28/05/2025
সময়: ৩ টা ৪৪ মিনিট
শান্তি নাই মনে। জুলাইয়ের ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমেছিল আর এখন মানুষ যে কারণে রাস্তায় নামছে তা দেখে ব্যথিত। রাস্তায় নামছে দুর্নীতি টিকিয়ে রাখার জন্য। কি অদ্ভুদ!
এই দেশে সংস্কার কতটা সম্ভব? প্রশ্নটা মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে। রাষ্ট্র মানুষ নিয়ে আর সেই মানুষ যদি করাপটেড থাকে তাহলে সেই দেশ আগাবেনা।
মাঝে মাঝেই আমি ভেবে অবাক হই, মানুষ কিভাবে ভুলে যায় এত সহজেই? কত মানুষ প্রাণ দিল, এর পরেও মানুষ কিভাবে পাওয়ারের জন্য এভাবে পাগল হতে পারে? কেন আমরা দল মত এর ঊর্ধ্বে যেই দেশের উন্নতির কথা ভাবতে পারিনা? কেন সকল উন্নতি দল কেন্দ্রিক হতে হবে?
আমার মাথায় আসেনা। আমি বুঝিনা। শুধু মাথায় আসে ছোট ছোট বাচ্চারা অযথা রাস্তায় নামলো। যে মেধাকে টিকিয়ে রাখতে রাস্তায় নেমেছিল, সেই দেশের বিশাল ভাগ অটোপাশে বিশ্বাস রাখে।
দেশের কথা থাক নাহয়, যে হিসাব মাথায় ঢুকেনা সেটা থেকে দূরে থাকা ভালো। আমি জানিনা কোন সরকার কি করলো, কে আসলো কিনবা নির্বাচন হলো, আমি শুধু এইটুক জানি, জুলাই অভ্যুথানে কিছু মানুষ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে এবং আমি কিছু পারি আর না পারি সৎ থাকার চেষ্টা করবো। আমিতো আর ফেরেশতা না, হতেও চাইনা, অন্তত মানুষের হক যাতে মেরে না খাই খোদা আমাকে সেই শক্তি দিক। তোমরা যারা এইটুক করতে না পারো, আর কাউকে না নিজের আয়নায় নিজেকে মানুষ মনে করতে পারো কিনা ভেবে দেখো। এর পরেও যদি লজ্জা না থাকে, দুর্নীতি করতে মন চায়, তোমরা গোল্লায় যাও, উপরওয়ালা তোমাদের উপর গজব নাজিল করুক।
রুম অন্ধকার করে বসে আছি। অনেক কিছু নিয়ে ভাবছি। অনবরত চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কেওয়াস! শান্তি খুঁজে পাই কিসে জানেন?
চোখ বন্ধ করে ভাবি, চারিদিকে বিশাল পাহাড় আর এর মাঝে সরু এক নদী। আর ছোট্ট একটা নৌকা। আকাশে ঘন কালো মেঘ আর চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। তা দেখে আমি তেমন একটা বিচলিত নই। জীবনে সব কিছু নিয়ে বিচলিত হওয়ার মানে হয়না। সবকিছু নিয়ে বিচলিত হয় বোকারা, বাস্তবে আমি বোকা তাই কল্পনায় বোকা হওয়ার মানে হয়না।
ছোট্ট চুলায় চা বসিয়েছি, আমার অনেক দিনের শখ নৌকায় বসে চা খাব। গরম গরম ধোয়া তোলা চা।
বাইরে তাকিয়ে দেখি বেশ অন্ধকার, মনে হচ্ছে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, ছোট একটা হারিকেন নিয়ে এসেছি, অনেক আয়োজন আমার তবে হারিকেন জালাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে, থাক বাদ দেই, আমার চুলার আলোই যথেষ্ট।
চায়ের পানি গরম হতে সময় লাগছে। গুণ গুণ করে গান গাইছি। ছোটবেলায় আমার শেখা প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত।
- গান করো
-কোনটা আম্মু?
-সকাতরে
আমিও বাধ্য মেয়ের মত ১৪ কোটিবার সেই গান শুরু করে দিতাম। একবার গান শেষ করে দেখি সবাই কাঁদছে, কেন কাঁদছে বুঝতে পারিনি। ৫ বছর বয়সে সেই গানের মর্মার্থ বুঝার কথাও না।
চা হয়ে গেছে, আমার সখের চা, চা হাতে নিয়ে পাটাতনে বসতে না বসতেই ঝুম বৃষ্টি। আমার সুন্দর শাড়িটা ভিজে যাচ্ছে, আমার তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, আমি অপলক চোখে তাকিয়ে আছি। আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বৃষ্টি, আকাশ ভাঙা বৃষ্টি, সময় মুহূর্ত থমকে দেওয়ার মত বৃষ্টি, নৌকা প্রচন্ড দুলছে, আমার ভয় হওয়া উচিত কিন্তু আমার কেন জানি একটুও ভয় করছেনা। উলটো আমি খিল খিল করে হাসছি। কোনমতেই থামাতে পারছিনা। আমি খিল খিল করে হাসছি।