16/08/2025
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ PLC তে কিছু সংখ্যক কর্মীকে স্পেশাল টেস্টে বসানোর যৌক্তিকতা কী?
/এক/
'Competitive recruitment Examination' এর মাধ্যমে নিয়োগ না হওয়ায় এস.আলম আমলে নিয়োজিত কর্মীদেরকে আগামী ২৯ আগস্ট পরীক্ষায় বসাইতেছে ইসলামী ব্যাংক।
খুব ভাল কথা। অতি উত্তম প্রস্তাব।
উনাদের পত্রের ভাষায় 'Upholding Meritocracy' 'Ensuring regulatory compliance' এবং 'highly qualified employee' বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কোন বিকল্প নাই। এটাও খুবই যৌক্তিক আলাপ।
এস আলম অতি অবশ্যই এই বিষয়টাকে ধ্বংস করে দিয়েছে অতি চট্টগ্রামপ্রীতি দেখাইতে গিয়ে।
কিন্তু ভাইলোগ, জন্মলগ্ন থেকেই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) এর যে নিয়োগ প্রক্রিয়া, তা কি উপরের গালভরা শব্দগুলোর সাথে যায়?
সাম্প্রতিক উদাহরণই যদি বলি, দীর্ঘদিন ধরে ব্রাঞ্চে পিয়ন-গার্ডের চাকুরি করা কিছু ব্যক্তি, যাদের অধিকাংশই নকলের স্বর্গরাজ্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনমতে একটা ডিগ্রির সার্টিফিকেট নিয়েছে, যাদের নেই কোন ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ( একেবারে বেসিক ইনকাম-এক্সপেন্স, এসেট-লায়াবিলিটি কি জিনিস জিজ্ঞেস করলে একজনও উত্তর দিতে পারবে না), নেই কম্পিউটার চালানোর ন্যুনতম দক্ষতা (অধিকাংশই জীবনে মাউস পর্যন্ত ধরেনাই), হাসিনার পতনের পর নতুন ম্যানেজমেন্ট এসে সেই পুরোনো পিয়ন-গার্ডদের গণহারে এসিস্ট্যান্ট অফিসার, জুনিয়র অফিসার করে ডেস্কে বসিয়ে দিচ্ছে!
তাদের একমাত্র যোগ্যতা, তারা একটা রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত।
এইখানে মেরিটোক্রেসি কই? হাইলি কোয়ালিফায়েড এমপ্লয়ীই বা কই? কোন কম্পিটিটিভ এক্সামের মাধ্যমে তাদের এই নিয়োগ হয়েছে? জানতে চাই।
বিভাগীয় প্রার্থীর গপ্পো মারবেন না। স্টাফ এবং সাব-স্টাফ নামে এখানে সুস্পষ্ট বিভাজন আছে। এই বিভাজন কোনভাবেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ব্যতীত লাঘব হতে পারে না।
তাছাড়া অভ্যুত্থান পরবর্তী যে সকল সাব-স্টাফ প্রমোশন পেয়েছেন, তাও কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিল না। শোনা যায় সংঘবদ্ধ চাপ তৈরি করে, ম্যানেজমেন্টকে জিম্মি করেই কিন্তু এইসব প্রমোশন নেওয়া হয়েছে। স্পেশাল টেস্টে উনারাও বসবেন কিনা জানতে চাই।
/দুই/
আরেকটু পেছনে যদি যাই অর্থাৎ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা কী দেখতে পাই?
আমরা দেখতে পাই নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়বস্তুতে ব্যাংকিং বা বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ড কারো জন্য কিছুই ছিল না। ইসলামী ব্যাংকের প্রশ্ন দিয়ে সহজেই যেকোন মাদ্রাসার একজন মুহাদ্দিস নিয়োগ করা সম্ভব। এইটাও না হয় মেনে নিলাম, যেহেতু ব্যাংকটা টিকে আছে।
কিন্তু উনারা ৭০ভাগ মাদ্রাসার প্রশ্ন করেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। আরো বেশি ইসলামিক হওয়ার জন্য আবেদনের শর্তে একজন অঘোষিতভাবে 'স্থানীয় আলেমে দ্বীন ' এর সুপারিশ বাধ্যতামূলক করে দিতেন। সেই আলেমে দ্বীন অতি অবশ্যই জামায়াতের বড় দায়িত্বশীল হতে হবে তা বলাই বাহুল্য।
উনি নিশ্চয়ই দলের বাইরে হরে দরে সুপারিশ করতেন না।
এসব করে জামায়াত কি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে? উত্তর- না। চাকুরিতে ঢুকে যাওয়ার পর কিছুদিন এয়ানত পাওয়া ছাড়া বিশেষ কোন লাভ হয়েছে বলে মনে হয়না। বরং রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে অন্য আলাপ, পরে করব। হাসিনার জুলুমশাহীতে উক্ত ব্যাংকারদের কোন ভুমিকা আমাদের চোখে পড়েনি।
/তিন/
শাহবাগের গজা মঞ্চ যখন ইসলামী ব্যাংকের উপর মব লেলিয়ে দিয়েছিল, আরাস্তু খান যখন ছিন্নভিন্ন করে ফেলছিল ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টকে, ফ্যাসিস্ট বারাকাত যখন ইসলামী ব্যাংকের উপর জংগী অর্থায়নের অভিযোগ করছিল তখনও সেই কথিত ডেডিকেটেড কর্মীদের কোন প্রকার রেজিস্ট্যান্স আমরা দেখিনাই।
পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়েছিল যে এস.আলম দখল না নিলে ওই ব্যাংকের স্টাফদের গ্রেপ্তার এড়ানোই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। তার মানে এটা বলছিনা যে, অস্ত্রের মুখে হোটেলে বসে ব্যাংক দখল নেওয়া মাফিয়া এস আলমের সাফাই গাইতেছি।
জামায়াত এবং ইসলামী ব্যাংকের উপর গজা মঞ্চ এমন নির্যাতন চালাচ্ছিল যে, ব্যাংকের অস্তিত্বই হুমকিতে ছিল। যারা জোর করে ফাঁসি দিতে পারে, তাদের দ্বারা ঐ সময় ব্যাংক খেয়ে দেওয়া কোন ব্যাপার ছিল না। এমন সময় এস আলমের হাতে পড়া ইসলামী ব্যাংককে আপনি ফেরাউনের ঘরে মুসার পালিত হওয়ার উপমা দিতে পারেন।
ওই ব্যাংকে এর আগে লম্বা সময় ধরে প্রমোশন হচ্ছিল না। আগের ম্যানেজমেন্ট সম্ভবত ধর্মের দোহাই, ইকামাতে দ্বীনের দোহাই দিয়ে দীর্ঘসময় প্রমোশন বঞ্চিত রাখতে পেরেছে, নইলে তো কর্মী অসন্তোষে জেরবার হওয়ার কথা।
এস আলম যুগে দেদারসে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক নিয়োগ যেমন হয়েছে, বিদ্যমান কর্মীদের প্রমোশনও হয়েছে দেদারসে।
এখন পরীক্ষা নিলে তাদেরও নেওয়া যৌক্তিক কিনা ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
/চার/
সর্বশেষ কথা জামায়াতের দায়িত্বশীলদের প্রতি, আপনারা দীর্ঘসময় চরম মজলুম অবস্থায় ছিলেন। হেন কোন নির্যাতন নাই, যেটা হাসিনা আপনাদের উপর করেনাই। আপনাদের লক্ষ-কোটি কর্মী থাকলেও ডি-হিউম্যানাইজ করে ফেলেছিল। তখন আমাদের মত 'রাজনীতি করি কিন্তু দল করিনা' টাইপ লোকেরা আপনাদের পক্ষে একটা বাক্য বলা আপনাদের লক্ষ-কোটির সারাদিনের কান্নার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল আমাদের মত দলহীন লোকেদের সামনে রেখে সফল হওয়া ঘটনা। আজ আমরা আপনাদের কাছে কোন অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতা চাইছি না কিন্তু ইনসাফপূর্ণ আচরণ চাইছি। দুঃসময়ে আপনাদের পক্ষ নেওয়ার জন্য আমাদের যেন লজ্জ্বিত হতে না হয়। বে-ইনসাফিতে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নাই কিন্তু বে-ইনসাফ মনে রাখার অপরিসীম ক্ষমতা আছে।
আমরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো লোক। না আছে রাজনৈতিক পরিচয়, না আছে বাপের ক্ষমতা, না আছে বিদেশে যাওয়া সুযোগ, আছে শুধু হক্ব কথা বলার হিম্মত। বয়স ত্রিশ পার হয়ে গেছে। বাঁচলেও বড়জোর আরো ত্রিশ-চল্লিশ বছর বাঁচবো। আমার অনেক বন্ধু তো দুনিয়ার সফর শেষও করে ফেলেছে। দুইবার গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছি। দুইবারই ভাগ্যগুনে বেঁচে গেছি। সুতরাং সরকারি চাকুরি, প্রশাসনের রক্তচক্ষু, রাজনৈতিক হুমকি নিয়ে অত দুশ্চিন্তা করিনা। আমি ধুম করে মরে গেলে আমার ভাই-বন্ধুরা মন খারাপ করবে এইটুকুর জন্য আমি জীবন দিতে রাজি আছি।
গোবিন্দ হালদার হয়তো আমাদের জন্যই লিখেছিলেন "মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি,
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।"
কপি: Ahsan Hoque