15/07/2025
জীবন নিয়ে কত অভিযোগ? লিখাটা পড়লে আর অভিযোগ থাকবে না😭।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ইন্টারভিউয়ের করুণ গল্প : জুন ২০২৫-এর শেষ সপ্তাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
কলা অনুষদের ২০২৪-২৫ সেশনের এক ছাত্রীর ইন্টারভিউ নিচ্ছিলাম। কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে এলো তার জীবনসংগ্রামের মর্মস্পর্শী চিত্র:
আমি: কেমন আছো?
ছাত্রী: ভালো আছি স্যার।
আমি: তোমার বাসা কোথায়?
ছাত্রী: বেনাপোল, যশোর
আমি: বাবা কী করেন?
ছাত্রী: ভ্যান চালান।
আমি: কী ধরনের ভ্যান? অটো না প্যাডেল ভ্যান?
ছাত্রী: পায়ে চালান স্যার।
আমি: দিনে কত টাকা পান?
ছাত্রী: সবদিন সমান না স্যার। কখনো ১৫০, কখনো ২০০ টাকা।
আমি: কয় ভাইবোন?
ছাত্রী: ৩ ভাইবোন, আমিই বড়।
আমি: কোথায় থাকো?
ছাত্রী: মেসে থাকি স্যার। হলে সিট থার্ড ইয়ারের আগে পাবো না।
আমি: মেসে ভাড়া কত?
ছাত্রী: ৫৫০ টাকা। ২ মাসের টাকা বাকী আছে স্যার।
আমি: কী বলো! রাজশাহীতে মেয়েদের মেসের ভাড়া তো কমপক্ষে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, সেটাও টিনের ঘর। তুমি কিভাবে ৫৫০ টাকায় থাকো?
ছাত্রী: স্যার, আমি আসলে মেসের ছাদে একটা টিনের রুমে থাকি, যেখানে পুরানো ভাঙা জিনিস রাখে। তার পাশে একটা চৌকি পেতে থাকি।
আমি: খাওয়া-দাওয়া কোথায় করো? রান্না করো নাকি মেসে খাও?
ছাত্রী: স্যার, নিজে রান্না করি খাই।
আমি: কাল কী রান্না করেছ?
ছাত্রী: আজকে ২ দিন রান্না করিনি স্যার।
আমি: তাহলে আজ কী খেয়েছ? (তখন দুপুর ৩টা)
ছাত্রী: কিছু খাইনি স্যার।
আমি: গতকাল রাতে কী খেয়েছ?
ছাত্রী: কিছু না। গতকাল বিকেলে চা আর বিস্কুট খেয়েছি। রাতে খাইনি।
আমি: গতকাল দুপুরে?
ছাত্রী: কিছু না স্যার।
আমি: গতকাল সকালে?
ছাত্রী: স্যার, আগের দিনে ভাত রান্না করেছিলাম, কিছু ভাত রেখেছিলাম। সকালে দেখি পচে গেছে। ওই ভাতটা একটা ঝাল (কাঁচা মরিচ) দিয়ে খেয়েছি।
আমি: এখন গিয়ে কী খাবে?
ছাত্রী: চা আর বিস্কুট।
আমি: কেন? অসুস্থ হবে না?
ছাত্রী: স্যার, আমি বেশিরভাগ দিনে তাই খাই। আমাদের একটা চায়ের দোকান ছিলো, এইগুলো খেয়েই আমরা দিন পার করতাম। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।
আমি: প্রতিমাসে থাকা খাওয়া ও।পড়াশোনায় তোমার কত টাকা লাগে?
ছাত্রী: ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা।
আমি: বাবা কত দেয় মাসে?
ছাত্রী: যখন যা লাগে দেয়।
আমি: একসাথে দেয়?
ছাত্রী: না। কখনো ২০০ টাকা, কখনো ১০০ টাকা করে পাঠায়।
আমি: শেষ কবে ভালো করে (পেট ভরে) খেয়েছ?
ছাত্রী: স্যার, পেট ভরে খেলে আমার পেটে ব্যথা হয়, বমি হয়। তাই খাই না। 😢
আমি: তোমার মা-বাবা কেমন আছে?
ছাত্রী: মা-বাবা দুইজনই অনেক অসুস্থ। নিজেরা ডাক্তারের কাছে যায় না, ওষুধ খায় না। ভালো একটা তরকারি-মাছ কিনে না। 😭
আমি: তুমি পড়াশোনা কেন করছ? পড়াশোনা না করে বিয়ে-শাদি করলে বাবার একটু চাপ কমতো।
ছাত্রী: স্যার, আমার বাবার স্বপ্ন যেন আমি ভালো কিছু করি। উনি বলেছেন, রক্ত বিক্রি করে হলেও আমাকে পড়াবেন।😭
এরপর আমি ছাত্রীর বাবাকে কল করি
বাবার সাথে ফোনালাপ:
আমি: সালাম, আপনি কেমন আছেন? আমি আপনার মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।
বাবা: জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ্ রাখছেন ভালো।
আমি: আপনি কোথায় আছেন?
বাবা: আমি রাস্তায়, ভ্যানে, বাড়ি যাচ্ছি।
আমি: আপনি কী করেন?
বাবা: আমি ভ্যান চালাই।
আমি: পায়ের ভ্যান নাকি মোটর ভ্যান?
বাবা: পায়ের ভ্যান। এতো টাকা পামু কই মোটর লাগাইতে? এমনি কিস্তির টাকা শেষ হয় না।
আমি: আপনি কি ভ্যানে মাল টানেন নাকি মানুষ?
বাবা: মানুষ স্যার। কিন্তু এখন আর লোকজন আমার ভ্যানে উঠতে চায় না। রোদে গরম লাগে, বৃষ্টিতে ভিজে যায়।
আমি: আজকে কত টাকা রোজগার হল?
বাবা: ১৩০ টাকা। সেটা দিয়ে গরুর গোস্ত কিনছি। অনেক দিন বাসায় বাচ্চারা গোস্ত নিয়ে যেতে বলে, পারিনি তাই আজকে কিনলাম।
আমি: কতটুকু দিলো ১৩০ টাকার?
বাবা: ১২০ টাকার কিনেছি, ১০ টাকার মসলা। মোট ৪ টুকরা হলো, তার মধ্যে ১টা হাড়। বাসায় সবাই এক টুকরা করে পাবে। সাথে আলু দিয়ে জোল হবে।
আমি আর কান্না চেপে রাখতে না পেরে কল কেটে দিলাম, কিছু না বলেই। সেদিন রাতে আল্লাহর কাছে অভিযোগ নিয়ে অনেক কেঁদেছি।
😭আল্লাহ তুমি রহম করো🤲
হে আল্লাহ আমি আমার যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। সবই আমার রবের একান্ত করুণা। আলহামদুলিল্লাহ।
কপি: পোস্ট।