
16/06/2025
কৌশলের নিকট শক্তি অসহায়: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের আলোকে একটি বিশ্লেষণ:
বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিদিনই পাল্টাচ্ছে শক্তির সংজ্ঞা। কারও হাতে যদি ক্ষেপণাস্ত্র থাকে, অন্য কারও হাতে থাকে মানসিক দৃঢ়তা, নিখুঁত পরিকল্পনা, এবং কৌশলী প্রতিক্রিয়া। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এই সত্যকেই যেন নতুনভাবে সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে—“কৌশলের নিকট শক্তি অসহায়”।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। দীর্ঘদিন ধরে তারা হেজবুল্লাহ, হুতি ও অন্যান্য প্রক্সি গোষ্ঠীর মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে এলেও এবার তারা খোলাখুলিভাবে যুদ্ধের ময়দানে নামে। এই হামলায় শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়, যা যুদ্ধশক্তির এক উগ্র প্রদর্শনী ছিল। অনেকেই ভাবলেন, এই বুঝি একটা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে!
কিন্তু ঘটল তার উল্টো। ইসরায়েল কেবল প্রতিরোধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা পরিকল্পিতভাবে ইরানের ভেতরে ঢুকে সামরিক ও পারমাণবিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে। কোনো বড়সড় যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই তারা অত্যন্ত লক্ষ্যভেদী হামলা চালায়, যার বেশিরভাগ তথ্যই প্রকাশ পায়নি, কিন্তু দাগ রেখে গেছে ইরানের ভেতর। ক্ষয়ক্ষতির আনুষ্ঠানিক হিসেব কেউ দেয়নি, কিন্তু পুরো অঞ্চল বুঝে গেছে কে কতটা প্রস্তুত এবং কে কতটা ঠাণ্ডা মাথার।
ইরান শক্তিতে বড়—এ নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু ইসরায়েল দেখিয়ে দিল, কৌশলই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এই কৌশলের পেছনে ছিল গোয়েন্দা দক্ষতা, সময়জ্ঞান, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং রাজনৈতিক সংযম। যুদ্ধ শুধু বোমা দিয়ে হয় না, যুদ্ধ হয় মনস্তত্ত্ব দিয়ে, হয় বিচক্ষণতা দিয়ে।
আজকের বিশ্বে, যেখানে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের প্রভাব মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে কৌশল ও নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে বড় শক্তি। ইরান হয়তো ভাবেনি তাদের সেই বিপুল শক্তি এভাবে প্রতিহত হবে। তারা বুঝতে পারেনি, প্রতিপক্ষ কখনো কখনো চুপচাপ থেকে সবচেয়ে বড় চমক দিয়ে দেয়।