25/07/2025
জিম করবেটের অন্যতম সাহিত্য কীর্তি My India কিন্তু শিকার তো নয়ই, বনের চরিত্রের কথাও নেই, আছে বিশাল ভারতবর্ষের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা, বনে-পাহাড়ে থাকা অন্য ধরনের সরল, পরিশ্রমী, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, দেহাতি মানুষ , যাদের সাথে করবেটের দেখা হয়েছিল জীবন পথে, যাদের সাথে অসামান্য সময় কাটিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন তিনি, এবং সেই বাস্তবের চরিত্রদের অমর করে রেখেছিলেন লেখনীর মাধ্যমে।
এর মাঝে অন্যতম কাহিনী ছিল ভারতবর্ষের রবিনহুড খ্যাত সুলতান নামে এক ডাকাতের আশ্চর্য জীবন নিয়ে, যে গরীবের কোন সময়ই ক্ষতি করত না, উল্টো উপকার করত, নারী আর শিশুদের কোন অপমান বরদাস্ত করত না, কিন্তু ধনী ও অত্যাচারি জোতদারদের ঘুম হারাম করে ছেড়ে ছিল এই দস্যু।
জিম করবেটের গায়ে যারা শিকারের তকমা লাগাতে চায় তাঁর লেখা শিকার কাহিনী গুলোর জন্য তারা জানে না যে জিম সারাজীবনই বলা চলে পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন ছিলেন। যে কারণে ভারতবর্ষের প্রথম ন্যাশনাল পার্কের নাম তাঁর নামেই রাখা হয়েছে।
১৯০৭ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত জিম করবেট ১৯টি বাঘও ১৪ টি চিতাবাঘ ,মোট ৩৩টি মানুষখেকো প্রাণী শিকার করেছিলেন, যেগুলো কুমায়ুন অঞ্চলে অন্তত বারোশো মানুষের মৃত্যুর পিছনে দায়ী ছিল। এবং জিম কোনদিনই পুরস্কার বা অর্থের বিনিময়ে এইসব কাজ করেননি।
করবেটের পূর্বপুরুষরা আসলে ইংল্যান্ডের না বরং আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। ১৮১৫ সালে উনার দাদা এবং দাদী জোসেফ ও হ্যারিয়েট করবেট জাহাজে করে ভারতে আসেন আয়ারল্যান্ড থেকে।
স্থানীয় লোকেরা করবেটকে 'কার্পেট সাহেব' Carpit Sahib বলে ডাকতেন।
করবেট এর পরিবার প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকর্ম
তেমন পালন করতেন না।
করবেট আজীবন চিরকুমার ছিলেন। তাঁর বোন ম্যাগিও।
এবং উনি যে ভারতবর্ষে বাঘের সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুত কমে যাচ্ছে এবং পরিবেশের জন্য যে বাঘের টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরী সেটা নিয়ে বারবার সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন সংশ্লিষ্টদেরকে। সেই সাথে কিছুটা শ্লেষ ভরে বলেছেন যে 'বাঘেদের তো কোন ভোটের অধিকার নেই কিন্তু যারা বন্দুকের লাইসেন্স পায় তারা তো ভোটার,কাজেই তাদের রুখবে কে?'।
তবে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ জিম করবেটকে চেনেন তাঁর লেখনীর জন্য। অথচ উনি হাতে প্রথম কলম নিয়েই ছিলেন ৪৮ বছর বয়সে।
১৯৪৪ সালে অর্থাৎ উনার ৬৯ বছর বয়সে তার প্রথম বই Man-eaters of Kumaon প্রকাশিত হয়। উনার মত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬ টি।
১) কুমায়ুনের মানুষখেকো - এখানে ৭টা মানুষখেকো মারার ঘটনা তার কুকুর রবিনকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ,মাছ শিকারের ঘটনা ও ভাওয়ালগড়ের কুমার বাহাদুরের নামের বাঘ শিকারের ঘটনা আছে। ১৯৪৪ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল।
২) রুদ্রপ্রয়াগের মানুষখেকো চিতা ( Man-eating Leopard of Rudraprayag) প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে।
৩) আমার ভারত ( My India) - ভারতবর্ষের প্রান্তিক দেহাতি মানুষদের নিয়ে অপূর্ব এ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। এ বইটি পড়লে অনুধাবন করা যায় যে মনেপ্রাণে তিনি নিজেকে একজন ভারতীয় বলেই ভাবতেন। চামড়া সাদা বলে নিজেকে বাহিরের কেউ মনে করেন নি।
৪) বনের গল্প ( Jungle Lore) - উনার লেখা আমার সবচেয়ে প্রিয় বই। এখানে তাঁর শৈশব, কৈশোর ও নিসর্গের কথা ছবির মত আঁকা হয়েছে অপূর্ব মুন্সিয়ানায়।
৫) টেম্পল টাইগার ও কুমায়ুনের অন্যান্য মানুষ খেকো ( the Temple Tiger and more man-eaters of Kumaon)- ১৯৫৪ চলে এই বইটি যখন ছাপা হয় তখন জিম ও ম্যাগি চিরতরে ভারত ত্যাগ করে কেনিয়ায় চলে গেছেন।
৬) ট্রি টপস (Tree Tops)- ১৯৫৫ সালে মৃত্যুর বছরে তাঁর এই সরু বইখানা প্রকাশিত হয়, যাতে নেই মূলত গাছের মাথায় অবস্থিত সেই বিখ্যাত হোটেল যেখানে রাজকুমারী হিসেবে প্রিন্সেস এলিজাবেথ বেড়াতে এসে রাত্রিযাপন কালে তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ইংল্যান্ডের রানী হিসেবে গাছ থেকে নেমে আসেন, যাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন জিম করবেট, এই সকল অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ।
সংগ্রহীত