12/08/2025
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের গুপ্ত জমিদার বাড়িটি প্রায় তিনশ বছর আগের ঐতিহাসিক স্থাপনার নিদর্শন।
স্থানীয়ভাবে এটি অদ্দার বাড়ি বলে পরিচিত। জমিদার রামমোহন গুপ্তের হাত ধরে এ বাড়ির গোড়াপত্তন।
বাড়িটি মূলত কাঠ, চুন, সুরকি এবং ইট দিয়ে নির্মিত। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং এর স্থাপত্যে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর কারুকাজ বিদ্যমান।
কথিত আছে- একসময় বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ কখনো জুতা পায়ে, ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটতেন না। স্বয়ং ব্রিটিশরাও এ জমিদার বাড়িকে সম্মান জানাতেন।
ইতিহাস ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, এই জমিদার বংশধররা ময়মনসিংহ জেলা থেকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন।
তখন এই এলাকাটি আরকান রাজ্যের অধীনে ছিল এবং এখানে একচেটিয়া আদিবাসিদের অর্থাৎ মং, চাকমা ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল।
তখন তারা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করত। তাই মং, চাকমা ও অন্য আদিবাসিদের এই এলাকা ছাড়ার জন্য রামমোহন গুপ্ত হিন্দু ও মুসলমান বাঙালি জাতিকে নিয়ে আদিবাসী হটাও আন্দোলন গড়ে তোলেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা একসময় এই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। এর ধারাবাহিকতায় রামমোহন গুপ্ত হিন্দু ও মুসলমান বাঙালি জাতির কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন এবং সবার বিপদ আপদে সাড়া দিতেন।
তার সঙ্গে একসময় এক মুসলিম মহিলার পরিচয় হয়। যার সঙ্গে তিনি ধর্মবোনের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। হঠাৎ একদিন ওই মহিলা স্বপ্নের মাধ্যমে গুপ্তধনের সন্ধান পান।
তখন তিনি তার ধর্মভাই রামমোহনকে নিয়ে উক্ত গুপ্তধন উদ্ধার করেন। তবে তার আপন কেউ না থাকাতে ধর্মভাই রামমোহনকে সব সম্পদ দান করেন।
আর এই বিশাল সম্পদ দিয়ে রামমোহন গুপ্ত তার এই জমিদারির সূচনা করেন।
এরপর তিনি ও তার বংশধররা জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আগপর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন।
রামমোহন গুপ্ত ছিলেন অত্যন্ত প্রজাহিতৈষী জমিদার। তিনি তার প্রজাদের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।
অনেক মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন।
জমিদার রামমোহন গুপ্ত তার ধর্মবোন মারা গেলে তার জন্য প্রতি বছর তিনি একই রঙের প্রায় আটটি গরু জবাই করে মেহমানদারির আয়োজন করতেন।
জমিদার রামমোহন গুপ্ত মারা যাওয়ার পর পরবর্তী জমিদাররা আস্তে আস্তে রামমোহনের ধর্মবোনের জন্য করা মেহমানদারি বন্ধ করে দেন।
বিভিন্ন তথ্যমতে, জমিদার রামমোহন গুপ্ত ১৭০০ সালের শেষের দিকে এই ভবন নির্মাণ করেন।
১৯৪৮ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গেলে এই বাড়ির দুর্দশার শুরু।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকারেরা বাড়িটিতে আগুন দেয়। বহু মূল্যবান পুরাকীর্তি লুট করে।
কালের সাক্ষী এ ভবন সরকারিভাবে সংরক্ষণ প্রয়োজন।
©যুগান্তর