গল্পকথা

গল্পকথা Story Lover�

03/07/2025

আজ, বিয়ের দুই বছর পর নিজের ‘হাজবেন্ড’কে প্রথমবার লাইভ দেখলাম।সেটাও আবার ইংল্যান্ডের একজন হাই-প্রোফাইল মিনিস্টার রুপে! তাও আবার যেই সেই নয় Foreign Secretary রুপে। এটা হওয়া মুখের কথা নয়।

বাট তাকে মিনিস্টার রুপে দেখে আমি মোটেও শকড না। কারণ তাদের পুরো পরিবারটাই তো পাওয়ার-পলিটিক্সে ইনভলভড। মিডিয়াতে তাদের ‘মিনিস্টার ফ্যামিলি’ নামেই সবাই চেনে।

আমি যে জায়গায় অবাক হচ্ছি, সেটা হলো এখন আমাকেই আমার চরম শত্রু আমার হাজবেন্ডেরি ওপর স্পাই গিরি করতে হবে!ইয়েস, ইউ হার্ড ইট রাইট।মাই ওন হাজব্যান্ড।

ভাবছি, কিভাবে করবো? যদি রিকগনাইজ করে ফেলে? তো কি হবে? আসলে, চিনবে কী?সিরিয়াসলি, চিনতে পারবে উনি আমাকে?

কারণ, আমাদের একমাত্র ফেস-টু-ফেস দেখা ছিল বিয়ের দিনেই। ওদিন ছিল আমাদের ফাস্ট মিট এন্ড ওইদিনই ছিল লাস্ট মিট। ঠিক দুই বছর আগে।

ওনার নাম লিওনার্ড থমাস।একজন মুসলিম হয়েও এমন নাম? ভেবে পাই না!আর আমি?আই'ম তাজওয়ারা নাজ।

আমাদের বিয়েটা বিয়ে না, একটা ফুল-অন জোক ছিল সেটা অন্তত আমার কাছে মনে হয়।

পুরো ব্যাপারটা শুরু হয় আমার বড় বোন এলিসার মাধ্যমে। লিওনার্ড আর আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে একটা বিজনেস অ্যালায়েন্স হচ্ছিল। সেই টাই আপ স্ট্রং করার জন্যই এলিসার সাথে লিওনার্ডের বিয়ে ফিক্সড হয়। সবকিছু একদম পারফেক্টলি প্ল্যানড ছিল।

বাট হেয়ার দ্য প্লট টুইস্ট আমার সিস্টার এলিসা, যাকে আমরা ছোট করে ‘এলিস’ বলি, ও ওর কলেজ প্রফেসরের সাথে সিরিয়াসলি ইনভলভড ছিল। আর বিয়ের ঠিক আগের দিন পালানোর বদলে, ও বিয়ের দিনই পালায় স্পেনে সেই প্রফেসরের সাথে!আহারে বইন, তুই পালাতি ঠিকই, কিন্তু বিয়ের আগের দিন করলেই তো হতো! তাহলে আমি বেঁচে যাই।

ওর পালানোর খবর শুনে লিওনার্ডের ফ্যামিলি তো একদম ফায়ার হয়ে যায়। তারা বলতে শুরু করে আমার বাবা-চাচারা নাকি ডেলিবারেটলি এসব প্ল্যান করেছে, যাতে তাদের রেপুটেশন ড্যামেজ হয়।

তখনই, পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করতে, আমার বাবা আমাকে স্টেজে নিয়ে যান। আর কিছু মুহূর্তের মধ্যেই আমি হয়ে যাই লিওনার্ড থমাসের ওয়াইফ। না আমার কোনো কথা কেউ শুনে, না কিছু বুঝে। মুহুর্তেই আমার জীবনের চাকা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

বাট ওয়েট, ড্রামা এখানেই শেষ না।বিয়ের কনট্রাক্ট সাইন হওয়ার পরপরই লিওনার্ড ক্লিয়ারলি বলে দেন- হি উইল নেভার অ্যাকসেপ্ট মি অ্যাজ হিজ ওয়াইফ।

সে নাকি এই বিয়ে করেছে শুধু তার ফ্যামিলির অপমানের বদলা নিতে, যাতে আমার নামের সাথে “মিসেস লিওনার্ড থমাস” ট্যাগটা লেগে থাকে।

তারপর?সে বিয়ের আসর থেকেই চলে যায়। না কনফার্মেশন, না কোনো এক্সপ্লানেশন।শেষমেশ তার ওভারপ্রাউড ফ্যামিলি এসে আমাদের কাছে সরি বলে, আর পুরো ব্যাপারটা চেপে যায়।

এই ফ্যামিলির কাছে বিয়ে, ভালোবাসা, কমিটমেন্ট সবকিছুই সেকেন্ডারি।দেয়ার অনলি প্রায়োরিটি ইজ পাওয়ার অ্যান্ড ডিল-মেকিং।

আমি তখন ভীষণভাবে ট্রমাটাইজড ছিলাম। নিজের পরিবার কে দোষারোপ করছিলাম। এইসব আমায় ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু যাই হোক, আমার বড় ভাইয়া আর ছোট চাচ্চু একটা ডিসিশন নেন এভাবে আর চলবে না। তারা আমাকে পাঠিয়ে দেয় এক স্পেশাল ট্রেনিং প্রোগ্রামে।সেখান থেকেই আমি ট্রেইন হই একজন ইলিট আন্ডারকভার এজেন্ট হিসেবে।

ছয় মাস ধরে আমি ফুল টাইম মিশনে। আমার নতুন টার্গেট মিনিস্টার লিইউ, ওরফে লিওনার্ড থমাস। তার অ্যাক্টিভিটিজ মনিটর করা, বিদেশি কানেকশন, করাপশন, ব্ল্যাকমার্কেট লিংক সবকিছুর ওপরে একটা ক্লিন, আনবায়াস্ট রিপোর্ট তৈরি করা আমার রেসপন্সিবিলিটি। সবকিছু হচ্ছে হাইলি কনফিডেনশিয়াল, হাইডেন অপারেশন।

এইসব ভাবতে ভাবতেই আমি লিওনার্ডের প্রাইভেট মেনশনে আয়োজিত হাই-প্রোফাইল পার্টিতে ঢুকি।
চারপাশে লাক্সারিয়াস অ্যাটমোসফিয়ার, প্রভাবশালী মানুষের আনাগোনা। যত গ্যাস্ট তার চেয়ে গার্ড আর সিকিউরিটি বেশি। এটাই স্বাভাবিক একজন মিনিস্টারের পার্টি বলে কথা। আমি আমার সিগনেচার লুকেই এসেছি ডার্ক হুডি, স্ট্রেইট ট্রাউজার আর ক্যাজুয়াল খাকি রঙের হিজাব, হালকা করে ঝুলানো পেছন ঘিরে।

আমি চারপাশে নিরবে সব পর্যবেক্ষণ করছিলাম এরমধ্যে
হঠাৎ চোখে পড়ে, লিওনার্ড দুইজন রাশিয়ান ব্যক্তির সঙ্গে বাগানের পিছন দিকে এগোচ্ছেন। যাদের সাথে যাচ্ছেন ওরা ফর্মালি ইনভাইটেড না, অথচ এদের নামে ইন্টারন্যাশনাল ব্ল্যাকমার্কেট লিংকস আছে। এটা সিরিয়াসলি রেড ফ্ল্যাগ।

আমি কিছু খটকা মনে করে তাদের সাইলেন্টলি ফলো করি। সিকিউরিটি ক্যামেরা কিংবা কারও দৃষ্টিতে না আসার জন্য কভার নিয়ে এগোই।কিন্তু বাগানের পিছনে গিয়ে দেখি কেউ নেই। পুরো জায়গাটা স্ট্রেঞ্জলি সাইলেন্ট।
"এই তো এরা গেলো, কিন্তু এখন কোথায়?"
আমার ইনটিউশন চিৎকার করে বলে কিছু একটা অফ হচ্ছে।ঠিক তখনই টাশ করে!কেউ আমার মাথায় হেভি কিছু দিয়ে হিট করে।আমার চোখের সামনে সব ব্লার হতে থাকে, শরীর ভারী হয়ে আসে।
আমার লাস্ট থট,
"আমি ফ্রেমড হয়েছি কিন্তু কে?"এরপর সব অন্ধকার। হয়ে যায়।

চোখে-মুখে ঠান্ডা পানির ছোঁয়া লাগতেই এক ঝটকায় রিয়ালিটি হিট করে চোখ খুলে দেখি আমি একটা অন্ধকার রুমে। মাথাটা হ্যাং করছে,চারপাশ ঝাপসা। মাথা মনে হচ্ছে কেউ শীলপাটায় পিষে দিয়েছে। বডি পুরো ঝিম ধরে গেছে। ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগে আমার । চোখ ক্লিয়ার করে দেখি সামনে লিওনার্ড বসে আছেন একটা লেদার চেয়ারে, উনি নিজের নীল চোখে ঠাণ্ডা আগুন আর ঠোঁটে এক শয়তানি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। চারপাশে হেভি সিকিউরিটি, আমার হাত-পা টাইটলি বাঁধা চেয়ারের সঙ্গে।

লিওনার্ডের ঠোঁটে কুটিল হাসি নিয়ে বলেন।

“Well well well, Miss Naz. হঠাৎ আপনার আমার পার্টি এই ভিজিটের কারণটা কি জানা যাবে?”

আমি চোয়াল শক্ত করে বলি,
“হোয়াট দি অ্যাকচুয়াল ফাক ইজ দিস? কেনো আমায় বন্দী করে রেখেছেন?”

এটা শুনে উনি ঠান্ডা হয়ে বলেন,
“তোমার দাঁতের সারি সব গুলো ফেলে দিতে সময় লাগবে না যদি এই অ্যাটিটিউড চালিয়ে যাও। বলো তোমার ফ্যামিলি পাঠিয়েছে এখানে তোমায়, তাই না? আমাকে ট্র‍্যাপ করার জন্য ?”

আমি হালকা হেসে কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে বলি,
“মাই ফ্যামিলি হ্যাজ বেটার থিংস টু ডু দ্যান বেবিসিট সাইকোস, লাইক ইউ, মিস্টার লিউ।

এটা শুনে লিওনার্ড ঠোঁটে কাঁচা হাসি মেখে বলেন,
“ওহ রিয়েলি? তাহলে এক্সপ্লেইন করো তুমি আমার শহরে কেনো?”

আমি তাকিয়ে থাকি তার চোখে, তারপর স্পষ্ট করে বলি,
“ কম পানির মাছ বেশি পানিতে পড়লে এমনি উড়াউড়ির করে ঠিক আপনার মতো। মিনিস্টার হওয়ার আগে মেয়র ছিলেন বলে ভাবছেন শহরটা আপনার প্রাইভেট প্রপার্টি?

আমার এই কথা শুনে উনি হেসে উঠে বলেন,
““বাহ মিস নাজ! বাহ! ধন্যবাদ আপনায়। এতদিন জানতাম মাছ পানিতে থাকে - এখন আপনার থেকে শুনলাম মাছ আকাশেও উড়ে। ওয়াও আপনার IQ লেভেলের প্রসংশা করতে হয়। আপনার আইকিউ দেখে তো নাসা বিজ্ঞানও আপনায় গুরু মানবে।

এ কথা বলেই উনি ওয়েস্ট থেকে গান বের করে সরাসরি আমার বুক বরাবর পয়েন্ট করেন।আমি এতে কিছুটা অবাক হই বাট ভয় পাই না। কারণ আমি" তাজওয়ার নাজ"" আল্লাহর আযাব আর তাকে ছাড়া- মানুষ আর মানুষের দেওয়া আযাব কে তোয়াক্কা করি না। আমি গানের দিকে একপলক তাকিয়ে লিওনার্ডে দিয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে হেসে বলি,
" সুট করবেন? সাহস থাকলে করে দেখান। আর যদি আপনি সুট না করেন তো আমি নাজ, আপনার কিচ্ছা এখানেই চিরতরে খতম করে দিবো।

To be continued,,,

Title:
Writer:
Genre: Thriller। Masterpiece | Mystery | Political | Love

26/10/2024

বাংলাদেশই একমাত্র দেশ।
যেখানে জনসংখ্যার চেয়ে সহ সভাপতি বেশি। 🙂

25/10/2024

১৭ বছর ধরে "LUX" সাবান ব্যবহার করেও
চাঁদের মতো উজ্জল হতে পারলাম নাহ!🙂

25/10/2024

ক্লাসের একপর্যায়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় স্যার রিতুকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-আচ্ছা রিতু, অনেস্টলি বলতো তুমি কোন রিলেশনে আছো কিনা?

রিতু আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। পড়াশোনাতেও বেশ ভালো। তার সাথে প্রেম করার জন্য ছেলেদের কতজনে কত চেষ্টা করে যাচ্ছে তা বলে শেষ করবার মতো নয়। সে একজনের সাথে রিলেশনে আছে। আর তাই কাউকে পাত্তা দেয়না সে। অথচ স্যারের প্রশ্নের উত্তরে সে দাঁড়িয়ে অকপটে বলে দিলো,

-নাহ স্যার, আমি কারোর সাথে কোন রিলেশনে নেই।

উত্তরটি শুনে রিতুর পেছনের বেঞ্চে বসা তানহা হি হি করে হেসে দিলো। এবার তানহাকে দাঁড়াতে বললেন স্যার। ও দাঁড়ালো। স্যার জিজ্ঞেস করলেন,

-ওর উত্তর শুনে তো তুমি হেসে দিলে। এবার তুমি বলতো তুমি কারোর সাথে কোন রিলেশনে আছো কিনা?

ও উত্তর দিলো,
-জ্বী স্যার আছি।

তানহা হলো আমাদের ক্লাসের সবচাইতে মোটা মেয়ে। ছেলেদের কেউই ওর দ্বারে কাছেও ঘেঁষে না। ওর মুখে এমন উত্তর শোনে ক্লাসের সবাই হা হা হি হি করে হেসে উঠলো। গোটা ক্লাসরুমে হাসির রুল পড়ে গেল। স্যারের ধমকে হাসি থামালো সবাই। তানহা দাঁড়িয়েই আছে। এবার স্যার ওকে জিজ্ঞেস করলেন,

-ভালো কথা। তা আমরা কি এবার সেই সৌভাগ্যবানের নামটি জানতে পারি?

-রিয়াদ। রিয়াদের সাথেই আমি রিলেশনে আছি স্যার।

ওর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। আমিও হলাম। স্যারও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

-কোন রিয়াদের কথা বলছো তুমিা? মানে, আমাদের ক্লাসের রিয়াদ নাকি অন্যকেউ?

-আমাদের ক্লাসের রিয়াদ। ওর সাথেই আমি রিলেশনে আছি স্যার। এবং সেটাও গত ছ'মাস ধরে।

আমি এবার আকাশ থেকে মাঠিতে পড়ে গেলাম। মটকি কি বলছে এসব! ক্লাসের মধ্যে আমাদের দুজনকে নিয়ে একটা শোরগোল শুরু হয়ে গেল। স্যার আবারো সবাইকে থামালেন। এবার স্যার বললেন,

-রিয়াদ কোথায় দাঁড়াও তুমি!

আমি দাঁড়ালাম। স্যার বললেন,

-তানহা যা বলেছে তা কি সত্যি?

স্যারের প্রশ্ন শুনে তানহার দিকে তাকালাম আমি। সেও আমার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে। ওর চোঁখের দিকে তাকিয়ে আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। ওর চোঁখের দিকে তাকিয়ে থেকেই আমি বললাম,

-জ্বী স্যার সত্যি। আমাদের দুজনের মধ্যে রিলেশন আছে।

আমার কথা শুনে ক্লাসের সবাই করতালি দিতে দিতে দাঁড়িয়ে গেল। গোটা ক্লাসে এক অন্যরকম পরিবেশ নেমে এলো। পাশের বন্ধুগুলোও গালি দিতে দিতে আমাকে কনগ্রেচুলেশনস জানালো। কিছুক্ষণ পরেই টিফিনের ব্রেক দেয়া হলো। বন্ধুদের সবাই আমাকে এটাসেটা বলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। কেউ বললো, 'ভালোই তো, রিলেশনে আছো অথচ আমরা কেউই জানিনা!' কেউ বললো, 'কতদিন ধরে চলছে এসব হুমমম? ট্রিটটা যেন পেয়ে যাই আজ।' কেউ বললো, 'কনগ্রেচুলেশনস দোস্ত এন্ড বেস্ট অব লাক!'

গোটা ক্লাসরুমে তানহা আর আমি ছাড়া কেউ নেই। আমি বসে আছি আমার জায়গায়। ও ওর টিফিন বক্সটা নিয়ে এগিয়ে এলো আমার দিকে। কাছে এসে বললো,

-কি ব্যপার! মন খারাপ করে আছো যে?

আমি বললাম,
-কেন করলি এটা? সবার সামনে আমাকে কেন ছোট করলি তুই?

ও বললো,
-আমি এতসব বুঝিনা। ক্লাসের ছেলেদের মধ্যে তোমাকেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। অন্য মেয়েরাও তোমাকে পছন্দ করে। কিন্ত আজ স্যার জিজ্ঞেস করায় সুযোগটা হাতছাড়া করিনি আমি। সবার মাঝ থেকে তোমাকে আমি আমার করে নিয়েছি। ভালো করিনি বলো!

ওর কথা শোনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল আমার। আমি বললাম,
-তুই একটা মটকি। তুই ভাবলি কি করে যে তোকে আমি ভালোবাসবো? দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে। আর কখনো তুই আমার সামনে আসবিনা। চলে যা এখান থেকে। যা।

আমার ধমকানো খেয়ে ও ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। আমি মনে মনে বললাম, 'গেলে চলে যাক, তাতে আমার কি।'

টিফিনের পর আবারো ক্লাস শুরু হলো। ক্লাস করলাম। সাড়ে চারটায় ছুটি হলো আমাদের। আজকের মতো ঘটনা এর আগে কখনো আমাদের কলেজে ঘটেছে বলে মনে হয়না। সবার মুখে মুখে শুধু এটা নিয়েই আলোচনা। ছেলেমেয়ে এমনকি স্যারদের মুখে মুখেও!

তানহা আমাদের সাথেই কোচিং পড়তো। পরেরদিন ও আসেনি। ক্লাসেও না। এর পরেরদিনও আসেনি। এর পরেরদিনও না। এভাবে চারদিন আসেনি ও। লাস্ট গত শনিবারে টিফিন টাইম পর্যন্ত ও ক্লাস করেছিল। বৃহস্পতিবারে ক্লাস শেষ করে ওর কাছের এক বান্ধবী সোনালীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,

-শনিবারের পর থেকে তানহা আর ক্লাসে আসেনি। তুমি তো ওর কাছের ফ্রেন্ড। তুমি জানো কি কিছু?

ও বললো,
-নাহ ভাইয়া। আসলে, ওর সাথে আমার শুধু ক্লাসে আর কোচিংয়েই ভালো সম্পর্ক। এর বাইরে কোন সম্পর্ক নেই। মানে, ওর কোন ফেসবুক আইডিও নেই যে ওর সাথে যোগাযোগ করব। আর ও তো পার্সোনাল কোন ফোনও ইউজ করেনা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-ওর বাসাটা কোথায় বলতে পারো?

-সেটা আমি সঠিক করে বলতে পারবোনা। তবে ও একদিন আমাকে বলেছিল ওর বাবা নাকি আমাদের বাজারের কৃষি ব্যাংকে চাকরী করেন।

এটুকু ইনফরমেশন যথেষ্ট নয় আমার জন্য। আমি আবারো ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
-আচ্ছা প্লিজ ভালো করে মনে করে দেখো। আরো যেকোন ইনফরমেশন ওর সম্বন্ধে। প্লিজ মনে করে দেখো।

ও কিছুক্ষণ ভাবার পর বললো,
-হুমমম মনে পড়েছে। ও গত সপ্তাহে কথায় কথায় আমাকে বলেছিল কয়েকদিন আগে নাকি ওদের বাসার পাশেই বৃক্ষমেলা হয়েছিল। আর সেখান থেকে নাকি ও অনেকগুলো ফুলের চারাগাছ কিনেছিল। আর বৃক্ষমেলা তো উপজেলা অফিসের মাঠেই হয়েছিল। ওর বাসাটা সেখানেই কোথাও হবে হয়ত।

হুমমম একুটুই যথেষ্ট আমার জন্য। সোনালীকে ধন্যবাদ দিয়ে এভাবে কলেজ ইউনিফর্ম গায়ে দিয়েই চলে গেলাম তানহাদের বাসা খুঁজতে। সেখানে গিয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করার পর তানহাদের বাসার খোঁজ পেলাম।

গেট খুলে ভেতরে ঢুকলাম। বারান্দার সামনে শুধু ফুল গাছ আর ফুল গাছ। কলিংবেল বাজালাম। দুবার বাজানোর পর একজন মহিলা দরজা খুলে বাইরে এলেন। বারান্দায় গ্রীল সিস্টেম এবং সেখানে তালা দেয়া। আমি উনাকে দেখে বললাম,

-আসসালামুআলাইকুম!

উনি জবাব দিলেন,
-ওয়ালাইকুমুসসালাম।

-এটা কি তানহাদের বাসা?
জিজ্ঞেস করলাম আমি।

-হুমমম, আমি তানহার আম্মু। তুমি কে বাবা?

-আমি রিয়াদ। তানহাদের ক্লাসের ক্যাপ্টেন। তানহা বেশ কদিন ধরে ক্লাসে যায়না তো তাই খোঁজ নিতে এলাম।

আমার কথা শুনে উনি আমাকে বললেন,
-তুমি একটু দাঁড়াও আমি গেটের তালাটা খুলে দিচ্ছি।

এই বলে উনি চাবি আনতে ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর এসে তালা খুলে আমাকে বললেন,
-ভেতরে এসো বাবা।

-জ্বী আন্টি, থ্যাংকস।

উনিও আমার পিছু পিছু রুমে এসে ঢুকলেন এবং আমাকে সোফায় বসতে বললেন। উনি চলে গেলেন অন্য রুমে। আমি একা বসে আছি। সবকিছু বেশ গোছগাছ করা। পরিপাটি। এদিকসেদিক সবকিছু দেখছি আমি। একপর্যায়ে দেয়ালে টাঙ্গানো একটা ছবির উপর নজর আটকে গেল আমার। ছবিতে তানহার মা একপাশে আর তানহা মাঝখানে। আরেকপাশে যিনি তিনি তানহার বাবা। ছবিতে তানহাকে দেখে মনে হলো ছবিটি খুব বেশিদিন আগের নয়। তানহার বাবা তেমন মোটা নয় তবে তানহার মা তানহার মতোই। আমি ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছি এমন সময় তানহার মা এসে রুমে ঢুকলেন।

-এই নাও বাবা, এগুলো খেয়ে নাও!

তিনটি মিষ্টি। ব্রেড, জেলি আর এক গ্লাস পানি। একটি ওয়েলকাম ট্রেতে করে আমার সামনে এনে দিলেন। সৌজন্যতা স্বরূপ আমি বললাম, 'এগুলোর কি দরকার ছিল আন্টি!'

উনি বললেন,
-চুপচাপ খেয়ে নাও এগুলো। আর তানহা ওর বাবার সাথে আমাদের দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ গিয়েছে। আজকেই আসার কথা। আমি ফোন করে দেখছি কতদূর এসেছে। তুমি বসো।

এই বলে তিনি আবার অন্য রুমে চলে গেলেন। আমি নাস্তা করলাম। কিছুক্ষণ পর আবার তিনি আসলেন। এবার এসে আমার সামনের সোফায় বসলেন। বসে আমাকে বললেন,

-তুমি যদি আর ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট বসো তাহলে তানহার সাথে দেখা করে যেতে পারবে। আর চাইলে তুমি তানহার রুমে বসেও অপেক্ষা করতে পারো। আমি তানহাকে বলেছি তোমার কথা।

একবার ভাবলাম চলে আসবো। আরেকবার ভাবলাম নাহ, এসেছি যেহেতু ওর সাথে দেখাটা করেই যাই। আন্টিকে বললাম,

-আচ্ছা আন্টি, তাহলে আমি তানহার রুমেই অপেক্ষা করছি।

আমার কথা শোনে তানহার মা বললেন,

-ঠিক আছে। তবে শোন, আমি রান্না করছি। ওরা আসলে আমরা সবাই একসাথে খাব। আমাদের সাথে খেয়ে তারপর তুমি যাবে ঠিক আছে!

আমি একগাল হাসি দিয়ে বললাম,

-জ্বী আন্টি, ঠিক আছে।

এবার আমি তানহার রুমে গিয়ে ঢুকলাম। ওর রুমটা আরো সুন্দর করে সাজানো-গোছানো। টেবিলের উপর চারটি ডায়েরি। অনুমতি ছাড়া কারোর ডায়েরি পড়াটা মোটেও ঠিক নয়। কিন্ত এখন সেটা ভাবলে আমার কাছে অনেককিছুই অজানা থেকে যাবে। ব্যাগটা বিছানার উপরে রেখে সবার নিচের ডায়েরিটা হাতে নিলাম আমি। প্রথম পাতাতেই খুব সুন্দর করে ফুল আঁকা। ফুলের ভেতরে লিখা, 'T+R'। উপরে এককোনায় লিখা, 'I Love You Riyad.' পাতাগুলো উল্টানো শুরু করলাম আমি। কয়েকটি পাতা উল্টাতেই একটি লিখা চোঁখে পড়লো আমার। পুরো পৃষ্ঠা জুড়েই সেটি লিখা। যেখানে তারিখ দেয়া ২২-০৬-২০১০। এই দিনটি আমার জীবনের একটি স্বরণীয় দিন। কারণ, এদিনই কলেজের একটি অনুষ্ঠানে আমার হাতে এর আগের বছরের আমাদের কলেজের 'স্টুডেন্ট অব দ্যা ইয়ার' এওয়ার্ডটি তুলে দেয়া হয়।

.......চলবে.......

গল্প োটা_মেয়ে
পর্ব --১


নতুন পাঠকরা গল্পের নেক্সট পর্ব গুলো মিস না করতে নীল লেখায় চাপ দিয়ে আইডিতে ফলো করুন 👉 গল্পপ্রমি Golpo Premi

21/09/2024
10/09/2024

কিছু মানুষের ভাবসাব, বিল গেটস এর বউ মতোন🥴🥴🥴🥴

10/09/2024

- সেইইইই মানুষটাই আমার হোক, যে মন খারাপের সময় আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে 💝😌

31/08/2024

িয়েছি_তোমাকে

#পর্ব_০৮

#নুজাইফা_নূন

হোয়াট ? পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছে মানে ? কি বলছো এসব ?তুমি সঠিক খবর জানো তো?”

-” জ্বি ম্যাডাম। আমাদের কাছে এমনি তথ্য এসেছে।সবটা প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছিলো। যেহেতু নির্জন রাস্তা ছিলো।তাই মানুষের ও কোনো সমাগম ছিলো না। কিন্তু হুট করে কোথা থেকে একজন হিরো এসে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে নিলো।”

-” পাঁচ ছয় টা ছেলে মিলে একটা ছেলের সঙ্গে পারলো না ? অকর্মার ঢেঁকি সব কয়টা।”

-” ম্যাডাম বললাম না ছেলেটা হিরোর মতো দেখতে। গায়ে অনেক শক্তি।অনেক অনেক খায় হয়তো।”

-” জাস্ট শাট আপ।আমি মরছি আমার টেনশনে।আর তুমি আমার সাথে মশকরা করছো ? তোমাদের কে বিশ্বাস করাটাই ভুল হয়েছে আমার।নিজেরা তো ফাঁসলে সাথে আমাকেও ফাঁসালে বলে রাগে গজগজ করতে করতে ঐশ্বর্য কল কেটে দিয়ে বললো,

-” পুলিশের চাপে পড়ে ওরা যদি মুখ খোলে তাহলে তো আমি ফেসে যাবো।আমার সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।না না আমি কিছুতেই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে পারি না।আমাকে কিছু একটা করতে হবে বলে ঐশ্বর্য অতি দ্রুত নিজেদের বাড়িতে চলে আসে।তাকে একা ফিরতে দেখে সালেহা বেগম বিচলিত হয়ে বললো,

-” ছোট ম‌্যাডাম এতো তাড়াতাড়ি হলুদের অনুষ্ঠান শ্যাষ হয়ে গিলো ? গেলেন ই তো কয়েক ঘণ্টা আগে।এর‌ই মধ্যে আইয়া পড়লেন? আপনে একা আইলেন যে ? সিজদা মা ক‌ই?”

-” ঐশ্বর্য সালেহা বেগমের কথার উত্তর না দিয়ে বাবা বাবা বলে ডাকতে শুরু করলো। রাশেদ চৌধুরী তখন নিজের রুমে ফারুক মির্জার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন।ঐশ্বর্যের চিৎকার শুনে তিনি রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,

-” কি হয়েছে ঐশ্বর্য? চিৎকার করছো কেন?আর এতো তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো ? তুমি তো বলেছিলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে? তুমি একা এসেছো? সিজদা কোথায়? সিজদা কে দেখছি না তো।”

-” এক সাথে এতো গুলো প্রশ্ন করলে আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো বাবা?”

-” তুমি তোমার মতো করে বলো।”

-” বাবা একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে গিয়েছে।আমি বা সিজদা কেউই বিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতে পারি নি।”

-” মানে ? সিজদার কোনো বিপদ হয় নি তো ?”

-” হ্যাঁ বাবা।”

-” গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আমার খুব পানির তেষ্টা পেয়েছিলো। কিন্তু গাড়িতে কোনো পানি ছিলো না।আমি পানি কিনে নিয়ে এসে দেখি গাড়িতে সিজদা নেই।আমি অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও সিজদা কে পাই নি। ওহ্ গড! সিজদা তো এখানকার রাস্তা ঘাট কিছুই চিনে না।এমনটা তো নয় যে সিজদা গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছিলো। এজন্যই সিজদা হাওয়া খাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে কোথাও চলে গিয়েছে।সিজদা যেহেতু রাস্তা চিনে না।তাই আর ফিরতে পারে নি।”

-” তুমি এতোটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন হলে কি করে? তুমি তো জানতে সিজদা রাস্তা ঘাট কিছু চেনে না। তুমি জানার পরেও সিজদা কে একা রেখে কিভাবে চলে গেলে?”

-” বাবা এখন এসব কথা বলার সময় নয়। আমাদের সিজদা কে খুঁজে বের করতে হবে।এই মুহূর্তে আমাদের থানায় গিয়ে একটা মিসিং ডায়েরী করা প্রয়োজন।”

-” ঠিক আছে।চলো বলে রাশেদ চৌধুরী ঐশ্বর্য কে নিয়ে অতি দ্রুত বেরিয়ে পড়েন। তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে সালেহা বেগম চোখের পানি মুছে বললেন,

-” মায়ের মন ঠিক‌ই সন্তানের বিপদ আঁচ করতে পারে।আমি ঠিক এই ভয় ডা পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার ক্যান জানি মনে হ‌ইতাছে ছোট ম্যাডাম নাটক করতাছে।সে সব জানে।সে ইচ্ছে ক‌ইরা সিজদা রে বিপদের মুখে ঠেইলা দেছে। নিজেরে কেউ যাতে কোন প্রকার সন্দেহ না করে এজন্য মিছে মিছে কান্দোনের নাটককরতাছে।নাটকবাজ ছেড়ি একটা।তোর বিচার আল্লাহ করবো। আল্লাহ ছাড়া দেয়। কিন্তু ছেড়ে দেয় না।।”

**********

-” তোমার নাম কি মায়াবতী?”

-” সিজদা পরম যত্নে সারজিসের ক্ষতস্থানে রুমাল বেঁধে দিচ্ছিলো।সারজিসের প্রশ্নে হাত থেমে যায় তার।সে আমতা আমতা করে করে বললো,

-” জ্বি না।”

-” ওকে ফাইন।বাট আই উইল কল ইউ মায়াবতী।সিজদা ইংরেজি বুঝতে না পেরে বললো,

-” কিছু বললেন?”

-” তোমার নাম যাই হোক।আমি জানতে চাই না।আমি তোমাকে মায়াবতী বলে ডাকবো।যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।”

-” না না।আমার কোনো আপত্তি নেই।আপনার যে নামে ডাকতে ভালা লাগে সেই নামে ডাকবেন।”

-” থ্যাংক ইউ সো মাচ।বাট আই হ্যাভ নোটিশ সামথিং। তুমি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছো আবার শুদ্ধ ভাষায় ও বলছো। ব্যাপার টা কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং।”

-” সিজদা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারজিসের ফোন বেজে উঠে।সারজিস সিজদা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো,

-” চলো চলো। অলরেডি আমার অনেক লেট হয়ে গিয়েছে। হসপিটাল থেকে বার বার কল আসছে বলে সারজিস গাড়ির দরজা খুলে দেয়।সিজদা গাড়িতে বসলে সারজিস দরজা লাগিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।সারজিস গাড়ি স্টাট দিতে যাবে তখনি দেখে সিজদার সিট বেল্ট লাগানো হয় নি।সারজিস তৎক্ষণাৎ সিজদার দিকে ঝুঁকে আসে সিট বেল্ট লাগিয়ে দেওয়ার জন্য।সিজদার তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।সারজিসের চোখে চোখ রাখার স্পৃহা নেই তার।জীবনের প্রথম কোনো পুরুষ এতোটা কাছাকাছি এসেছে তার।সিজদার সর্বাঙ্গ কাঁপুনি দিয়ে ওঠে।সজারুর ন্যায় দাঁড়িয়ে যায় শরীরের সমস্ত লোমকূপ। হার্ট বিট দ্রুত গতিতে লাফাতে শুরু করে।সিজদা চোখ বন্ধ করে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে বসে থাকে।সারজিসের সিট বেল্ট লাগানো হয়ে গেলেও সিজদার থেকে সরে আসে না। বরং সিজদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ।সিজদার ভিতু চেহারা দেখতে বেশ ভালো লাগছে তার। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হবার পর সারজিস সিজদার থেকে সরে এসে গাড়ি স্টাট করলো।গাড়ি চলতে শুরু করে আপন গতিতে।সারজিস একবার সিজদার চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

-” তুমি শুধু মায়াবতী ন‌ও।সাথে ভিতুবতী ও বটে ।আই লাইক ইট।”

-” গাড়িতে পিনপতন নীরবতা কাজ করছে। দুজনের কারো মুখেই কোনো কথা নেই।প্রায় আধা ঘন্টা পর গাড়ি এসে হসপিটালের সামনে থামে।সারজিস সিজদা কে নিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করে।সবাই সিজদা কে সারজিসের সাথে দেখে অবাক হয়ে যায়।
সারজিস স্যার বিয়ে করেছে কথাটা মূহুর্তের মধ্যেই হসপিটালে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হালিমা বেগমের কাছে ও কথাটা পৌঁছে যায়।তিনি কালবিলম্ব না করে সারজিসের কাছে কল দেন।সারজিস ফোন রিসিভ করা মাত্রই তিনি সারজিস কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো,

-” তুমি বিয়ে করে নিলে দাদুভাই? একবার ও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? এই জন্যই তুমি সিজদার মতো একটা ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছিলে না।এই ছিলো তোমার মনে? আমি এক্ষুনি আসছি হসপিটালে।আমি ও দেখতে চাই তুমি কোন হুর পরী বিয়ে করেছো।”

-” কাম অন দাদু।তোমাকে কে বললো আমি বিয়ে করেছি? আমি বিয়ে করলে এতোক্ষণে ব‌উ নিয়ে বাসর ঘরে থাকতাম। ব‌উ নিয়ে হসপিটালে আসতাম না। রাস্তায় একটা মেয়ে বিপদে পড়েছিলো।আমার সময় নেই দেখে তাকে তার বাসায় পৌঁছে দিতে পারি নি।আমার সাথে করে হসপিটালে নিয়ে এসেছি।আমার কাজ শেষ হলে তাকে তার বাসায় পৌঁছে দিবো।”

-” আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম দাদু ভাই।”

-” ডোন্ট প্যানিক।আ’ম নট ম্যারিড।আমি বাসায় ফিরে সবটা বলবো তোমাকে ।এখন রাখছি।বাই বলে সারজিস ফোন পকেটে রেখে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।”

-” সিজদা সারজিসের চেম্বারের এক কোণে গুটি মেরে বসে রয়েছে।সারজিস পেশেন্ট দেখছে। কিন্তু তার বেহায়া চোখ বারবার সিজদাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। লুকিয়ে দেখার মাঝে এক ধরনের ভালো কাজ করছে তার মধ্যে।তার কানে অরিজিৎ সিং এর গানের লিরিক্স বাজছে,

তোকে একার দেখার লুকিয়ে কি মজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয় রে সোজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না।।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

20/08/2024

িয়েছি_তোমাকে [ প্রথম দেখায় ভালো লাগা💘]
#পর্ব_০৭
#নুজাইফা_নূন

” সারজিস এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে হালিমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য র‌ওনা হয়।দশটার আগে হসপিটালে পৌঁছেতে হবে তাকে।দশ টা থেকে চেম্বারে বসতে হবে।সারজিস গাড়িতে উঠে হাত ঘড়িতে দেখলো দশ টা বাজতে খুব বেশি দেরি নেই।হালিমা বেগমের জন্য অনেক টা লেট হয়ে গিয়েছে তার।সারজিস দ্রুত
হসপিটালে পৌঁছানোর জন্য শর্টকাট রাস্তা বেছে নিলো।গাড়ি চলছে আপন গতিতে।সাইফানের ব্যাপার টা অনেক ভাবাচ্ছে সারজিস কে ।সাইফান কে যে সারজিস অপছন্দ করে সেটা নয়।সাইফান তার দ্বিতীয় মা শান্তা মির্জার প্রথম স্বামীর সন্তান।সারজিস সাইফান দুজনেই সমবয়সী। ফারুক মির্জার সাথে যখন শান্তা মির্জার বিয়ে হয়।তখন শান্তা মির্জা সাইফান কে হালিমা মঞ্জিলে নিয়ে আসে। হালিমা বেগম তাদের বিয়েটা মানতে পারেন না। ফারুক মির্জা হাতে পায়ে ধরে বিয়েটা মানাতে সক্ষম হলেও সাইফান কে কোনো মতেই মেনে নেন নি হালিমা বেগম।সাইফান নিজের নানি বাড়িতে বড় হতে থাকে।তবে সারজিসের থেকে সাইফান কোনো অংশে কম নয়।সাইফান একজন আর্মি অফিসার ।তার লম্বাটে দেহ,শ্যাম বর্ণ , খাঁড়া নাক, মায়া ভরা চোখ, মাথার চুলগুলো একদম ছোট ছোট।‌সাইফান দেখতে যেমন সুদর্শন।তেমনি অমায়িক তার ব্যবহার।তার যখন আর্মি তে জব হয় তখন হালিমা মঞ্জিলের সবাইকে মিষ্টি মুখ করাতে এসেছিস। কিন্তু হালিমা বেগম তাকে অপমান অপদস্থ করে। বিনিময়ে সাইফান মুচকি হাসি উপহার দিয়ে হালিমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর কেটে যায় কয়েক বছর। কিন্তু সাইফান আর হালিমা মঞ্জিলে আসে নি। এতো গুলো বছর পর সাইফানের কথা শুনে একটু আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছিলো সারজিস।সারজিস পুরোনো কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ড্রাইভ করছিলো অকষ্মাৎ সারজিসের মনে হলো একটা মেয়ে কে চার পাঁচ টা ছেলে মিলে এক গাড়ি থেকে টেনে হেঁচড়ে অন্য‌ গাড়িতে তুলছে।সারজিস দেখার ভুল বলে চালিয়ে দিয়ে ড্রাইভে মন দেয়। কিন্তু লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই একটা মেয়ে কে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছেলেগুলো কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।সারজিস এটা দেখা মাত্রই গাড়ি থেকে নেমে ছেলেগুলোর কাছে এসে বললো,

-” কি হচ্ছে এখানে ?”

-” তুই কোন ক্ষেতের মুলা রে ? হিরো গিরি দেখাতে আইছিস? আমাদের সাথে কোনো হিরোগিরি চলবে না। একদম মেরে পুঁতে দিবো।”

-” মেয়েটা কে ? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তাকে ? “

-”তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি আমাদের? তুই যে কাজে যাচ্ছিস ।সেই কাজে যা।তোর সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। শুধু শুধু ঝামেলা করে নিজের বিপদ ডেকে আনিস না।”

-”আমি একজন ডক্টর। হার্টের ডক্টর।তবে ছোটবেলা থেকেই আমার একটা খারাপ রেকর্ড আছে।আমি যাকে ধরি যতোক্ষণ না পর্যন্ত তার হার্ট চলাচল বন্ধ না হচ্ছে ততক্ষণ তাকে ছাড়ি না।আদর যত্ন করতেই থাকি করতেই থাকি।ইচ্ছে ছিলো সিআইডি অফিসার হবার। কিন্তু হয়ে গেলাম ডক্টর। অনেক দিন কাউকে আদর যত্ন করা হয় নি।হাত দুটো কেমন যেন নিশপিস করছে।কে আগে আদর খেতে আসবি আয় বলতেই সব কয়টা গুন্ডা সারজিসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে মারামারি চলতে থাকে। মারামারির এক পর্যায়ে একটা গুন্ডা পেছন থেকে সারজিসের বাহুতে ছুরি চালিয়ে দেয়।যার দরুন সারজিসের শার্ট ভেদ করে রক্ত বের হতে থাকে।সারজিস ক্ষতস্থান ধরে রাস্তায় বসে পড়ে।আর তখনি পুলিশ চলে আসে।সারজিস বিপদ সংকেত টের পেয়ে গাড়ি থেকে নামার আগে পুলিশ কে ইনফর্ম করে এসেছিলো। পুলিশ এসে গুন্ডাদের নিয়ে যেতেই সারজিস দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে এলো।সিজদা কে গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।সারজিস এসে সিজদার কাঁধে হাত দিতেই সিজদা সারজিসের বুকে ঢলে পড়লো
। মূহুর্তের মধ্যেই যেন সারজিসের মধ্যে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো।সারজিস সিজদার পালস চেক করে দেখলো পালস চলছে। তৎক্ষণাৎ সারজিস সিজদার চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে সিজদার মুখে হালকা চাপড় মেরে বললো,

-” হে ইউ‌ ! ওপেন ইউর আইজ।প্লিজ টক টু মি।সারজিস সিজদা কে কয়েকবার ডাকার পরেও সিজদার থেকে রেসপন্স পেলো না।সে সিজদা কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঁজা কোলে তুলে নিতেই সিজদা চোখ খুলে তাকালো।সিজদার চোখে চোখ পড়তেই থেমে গেল সারজিসের পা। বেড়ে গেল হার্টবিট।সারজিস সিজদার চোখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো কিয়ৎক্ষণ।মনে হলো যেন এই চোখের দিকে তাকিয়ে জনম জনম পার করে দেওয়া যাবে।‌ চোখে এতো মায়া।সারজিসের মনে হলো হলুদের সাজে কোনো হলুদ পরীর সাক্ষাৎ পেয়েছে সে।তার যে হসপিটালে যেতে দেরি হচ্ছে।সে কথা বেমালুম ভুলে গেলো সারজিস।সারজিসের ধ্যান ভেঙ্গে গেলো সিজদার চিৎকারে।সিজদা চিৎকার করে বলছে,

-” আপনার তো হাত কাইটা রক্ত বের হ‌ইতাছে। কেমনে হাত কাটলো আপনার?”

-” ও কিছু না।সামান্য একটু কেটেছে। তোমার সাজসজ্জা দেখে মনে হচ্ছে তুমি কোনো বিয়ের কনে। তুমি কি বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছো বা তোমাকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে ?”

-” না স্যার।আমি তো আপামণির লগে তার বান্ধবীর হলুদের অনুষ্ঠানে যাইতেছিলাম।হুট করে আপামণি ক‌ইলো তার পানির পিপাসা পেয়েছে। কিন্তু গাড়িতে পানি ছিলো না।তাই তো আপামণি পানি আনতে গেছিলো।আর তখনি কয়েক বাজে লোক এসে আমার শরীরে হাত দিতে লাগলো।আমার খুব খারাপ লাগতেছিলো তখন।
আমি চিৎকার করে আপামণি রে ডাকতে গেলেই তারা আমার নাকে কিছু একটা চাইপা ধরলো।এরপর আর কিছু মনে নাই আমার।আমি তো ভাবছিলাম আমি বোধহয় ম‌ইয়া যামু। খারাপ লোকগুলান আমারে হয়তো মাইরা ফেলবো।”

-” তোমার নাম কি ? বাসা কোথায়?”

-” প্রতিত্তরে সিজদা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারজিসের ফোন বেজে উঠলো। হসপিটাল থেকে কল এসেছে।সারজিস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশ টা ত্রিশ বেজে গেছে।সারজিস কল রিসিভ না করে সিজদা কে বললো,

-” গাড়িতে বসো?”

-” কোথায় যাবো ?”

-” হসপিটালে ।”

-” হাসপাতালে ক্যান যামু ? হাসপাতালে ল‌ইয়া আমারে কি ইনজেকশন দিবেন?আমি হাসপাতালে যামু না।আমারে বাড়ি ল‌ইয়া যান।”

-”না না।তোমাকে কোন ইনজেকশনের দিবো না। চিন্তা করো না।তোমাকে আমি তোমার বাসায় পৌঁছে দিবো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।তোমাকে একাও ছাড়তে পারছি না।তোমার লাইফ রিষ্ক আছে।যে গুন্ডা গুলো তোমাকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করছিলো। এদের নিশ্চয় বড় গ্যাং আছে। এতোক্ষণে হয়তো তাদের কাছে খবর ও পৌঁছে গিয়েছে।এতো সহজে তারা তোমাকে ছাড়বে না।আবারো তোমার উপর অ্যাটাক হতে পারে। তুমি আমার কথা শোন। তুমি এখন আমার সাথে হসপিটালে চলো।আমি হসপিটালের কাজ শেষ করে তোমাকে তোমার বাসায় নিরাপদে পৌঁছে দিবো।”

-” আচ্ছা বলে সিজদা গাড়িতে বসতে যাবে তার আগেই সারজিসের ক্ষতস্থানের দিকে নজর পড়ে তার। সিজদা কি করবে বুঝতে পারে না।এই মানুষ টার কাছে ঋণী সে।আজ তার জন্যই সে বাঁচতে পেরেছে।না হলে এতোক্ষণে সে নরপশুদের খাবারে পরিণত হতো ভাবতেই সিজদার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।সিজদার কাছে একটা রুমাল ছিলো।সিজদা রুমাল দিয়ে সারজিসের ক্ষতস্থান বেঁধে দেয়।সারজিস মুগ্ধ দৃষ্টিতে সিজদার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো ।তার কানে অনবরত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার সেই লাইন বাজতে লাগলো,

-”প্রহর শেষে আলোয় রাঙা,সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

19/08/2024

িয়েছি_তোমাকে

#পর্ব_০৬

#নুজাইফা_নূন

-” ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় সিজদার। সিজদা তড়িৎ গতিতে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে যায়।প্রায় দশ মিনিট পর ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সালেহা বেগম তখনো ঘুমিয়ে রয়েছে।সিজদা সালেহা বেগম কে ডেকে তুলে দিয়ে নিজে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। ফজরের নামাজ শেষে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করা সিজদার রোজকার অভ্যাস।আজ ও তার ব্যতিক্রম হয় নি। কোরআন তেলাওয়াত শেষে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে রুম থেকে বের হবার জন্য পা বাড়াতেই সালেহা বেগম সিজদার হাত ধরে বললো,

-”তুই বিয়ে বাড়িতে যাস নে মা।আমার ভেতর টা কেমন জানি কুঁ ডাক ডাকতাছে।বার বার মনে হয়তাছে তোর লগে খারাপ কিছু হ‌ইবো।সারা রাত দু চোখের পাতা এক করবার পারি নাই।তোর জন্য চিন্তা হচ্ছে খুব।তোর যাওনের দরকার নেই মা।ছোট ম্যাডাম ভালা মানুষ না।এক্কারে মিশকা শয়তান।”

-” তুমি শুধু শুধু টেনশন করতাছো খালা। আমার কিচ্ছু হ‌ইবো না।আপামণি নিজেও একটা মাইয়া।একটা মাইয়া হ‌ইয়া অন্য মাইয়ার লগে খারাপ কেউ কেমনে করতে পারবো ক‌ও? তুমি একদম চিন্তা ক‌ইরো না।”

-”চৌদ্দ বছর বয়সে বাপ ম‌ইয়া যায়।বাপ যাওয়ার পর অনেক কষ্ট ক‌ইয়া মা আমার বিয়া দেয়। তহন সংসারের কিচ্ছু বুঝতাম না।দিন রাত শ্বাশুড়ি ননদের দাঁত ঝাড়ি সহ্য করতে হতো।সোয়ামি রোজ রাইতে যৌতুকের টাকার লাইগা গালাগাল করতো, মারতো। তবু ও মাটি কামড়ে প‌ইড়া ছিলাম।বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমি পোয়াতি হয়।পোয়াতি অবস্থায় ও শ্বাশুড়ি ননদ সোয়ামির হাতে মার খাইছি। হুট করেই একদিন প্রসব বেদনা শুরু হয়।আমি গলা কাটা মুরগির মতো ঝটপট করতে ছিলাম।দাই মা আইয়া কিছু করবার পারে না। সোয়ামি রে ক‌ইছিলো সালেহার অবস্থা বেশি ভালা না।ওরে হাসপাতালে ল‌ইয়া যাও।নাইলে বাচ্চা‌ বাঁচাতে পারবা না।কেউ শুনে নাই সে কথা।আমি মরা মাইয়া জন্ম দেই।তার কয়েকদিন পরেই সোয়ামি ঘরে নতুন ব‌উ ল‌ইয়া আহে।আমারে তালাক দেয়।মার সংসারে বোঝা হতে চাই নি। ভাবছিলাম নিজেরে শ্যাষ ক‌ইরা দিমু। কিন্তু পারি নাই। সেদিন ভাইজান ফেরেশতার মতো আইসা আমারে বাঁচায় লন।আমারে তার লগে নিয়া আহেন এই মস্ত বড় বাড়িতে। এইহানে আইসা আমি তোরে পাই।তোরে আমার নিজের মাইয়ার মতো আদর ভালোবাসা দিয়া বড় করি।তোর মধ্যে আমি আমার মরা মাইয়ারে দেখতে পাই।তোর বিপদ সংকেত আমি টের পাই। সালেহার কথা শুনে সিজদা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-” আমার কিচ্ছু হ‌ইবো না।তোমার ভালোবাসার জোর আমার কিচ্ছু হ‌ইতে দিবো না। তুমি চলো তো। অনেক বেলা হ‌ইছে।সব কাজ কর্ম গুছানো হলে আমি তৈরি হবো।”

-” আচ্ছা চল বলে সালেহা সিজদা দুজনেই নিজেদের কাজে লেগে‌ পড়ে। সালেহার হাতে হাতে সিজদা সবকিছু এগিয়ে গুছিয়ে দেয়।সব কাজ কর্ম শেষ হতে না হতেই ঐশ্বর্য সিজদা কে নিজের রুমে ডাকে।সিজদা ডাইনিং টেবিলে খাবার গুছিয়ে রেখে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে ঐশ্বর্যের রুমে এসে নক দিয়ে বললো,

-” আপামণি ডাকতেছেন?”

-” ঐশ্বর্য তখন খাটের সাথে‌ হেলান দিয়ে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো।সিজদা কে দেখে বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি থেকে কতো গুলো শাড়ি বিছানার উপর রেখে বললো,

-”হ্যাঁ আয়।আর শোন। এখন থেকে আমার রুমে আসতে গেলে তোর নক করা লাগবে না।তোর যখন ইচ্ছা তখন চলে আসবি।নক করার কোনো প্রয়োজন নেই।”

-” ঠিক আছে আপামণি।”

-”আমরা যেহেতু বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।তাই সবাই মিলে প্ল্যান করেছি শাড়ি পরে যাবো।এখানে অনেক গুলো শাড়ি আছে।তোর যেই শাড়িটা পছন্দ হয়।সেটা নিয়ে যা। তু‌ই ও শাড়ি পরে যাবি।”

-” এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।আমার যা আছে আমি তাই পরে যাবো। ঐশ্বর্য সিজদার কথায় কান না দিয়ে সিজদা কে একটা হলুদ শাড়ি পরিয়ে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,

-” দেখ তো মেয়েটা কে চিনতে পারিস কিনা ?”

-” আয়নায় নিজেকে দেখে হতবাক হয়ে যায় সিজদা। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছে না।গায়ে হলুদ শাড়ি,কানে ফুলের তৈরি দুল , গলায় মালা, কপালে টিকলি, হাতে চুড়ি,চোখে গাড়ো কাজল। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক।সিজদার চোখের পাপড়ি বড় বড় ,ঘন হবার কারণে আইলাশ লাগানো প্রয়োজন হয় নি। গাঢ় কাজল , মাশকারাতে চোখ সেজে উঠেছে এক নতুন সাজে।সব মিলিয়ে অপূর্ব সুন্দর লাগছে সিজদা কে।সিজদা কে দেখে ভেতরে ভেতরে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য সেটা সিজদার সামনে প্রকাশ না করে বললো,

-” ও মাই গড! কতো সুন্দর লাগছে তোকে!মনে হচ্ছে তুই ই বিয়ের কনে। আমি মেয়ে হয়েই তোর থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না।বাই এনি চান্স আজ যদি সারজিস তোকে দেখতে পেতো।আমি নিশ্চিত সারজিস মা’রা পড়তো।সারজিসের কথা শুনে সিজদার দু গাল লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।যেটা চোখ এড়িয়ে যায় না ঐশ্বর্যের। ঐশ্বর্য মুচকি হেসে বললো,

-” তোর সময় ঘনিয়ে এসেছে সিজদা।যতো পারিস লজ্জা পেয়ে নে।আমি ঐশ্বর্য চোধুরী। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।আর না পেলে সেটা ছিনিয়ে নিয়েছি। হা হা হা হা।”

*******

-”হালিমা মঞ্জিলের প্রত্যেক টা সদস্য কে ড্রয়িং রুমে ডেকেছেন হালিমা বেগম।সবাই চলে ও এসেছে। শুধু মাত্র সারজিসের জন্য অপেক্ষা করছে হালিমা বেগম।সারজিস নামলেই তিনি তার কথা ব্যক্ত করবেন।কয়েক মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর সারজিস নিচে আসে।সারজিস কে দেখে হালিমা বেগম বললেন,

-” তোমার কি পাঁচ মিনিট সময় হবে?”

-” হ্যাঁ।বলো কি বলবে?”

-” তুমি কি সত্যিই বিয়েটা করবে না?”

-” না দাদু।আমি ভেবে দেখেছি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়েটা করলে শুধু শুধু দুই টা জীবন নষ্ট হবে।আমি পুরুষ মানুষ।আমি চাইলেই বিয়েটা করে তাকে ভালো না লাগলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে পারবো। কিন্তু মেয়েটার যে জীবন নষ্ট হবে।তার দায়ভার কে নিবে?”

-” যেহেতু আমি মেয়েটা কে গয়না পরিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। সেহেতু আমি চাইলেও এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারি না।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাইফানের সাথে সিজদার বিয়েটা হবে।”

-” সাইফান কথাটা শুনে হতবাক হয়ে যায় উপস্থিত সকলে।সারজিস অনেক টা কর্কশ কন্ঠে বললো,

-” সাইফান ?”

-” হ্যাঁ।সাইফান।এই ব্যাপারে আমার রাশেদের সাথে কথা হয়েছে।সাইফানের সাথে ও কথা হয়েছে। সাইফানের এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।যাকে এতো দিন আমি তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করেছি।যাকে কখনো নাতির পরিচয় দেই নি।সেই ছেলেটা আজ আমার সম্মান রক্ষা করলো।আমি সাইফানের সাথেই সিজদা বিয়ে দিবো। এবং সাইফান কে হালিমা মঞ্জিলে নিয়ে আসবো।এখন থেকে সাইফান আমাদের সবার সাথে হালিমা মঞ্জিলে থাকবে।”

*******

-” ঐশ্বর্য সিজদা কে নিয়ে গাড়ি করে র‌ওনা হয়েছে। ঐশ্বর্য ড্রাইভ করছে।আর সিজদা তার পাশের সিটে বসে রয়েছে। বাতাসে তার লম্বা চুলগুলো উড়ছে।বড্ড ভালো লাগছে সিজদার।মুক্ত পাখির মতো মনে হচ্ছে।সিজদা কিছুক্ষণ বাইরের দৃশ্য উপভোগ করার পর বললো,

-” আপমণি আপনে যে ক‌ইছিলে… বলতে গিয়েও বললো না সিজদা। ঐশ্বর্য বারবার বলে দিয়েছে বিয়ে বাড়ি গিয়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে।সে যেন আগে থেকেই প্র্যাকটিস করে।তাহলে সবার সামনে কথা বলতে বেঁধে যাবে না। ঐশ্বর্যের কথা মনে পড়তেই সিজদা বললো,

-” আপামণি আপনি যে বলছিলেন আপনার ফ্রেন্ডরা আসবে। আমরা সবাই একসাথে এক গাড়িতে যাবো।তারা তো এখনো এলো না।”

-” ঐশ্বর্য কিছু না বলে চুপচাপ ড্রাইভ করতে লাগলো। কয়েক মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর একটা জায়গায় এসে ঐশ্বর্য গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বললো,

-” খুব পিপাসা পেয়েছে আমার।গাড়িতে বোধহয় পানি নেই। তুই গাড়িতে একটু অপেক্ষা কর।আমি ভেতরে গিয়ে পানি নিয়ে আসছি।”

-”আমি ও যাই আপনার সাথে?”

-” না না। তুই এমনিতেই শাড়ি পরে হাঁটতে পারছিস না।দেখা গেল শাড়িতে বেঁধে পড়ে গিয়েছিস।তখন মানসম্মান কিছুই থাকবে না। তুই চুপচাপ গাড়িতে বয়।আমি যাবো আর পানি নিয়ে চলে আসবো।”

-” ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আইবেন।”

-” ওকে বলে ঐশ্বর্য একটু সাইডে গিয়ে তার ভাড়া করা গুন্ডাদের ফোন দিতেই তারা এসে সিজদার নাকে একটা রুমাল চেপে ধরে। মূহুর্তের মধ্যেই সিজদা সেন্সলেস হয়ে গাড়ির সিটে ঢলে পড়ে।।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

Address

Chittagong

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গল্পকথা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category