03/11/2025
আপনি যখন স্কুলে পড়তেন তখন নিশ্চয়ই রোল ডাকা হতো। রোল ডাকার সময় আমরা দাঁড়িয়ে বলতাম প্রেজেন্ট স্যার বা প্রেজেন্ট ম্যাডাম। খুব সাধারণ একটা রুটিন কাজ। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন একটা স্কুলে যদি ৪৯ রোল নম্বরই না থাকে তখন কেমন লাগবে।
হ্যাঁ, নিয়মিত এমন ঘটনাই ঘটে আসছ আমাদের চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের বেতাগী গ্রামের চম্পাতলী এলাকায় অবস্থিত রোটারী বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে এবং প্রথম প্রধান শিক্ষক জনাব আবুল হায়াত চৌধুরীর প্রচেষ্টায় এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে এটি কুমিল্লা বোর্ড থেকে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৭০ সালে প্রথমবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে জাপানের রোটারিয়ান সংগঠন থেকে এক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে হাত বাড়ায়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে যুক্ত হয় “রোটারী” শব্দটি।
কিন্তু এই বিদ্যালয়টির সবচেয়ে আলোচিত রহস্য হলো ৪৯ রোল নম্বরের অনুপস্থিতি। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ক্লাসেই ৪৯ রোল নম্বর নেই। রোল ডাকা হয় ৪৮ এর পর সরাসরি ৫০ থেকে।
প্রশ্ন জাগে না কেন?
প্রবীণ শিক্ষক ও স্থানীয়দের মতে, প্রথম দিকে সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু এক সময় দেখা যায় যার রোল নম্বর ৪৯, সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। একই ঘটনা ঘটে অন্য ক্লাসেও। প্রথমে সবাই ভেবেছিলো এটা হয়তো কাকতালীয় বা সাধারণ অসুস্থতা। কিন্তু বছর ঘুরে বছর একই ঘটনা ঘটতে থাকে।
একজন ছাত্র পুকুর পাড়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, আবার কেউ স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। কারও ক্ষেত্রে পরিণতি হয় আরও ভয়াবহ। জনশ্রুতি আছে, এক ৪৯ রোলধারী ছাত্রের মৃত্যুর পর থেকেই বিষয়টি গুরুতরভাবে দেখা শুরু হয়।
শিক্ষকরা ভাবতে লাগলেন এটা কি নিছক কাকতালীয়, নাকি কোনো অদৃশ্য শক্তির প্রভাব। অবশেষে স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, আর কখনও কোনো ছাত্রকে ৪৯ রোল নম্বর দেওয়া হবে না। ৪৮ এর পর সরাসরি ৫০ রোল দেওয়া শুরু হয়।
সেই থেকে আজ অবধি নিয়মটি অপরিবর্তিত আছে। প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রথা চলছে।
শিক্ষকরা বলেন, এতে শিক্ষার পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং এটি এক ধরনের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই গল্প এখন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে, যেন এক মিশ্রণ রহস্য, ভীতি ও ইতিহাসের।
আর আপনি যদি কখনও এই বিদ্যালয়ের রোল শিট দেখেন, সেখানে দেখবেন সত্যিই ৪৮ এর পর সরাসরি ৫০ লেখা।
কে জানে, হয়তো ৪৯ রোল নম্বরটি আজও কোথাও অপেক্ষায় আছে, শুধু কেউ তার নাম উচ্চারণ করলেই আবার ফিরে আসবে অতীতের সেই রহস্য।