29/06/2025
চট্টগ্রাম বন্দরের গেটগুলোয় গতকাল কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ডিপো থেকে পাঠানো হয়নি রফতানি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান |
পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাবে গতকাল দেশের কাস্টম হাউজ ও শুল্ক স্টেশনগুলোয় বন্ধ ছিল আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম। স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারের দিক থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেও নিজেদের দাবিতে অনড় এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি আজও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এতে অচলাবস্থা আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এনবিআর কার্যক্রমকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগে পৃথক্করণের অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই দেড় মাস ধরে আন্দোলন করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ২৭ জুনের মধ্যে সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে অপসারণের আলটিমেটাম দেয়া হয়। তাদের এ দাবি না মানায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে শুরু হয় ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। এর ফলে সারা দেশের কাস্টম হাউজ ও শুল্ক স্টেশনগুলোয় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তাতে স্থবির হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য। হুমকির মুখে পড়েছে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, সিরামিক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ওষুধসহ দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আন্দোলনকারী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, এনবিআরের অচলাবস্থায় শুধু তৈরি পোশাক শিল্পে দৈনিক ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। আর এটার পুনরুদ্ধারে যা লাগবে সেটা অকল্পনীয়। এ খাতের অনেক ফ্যাক্টরি দেউলিয়া হয়ে যাবে।
এদিকে জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে চলছে স্থবিরতা। কাস্টমের কর্মীরা আন্দোলনে থাকায় পণ্যের শুল্কায়ন, বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ অন্যান্য কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে আমদানি কার্যক্রম স্থবির হওয়ার পাশাপাশি রফতানি পণ্যের জাহাজীকরণেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বন্দরের গেট ও স্ক্যানিং বিভাগে কাস্টম কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গতকাল সকাল থেকেই ডিপোগুলো থেকে রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যায়নি। ফলে সময়মতো জাহাজে পণ্য তুলে দিতে না পারায় হুমকির মুখে পড়েছে রফতানি।
বেসরকারি ডিপো সমিতির তথ্য অনুযায়ী, শুল্কায়নের পরই রফতানি পণ্য ডিপোগুলো থেকে এনে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া হয়। ১৯টি ডিপো থেকে প্রতিদিন বন্দর দিয়ে গড়ে দুই হাজার একক কনটেইনার পণ্য রফতানি হয়। চট্টগ্রামের এসব ডিপো থেকে গতকাল কোনো রফতানি পণ্যের চালান পাঠানো যায়নি জাহাজে তুলে দেয়ার উদ্দেশ্যে। আবার রফতানির নতুন কোনো চালানের নথিও শুল্কায়ন করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার রফতানি চালান শুল্কায়ন হলেও গতকাল থেকে এ শুল্কায়ন প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ বন্ধ। আগের কর্মসূচিতে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলোয় কাঁচামাল ছাড় করাতে বাধাগ্রস্ত হলেও এবার সরাসরি রফতানিমুখী চালান জাহাজীকরণেই বাধার মুখে পড়েছেন রফতানিকারকরা। ডিপোগুলোয়ও রফতানি পণ্যের কনটেইনার আটকে পড়েছে। আবার কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যানে আনা রফতানি পণ্যবাহী গাড়িও আটকে আছে।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘কাজকর্ম সবই বন্ধ হয়ে আছে ডিপোগুলোয়। শুল্কায়ন হয়ে যাওয়া রফতানি পণ্য নিয়েও কাভার্ড ভ্যান পাঠানো যাচ্ছে না বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেয়ার উদ্দেশ্যে। কারণ বন্দরের প্রবেশ গেটে কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় স্ক্যানিংসহ অনুমতি মিলছে না। আবার ডিপোগুলোয় আসা আমদানি-রফতানি কোনো পণ্যের চালানেই নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।’
বেনাপোল কাস্টম হাউজেও দেখা যায় একই চিত্র। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকেই বন্ধ আমদানি-রফতানিসংক্রান্ত শুল্কায়নের কাজ। কোনো পণ্যই খালাস হয়নি। ফটকে ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়ে বাইরের কাউকে কাস্টম কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এনবিআরের অনলাইন সার্ভারও। ফলে আমদানি-রফতানিসংক্রান্ত কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা যায়নি।
এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে আগামী ১ জুলাই অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসার দিন নির্ধারণ করা রয়েছে। তবে গতকালের মার্চ টু এনবিআর ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করলে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। পাশাপাশি আজও (রোববার) তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এ কর্মসূচির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। এছাড়া আজ সারা দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বক্তব্য দেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও ভ্যাট গোয়েন্দার অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সিনিয়র সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা। ‘রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে’ এনবিআর সংস্কার বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
এ আন্দোলনের কারণে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশ প্রভাব পড়ছে উল্লেখ করে কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর নবনিযুক্ত প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোনো কর্মসূচিতে রফতানি খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমরা এবার এ রকম একটা অভিজ্ঞতাও পেলাম। এটা ওয়ান কাইন্ড অব টেরোরিজম। বর্তমানে যা কিছু হচ্ছে তাতে বলতে হচ্ছে “জেনোসাইড অব দ্য বিজনেস কমিউনিটি ইন বাংলাদেশে।” আমাদের এখন বলতে হচ্ছে, বিজনেস কমিউনিটি এ জেনোসাইডের জন্য চার্জ করার অপরিহার্যতা তৈরি হয়েছে। এটা তো আমাদের রফতানিকারকদের শুধু বিপদে ফেলেনি, বরং দেশের অর্থনীতি খাদে পড়ছে। এসবের মূল্য কত দিক থেকে দিতে হবে সেটা মনে হয় ধারণাও করতে পারছে না কেউ। দেশের পুরো রফতানি যায় চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে, যেখানে আজ (শনিবার) গেটে যাচাই বন্ধ করে দেয়ায় পণ্যের চালান বেরও হচ্ছে না আবার প্রবেশও করতে পারেছে না। এখন যেসব রফতানি চালানের ডেলিভারি শিডিউল মিস হবে এটার দায় আসলে কে বা কারা নেবে, সেটাও আমরা জানি না। যা কিছু ঘটে চলেছে এর প্রভাব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কতটা পড়বে এর কোনো ধারণা কি আছে? একটা সমস্যা হতেই পারে এজন্য ডায়ালগ (আলোচনা) হতে পারে।’
কাস্টমসের শুল্কায়ন ও শুল্ক-কর পরিশোধের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড়ে দৈনিক চার হাজার কনটেইনার খালাস হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল পণ্য খালাসের হার শূন্যে নেমে এসেছে।
গালফ বিডি এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ও চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক আলমগীর বলেন, ‘আমার পাঁচটা চালানে কাঁচ শিল্পের কেমিক্যালের কাঁচামাল ও মেশিনারিজ খালাস করে নেয়ার কথা। কিন্তু পণ্য ছাড়করণের কোনো সুযোগই নেই। শুল্কায়ন প্রক্রিয়া থেকে খালাস কার্যক্রম সবকিছু বন্ধ।’
আমদানি ও রফতানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। দেশের ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি-রফতানি কার্যক্রম এ বন্দরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এখানে সামান্য বিঘ্নও জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিদেশ থেকে চলে আসার পরও বন্দর থেকে পণ্য হাতে না পাওয়ার অর্থ হলো উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ছন্দপতন ডেকে আনছে। দেশে কয়েকদিন পর পরই নানান ইস্যুতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বাধার মুখে পড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ পাওয়ায় ছোট কোনো বাধাও যেখানে বড় সমস্যা তৈরি করে সেখানে কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি ফেস করতে হচ্ছে। পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ায় বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ও উৎপাদন খাতে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে থেকে নিবন্ধন করা জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো কার্যক্রম এখনো চালু রয়েছে। তবে এনবিআরের কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে নতুন করে বন্দরের জলসীমায় আসা জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ পাবে না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘এটা এমন একটা প্রক্রিয়া, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি সক্রিয় না হয় আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের স্থবিরতা কোনোভাবে কাটবে না। বরং আগামীকালও (রোববার) যদি এভাবে কন্টিনিউ করে তা বন্দর পরিচালনের জন্যও মারাত্মক একটা পরিস্থিতি তৈরি করবে। কারণ গেটে কাস্টমসের যাচাই কাজ বন্ধ থাকায় শনিবার সকাল থেকে রফতানিপণ্যবাহী কনটেইনারও বন্দরের ভেতর ঢুকতে পারেনি।’ তাই তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানান বন্দর সচিব।
এর আগে কাস্টমসের কলমবিরতি কর্মসূচি চলাকালে আমদানি বাধাগ্রস্ত হলেও সচল ছিল রফতানি কার্যক্রম। তবে এবারই প্রথম রফতানি কার্যক্রমে বাধা এসেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম বলেন, ‘আমদানি পণ্যের যেগুলোয় ইনডেন্ট দেয়া আছে অর্থাৎ আজই ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোও বের হতে পারেনি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায়। এ প্রথমবারের মতো যেটা ঘটল, রফতানি পণ্যের শুল্কায়ন বন্ধ করে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আবার কমপ্লিট শাটডাউন বাস্তবায়নের আগে অ্যাসেসমেন্ট হয়ে যাওয়া রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনারও চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। কারণ বন্দর গেটে প্রতিটি কনটেইনার প্রবেশ করার সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরযুক্ত অনুমোদন লাগে, যেটা বাধ্যতামূলক। জাহাজে তুলে দেয়ার জন্য ডিপো থেকে রফতানি পণ্য নিয়ে আসা যানবাহনও বন্দরে প্রবেশের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমোদন মিলছে না।’
পৃথিবীতে কোথাও যদি যুদ্ধও হয় সেখানেও কিছু নীতিমালা মানা হয় মন্তব্য করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এ পরিচালক বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ জরুরি সেবাগুলোয় ওই সময় আঘাত হানা হবে না। বাংলাদেশের রফতানি সেক্টরটা তো সেরকমই একটা জরুরি সেবা। এটা যেকোনো পরিস্থিতিতে খোলাও থাকত। এর আগেও কাস্টমসের কলমবিরতিতে যেসব কর্মসূচি ছিল তাতে আমদানি প্রক্রিয়ায় বাধা এলেও রফতানি কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হতো। এবারই প্রথম রফতানি পণ্যের জাহাজীকরণে সরাসরি বাধা দেয়া হলো। এটা এমন একটা ভয়াবহ সিগন্যাল যেটা জাহাজ জট তো তৈরি করবেই, আবার আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্টগুলোয় মাদারভেসেল ফেল করবে। কারণ ওইসব মাদারভেসেলের সঙ্গে ফিডার ভেসেলগুলোর সময় সেট করা আছে।’
এ প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের মধ্যেও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কাস্টম হাউজগুলো সচল করার চেষ্টা করছেন বলে সংস্থাটির সূত্রে জানা গেছে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজ আলোচনার জন্য ঐক্য পরিষদকে ডাকা হয়েছে। তবে আলোচনায় বসতে হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আসতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এর পরও ঐক্য পরিষদ নমনীয় না হলে সরকার কঠোর হবে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গত শুক্রবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, ‘কর্মরত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, অফিস থেকে বেরিয়ে গেলে কিংবা দেরিতে অফিসে এলে সরকারি বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অফিসে উপস্থিত থেকে করদাতাদের সেবা দেয়ার এ নির্দেশনা অমান্য করেই গতকাল সারা দেশের বিভিন্ন কর অঞ্চল, কাস্টম হাউজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এনবিআর ভবনের সামনে এসে জড়ো হন। বাদ যাননি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও, এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট, কাস্টমস গোয়েন্দা ও ভ্যাট গোয়েন্দার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
তবে ‘মার্চ টু এনবিআর’ গতকালের এ কর্মসূচিতে এনবিআরের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।
এদিন বেলা ৩টায় আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কমিশনার ও কয়েকজন কর্মকর্তার দপ্তর ছাড়া বাকিদের চেয়ার খালি। তাদের সবাই আন্দোলনে গেছেন বলে জানা যায়। ইউনিটটির অতিরিক্ত কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) বেগম সেহেলা সিদ্দিকা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মহাসচিব। সম্প্রতি বদলি করাদের মধ্যে উপকর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিলও এখানকার কর্মকর্তা।
কর্মকর্তাদের অফিসে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে গোয়েন্দা ইউনিটটির কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমার কর পরিদর্শকদের কেউ যায়নি। স্টাফদের কেউ যায়নি। যেহেতু মহাসচিব এখানকার, সে কারণে হয়তো কেউ কেউ গেছেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ও সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব অবশ্য অফিসে উপস্থিত না থাকাদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।