাদ আহমাদ: ৬/১৮২, সহিহ]
─────────────────────
*❖ (০৬) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্তিগফারটি বেশ কয়েকবার পড়া।*
─────────────────────
ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এই দু‘আ পড়বে, তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে—যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নকারী হয়।’’
ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
[আসতাগফিরুল্লাহ আল্লাযি (অথবা আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযি) লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি]
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই—তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী—এবং আমি তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [আবু দাউদ: ১৫১৭, তিরমিযি: ৩৫৭৭, হাদিসটি বিশুদ্ধ]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহাল ‘আযীম, আল্লাযি... (বাকি অংশে কোনো পরিবর্তন নেই)।’’ [তিরমিযি: ৩৫৭৭, হাসান]
─────────────────────
*❖ (০৭) কয়েকবার সাইয়িদুল ইসতিগফার পড়া।*
─────────────────────
অর্থাৎ এই ইস্তিগফারকে হাদিসে বলা হয়েছে ‘ইস্তিগফারের নেতা’।
ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻟَﺎ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
[আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু আ‘উযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবূ-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূ-উ বিযানবী, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা] (অবশ্যই আরবি দেখে শিখুন, বাংলা উচ্চারণ সঠিক হয় না)
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমারই গোলাম। তুমি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছো, সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছো তা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এ দু‘আটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৩০৬]
─────────────────────
*❖ (০৮) নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং যেকোনো জীবিত ও মৃত মুসলিমের জন্য দু‘আ করা।*
─────────────────────
মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর চমৎকার দু‘আ (ইসতিগফার)। এর মাধ্যমে একই সাথে নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং সকল জীবিত ও মৃত ঈমানদারের জন্য দু‘আ করা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ।
رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ
‘‘হে আমাদের রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো।’’ [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]
─────────────────────
*❖ (০৯) জাহান্নাম থেকে মুক্তির দু'আ -*
اللّٰهُمَّ اعْتِقْ رِقَابَنَا وَرِقَابَ آبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا وَإِخْوَانَنَا وَأَخَوَاتِنَا وَأَبْنَاءَنَا وَبَنَاتِنَا وَأَهْلِينَا وَمَنْ لَهُ حَقٌّ عَلَيْنَا وَالْمُسْلِمِينَ مِنَ النَّارِ
(আল্লাহুম্মা আ‘তীক রিক্বানা ওয়া রিকাবা আবাইনা ওয়া উম্মাহাতিনা ওয়া ইখওয়ানানা ওয়া আখাওয়াতিনা ওয়া আবনাইনা ওয়া আহলীনা ওয়া মান লাহু হাক্বুন 'আলাইনা ওয়াল মুসলিমীনা মিনান্নার)
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাদের ঘাড়কে এবং আমাদের পিতামাতাদের, আমাদের ভাই - বোনদের, আমাদের সন্তানদের, আমাদের পরিবার, আমাদের উপর যার অধিকার আছে এবং সমস্ত মুসলমানদেরকে (জাহান্নামের আগুন থেকে) মুক্ত করুন।
─────────────────────
*❖ (১০) বেশি বেশি ক্বিয়াম করা*
─────────────────────
কুরআন শুধু বসে থেকে না পড়ে রাতের বেলা নামাজে দাঁড়িয়ে কুরআন পড়া। আপনার সাধ্যমত কুরআন থেকে দেখে দেখে আপনি নামাজে কুরআন পড়তে পারেন।
─────────────────────
*❖ (১১) বেশি বেশি দান-সদাকাহ্ করা।*
─────────────────────
যদি সম্ভব হয়, তবে রাতেই করুন। এটাই উত্তম। এক টাকা দান করলে হাজার মাস (৮৪ বছর) ধরে এক টাকা দান করার নেকি পাবেন ইনশাআল্লাহ। এই রাতের প্রতিটি আমল এভাবেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’ [সূরা ক্বাদর, আয়াত: ০৩]
─────────────────────
*❖ (১২) বেশি করে দরুদ* পড়বেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। শ্রেষ্ঠ দরুদ সেটিই, যা আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ি।
─────────────────────
বেশি বেশি আমল করতে গিয়ে কোয়ালিটির দিকে উদাসীন হবেন না। আল্লাহর কাছে আন্তরিকতাপূর্ণ আমলের মূল্য অনেক বেশি।
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।(আমিন)