24/08/2023
সাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক, জাতিগত সংস্কৃতি পোষাক পরিচ্ছেদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা।
প্রতিটি ধর্মতেই বলা হয়েছে অসাম্প্রদায়িক কথা, তবে কি আমরা সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক হতে পেরেছি?? আদৌ কি আমরা সভ্য মানুষ হতে পেরেছি? নাকি নামের মাত্রই মানুষ আমরা!! আমাদের তথাগত গৌতম বুদ্ধ যেমন অসাম্প্রদায়িক, অহিংসুক প্রেম লালন করে সকল জীবের কল্যাণ কামনা করেছিলেন, ঠিক তেমনি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী (সাঃ)ও শান্তির ধর্মই প্রচার করেছিলেন।
আক্ষরিক অর্থে মানুষ সভ্য হয়েছে বহু বছর আগে। আসলেই কি মানুষ সভ্য হয়েছে?? মানুষের যখন সভ্যতা ছিলনা, তারা গুহায় বাস করতো। বল্লম দিয়ে সবাই মিলে পশু শিকার করে নিজেদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতো। পাতা লতা অথবা গাছের বাকল দিয়ে নিজেদের লজ্জা নিবারণ করতো। দিন দিন যখন মানুষ সভ্য হতে শুরু করলো, গুহা ছেড়ে তারা ঘর বাড়ি আবিষ্কার করে সেখানে বাস করা শুরু করলো। ক্ষুধা নিবারণের জন্য আবিষ্কার করলো চাষ করার পদ্ধতি। আবিষ্কার করলো লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য কাপড় চোপড়। দিন দিন এই দিক দিয়ে শুধু উন্নতই হচ্ছে, আরো সভ্য হচ্ছে। কিন্তু মনের দিক দিয়ে তারা কি সভ্য?? অসভ্য লোকেরা পশু হত্যা করতো, এখন সভ্য লোকেরা মানুষ হত্যা করে। নিজের স্বজাতীকে তারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। সাম্প্রদায়িক চেতনাকে পোষে আঘাত করে সভ্যটাকে। নির্বিচারে পিপড়ের মত মানুষ হত্যা করতে, আঘাত করতে কুন্ঠিত বোধ করেনা এরা।
শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রবর্তক মহানবী (সাঃ) তার বিদায় হজ্জ এর বক্তব্যতে বলেছিলেন "হে লোকসকল, তোমরা শোন- কোন আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আবার কোন অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোন কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেননা, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া ।" অর্থাৎ যেখানে মহান আল্লাহ্তায়ালার প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে, তিনি নিজেই যেখানে সাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উদাহরণ সেখানে আমরা তাঁর উম্মত হয়ে কেন এমন কাজ করি যেটা ইসলাম কখনই সম্মতি দিবে না। সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মহানবী (সাঃ) আরও বলেছেনঃ "যদি কোন ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা মুসলিম দেশে অবস্থানকারী অমুসলিম দেশের কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বৎসরের দুরত্ব থেকে লাভ করা যায়।" সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ৬/২৫৩৩
তিনি আরও বলেন, "বিধর্মীকে হত্যা করা তো দূরের কথা, বিধর্মীদের সাথে অভদ্র আচরণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাদের ধর্মবিশ্বাস বা উপাস্যদেরকে গালি দিতেও নিষেধ করা হয়েছে। মুসলিম তার নিজের বিশ্বাসের শ্রেষ্টত্ব বর্ণনা করবেন, তবে কারো অনুভূতিকে আহত করবে না।" পবিত্র আল কুরআন, মহান আল্লাহ্ তায়ালার এক অসীম নিদর্শন যাতে কোন ভুল নাই। এই কুরআন কে গবেষণা করে কত কিছু আবিষ্কৃত হল, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। পৃথিবীর বড় বড় মনীষী, বিজ্ঞানী সবাই এক বাক্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে এটা একটা নির্ভুল কিতাব। এই মহাগ্রন্থে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মহান আল্লাহ্ তায়ালা অনেক কিছু বলেছেন। যা এক অনন্য দলিল। পবিত্র কুরআন এ মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, " আল্লাহ্কে ছেড়ে যাদেরকে তাঁরা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না; কারণ এতে তারাও সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্কে গালি দিবে।" ঃ আল-আন'আম, আয়াত ১০৮। তিনি অশান্তি কিংবা অসাম্প্রদায়িক কিছুই সমর্থন করেন নাই।
তথাগত মহামানব বুদ্ধ বলেছেন,অহিঃসার পথে চলতে। আজ সেই বুদ্ধের নীতি কথার কোনো দাম নেই। জগৎময় এখন ক্ষমতা নিয়ে ব্যস্ত। এখন সবার কাছে সাম্রাজ্যবাদ জিনিস বেশি প্রতিফলন। তাই তো তাদের স্বার্থের জন্য দয়া, মায়া,মমতা, মৈত্রি নেই এই জীবের জন্য। সবাই চাই পরিবার বাবা মা,সন্তান নিয়ে সুখী জীবন কাটাতে। ঠিক তখন এক সাম্রাজ্যবাদ দল এসে সুখী পরিবারকে ধ্বঃস করে দেয়। তথাগত গৌতম বুদ্ধ সবসময় শান্তির কথা বলেছেন, প্রেমের কথা বলেছেন, মৈত্রীর কথা বলেছেন, অহিংসার কথা বলেছেন। সকল প্রানীর প্রতি মৈত্রী পোষণ করেছেন। আজ যদি তার আদর্শে আদর্শীত হতো হয়তো স্বপ্নের বিশ্ব দেখতে পেতাম। আমরা অহিংসা, অসাম্প্রদায়িক কথা বলি শুধুমাত্র মূখে, মন থেকে নই। ধর্মের নীতিনুশারে যে অহিংসা ও অসাম্প্রদায়িক লালন করতে চেষ্টা করবে, তাকে সাম্প্রদায়িক সাম্রাজ্যবাদ ঘায়েল করবেই করবে। যেমনটি আমাকেও করা হয়েছে! আসলে আমরা নামের মাত্রই বৌদ্ধ হয়েছি, কর্মে বৌদ্ধ হতে পারিনি!
ধর্ম ও জাত নিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, অহিংসুকতা। পৃথিবী শাসন করে ধর্ম নাকি মানুষ? আপাত দৃষ্টিতে পৃথিবীর শাসনকর্তা হিসেবে মানুষকে দেখা গেলেও পৃথিবীর শাসনকর্তা ধর্ম। সভ্যতার আদিকাল থেকে অদ্যাবদী ধর্মেই জয় জয়কার। জ্ঞান, মানবিকতা, বীরত্ব কোন কিছুই এই ধর্মের কারণে সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়নি। শিকড়ে যদি ধর্মের বিষ ঢালা হয়, শাখায়-প্রশাখায় মানবিকতার জল ঢেলে লাভ কি? বড়জোর ফলটা শূণ্য হতে পারে।
ধর্ম কি তবে বিষ? অবশ্যই না। বরং স্বার্থের ন্যায় পশুত্ব ও অন্ধতা, কুসংস্কার এবং যাবতীয় কূপমুন্ডকতা থেকে বার বার সুদ্ধ হয়ে ধর্মই মানুষকে মুক্তি দিয়েছে। মানুষ যখন হয়ে উঠেছে চরম স্বেচ্ছাচারি ও লুটেরা তখন ধর্মই আইনের কথা বলেছে, নীতির কথা বলেছে। বলেছে অপরের সুখ-দুঃখের কথা। এমন কি প্রকৃতিতেও আশ্রয় দিয়েছে। বলেছে, যে জন দয়া করে জীবে, সে জন দয়া করে শিবে। যার ফলে বার বার উৎপাদন বেড়েছে, বার বার মানব জাতি চুড়ান্ত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছ। সুতারাং ধর্ম বিষ নয়। বিষ তবে কি? বিষ হচ্ছে ধর্মের নামে ধর্মের বিকৃত অবস্থা বা মিথ্যা চাপিয়ে দেয়া। হিন্দু বা মুসলমান, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান- একজন ধার্মিকের পূর্বে সবাই একজন মানুষ। আর মানুষ হচ্ছে প্রকৃতির অনুসঙ্গ পশু। অন্যান্য প্রাণীর মত একটা প্রাণী। আর প্রাণী মাত্রই আবেগের দাস। তার লোভ, তৃষ্ণা, হিংসা ও স্বেচ্ছাচারিতা বিদ্যমান। অপরকে হটিয়ে, অপরকে মেরে বা অপরকে বঞ্চিত করে বাঁচবার পক্ষপাতি- প্রকৃতির দয়ানির্ভর সন্তান। পেলে খায়, না পেলে মারা যায়। মানুষ যেহেতু প্রকৃতির উদ্ভব- মানুষও জম্ম সূত্রে যাবতীয় নির্বোধ পশুত্ব জগতই ধারণ করে তার মন ও মগজে। এবং সে মানুষ তার জম্মগত সহজাত প্রবনতা নিয়েই এগুবার পক্ষপাতি। কিন্তু মৌলিক চাহিদা পূরণে শুরুতেই হোচট খেয়ে শুরু হয় তার বোধের জগতে বিচরণ- সামাজিক জীবন। নিজের অস্তিত্ব রক্ষা ও উৎপাদনের তাগিদে স্বভাবতই মানুষ কিছু নিয়ম বা শর্তের সম্মূখিন হল। এই নিয়মাবলি বা শর্ত সমূহই ধর্ম। পরবর্তীকালে যা রাজনীতি সমাজনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কেননা ধর্ম শুধু স্ব-ধর্মের লোকেরই অধিকার রক্ষাই সচেষ্ট থাকে। অথচ অধুনিক মানুষ বহু জাতিক, এই বহু জাতিক মানুষ ধর্মের বাইরে গিয়ে সম্মান অধিকার প্রদান পূর্বক এক শাসনের আয়ত্বে আনার জন্যই আধুনিক মানব বিজ্ঞানের জন্ম। জন্ম ধর্ম নিরপেক্ষতা, সেকুলারিজমের। যদিও পৃথিবীর সব মানুষ ধর্ম নিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা কথা বলে, কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে দেখা যায় এটি কথার কথা মাত্র। কেননা সব মানুষের ভেতরে ভেতরে ধর্ম কেন্দ্রীক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম রেখেছে। ধর্মের শাসন নয়, শাসনটা জ্ঞান ভিত্তিক, কিন্তু উন্নয়ন ধর্মের মানুষদের নিয়ে। স্বভাবতই অন্য ধর্মের লোকেরা থেকে গেছে বঞ্চিত, নিপীড়িত এবং অবহেলিত। এখানে ধর্মতো বটেই, বর্ণও বিশেষ ক্রিয়া করেছে।
তথাগত গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, তুমি শুনেছো বলেই কোন কিছু বিশ্বাস করো না, কোন কিছু বলা হয়েছে বা সবাই বলছে বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না, ধর্মীয় বইতে লেখা অাছে বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না, তোমার গুরু কিংবা শিক্ষক বলেছেন বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কোন কিছু চলে অাসছে বলেই তুমি তা বিশ্বাস করো না। নিজের পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা এবং বিশ্লেষণের পর যদি তুমি দেখো তা যুক্তিযুক্ত এবং সকলের জন্যে কল্যাণকর তখন কেবল তুমি তা গ্রহণ করো তা ধরে রাখো। কিন্তু বর্তমান যুগে কিছু মানুষ রূপী নিকৃষ্টরা লোভে, হিংসায় কিছু শুনতে পেলেই যাচাই বাছায়হীন ভাবে তিলকে তাল বানিয়ে আঘাত করে। তথাগত গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে অবিশ্বাস, প্রেমহীনতা, লোভ-লালসা এবং হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণে বুদ্ধ অহিংসা, নির্লোভ, ক্ষমা, প্রেম এবং অসাম্প্রদায়িক বাণী প্রচার করেছেন। বুদ্ধের মতে, মৈত্রী হচ্ছে সব প্রাণীর প্রতি কল্যাণ কামনায় ব্রতী হওয়া। মৈত্রীর সংজ্ঞায় তথাগত বুদ্ধ বলেছিলেন ঃমা যেমন তার স্বীয় একমাত্র পুত্রকে নিজের জীবন দিয়ে বিপদ থেকে রক্ষা করেন, তদ্রুপ সব প্রাণীর প্রতি অপ্রমেয় মৈত্রী প্রদর্শন করবে। এই মহা-মৈত্রীই শত্রুকে মিত্র, দূরের মানুষকে কাছে আনার ধারক ও বাহক। এটাই বিশ্বভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে সৌহার্দ্য, নৈকট্য, অহিংসা ও অসাম্প্রদায়িক গড়ে তোলার চাবিকাঠি। এতে মানুষের সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা বিদূরিত হয়। জাতীয় সংহতি বিধানে ও বৈশ্বিক সম্পর্কোন্নয়নে মহামৈত্রী এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই মানুষের প্রতি গৌতম বুদ্ধের অমর অবদান ‘বিশ্বমৈত্রী’। এই বিশ্বমৈত্রী কিন্তু শ্রেণী বা সম্প্রদায়গত নয়। সর্বজনীন মানবধর্ম রূপেই স্বীকৃত। এই বিশ্বে জন্ম নিয়ে বৌদ্ধ করুণাঘন অন্তরে যে দর্শন ও বাণী পরিবেশন করেছেন, তাতে বিশ্বমৈত্রীই ব্যাপকতা লাভ করেছে। বিশ্বের সকল প্রাণীর সার্বিক মঙ্গলের জন্য বুদ্ধ পরিবেশিত দর্শন ও বাণী পৃথিবীতে এক অসাধারণ অধ্যায়ের সূচনা করে। হিংসা-দ্বন্দ্বযুক্ত সমাজের বিপরীতে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নির্মাণে মৈত্রীময় চেতনাকে স্থাপন করার কথা বলেছেন বুদ্ধ। বিশ্বমৈত্রীর ভাবনা ছাড়া মানুষের সুখ-শান্তি যে সম্ভাবনার হিত, আড়াই হাজার বছর আগে বুদ্ধ তা উচ্চারণ করেছিলেন। চেয়েছিলেন ‘তুমি যেমন সুখে থাক, অপরকেও সুখে থাকতে দাও। বুদ্ধের মৈত্রী ভাবনাই তো হচ্ছে, অপরের সুখ ও হিত কামনা করা। সৃষ্ট জগতকে খণ্ড খণ্ড করে নানা দেশ, নানা জাতি হিসেবে দেখার নাম যে মানবতা ও অসাম্প্রদায়িক নয়, তা উল্লেখ করে বুদ্ধ বলেছিলেন ঃ সমস্ত বিশ্ব ও প্রাণীলোককে অখণ্ড হিসেবে দেখার নামই মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতা। মানুষ মাত্রই সমান। মানুষের প্রতি মানুষের হিংসা ও বৈষম্য পরিহার করতে হবে। গৌতম বুদ্ধ যুক্তির অনুশীলনে বিশ্বমানবের মধ্যে ত্যাগ তিতিক্ষা, ক্ষমা, অহিংসা, অসাম্প্রদায়িক, শান্তি ও কল্যাণের বাণী ছড়িয়েছিলেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ঘুচাতে সাম্য-মৈত্রীর কথা বলেছেন। এক অখণ্ড সমাজ এবং পৃথিবীর সব মানুষ এক অবিচ্ছেদ্য পরম আত্মীয়তার সূত্রে গ্রথিত— এ তথ্য তিনিই প্রথম প্রচার করেন। মানুষে মানুষে সংঘাত, অন্ধ কুসংস্কার, জাতিভেদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে বুদ্ধই প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি কামনা করেছিলেন এমন এক সমাজের, যেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। একে অপরের কল্যাণ কামনা করে। সমস্ত মানুষের কল্যাণ; সমগ্র জাতির শান্তি— এই ছিল বুদ্ধের বাণী ও দর্শনের মূল কথা। দীর্ঘ আড়াই হাজার বছরেরও আগে বুদ্ধ এমন বাণী প্রচার করেছেন, যার লক্ষ্য বিশ্বশান্তি ও মানব কল্যাণ। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা; শ্রেণী বৈষম্যহীন এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ইত্যাদি যে সব আদর্শের কথা আধুনিক পৃথিবীতে বলা হয়, সুদূর অতীতেই এসব প্রচার করেছেন বুদ্ধ। তার প্রচারিত বাণী ও দর্শনে অত্যাচার বা উৎপীড়নের নজির নেই। ত্যাগ আর মৈত্রীর বাণী দিয়ে তিনি মানুষকে আপ্লুত করেছেন। সমস্ত প্রাণীজগতের প্রতি অনাবিল একাত্মভাব প্রকাশ করাই ছিল বুদ্ধের বিশ্বমৈত্রী ভাবনা। আর এই বিশ্বমৈত্রীই বিশ্বশান্তির এক এবং অদ্বিতীয় উৎস।
সাম্প্রদায়িকদের শুভ বুদ্ধি উদয় হোক এই কামনা করছি।
এবার আসি জাতিগত সংস্কৃতি বিষয়েঃ
আমরা বর্তমানে আমাদের আইডেন্টি ক্রাসিসে ভোগছি। বর্তমানে বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জাতির পরিচয় আমরা "মারমা"। এক সময় ছিলাম "মগ"। মগ থেকে আমরা মারমাতে রূপান্তরিত হয়েছি। পূর্বপুরুষদের ইতিহাস ও বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে দেখলে সেখানে দেখবে "মগ" অস্থিত্ব রয়েছে। বর্তমানে আমরা যে মারমা পরিচয়ে বেঁচে আছি সেটার অস্থিত্ব ভবিষ্যতে থাকবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছা অনুযায়ী ও আমাদের নেতা নেতৃত্বদের দূরদর্শিতা অভাবের ফলে আমরা বার বার রুপান্তর হচ্ছি। আন্তজার্তিকভাবে এক সময় আমার জুন্ম পাহাড়ি ছিলাম, তারপর হয়েছি উপজাতি, তারপর আদিবাদি। আর বর্তমান সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী বিশ্ববাসীর কাছে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে।
"মারমা"
মারমা জাতি হিসেবে আমাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, পরিচ্ছেদ পোষাকসহ একজাতি হিসেবে যেসব সংস্কৃতি থাকা প্রয়োজন সেসব আমাদের রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের সংস্কৃতির সচেতনতা অভাব ও আধুনিকায়ন এবং শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসনে আমাদের ভাষা ও পোষাকের সংস্কৃতি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতি রক্ষার্থে আমাদের নাম গন্ধও নাই। আধুনিক হতে গিয়ে আমরা বাঙ্গালির সংস্কৃতি পাঞ্জাবী ও শাড়ী পরিধান করছি। অনেক ক্ষেত্রে অফিসিয়াল ও দলগত সংস্কৃতি রক্ষার দোহাই দিয়ে এসব পোষাক ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতি হিসেবে প্রথমে পরিচয় করিয়ে দেয় মানুষের পোষাক, তারপর ভাষা। এই পোষাক ও ভাষাটাকে আমরা যদি এই সময়টাতে সচেতন না হই, তাহলে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মরা হারিয়ে ফেলবে আমাদের জাতিসত্বার অস্থিত্ব।
লেখা চলবে......
© bhikkhu