
26/07/2025
আরবের রিয়াদ শহরের গরম দুপুর। সারা শহর যেন এক বিশাল ওভেনের মতো জ্বলছে। সেই রাস্তায় হাঁটছে হাসান। বয়স ত্রিশের কোঠায়, চোখে উদ্বিগ্নতা, মুখে পরিশ্রমের ছাপ—সে একজন প্রবাসী, কিন্তু তার নেই আকামা, নেই বৈধতা।
হাসান এসেছিল স্বপ্ন নিয়ে। ভেবেছিল—একটা ভালো কাজ করবে, দেশে টাকা পাঠাবে, মা-বাবার মুখে হাসি ফুটাবে। কিন্তু দালালের প্রতারণায় পড়ে সৌদিতে এসে বুঝল, তার আকামা করা হয়নি। এখন সে অবৈধভাবে বেঁচে আছে, লুকিয়ে কাজ করছে।
একদিন সকালে রুম ক্লিনিংয়ের কাজ করতে গিয়ে মালিক বলে উঠলো,
— "আকামা কই?"
হাসান মাথা নিচু করে বলল,
— "আকামা নাই হুজুর… করবার চেস্টা করছি…"
মালিক মুখ কালো করে বলল,
— "বাস... কাল থিকা আয়িস না। পুলিশ আইলে আমারও সমস্যা।"
সেই দিন বিকেলে হাসান চুপচাপ রুমে ফিরে এল। রুমে আরেকজন বাংলাদেশি সোহেল বলল,
— "কেমন গেল কাজ?"
হাসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
— "কাজও গেল, বেঁচে থাকার ভরসাটাও…"
প্রতিদিন রাত আসে তার জন্য ভয়ের বার্তা নিয়ে। কখন দরজায় কড়া নাড়ে পুলিশ? কখন তাকে ধরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে?
তবু হাসান টিকে থাকে। দিনে এক বেলা খায়, রাতে কাগজপত্র ঠিক করার স্বপ্ন দেখে। মাঝে মাঝে ফোনে মায়ের কণ্ঠ শুনে কান্না চেপে রাখে। মা বলে,
— "বাবা, দেশে আয়… অনেক কষ্ট করিস না…"
কিন্তু হাসান জানে, দেশে ফিরে গেলে মুখ দেখাতে পারবে না।
এইভাবে দিন যায়… মাস যায়… বছর পার হয়। আকামাহীন এক প্রবাসী লুকিয়ে বাঁচে—নিরবে, নিঃশব্দে। সে এক জীবন্ত ছায়া, যার গল্প কারো কাছে গুরুত্বপূর্ণ না, কিন্তু তার ভিতরে এক সমুদ্র কান্না জমে থাকে।