14/10/2025
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
📍আজ ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বাংলা ১৪ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার
আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম, গাউসুল আযম বিল বিরাসত হযরত মওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ গোলাম রহমান (ক.)’র খোশরোজ শরিফ’। এ বরকতময় দিন উপলক্ষে ‘এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট প্রকাশন’ ‘আলোকধারা বুকস’-এর ‘মাইজভাণ্ডার শরিফ পরিচিতি’ হতে অতি সংক্ষিপ্ত জীবনী উপস্থাপন:
✅“মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার প্রর্বতক গাউসুল আযম মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.)”-এর ভ্রাতুষ্পুত্র ও প্রধান খলিফা সৈয়দ গোলাম রহমান ‘হযরত বাবা ভাণ্ডারী’ এই নামে সর্বত্র পরিচিত ও গাউসুল আযম বিল বিরাসত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ গোলাম রহমান মাইজভাণ্ডারী
প্রকাশ: হযরত বাবা ভাণ্ডারী (ক.) [১৮৬৫-১৯৩৭]
বাবা: সৈয়দ আবদুল করিম। মাতা: সৈয়দা মোশাররফ জান।
শিক্ষা: প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি পারিবারিক ফোরকানিয়া মাদরাসায়। অতঃপর শহর চট্টগ্রামের মোহসেনিয়া মাদরাসা, ফটিকছড়ির জামেয়ুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা হয়ে চট্টগ্রাম সরকারী মাদরাসা। জামায়াতে উলার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন আধ্যাত্মিক ভাব বিভোরতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি।
বিবাহ: তেইশ বছর বয়সে জামাতে দোয়ামের ছাত্রাবস্থায় ফটিকছড়ির সুয়াবিল নিবাসী সৈয়দ কমর চাঁদ শাহ (রহ.) এর বংশধর আলহাজ্ব সৈয়দ আশরাফ আলী (রহ.)-এর প্রথমা কন্যা মোসাম্মৎ জেবুন্নেসা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
সায়ের (সফর): হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী এই ভ্রাতুষ্পুত্রকে অতি আদরের সাথে প্রীতির নজরে দেখতেন সর্বদা। বাবাভাণ্ডারীও তাঁর প্রতি ছিলেন পতঙ্গতুল্য আশেক। কিন্তু উচ্চমার্গীয় আধ্যাত্মিক নির্দেশনার কারণে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়ানোর জন্য হযরত সাহেবানীর পরামর্শে বাবা ভাণ্ডারী সায়েরে (আধ্যাত্মিক পরিভ্রমণ) বেরিয়ে যান। অতঃপর নদী-সাগর, বনজঙ্গল, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সায়ের (সফর) করে ৪০ বছর বয়সে বাড়ি ফিরে আসেন।
আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য: হযরত বাবা ভাণ্ডারীর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যের কিংবদন্তিতূল্য বহিঃপ্রকাশ ছিল তাঁর হস্তনিঃসৃত পানি। হাড় কাঁপানো প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও তাঁর পবিত্র ডান হাত মোবারকের উপর ঘন্টার পর ঘন্টা একাধারে পানি ঢালা হতো। দূরারোগ্য ব্যাধির উপশম এবং মনষ্কামনা পূরণের নিয়তে আশেক ভক্তরা এ নাতিশীতোষ্ণ পানি সংগ্রহ ও ব্যবহার করতেন। তাঁর পবিত্র স্মৃতি হিসেবে এটি দৃশ্যমান করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাঁর রওজা শরিফের পাশে স্মৃতিকক্ষে।
সফর থেকে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর তিনি নিজ জবানে কথাবার্তা বলা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। প্রায় তেইশ বছর যাবত পবিত্র জবান বন্ধ রেখেছিলেন। ক্বচিৎ যা বলতেন তাও খুব সংক্ষিপ্ত ও ব্যঞ্জনাপূর্ণ। হযরত বাবাভাণ্ডারীর জীবন প্রণালী ও কার্যাবলী সবই ছিল আধ্যাত্মিকতার মোড়কে রহস্যাবৃত। তিনি যেন সুফি কবির অমর কবিতা যেখানে ‘সরাব’ প্রকৃত জাগতিক সরাব নহে; সাকী নহে কোন রূপসী তন্বী। সবই রূপক ও ব্যঞ্জনাময়।
ওফাত: সুদীর্ঘ একাত্তর বছর ছয় মাস কাল ইহজগতে আধ্যাত্মিক লীলা সমাপন করে ১৯৩৭ সালের ৫ এপ্রিল (২২ চৈত্র ১৩৪৩) সোমবার ভোর ৭.৫৫ মি. ওফাতপ্রাপ্ত হন।
তাঁর ওফাতের দ্বিতীয় বর্ষে তদানিন্তন বৃটিশ সরকারের উজির নবাব কাজী মোশাররফ হোসেনের হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে তাঁর পবিত্র রওজা মোবারকের কাজ শুরু হয়।
তাঁর আধ্যাত্মিক মহিমা এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততাকে মর্যাদাপূর্ণভাবে আমলে নিয়ে ১৯৩৯ সালে তাঁর ২য় বার্ষিক উরস উপলক্ষে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কনসেশন টিকেটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল। এ উপলক্ষে রেলওয়ের পক্ষ থেকে (৯ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি) মাপের ৪ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপনে তাঁর আধ্যাত্মিক মহিমা ফুটে উঠেছে প্রায় দৃশ্য কাব্যের মতো।
‘তিনি একাধিক্রমে ১২ বৎসর পাহাড়ে জঙ্গলে, নগরে প্রান্তরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করতঃ ৪০ বছর বয়সে স্বীয় পীর গাউসুল আযম হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ শাহ্ (ক.) সাহেবের খলিফা রূপে স্বতন্ত্র হুজরায় গদীনশীন হন। তাঁহার অলৌকিক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা প্রভাবে ভারতবর্ষ, ব্রহ্মদেশ, এমনকি সুদূর আফগানিস্তান, পারস্য ও আরব হইতে অসংখ্য লোক অহরহ তাঁহার সমীপে হাজির হইয়া শিষ্যত্ব গ্রহণ করত নিজ নিজ মনষ্কামনা লাভ করিতে থাকে।’ চট্টগ্রাম- আর-এস, ভাইপ্যান, চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার ২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯।
কারামত:
হযরত বাবা ভাণ্ডারীর পুরা জীবনটাই ছিল আধ্যাত্মিকতার মোড়কে রহস্যাবৃত। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাঁর কারামত প্রকাশ পেত বিভিন্নভাবে। লিখিত-অলিখিত, শ্রুত, অশ্রুত হাজারো কারামত থেকে মাত্র ৫৪টি কারামত গ্রত্থিত হয়েছে তাঁর জীবনীগ্রন্থে।
হস্তনিঃসৃত পানিতে মৃতদেহে প্রাণের সঞ্চার:
হযরত বাবাভাণ্ডারীর অজস্র কারামতের মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য তাঁর হস্তনিঃসৃত পানি। তাঁর কারামত সম্পর্কিত আলোচনায় হস্তনিঃসৃত পানির বিষয়টিই সর্বাধিক পরিচিত ও প্রচারিত। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রে এই হস্তনিঃসৃত পানি রীতিমত মহৌষধের মতো কাজ করত।
এক নজরে হযরত বাবা ভাণ্ডারীর বিশেষত্ব:
০১. গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর সোহবত ও আধ্যাত্মিক মহিমায় ধন্য হয়ে তাঁর জীবদ্দশায় মর্যাদাপূর্ণভাবে স্বীয় আধ্যাত্মিক উরুজের আত্মপ্রকাশ।
০২. তদীয় খোলাফায়ে কেরামের মাধ্যমে ত্বরিকার ব্যাপ্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন।
০৩. জাগতিক নীরবতা, ইশারা-ইঙ্গিতে ভাব প্রকাশের নতুন সংস্কৃতির সংযোজন।
০৪. হস্তনি:সৃত পানির আধ্যাত্মিক মহিমা প্রকাশের মুখপাত্র। যা কালক্রমে কিংবদন্তিতে পরিগণিত। শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর জীবনেও যার প্রভাব ছিল ক্রিয়াশীল।
০৫. তাঁর সাড়া জাগানো আধ্যাত্মিক মহিমাকে কেন্দ্র করে তাঁর জীবদ্দশায় ১৯৩১ সালে তাঁর জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ।
০৬. তাঁর আধ্যাত্মিক মহিমা ও ব্যাপক জনসম্পৃক্ততার বিষয়কে মর্যাদাপূর্ণভাবে আমলে নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় ওফাত বার্ষিকীতে ২২ চৈত্রের বার্ষিক উরস উপলক্ষে কনসেশন টিকেটে তিনদিনের জন্য আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা।
০৭. তাঁর ফয়েজ রহমতে অভিষিক্ত হয়ে কবিয়াল রমেশ শীল মাইজভাণ্ডারী গানের গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীতে পরিগণিত এবং তিনশতাধিক মাইজভাণ্ডারী গান লিখে সাধারণ্যে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে উঠেন।
১. মূলকপি মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের রহমান মন্জিলের সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজলের কাছে সংরক্ষিত। উদ্ধৃত: মাইজভাণ্ডার সন্দর্শন, পৃ: ৪০৭।
বাবাভাণ্ডারীর বংশলতিকা - চার পুত্র: সৈয়দ খায়রুল বশর, সৈয়দ আবুল বশর, সৈয়দ মাহবুবুল বশর, সৈয়দ শফিউল বশর, দুই কন্যা: সৈয়দা মায়মুনা খাতুন, সৈয়দা সাজেদা খাতুন।