Jannat's mom

Jannat's mom Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Jannat's mom, Chittagong.

💥ওমানে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ গেল সন্দ্বীপ‌এর ৭জন প্রবাসী 😭ওমানের দুকুম সিদরা এলাকায় সাগর থেকে আসার পথে ৭জন বাংলাদেশী প্রবা...
08/10/2025

💥ওমানে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ গেল সন্দ্বীপ‌এর ৭জন প্রবাসী 😭

ওমানের দুকুম সিদরা এলাকায় সাগর থেকে আসার পথে ৭জন বাংলাদেশী প্রবাসী সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নিহতদের বাড়ি চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের ২ নাম্বার ওয়ার্ডে।

আজ বিকালে স্থানীয় সময় ৩.২০ এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সন্দ্বীপের বাসিন্দা শিপন জানান, তারা সাগরে মাছ ধরে আসার পথে বেপরোয়া গাড়ির গতির কারণে এ দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের মরদেহগুলো দুকুম হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জনের নাম ঠিকানা নিচে দেওয়া হল-

১. আমিন সওদাগর
পুরাতন বাড়ি- সারিকাইত ২ নং ওয়ার্ড (বর্তমান মগধরা)

২. রকি
পিতা- ইব্রাহিম মিস্ত্রি (সারিকাইত ২ নং ওয়ার্ড শেখ ফাজিলের বাড়ি)

৩.আরজু
পিতা- শহিদুল্লাহ ( সারিকাইত ৪ নং ওয়ার্ড)

৪.বাবলু (সারিকাইত ২ নং ওয়ার্ড)

৫. সাহাব‌ উদ্দিন (সারিকাইত ২ নং ওয়ার্ড)

৬. জুয়েল (মাইটভাঙ্গা)

৭. রনি (পৌরসভা ৩নং)

আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি।

পরিবার ও দেশের মানুষের অবস্থান পরিবর্তন করতে গিয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন সন্দ্বীপের সাত জন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।

গভীর শোকাহত🖤🖤ওমানে এক মর্মান্তিক  সড়ক দুর্ঘটনায়  চট্টগ্রাম জেলার   সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের ৭জন ঘটনাস্থলে মৃত্যু বরণ...
08/10/2025

গভীর শোকাহত🖤🖤
ওমানে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের ৭জন ঘটনাস্থলে মৃত্যু বরণ করেছেন।
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।

এখনো পর্যন্ত তিন জনের পরিচয় জানা গেছে।
১।আমিন সওদাগর।
পিতা:আলী কব্বর সেরাং
ওয়ার্ড-২সারিকাইত,
২।আরজু
পিতা:শহিদুল্লাহ
ওয়ার্ড ৪ সারিকাইত
৩।রকি
পিতা:ইব্রাহীম মেস্তুরী
ওয়ার্ড ২ সারিকাইত।

চাঁদের অমাবস্যা – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহচাঁদের অমাবস্যা – ১চাঁদের অমাবস্যা – ২চাঁদের অমাবস্যা – ৩চাঁদের অমাবস্যা – ৪চাঁদের অমা...
08/10/2025

চাঁদের অমাবস্যা – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
চাঁদের অমাবস্যা – ১
চাঁদের অমাবস্যা – ২
চাঁদের অমাবস্যা – ৩
চাঁদের অমাবস্যা – ৪
চাঁদের অমাবস্যা – ৫
চাঁদের অমাবস্যা – ৬
চাঁদের অমাবস্যা – ৭
চাঁদের অমাবস্যা – ৮
চাঁদের অমাবস্যা – ৯
চাঁদের অমাবস্যা – ১০
চাঁদের অমাবস্যা – ১১
চাঁদের অমাবস্যা – ১২
চাঁদের অমাবস্যা – ১৩
চাঁদের অমাবস্যা – ১৪
চাঁদের অমাবস্য-১৫
Next Less
চাঁদের অমাবস্যা – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ চাঁদের অমাবস্যা – ১
এক

শীতের উজ্জ্বল জ্যোৎস্নারাত, তখনো কুয়াশা নাবে নাই। বাঁশঝাড়ে তাই অন্ধকারটা তেমন জমজমাট নয়। সেখানে আলো-অন্ধকারের মধ্যে যুবক শিক্ষক একটি যুবতী নারীর অর্ধ-উলঙ্গ মৃতদেহ দেখতে পায়। অবশ্য কথাটা বুঝতে তার একটু দেরি লেগেছে, কারণ তা ঝট্ করে বোঝা সহজ নয়। পায়ের ওপর এক ঝলক চাঁদের আলো। শুয়েও শুয়ে নাই। তারপর কোথায় তীব্রভাবে বাঁশি বাজতে শুরু করে। যুবতী নারীর হাত-পা নড়ে না। চোখটা খোলা মনে হয়, কিন্তু সত্যিই হাত-পা নড়ে না। তারপর বাঁশির আওয়াজ সুতীব্র হয়ে ওঠে। অবশ্য বাঁশির আওয়াজ সে শোনে নাই।

কিন্তু কখন সে মৃতদেহটি প্রথম দেখে? এক ঘণ্টা, দু-ঘণ্টা আগে? হয়তো ইতিমধ্যে এক প্রহর কেটে গেছে, কিন্তু যুবক শিক্ষক সে কথা বলতে পারবে না। মনে আছে সে বাঁশঝাড় থেকে বেরিয়ে এসেছিল। চতুর্দিকে ঝলমলে জ্যোৎস্নালোক, চোখ-ধাঁধানো উজ্জ্বল আলো। তখন সে দৌড়তে শুরু করে নাই। বাঁশঝাড়ের সামনেই পূর্ণ জ্যোৎস্নালোকে সে তাকে দেখতে পায়। ধীরপদে হেঁটেই যেন সে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, নিরাকার বর্ণহীন মানুষ। হয়তো তার দিকে কয়েক মুহূর্ত সে তাকিয়ে ছিলও। তারপর সে দৌড়তে শুরু করে।

তখন থেকে সে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ছুটাছুটি করছে। হয়তো এক প্রহর হল ছুটাছুটি করছে। চরকির মতো, লেজে কেরোসিনের টিন বেঁধে দিলে কুকুর যেমন ঘোরে তেমনি। কেন তা সে বলতে পারবে না। কেবল একটা দুর্বোধ্য নির্দয় তাড়না বোধ করে বলে দিশেহারা হয়ে অবিশ্রান্তভাবে মাঠে-ঘাটে ছুটাছুটি করে, অফুরন্ত জ্যোৎস্নালোকে কোথাও গা-ঢাকা দেবার স্থান পায় না, আবার ছায়াচ্ছন্ন স্থানে নিরাপদও বোধ করে না। গভীর রাতে এমন দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে পশ্চাদ্ধাবিত অসহায় পশুর মতো সে জীবনে কখনো ছুটাছুটি করে নাই। অবশ্য গ্রামবাসী অনভিজ্ঞ যুবক শিক্ষক বাঁশঝাড়ের মধ্যে যুবতী নারীর মৃতদেহও কখনো দেখে নাই।

তারপর একটি অদ্ভুত কারণেই সে হঠাৎ থেমে একটা আইলের পাশে উবু হয়ে বসে নিঃশব্দ রাতে সশব্দে হাঁপাতে থাকে। ওপরে ঝলমলে জ্যোৎস্না, কিন্তু সামনে নদী থেকে কুয়াশা উঠে আসছে। কুয়াশা না আর কিছু, হয়তো সে ঠিক বোঝে না। হয়তো একদল সাদা বকরি দেখে, যার শিং-দাঁত-চোখ কিছুই নাই। হয়তো মনে হয় রাত্রি গা মোড়ামুড়ি দিয়ে উঠে বসেছে, চোখ-ধাঁধানো অন্তহীন জ্যোৎস্নালোকে জীবনের আভাস দেখা দিয়েছে। হঠাৎ আশ্রয় লাভের আশায় তার চোখ জ্বলজ্বল করতে শুরু করে।

অবশেষে মাঠ-ঘাট কুয়াশায় ঢেকে যায়, ওপরে চাঁদের গোলাকার অস্তিত্বের অবসান ঘটে। কুয়াশায় আবৃত হয়ে যুবক শিক্ষক গুটি মেরে বসে থাকে। হাঁপানি তখন কিছু কমেছে, সঙ্গে সঙ্গে দুরন্ত ভয়টাও যেন পড়েছে কিছু। যেখানে বসেছিল সেখানে বসেই কেবল লুঙ্গি তুলে সরলচিত্তে লাঙ্গল-দেয়া মাঠে সে প্রস্রাব করে। মনে হয় মাথাটা যেন সাফ হয়ে আসছে। বুক থেকে ভারি কিছু নাবতে শুরু করেছে দেখে সহসা মুক্তির ভাব এলে সে থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে, মনে হয় সে কাঁদবে। কিন্তু সে কাঁদে না। চারধারে গভীর নীরবতা। সে নিশ্চল হয়ে মাথা গুঁজে বসে যেন কারো অপেক্ষা করে।

শ্লথগতি হলেও কুয়াশা সদাচঞ্চল। নড়ে-চড়ে, ঘন হয়, হাল্কা হয়। সুতরাং এক সময়ে হঠাৎ চমকে উঠে উপরের দিকে তাকালে যুবক শিক্ষকের শীর্ণ মুখে এক ঝলক রূপালি আলো পড়ে। স্বচ্ছ-পরিষ্কার আকাশে কুয়াশামুক্ত চাঁদ আবার ঝলমল করে। স্নিগ্ধ প্রশান্ত চাঁদের মুখ দেখে অকারণে সভয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সে আবার ছুটতে শুরু করে। ওপরে চাঁদ হেলে-দোলে, হয়তো হাসেও। নির্দয় চাঁদের চোখ মস্ত। যুবক শিক্ষক প্রাণভয়ে ছোটে। যত ছোটে, ততই তার ভয় বাড়ে। সামনে কিছু নাই, তবু দেখে লোকটি দাঁড়িয়ে। দূরে কোথাও একটা কুকুর ডাকতে শুরু করে। তার মনে হয় একটি হিংস্র কুকুর তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে। তারপর সে দেখে, বাঁশঝাড়ের সে মৃতদেহটি তার পথ বন্ধ করে লাঙ্গল-দেয়া মাটিতে বাঁকা হয়ে শুয়ে আছে। অর্ধ-উলঙ্গ দেহে প্রাণ নাই তবু একেবারে নিশ্চল নয়। কোথায় যাবে যুবক শিক্ষক? তার হিমশীতল শরীর নিশ্চল, শীর্ণমুখে চোখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে।

আবার যখন সে দৌড়তে শুরু করে তখন কিছু দূরে গিয়ে মাটির দলায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মুখ থেকে একটা ক্ষুদ্র কিন্তু তীক্ষ্ণ আর্তনাদ বের হয়। তারপর মাটিতে মুখ গুঁজে সে নিস্তেজভাবে পড়ে থাকে। শীঘ্র তার পিঠ শিরশির করে ওঠে। পিঠে সাপ চড়েছে যেন। বুকে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়, অবাধে ঘাম ছোটে। সে বুঝতে পারে লোকটি দাঁড়িয়ে তারই পিঠের উপর। মুখ না তুলেই দেখতে পায় তাকে : বিশালকায় দেহ, তার ছায়াও বিশালাকার। যুবক শিক্ষক এবার নিতান্ত নিঃসহায় বোধ করতে শুরু করে। জীবনের শেষ মুহূর্তে দেহ গলে যায়, সর্বশক্তির অবসান ঘটে। আর কিছু করবার নাই বলে সে অপেক্ষা করে। সময় কাটে। আরো সময় কাটে, কিন্তু কিছুই ঘটে না। অবশেষে এক সময়ে পিঠ থেকে সাপ নাবে, বিশালাকার ছায়াও সরে যায় এবং যুবক শিক্ষকের নাকে মাটির গন্ধ লাগে। মাথা তুলে সে ধীরে-ধীরে এধার-ওধার তাকায়, বাঁ-দিকে, ডান দিকে। কুয়াশা নাই। জ্যোৎস্না-উদ্ভাসিত ধবধবে মাঠে কেউ নাই। দূরে একটা কুকুর বেদনার্তকণ্ঠে আর্তনাদ করে। তাছাড়া চারধার নিঃশব্দ। একচোখা চাঁদ সহস্র চোখে জনশূন্য পথপ্রান্তর পর্যবেক্ষণ করে। চাঁদ নয়, যেন সূর্য।

হাঁটুতে ভর করে যুবক শিক্ষক উঠে বসে, মুখ বিষাদাচ্ছন্ন। আলোয়ান দিয়ে মুখের ঘাম মোছে, চোখের উদ্‌ভ্রান্তি কাটে। কেবল থেকে-থেকে নিচের ঠোঁটটা থরথর করে কাঁপে। অনেকক্ষণ সে বসে থাকে নতমুখে। আবার যখন সে মুখ তোলে তখন কুয়াশার পুনরাগমন হয়েছে। সে-কুয়াশা ভেদ করে কেমন অহেতুক, উদ্দেশ্যহীনভাবে সে তাকাবার চেষ্টা করে। চোখে এখন নিস্তেজ ভাব, মনের ভয়টাও যেন দূর হয়েছে। তারপর আবার সে তাকে দেখতে পায়। একটু দূরে বটগাছ, আবছা-আবছা চোখে পড়ে। শিকড়ে-শিকড়ে দৃঢ়বদ্ধ গাছটি অস্পষ্ট আলোয় ভাসে, যেন পানিতে আমজ্জ হয়ে আছে গাছটি। যুবক শিক্ষক বারকয়েক মাথা নাড়ে বটগাছের পাশেই ছায়ার মতো সে দাঁড়িয়ে। জট নয় শাখা নয়, সে-ই দাঁড়িয়ে। এখন আবছা দেখালেও সে আর নিরাকার বর্ণহীন মানুষ নয়।

আবার কী ভেবে যুবক শিক্ষক মাথা নাড়ে। তার মনে গভীর অবসাদ, কিন্তু আর ভয় নেই যেন। যে-মানুষ নিদারুণ ভয়ে বিকৃতমস্তিষ্কের মতো দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে এতক্ষণ ছুটাছুটি করেছিল, সে-মানুষ এখন ভয়মুক্ত। বটগাছের পাশে ছায়াটিকে তার আর ভয় নাই।

তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সে ঘরাভিমুখে হাঁটতে শুরু করে। সবুজ আলোয়ানে আবৃত তার শীর্ণ শরীর দীর্ঘ মনে হয়, পদক্ষেপে অসীম দুর্বলতার আভাস দেখা গেলেও তাতে সঙ্কোচ-দ্বিধা নাই। তার অনভিজ্ঞ মনে নিদারুণ আঘাতের ফলে যে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিক্ষুব্ধতা বিদূরিত হয়েছে।

কোনোদিকে না তাকিয়েই সে দ্রুতপদে হাঁটতে থাকে। সে আর ভাবে না। ভাবতে চেষ্টা করলেও তার ভাবনা ধরবার কিছু পায় না। বৃহৎ গহ্বরে ধরবার কিছু নাই।

ঘরে ফিরে পাথরের মতো প্রাণহীন শরীরের উপর কাঁথা টেনে সে নিঃসাড় হয়ে শুয়ে থাকে। গভীর রাতে কোথাও কোনো শব্দ নাই। শব্দ হলেও তা তার কানে পৌঁছায় না। অন্ধকারের মধ্যে তার দৃষ্টি খুলে থাকলেও নিশ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষীণতম শব্দও পাওয়া যায় না। তাছাড়া মনে হয়, সে যেন কারো অপেক্ষা করে।


কীভাবে রাত্রির অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি শুরু হয়?

তখন বেশ রাত হয়েছে। শারীরিক প্রয়োজনে ঘুম ভাঙলে যুবক শিক্ষক আলোয়ানটা গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এল। শীতের গভীর রাত, কেউ কোথাও নাই। ঘরের পেছনে জামগাছ। তারই তলে শারীরিক প্রয়োজন মিটিয়ে সে ঘরে ফিরবে কিন্তু আলোয়ানটা ভালো করে জড়িয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকল। তখন চোখের ঘুমটা কেটে গেছে। যেখানে সে দাঁড়িয়েছিল সেখানে ছায়া, কিন্তু চতুর্দিকে জ্যোৎস্নার অপরূপ লীলাখেলা।

তখনো কাদের বড়বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে নাই। অন্য এক কারণে যুবক শিক্ষক জামগাছের তলে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

সে-কারণটি হয়তো নেহাতই বালসুলভ। কিন্তু শিক্ষকতা করে বলে তার বাহ্যিক আচরণ-ব্যবহার বয়স্থব্যক্তির মতো হলেও তার মনের তরুণতা এখনো বিলুপ্ত হয় নাই। বরঞ্চ স্বল্পভাষী যুবক শিক্ষকের মনের অন্তরালে নানারকম স্বপ্ন-বিশ্বাস এখনো জীবিত। সুযোগ-সুবিধা পেলে তার পক্ষে স্বপ্নরাজ্যে প্রবেশ করা কষ্টসাধ্য নয়। তবে এ-সব সে গোপনই রাখে। তাছাড়া, মনের কথা ঠাট্টা করেও বলবে এমন কোনো লোক সে চেনে না।

জামগাছের তলে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জ্যোৎস্না-উদ্ভাসিত রাতের প্রতি তার অদমনীয় আকর্ষণ। শুধু তার রূপেই যে সে মোহিত হয়, তা নয়। তার ধারণা, চন্দ্রালোকে যে-অপরূপ সৌন্দর্য বিকাশ পায় তা উদ্দেশ্যহীন নয়, মূক মনে হলেও মূক নয়। হয়তো সে-সময়ে, যখন মানুষ-পশুপক্ষী নিদ্রাচ্ছন্ন, তখন বিশ্বভূমণ্ডল রহস্যময় ভাষায় কথালাপ করে। সে-কথালাপের মর্মার্থ উদ্ধার করা মানুষের পক্ষে হয়তো অসম্ভব, কিন্তু তা শ্রবণাতীত নয় : কান পেতে শুনলে তা শোনা যায়। বালকবয়সে পরপর তিন বছর লায়লাতুলকদরের রাতে যুবক শিক্ষক সমস্ত রাত জেগেছিল এই আশায় যে, গাছপালাকে ছেজদা দিতে দেখবে। গাছপালার এমন ভক্তিমূলক আচরণে আজ তার বিশ্বাস নাই, কিন্তু রাত্রি জাগরণের ফলে তার মনে যে-নতুন ধারণার সৃষ্টি হয় সে-ধারণা এখনো সে যেন কাটিয়ে উঠতে পারে নাই। এত সৌন্দর্য কি আদ্যোপান্ত অর্থহীন হতে পারে? এমন বিস্ময়কর রূপব্যঞ্জনার পশ্চাতে মহারহস্যের কিছুই কি ইঙ্গিত নাই? তাতে মানুষের মনে যে-ভাবের উদয় হয়, সে-ভাব কি সৃষ্টির মহানদীর তরঙ্গশীকরজাত নয়? মনঃপ্রাণ সম্পূর্ণভাবে নিঃশব্দ করে শুনলেই নিঃসন্দেহে অশ্রোতব্য শ্রোতব্য হবে।

চন্দ্রালোকের দিকে তাকিয়ে যুবক শিক্ষক হয়তো বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ নির্জন রাতে চলনশীল কিছু দেখতে পেলে প্রথমে সে চমকে ওঠে। তারপর সে তাকে দেখতে পায়। বড়বাড়ির কাদেরকে চিনতে পারলে তার বিস্ময়ের অবধি থাকে না। চন্দ্রালোক-উদ্ভাসিত এ-মায়াময় রাতে কাদেরের আকস্মিক আবির্ভাব তার কাছে হয়তো অজাগতিক এবং রহস্যময়ও মনে হয়। এত রাতে এমন দ্রুতগতিতে কোথায় যাচ্ছে সে?

তখন যুবক শিক্ষকের চোখ জ্যোৎস্নায় জলসে গেছে, তাতে ঘুমের নেশা পর্যন্ত নাই। দ্রুতগামী কাদেরের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ একটি ঝোঁক চাপে তার মাথায়। সে ঠিক করে, তাকে অনুসরণ করবে।

মনে মনে ভাবে, দেখি কোথায় যায় কাদের। বড়বাড়ির দাদা সাহেব বলেন, কাদের দরবেশ। দেখি রাতবিরাতে কোথায় যায় দরবেশ।

তখন কাদের বেশ দূরে চলে গেছে। জামগাছের ছায়া থেকে বেরিয়ে যুবক শিক্ষক তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে।

ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় কাউকে অনুসরণ করা সহজ নয়। যুবক শিক্ষককে দূরে-দূরে গা-ঢাকা দিয়ে চলতে হয়। ধরা পড়বার ভয় ছাড়া একটা লজ্জাবোধও তার চলায় বাধা সৃষ্টি করে। ফলে শীঘ্র দ্রুতগামী কাদেরকে সে হারিয়ে ফেলে। খাদেম মিঞার ক্ষেত পার হয়ে গাঁয়ে আবার প্রবেশ করে দেখে, কোথাও কাদেরের কোনো চিহ্ন নাই। একটু পরে চৌমাথার মতো স্থানে এসে সে হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে পড়ে। কোন দিকে যাবে? চারপথের একটি যায় নদীর দিকে, আরেকটি গ্রামের ভেতরে। তৃতীয় পথ সদ্যতৈরি মসজিদের পাশ দিয়ে গিয়ে বাইরে সরকারি রাস্তার সঙ্গে মিলিত হয়। শেষটা যায় তারই ইস্কুল পর্যন্ত। যুবক শিক্ষক পথনির্দেশ পাবার আশায় কান খাড়া করে শোনবার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনো পদধ্বনি শুনতে পায় না। কাদের যেন চন্দ্রালোকে এক মুঠো ধুঁয়ার মতো মিলিয়ে গেছে।

চৌমাথায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে স্থির করে, ঘরে ফিরে যাবে। ভাবে, লোকটা যে কাদেরই সে-কথা সঠিকভাবে সে বলতে পারে না, চোখের ভুল হয়ে থাকতে পারে। তাকে মুখামুখি দেখে নাই, কেবল তার পেছনটাই দেখেছে। ভুল হতে পারে বৈকি।

কিন্তু যুবক শিক্ষক ফিরে যায় না। কাদেরকে সে সামনাসামনি দেখে নাই বটে কিন্তু তার হাঁটার বিশেষ ভঙ্গি, ঘাড়ের কেমন উঁচু-নিচু ভাব, মাথার গঠন ইত্যাদি দেখেছে। ভুল অবশ্য হতে পারে, কিন্তু আরেকটু দেখে গেলে ক্ষতি কী? মানুষটি অদৃশ্য হয়ে গেলে তার সম্বন্ধে কৌতূহলটা আরো বাড়ে যেন। কিন্তু কোন দিকে যাবে? চারটা পথের কোনটা ধরবে? কাদেরের রাত্রিভ্রমণের উদ্দেশ্য যখন সে জানে না তখন কোনো একটি পথ ধরার বিশেষ কারণ নাই। তাই অনির্দিষ্টভাবে চারটি পথের একটি পছন্দ করে সে আবার হাঁটতে শুরু করে। কিছুক্ষণ সে কান খাড়া করে রাখে, ঘন-ঘন তাকায় এধার-ওধার। কিন্তু তার সন্ধানকার্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। শীঘ্র সে ভুলে যায় তার চলার উদ্দেশ্য। তার ঘরের পেছনে যে- অপরূপ চন্দ্রালোক তাকে বিমুগ্ধ করেছিল, সে-চন্দ্রালোক এখনো মাঠে-ঘাটে গাছপালা- ঝোপঝাড়ে মানুষের বাসগৃহে মোহ বিস্তার করে আছে। পরিচিত দুনিয়ায় অজানা জগতের মায়াময় স্পর্শ। চন্দ্রালোক-উদ্ভাসিত গভীর রাতে যুবক শিক্ষক একাকী ঘুরে বেড়ায় নাই অনেকদিন। কাদেরের কথা তার মনে থাকলেও তাকে অনুসরণ করার প্রয়োজন সে আর বোধ করে না।

তারপর একসময়ে একটি গৃহস্থবাড়ির কাছে দেখে, পোঁতা খুঁটির মতো নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে কাদের। তার দেহে সহসা কেমন চঞ্চলতা আসে। মনে হয় সে হাসছে। তারই দিকে তাকিয়ে সে হাসছে এবং গা-ঢাকা দেবার কোনোই চেষ্টা নাই।

হঠাৎ ধরা পড়ে গিয়ে লজ্জা হলে যুবক শিক্ষক সজোরে বলে ওঠে,

‘কী ব্যাপার?’

কোনো উত্তর দেয় না।

তারপর কেমন সন্দেহ হলে এগিয়ে দেখে, ভিটেবাড়ির পাশে মূর্তিটি কলাপাতা মাত্র, চাঁদের আলোয় মানুষের রূপ ধারণ করেছে। চাঁদের আলো যাদুকরী, মোহিনী।

যুবক শিক্ষকের বুক সামান্য কাঁপতে শুরু করেছিল। এবার কিছুক্ষণ অনির্দিষ্টভাবে দাঁড়িয়ে থেকে সে স্থির করে ঘরে ফিরে যাবে। মুখে তখনো লজ্জার ঝাঁঝ। সে ঘরাভিমুখে রওনা হয়। তবে সোজাপথ না ধরে একটু বাঁকাপথ ধরে। সোজাপথ ধরলে অসাধারণ দৃশ্যটি তাকে দেখতে হত না।

গ্রামের ভেতরের পথটা এড়িয়ে সে নদীর দিকে চলতে শুরু করে। কাদেরকে সে আর অনুসরণ করছে না, সে বিশ্বাসে তার কথা ভুলতে তার দেরি হয় না। তাকে কলাগাছে রূপান্তরিত করে সে আবার চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত বিস্ময়কর জগতের নেশায় আত্মভোলা হয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলতে থাকে : পদক্ষেপে কোনো তাড়া নাই, তার শীর্ণমুখ আবেশাচ্ছন্ন।

গ্রামের প্রান্তে নদীর ধারে একটু বাদাড় ঝোপঝাড় পাঁচমেশালী গাছপালা, একটা প্রশস্ত বাঁশবন। তারপর ঢালা ক্ষেত। শস্যকাটা শেষ, স্থানে-স্থানে লাঙ্গল দেয়া হয়েছে।

সে-জঙ্গলের পাশে পৌঁছে খোলা মাঠের দিকে তাকিয়ে যুবক শিক্ষক একটু দাঁড়িয়েছে, এমন সময় একটা আওয়াজ তার কানে পৌঁছায়। আওয়াজটা যেন বাঁশবন থেকে আসে। সেখানে কে যেন চাপা ভারিকণ্ঠে কথা বলছে।

আশপাশে বাসাবাড়ি নাই। অকারণে যুবক শিক্ষক এধার-ওধার তাকায়, এক মুহূর্তের জন্যে তার মনে হয় নদীর বুক থেকে জেলেদের কণ্ঠস্বরই শুনতে পাচ্ছে সে। কিন্তু অবশেষে তার সন্দেহ থাকে না, বাঁশঝাড়ের মধ্যেই কেউ কথা বলছে। শ্রোতা থাকলেও তার গলার আওয়াজ শোনা যায় না : বক্তার শ্রোতা যেন বাঁশঝাড়ই। রাত্রির নিস্তব্ধতার মধ্যে সে-কণ্ঠ অশরীরী মনে হয় যুবক শিক্ষকের কাছে। তারপর কাদেরের কথা তার স্মরণ হয়।

এবার অদম্য কৌতূহল হলে যুবক শিক্ষক বাঁশঝাড়ের দিকে কয়েক পা এগিয়ে যায়। অল্পক্ষণের জন্যে কণ্ঠস্বর থামে বলে সে সামান্য নিরাশ বোধ করে। শীঘ্র কণ্ঠস্বরটি সে আবার শুনতে পায়। ঈষৎ হেসে এবার সে সজোরে বলে ওঠে, ‘কাদের মিঞা! বাঁশঝাড়ে কাদের মিঞা!’

কথাটা সজোরে বলেছে কি বলে নাই, অবশ্য সে-বিষয়ে এখন সে হলফ করে কিছু বলতে পারে না। নিঃশব্দ গভীর রাতে এ-সব ব্যাপারে কে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে পারে? তখন মনে–বলা কথাই সশব্দে বলা কথার মতো শোনায়। কিন্তু বাঁশবনের আকস্মিক নীরবতার কারণ শুধু তা নয়। কাদেরের কথা শোনবার জন্যে কৌতূহলী হয়ে যুবক শিক্ষক আবার যখন এগিয়ে যায়, তখন একরাশ শুকনো পাতায় তার পা পড়লে নীরবতার মধ্যে সহসা অকথ্য আওয়াজ হয়। সে-আওয়াজে চমকে উঠে সে নিজেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভয় কাটলে কান পেতে শোনে, কিন্তু বাঁশঝাড়ের নীরবতা এবার অখণ্ডিত থাকে।

সে-নীরবতার মধ্যে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যুবক শিক্ষক ভাবে, হয়তো সবটাই মনের খেয়াল। একবার হেসে মনে মনে বলে, কলাপাতা যদি মানুষ হতে পারে, বাঁশঝাড়ের সঙ্গীত মানুষের কণ্ঠ হতে পারে না কেন?

তবে কথাটা নিজেরই কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না। হাওয়া ছাড়া বাঁশবনে সঙ্গীত কী করে জাগে?

কিছুটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর হয়তো মনে ভয় এলে হঠাৎ সে অকারণে হাততালি দিয়ে রাখালের মতো গরু–ডাকা আওয়াজ করে ওঠে। পরক্ষণেই বাঁশবনে একটা আওয়াজ জাগে : সেখান থেকে তার কণ্ঠের প্রতিধ্বনি আসে যেন। না, আওয়াজটা অন্য ধরনের। একটি মেয়েমানুষ যেন সভয়ে চিৎকার করে ওঠে।

আওয়াজটা কিন্তু জেগে উঠেই আবার নীরব হয়ে যায়। কেউ যেন তা পাথর-চাপা দেয়। সাপের মুখগহ্বরে ঢুকে ব্যাঙের আওয়াজ যেন হঠাৎ থামে, বা মস্তক দেহচ্যুত হলে মুখের আওয়াজ যেন অকস্মাৎ স্তব্ধ হয়। দেহচ্যুত মাথা এখনো হয়তো আর্তনাদ করছে কিন্তু তাতে আর শব্দ নাই। চারধারে আবার অখণ্ড নীরবতা।

রুদ্ধনিশ্বাসে যুবক শিক্ষক দাঁড়িয়ে থাকে, দৃষ্টি নিশ্চল নিঃশব্দ বাঁশঝাড়ের উপর নিবদ্ধ। তারপর তার বুক কাঁপতে শুরু করে, ক্রমশ হাতে-পায়ে সারা শরীরেও কাঁপন ধরে। অবশেষে পায়ের তলে মাটি কাঁপতে শুরু করে, জ্যোৎস্না-উদ্ভাসিত আকাশও স্থির থাকে না। শুধু বাঁশঝাড় নিশ্চল, নিস্তব্ধ হয়ে থাকে।

অনেকক্ষণ পর পৃথিবীব্যাপী কম্পন থামলে ডুবতে ডুবতে বেঁচে যাওয়া মানুষের মতো ঝোড়ো বেগে নিশ্বাস নেয় যুবক শিক্ষক। তারপর হয়তো সাহসের জন্যে উপরের দিকে তাকায় কিন্তু চাঁদের মায়াময় হাস্যমুখ দেখতে পায় না। সে কিছুই বুঝতে পারে না বলে অবশ দেহে আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।

অবশেষে যুবক শিক্ষকের মনে ভয় কাটে। এবার সে নির্ভয়ে চারধারে তাকিয়ে দেখে। না, জ্যোৎস্নারাতে কোনো তারতম্য ঘটে নাই। স্বচ্ছ আকাশে নীলাভা, চাঁদ তাতে রানীসম তার হাস্যোজ্জ্বল মুখ ঝকঝক করে। অপরিসীম তৃপ্তির সঙ্গে সে ভাবে, না, জ্যোৎস্নারাতের যাদুমন্ত্রের শেষ নাই। চাঁদ মোহিনীময়। আওয়াজটি কানেরই ভুল হবে। এমন ঝকঝকে চন্দ্রালোকিত রাতে কিছুই বিশ্বাস হয় না। যুবক শিক্ষক বাঁশঝাড়ের দিকে চেয়ে পরিষ্কার গলায় ডাকে, ‘কে?’ অবশ্য কোনো উত্তর আসে না। হাওয়ায় বাঁশঝাড়ে সঙ্গীতের ঝঙ্কার জাগে, কিন্তু মানুষের কণ্ঠ জাগে না। শীতের জমজমাট রাতে একটু স্পন্দনও নাই।

এক মুহূর্ত আগে যা সত্য মনে হয়েছিল, তা যে সত্যই সে-কথা কে বলতে পারে? সত্য চোখ-কানের ভুল হতে পারে, সত্য আবার চোখে কানে ধরা না-ও দিতে পারে। এবার নির্ভয়ে এবং কিছুটা কৌতূহলশূন্যভাবে যুবক শিক্ষক বাঁশঝাড়ের দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ মনে হয় সেখানে আবার একটু আওয়াজ হয়, অস্পষ্ট পদধ্বনির মতো : কে যেন সেখান থেকে সরে যাচ্ছে। কিসের আওয়াজ? সঠিক করে বলা শক্ত। সামান্য হাওয়ায় বাঁশবনে শব্দ হয়। কিন্তু হাওয়া নাই। তাহলে জন্তু-জানোয়ারই হবে। শেয়াল কিংবা মাঠালী ইঁদুর। জঙ্গলে সর্বত্র শুষ্ক পাতা ছড়িয়ে আছে। একটুতেই শব্দ হয়। নির্ভয়ে যুবক শিক্ষক এগিয়ে যায়। অনভিজ্ঞ সরলচিত্ত যুবকের মনের আকাশে কোনো বিপদাশঙ্কার আভাস নাই, ভয়-দ্বিধা নাই। উপরে, স্বচ্ছ আকাশে সুন্দর উজ্জ্বল মায়াময়ী চাঁদ নির্ভয়ে একাকী বিরাজ করে। একটু ঝুঁকে সে একটা পড়ন্ত শাখা তুলে নেয়। তার তরুণ মুখে একটু কৃত্রিম আশঙ্কা, কৌতুকে মেশানো আশঙ্কা। ভাবে, সাপখোপও হতে পারে, এমন দুঃশীল সাপ যে দারুণ শীতেও গর্তে আশ্রয় নেয় নাই। হাতে গাছের শাখাটি শক্ত করে ধরে যুবক শিক্ষক বাঁশঝাড়ের দিকে এগিয়ে যায়, সাপ না হোক অন্ততপক্ষে দুষ্ট ছাত্রকে শাসন করতে যায় যেন।

জন্তু-জানোয়ার নয়, সাপখোপ বা মাঠালী ইঁদুর নয়, কোনো পলাতক দুষ্ট ছাত্রও নয়। বাঁশঝাড়ের মধ্যে আলো-আঁধার। সে আলো-আঁধারের মধ্যে একটি যুবতী নারীর মৃতদেহ। অর্ধ-উলঙ্গ দেহ, পায়ের কাছে এক ঝলক চাঁদের আলো।

গভীর রাতে বাঁশঝাড়ের মধ্যে আলুথালু বেশে মৃতের মতো পড়ে থাকলেই মানুষ মৃত হয় না। জীবন্ত মানুষের পক্ষে অন্যের জীবন সম্পর্কে নিরাশ হওয়াও সহজ নয়। যুবক শিক্ষক কয়েক মুহূর্ত মৃত নারীর দিকে চেয়ে থাকে। তারপর একটা বেগময় আওয়াজ বুকের অসহনীয় চাপে আরো বেগময় হয়ে অবশেষে নীরবতা বিদীর্ণ করে নিষ্ক্রান্ত হয়। হয়তো সে প্রশ্ন করে কিছু, হয়তো কেবল একটা দুর্বোধ্য আওয়াজই করে : তার স্মরণ নাই। তবে এ-বিষয়ে সে নিঃসন্দেহ যে সে কোনো উত্তর পায় নাই। মৃত মানুষ উত্তর দেয় না।

যুবক শিক্ষক বাঁশঝাড় থেকে যখন বেরিয়ে আসে তখন তার দৃষ্টিতে ইতিমধ্যে বিভ্রান্তির ছাপ দেখা দিয়েছে, শরীরেও কাঁপন ধরেছে। নিজেকে সংযত করবার চেষ্টা করে সে দ্রুতপদে হাঁটতে থাকে। কিছুদূর গিয়ে সচকিত হয়ে দেখে, সামনে কাদের। সে যেন মাটি ফুঁড়ে উঠেছে। দেহ নিশ্চল, মুখে চাঁদের আলো। তাকে দেখে ক্ষণকালের জন্যে সে স্বস্তিই বোধ করে। কাছে গিয়ে সে কয়েক মুহূর্ত তার দিকে তাকিয়ে থাকে, কিছু একটা বলবেও মনে হয়। কাদের পূর্ববৎ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে। মুখে চাঁদের আলো তবু তার চোখ দেখা যায় না।

তারপর হঠাৎ যুবক শিক্ষকের মাথায় বিপুলবেগে একটা অন্ধ ঝড় ওঠে। কয়েক মুহূর্তের জন্যে সে বুঝতে পারে না কী করবে। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে সে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটতে শুরু করে। তার সমস্ত চিন্তাধারা যেন হঠাৎ বিচিত্র গোলকধাঁধায় ঢুকেছে এবং সে- গোলকধাঁধা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে সে দৌড়তে শুরু করে। কিন্তু কোথাও মুক্তিপথের নির্দেশ দেখতে পায় না। সে দৌড়তেই থাকে। যুবক শিক্ষক জ্যান্ত মুরগি-মুখে হাল্কা তামাটে রঙের শেয়াল দেখেছে, বুনো বেড়ালের রক্তাক্ত মুখ দেখেছে, মানুষের দুঃখ-কষ্ট মহামারী-হাহাকার দেখেছে, কিন্তু কখনো বিজন রাতে বাঁশঝাড়ের মধ্যে যুবতী নারীর মৃতদেহ দেখে নাই। হত্যাকারী দেখে নাই। সে ছুটতেই থাকে।


বাইরে চাঁদ ডুবে গেছে, পাখির রব শুরু হতে দেরি নাই। টিনের ছাদ থেকে প্রায় নিঃশব্দে শিশির পড়ে। বড়বাড়িতে কে একবার কেশে ওঠে। না-শুনেও যুবক শিক্ষক সে- আওয়াজ শোনে, তার পাথরের মতো শরীরের কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। তারপর আরেকটি আওয়াজ সে শুনতে পায়। এবার অন্ধকারের মধ্যেই ক্ষিপ্রভঙ্গিতে সে দরজার দিকে তাকায়। মনে হয় তার অপেক্ষার শেষ হয়েছে।

দরজায় আবার করাঘাত হয়। তারপর খিল-দেয়া দরজার ওপাশে কাদেরের গলাও শোনা যায়। যুবক শিক্ষক বুঝতে পারে, তার শরীরে অবশিষ্ট শক্তিও নিঃশেষ হয়ে গেছে। কাদেরকে কোনো উত্তর দেবার বা দরজা খুলবারও কোনো প্রয়োজন সে বোধ করে না। তবু যন্ত্রচালিতের মতো উঠে সে দরজা খুলে একটু সরে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে, কাদের ঘরে প্রবেশ করলে তার দিকে তাকায় না। শুধু গভীর নীরবতার মধ্যে সে শুনতে পায় কাদেরের নিশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।

অবশেষে কাদেরের কণ্ঠ শোনা যায়। তার স্বাভাবিক কণ্ঠ রুক্ষ। এখন সে নিম্নকণ্ঠে কথা বললেও সে-রুক্ষতা ঢাকা পড়ে না। কাদের প্রশ্ন করে, সে দৌড়ে পালিয়েছিল কেন।

তার গলা শুনতে পেয়ে যুবক শিক্ষক হয়তো একটু আশ্বস্ত বোধ করে, কিন্তু প্রশ্নটির কোনো অর্থ বোঝে না। সে কোনো উত্তর দেয় না।

কাদের উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করে। তারপর তার গলা ঝনঝন করে ওঠে। সে কেবল তার প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তিই করে। কিন্তু যুবক শিক্ষক এবারও কোনো উত্তর দেয় না। তার জিহ্বায় যেন কুলুপ পড়েছে। কাদেরের ডাকে দরজা না খোলার যেন উপায় থাকে নাই, কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তর দিতে সে বাধ্য নয়। বা মুখে কোনো কথাই সরে না।

উত্তরের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা কাদেরের স্বভাব নয়। তা ছাড়া, কাদের বড়বাড়ির মানুষ। যুবক শিক্ষক সে-বাড়িরই পরাপেক্ষী, তাদেরই আশ্রিত।

‘কী হল?’

যুবক শিক্ষক উত্তর দেবার কোনো চেষ্টা করলেও অন্ধকারের মধ্যে তা দৃষ্টিগোচর হয় না।

অবশেষে কাদের কেমন এক কণ্ঠে আবার প্রশ্ন করে, ‘বাঁশবনে কী করছিলেন?’

যুবক শিক্ষক, পাথরের মতোই সে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর বাইরে কোথাও পাখির কলতান শুরু হয়।

একটু পরে কাদের সহসা ঘর থেকে বেরিয়ে যায

ভাইরে ভাই..এমন ঘটনা ঘটানোও সম্ভব..সিনেমার ঘটনাও ফেল..যাস্ট অবিশ্বাস‍্য..ঘটনা মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টিতে..সেখানের.....
08/10/2025

ভাইরে ভাই..এমন ঘটনা ঘটানোও সম্ভব..সিনেমার ঘটনাও ফেল..
যাস্ট অবিশ্বাস‍্য..
ঘটনা মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টিতে..

সেখানের..অভিজুয়েলার্সে-র মালিক শুভর দোকানে গতকাল রাত ১১টার দিকে ডা-কা-তি হয়..মোটর সাইকেল যোগে ৬জন ডা-কা-ত এসে স্বর্ণের দোকান লু-টপাট করে..এসময় মালিক শুভর পিঠে ধা-রা-লো অ-স্ত্র দিয়ে বেশ কয়েতটি আ-ঘা-ত করে..

ডা-কা-ত দল চলে যাবার পর আশেপাশের মানুষ ছুটে এসে মালিক শুভকে হাসপাতালে পাঠায় ও পুলিশে ফোন দেয়..

ঘটনা এখানে শে-ষ হলে হতে পারতো..কিন্তু মুল ঘটনা অন‍্য জায়গায়..

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সিসি ক‍্যামেরার ফুটেজ দেখে অপারোশনে নামে..এবং কয়েকঘন্টার মধ‍্যে আসামীদের ধরে ফেলে..আসামীদের মধ‍্যে রয়েছে আমান..মিলন..শরিফ..নয়ন ও সোহাগ..

ওদিকে আহত শুভর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়..
শহরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে..
পুলিশ আসামীদের ধরে থানায় নিয়ে এসে উত্তম মাধ‍্যম দিলে ঘটনার মোড় অন‍্যদিকে চলে যায়..

আসামীরা যা বলে তা আপনি হয়তো আগে কোনদিন শুনেন নি
আসামীরা জানায়..তারা কোন ডা-কা-ত নয়..তাদের দিয়ে নাটক করিয়েছে স্বয়ং শুভ..অর্থাৎ ঐ দোকানের মালিক..

এবং এই ঘটনা ঘটানোর জন‍্য তাদের নগদ পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে..
এবং..ঘটনার সত‍্যতা প্রমাণ করার জন‍্যই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শুভর পিঠে ছু-রি মা-রা হয়েছে..

অর্থাৎ..পুরো ঘটনা পরিকল্পনা অনুযায়ী পারফেক্টলি শে-ষ করেছে..
এবার প্রশ্ন হল..শুভ এমন কাজ করতে গেল কেন..
এটা শুনলে মানুষের উপর থেকে আপনার বিশ্বাস উঠে যাবে..

বিষয়টি হচ্ছে..শুভর দোকান বেশ বড় দোকান..তার দোকানে অনেক স্বর্ণ জমা থাকে..অনেকে গহনা বানানোর জন‍্যও অনেক স্বর্ণ জমা রাখে..সব মিলিয়ে এই মুহুর্তে তার দোকানে ৩৯ ভরি ৭ আনা সোনা জমা ছিল..

শুভর টার্গেট ছিল..দোকানে ভয়াবহ ডা-কা-তি হয়ে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে খবর ছড়িয়ে সকলের আমানত রাখা স্বর্ণ আত্মসাত করা..

এবার চিন্তা করেন..একজন প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী যদি এমনটা করে তাহলে বিশ্বাস করবেন কাকে..
পুলিশ সম্পূর্ন স্বর্ণ উদ্ধার করেছে..

মানুষের সচেতনতার জন‍্য পোস্টটি শে-য়া-র করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন..

ছবি..কিছুক্ষণ আগে মানিকগঞ্জ সদর থানায় সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সমস্ত ঘটনার বিবরণ জানান 🙂

-

Good night ❤️
07/10/2025

Good night ❤️

তাজমহল পর্ব ৪প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীছাদে মোটামুটি সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে। ফটোগ্রাফি সুন্দর হওয়ার জন্য তৌসিফ, তাসনুভা, তিতলি...
07/10/2025

তাজমহল পর্ব ৪
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী

ছাদে মোটামুটি সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে। ফটোগ্রাফি সুন্দর হওয়ার জন্য তৌসিফ, তাসনুভা, তিতলি সব রকমের আয়োজন করেছে। ওদের ছবি তোলার ভীষণ শখ। পারেনা সারাক্ষণ ক্যামেরা নিয়ে বসে থাকতে।
শাইনার শখ নেই এমন না। সে শাওনকে প্রায় সময়ই জ্বালাতো ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আজ তার সব বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে সব ছেড়েছুঁড়ে চলে যেতে। কিন্তু যাওয়া যাবে না। দশ দশটা কথা রটে যাবে।
শারমিলা আর শাবরিন এসেছে তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে। ভাবিও এসেছে। শাইনা তার তিন ভাইকেও দেখলো। মোটামুটি সবাই হাজির।

বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা নিচে বাজি ফোটাচ্ছে দেখে বাবা চাচারা গর্জন তর্জন শুরু করে দিয়েছে। এই ছেলেগুলোর আর শান্তি নেই। কিছু হতে না হতেই বাজি ফোটানো শুরু করবে।
দিনের বেলায় যতটা না উচ্ছ্বসিত ছিল সবাই রাতের অনুষ্ঠানে তারচেয়ে বেশি কোলাহল, হৈচৈ বেড়েছে। শাইনার এখনো স্পষ্ট মনে আছে যখন তাদের বাড়িতে কোনো বিয়ে হতো অনুষ্ঠান শেষ হওয়া অব্দি সে বসে থাকতো বিয়েবাড়িতে। আম্মু ডাকলেও যেত না ঘরে।
“রাত বাড়ছে। ওদের আংটি বদলটা হয়ে যাক। তোর আব্বারা ঘুমিয়ে পড়বে। সারাদিন অনেক দখল গিয়েছে।”
রওশনআরা এসে তাসনুভাকে কথাটা বললো। তাসনুভা তিতলিকে বলল,
“ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তাজদার সিদ্দিকী ছাদের এককোণায় তার ভাই বন্ধু আর দুলাভাইদের সাথে দাঁড়িয়ে কথাবার্তায় মগ্ন। তিতলি গিয়ে ডেকে আনলো। তাজদার সিদ্দিকী আসামাত্রই রওশনআরা আংটির বক্স খুলে দিল। বলল “এটা পরিয়ে দাও।”
তাসনুভা হাত নেড়ে বলল,”ক্যামেরা এইদিকে এইদিকে…
ফটোগ্রাফাররা ছুটে এল। শাইনাকে ক্যামেরার দিকে তাকাতে বললে সে তাকাতে পারলো না। লেন্সদুটো তাকে বিপদে ফেলবে সে বুঝতে পারছে।
তাসনুভা বলল,”এভাবে মুখ নামিয়ে রাখলে ছবি ভালো উঠবে না। আশ্চর্য!”
সে বিরক্তিতে তেতে উঠলো। রওশনআরা চোখের ইশারায় ধমকালো। তারপর তাজদার সিদ্দিকীর দিকে আংটিটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”পরিয়ে দাও। শাইনা আঙুল দাও মা।”
শাইনা কোনোদিকে না তাকিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিল। তাজদার সিদ্দিকী হাতটা ধরতেই শাইনা আরও গুটিয়ে গেল। তৌসিফ ক্যামেরা ধরে বলল,

“শাইনা হাতের দিকে তাকাও।”
শাইনা তাকালো না। শাওন ডেকে বলল,”এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? হাতের দিকে তাকা।”
শাইনা তারপরও সহজ হতে পারলো না। তৌসিফ এসে শিখিয়ে দিল কিভাবে তাকাতে হবে, হাতটা কিভাবে রাখতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
শাইনা তার হাতটার দিকে তাকালো। তাজদার সিদ্দিকী আংটি পরিয়ে দিতেই শাইনা হাতটা ছাড়িয়ে নিল দ্রুত। শাওন বলল,”একটু হাস।”
শাইনা অল্প হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু চেহারার মলিন ছাপ দূর হলো না তবুও। আনিস এগিয়ে এসে শাইনার হাতে একটা আংটি দিল। তৌসিফ বলল,”ব্রো হাত বাড়িয়ে দাও।”
তাজদার সিদ্দিকী হাত বাড়িয়ে দিল। শাইনা ডান হাত দিয়ে শুধু আংটিটা পরিয়ে দিল দায়সারাভাবে। তৌসিফ চ বর্গীয় শব্দ করে বলল,

“হয়নি।”
সে এগিয়ে এসে শিখিয়ে দিল কিভাবে এক হাতে হাত ধরে অন্য হাতে ধীরেধীরে আংটি পরিয়ে দেবে। আংটিটা আবারও খুলে নিল তৌসিফ। তাজদার সিদ্দিকী খুলতে চাইলো না। তৌসিফ জোরপূর্বক নিয়ে নিল। শাইনা আবারও আংটিটা পরিয়ে দিল সবার মনমতো করে।
তৌসিফ বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বলল,”পার্ফেক্ট।”
সবার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। রওশনআরা শাহিদা বেগম আর আফসার সাহেবকে ডেকে আনলেন। তাজউদ্দীন সিদ্দিকীও এলেন। তৌসিফ মজা করে শাহিদা বেগমকে বলল,
“চাচীমা আজ মেয়ের হাত তুলে দিলে কিন্তু আমাদের বাড়িতে রেখে দেব।”
তৌসিফের মা জোহরা বেগম তাকে ধমকালো। তৌসিফ তা দেখে আরও ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। রওশনআরা হেসে বলল,

“কথাটা কিন্তু ভুল বলিসনি। তুলে দিলে রেখে দেব আজকের জন্য।”
শাইনা চট করে বলে উঠলো,”আমি থাকব না।”
সবার মনোযোগ কেড়ে নিল তার কথাটা। তাজদার সিদ্দিকীও তাকালো কথাটা শুনে। শাইনা গম্ভীর মুখে কথাটা বলেছে।
রওশনআরা হেসে ফেললেন,
“ওই দেখো কি বলে মেয়েটা। আচ্ছা বেশ থাকিস না। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর তো এমনিই আসবি।”

বড় মামা, খালু, ফুপা সবাই উপস্থিত হওয়ার পর বরের হাতের উপর কনের হাতটা তুলে দেয়া হলো। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী কনপক্ষকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,
“বাড়ির মেয়ে আরেক বাড়িতে এসেছে। এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কথাবার্তা তো আমাদের মধ্যে হয়েছে। ভালো রাখার দায়িত্ব শুধু যার হাতে তুলে দিচ্ছেন তার নয়। আমাদেরও। মেয়ে ভালো থাকবে। চিন্তার কিছু নেই। আশরাফের মা, আশরাফের বাপ মেয়েকে নিয়ে একদম চিন্তা করবে না। আমরা বাড়ির মেয়ে এনেছি ভালোর জন্যই।”

শাইনার বড় মামা বললেন,
“আপনি একাই সব বলে দিলেন। আমাদের আর কিছু বলার রইলো না। ছেলেমেয়েরা ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকি।”
শাইনা চোখ নীচে নামিয়ে রেখেছে। নিজের হাতটা ওই হাতের উপর!

ওইরকম একটা মানুষ কাউকে ভালো রাখতে পারে? যাকে দেখলেই রাগে, ঘৃণায় তার আপাদমস্তক জ্বলতে থাকে সে রাখবে তাকে ভালো? এই বোকার দলগুলো কি জানে এই লোকটা কত ছোটলোক? পয়সা, প্রতিপত্তি দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করে? তারা যদি আজও দরিদ্র থেকে যেত তাহলে এরা তাদের দিকে ফিরেও তাকাতো না। খান্দানি পরিবারের, সুন্দরী, শিক্ষিত মেয়েকে বউ করে আনতো ঢোল পিটিয়ে। এদের সে হাড়ে হাড়ে চেনে। তার পরিবার এদের সাথে ভালো মানুষি দেখাতে পারে। কিন্তু সে পারবে না। তার মন থেকে ঘৃণা না সরলে সে কোনোদিন এদের মন থেকে মেনে নিতে পারবেনা। তাজদার সিদ্দিকীকে সে কখনো মাফ করবে এটার কথা ভাবতেও পারেনা।
হাতটা অনেক্ক্ষণ ওই হাতটার উপর ছিল। নামিয়ে নিতেই মনে হলো শাইনা বেঁচে গেল। সারাজীবন কি করে সে এই লোকটার সাথে থাকবে? শুধু হাতে হাত রেখেছে এতেই তার দমবন্ধ লাগছে।
মুরব্বিরা সবাই চলে যেতেই তাজদার সিদ্দিকী জোর দিয়ে তিতলিকে বলল,”তোকে বলেছিলাম না লেন্সটা খুলে নিতে?”

তিতলি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এসে শাইনাকে বলল,”তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম অসুবিধা হচ্ছে কিনা।”
তাজদার সিদ্দিকী আবারও গর্জে উঠলো,
“আমি কি বলেছি শুনিসনি?”
তিতলি শাইনাকে চেয়ারে বসিয়ে লেন্স দুটো আস্তে করে খুলে নিল। শাইনার গাল ভিজে গেল চোখের জলে। অসম্ভব পরিমাণে জ্বলছে। তিতলি তার দিকে ফ্যানটা ঘুরিয়ে দিল। তারপর টিস্যু দিয়ে আলতো করে গাল মুছে দিতে লাগলো।
তাসনুভা অসম্ভব বিরক্ত হয়ে বলল,
“লেন্স পড়লেও নাকি কারো চোখ জ্বলে। অদ্ভুত!”
শাইনাকে কথা শুনিয়ে সরে গেল সে। শাইনা একটু পানি খেয়ে জিরিয়ে নিল। তৌসিফ বলল,
“শাইনা আজ কিন্তু ঘুমাতে পারবে না। অনেক ফটোশুট হবে।”
শাইনা চুপ করে বসে রইলো। তৌসিফ ভাইয়ের সাথে সে এখন মোটামুটি টুকটাক কথা বলে। আগে বলতো না। তৌসিফ ভাইও বলতেন না। ওই লোকটা তাদের সাথে কাউকে কথা বলতে দিত না।

সবার জন্য ঝাল মিষ্টি জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। জুসের বোতলও আনা হয়েছে। এসব দেখে আশরাফ আপত্তি জানাতেই তাসমীনের স্বামী জাহিদ বলল,
“আমার সম্মন্ধির একটামাত্র বউ। থাক, টাকা খরচ করতে দেন।”
সবাই হেসে উঠলো সেকথা শুনে। তাজদার সিদ্দিকী কিছু বললো না। শাইনার বোনের জামাইরা কত কি বললো। তাজদার সিদ্দিকী জবাবে কিছুই বলেনি। চুপচাপ সবার হাসিঠাট্টা শুনে যাচ্ছে।
বড় বড় বাক্স আনা হচ্ছে। শাইনা একপাশে চুপ করে বসে রইলো। শাওন বাক্স রেখে এসে বলল,”ওই কিছু খাবি?”
শাইনা বলল,”বাড়ি যাব।”

“এটাই তো তোর বাড়ি।”
এরচেয়ে বড় মিথ্যে কথা আর হয় না। এই বাড়িকে তার একটুও আপন লাগছেনা। শাওনের কথার জবাবে সে কিছু বললো না। শুধু বলল,”একটু ঠান্ডা পানি খাব ভাইয়া।”
“ঠিক আছে দাঁড়া।”
তাজদার সিদ্দিকী তৌসিফকে জিজ্ঞেস করছিল প্যাকেজিংগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা। সম্ভবত সেখানে বড়সড় চিকেন বার্গার, পেস্ট্রি, জিলাপি, সেভেনআপ আর জুসের বোতল আনা হয়েছে সবার জন্য। আরও কয়েক রকমের খাবার এসেছে। ফুরিয়ে এলে ওই বাক্সগুলো খোলা হবে। শাওন এতসব দেখলো না। তৌসিফকে বলল,
“শাইনার জন্য একটা জুসের বোতল দাও তো।”
তাজদার সিদ্দিকী বার্গার, পেস্ট্রিবক্সসহ বাড়িয়ে দিল। শাওনা শাইনাকে সেখান থেকে ডেকে বলল,
“মণি বার্গার খাবি?”

শাইনা মনে মনে তাকে বকা দিল। একঝাঁক মানুষের সামনে জিজ্ঞেস করছে বার্গার খাবে কিনা। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। শাইনা কিছু বললো না। শাওনা তারজন্য একগাদা খাবার নিয়ে এল। শাইনা শুধু জুসের বোতলটা নিল। আর কিচ্ছু নিল না।
জুসটা পুরোটা খেল সে। ঠান্ডা হওয়ায় খেতে ভালো লাগছিল। তার গলা শুকিয়ে আসছে বারবার। আজ এত তেষ্টা পাচ্ছে তার।
জুসটা খাওয়া শেষে মনে হলো লিপস্টিক সরে গেছে। ফোনের সেলফি ক্যামেরা অন করে ঠোঁট দেখতে যাবে তখুনি ক্যামেরায় তাজদার সিদ্দিকীকে দেখা গেল। তার কিছুটা পেছনে চেয়ারে বসে ফোন দেখছে। ফোনের ব্রাইটনেস হাই। আঙুল নেড়ে নেড়ে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করছে সম্ভবত।
সে ক্যামেরা অন করেছে মনে হতেই চোখ তুলে তাকালো এদিকে। শাইনা চট করে ক্যামেরা নামিয়ে নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তারপর গম্ভীরমুখে সরে পড়লো সেখান থেকে।
বড় আপা বলল,”তুই চলে এলি কেন? উনি বোধহয় তোর সাথে কথাটথা বলার জন্য ওদিকে গিয়ে বসেছে। তুই ইশারা টিশারাও বুঝিস না?”

শাইনা আকাশ থেকে পড়লো। অবাক হয়ে বলল,
“আমি কথা বলব?”
মেঝ আপা দ্বিগুণ অবাক হয়ে বলল,”আজব! তুই কথা বলবি না তো কে বলবে? তোর জামাই না?”
“জামাই হয়ছে তো কি হয়ছে? কোলে নিয়ে নাচব?”
বড় আপা আর মেঝ আপা জমে গেল। একে অপরের দিকে তাকালো অবাক চোখে। শাইনা এককোণায় গিয়ে বসলো যাতে তাজদার সিদ্দিকী তাকে না দেখে আর সেও তাজদার সিদ্দিকীকে না দেখে।
খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হতেই আবারও ফটোশুট শুরু হলো। তৌসিফ আবারও দুজনকে এক জায়গায় নিয়ে এল। ছাদে মিড ভলিউমে গান চলছে। এতক্ষণ হিন্দি গান চলছিল। এবার হাবীব ওয়াহিদের কন্ঠে গাওয়া সেই গানটা চলছে.
গোধূলির আকাশ লাজুক লাজুক..
সন্ধ্যা এখনো জেগে।
তোমার..জন্য শুধু তোমার জন্য।
শাইনার পছন্দের গান। তৌসিফ এসে একটা কাপল ছবি দেখালো। যেখানে বরটা কনের হাত ধরে হাতের উপর ঝুঁকেছে। শাইনার আপাদমস্তক শিউরে উঠলো। সে বেঁকে বসলো। সে এই ধরণের ছবি তুলবে না। তৌসিফ বলল,
“আরেহ ভাবিমণি এইসব কাপল পোজ। এখন প্র্যাক্টিস করে নাও। বিয়ে আর গায়ে হলুদের সময় লাগবে। তখন আর শিখিয়ে দিতে পারব না।”
শাইনা রাজী হলো না। এই মুহূর্তে তাকে রাজী করানো সাধ্যও নেই। সে বেঁকে বসতেই তাজদার সিদ্দিকীও বেঁকে বসলো। তৌসিফ আর শাওন একে অপরের দিকে হতাশ চোখে তাকালো। তৌসিফ শেষমেশ কিছু সাদামাটা পোজ দেখালো যেখানে হালকা দূরত্বে আছে। তাজদার সিদ্দিকী চুপচাপ দেখলো কপাল কুঁচকে। তৌসিফ সেগুলো শাইনাকেও দেখালো। বলল,

“এভাবে দাঁড়াতে নিশ্চয়ই সমস্যা হবেনা?”
শাইনা নীরবে সম্মতি দিল শাওনের চোখ রাঙানি দেখে। প্রথম দিন থেকে ত্যাড়ামি শুরু করে দিয়েছে।
ফটোশুট শুরু হলো আবারও। তাজদার সিদ্দিকীর ঘড়ির সাথে শাইনার ঘোমটা একটা কোণা আটকে দেয়া হলো। শাইনা অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে। তৌসিফ বলল,
“ওড়নাটা ভাইয়ের হাতে আটকানো থাকবে। তুমি ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে থাকবে ভাইয়ের দিকে। আর একটুখানি হাসবে।”

শাইনা সাথে সাথে ঘোমটা টান দিয়ে বলল,”এটাও হবে না।”
তৌসিফ, শাওন সবাই হতাশ। শাইনার বড় দুলাভাই জামিল বলল,
“মনে হয় আমাদের লজ্জা পাচ্ছে। আমরা তাহলে নিচে যাই। তাজদার সাহেব আমরা নিচে আছি।”
তাজদার সিদ্দিকী মাথা নাড়লো অল্প করে। তারপর তৌসিফকে বলল,
“আমাকে ছাড়বি কখন?”
“আরেকটু দাঁড়াও।”
সে শাইনার কাছে এগিয়ে এসে বলল,”শাইনা কথাটা শোনো। ভাইকে অনেকদিন ধরে রাজী করিয়েছি। তুমি এভাবে বেঁকে বসলে কিভাবে হবে?”

শাইনা বলল,”আমি ওভাবে তাকিয়ে ছবি তুলব না।”
একদম কাঠকাঠ ভাষায় কথাটা বলে দিল সে। তৌসিফের আর কি বলার থাকে? তারা সবাই হতাশ।
শেষমেশ দুজনকে দু’দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে তৌসিফ বলল,
“এবার মনে হচ্ছে বিরোধী দলের নেতা নেত্রী। পার্ফেক্ট!”
বলেই হতাশ হয়ে সে ক্যামেরা রেখে দিল। চেয়ারে বসে জুসের বোতলে খুলে গলা ভিজালো। শাইনা বাকি ক্যামেরা ম্যানকে বলল,

“আর ছবি তুলব না। এটা নামান।”
তিতলি বলল,”মিমি আর ঝুমুরা নাচবে। এখন বাড়ি যেতে পারবে না তুমি।”
শাইনা না করলো না। তাজদার সিদ্দিকীও কিছুক্ষণের জন্য সরে গেছে।
ছাদে মোটামুটি কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণীরা আছে। যারা নাচবে তারা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। শাইনার একটু ভালো লাগলো এবার। মন খারাপটা ক্ষণিকের জন্য দূর হয়ে গেল।
কিন্তু নাচ শুরু হওয়ার পর ছাদে আবারও ভীড় জমতে লাগলো। বড় আপা আর মেঝ আপার ছেলেমেয়েরাও নাচছে। সবাই মিলে আনন্দ করছে। সাত আট বছরের কাজিনরা সবাই মিলে শাইনাকে মাঝখানে টেনে নিয়ে এল। বড় আপার মেয়ে নাচছে কোমর দুলিয়ে। মেঝ আপার ছেলে নাচতে নাচতে পড়ে গেল।
শাইনা তাকে তুলে নিয়ে গালে আদর দিয়ে বলল,”হয়েছে কাঁদেনা।”

“কালামুনিল বিয়ে।”
শাইনা বলল,”আমার মাথা। ব্যাথা পেয়েছ?”
“না না।”
শাইনা মেঝ আপাকে বলল,”ওকে এখানে ছেড়ে দিয়েছ কেন?”
মেঝ আপা বলল,”থাক নাচুক।”
শাইনাকে ঘিরে সবাই নাচছে। বাকিরা ছবি ভিডিও তুলছে। গানের তালে যারা নাচতে লজ্জা পায় তারাও নাচছে। বড় দুলাভাইকে টেনে নিয়ে এসেছে শাওন। দুলাভাই বলল,
“আমাকে ছাড়, ছাড়। আমি নাচতে জানিনা।”
শাওন বলল,”আমার বোন তোমাকে এতদিনেও নাচটা শেখাতে পারলো না? আফসোস।”

সবাই একসাথে হো হো করে হাসলো। শাইনাও সবার তালে হেসে ফেলেছিল। বিয়ে, তাজদার সিদ্দিকী এইসব সে ভুলে গিয়েছিল একদম। মনে হচ্ছিল এটা তাদেরই বাড়ির কোনো অনুষ্ঠান। সবাই যখন তাকে ঘিরে নাচছিল, তখন শাইনাও অল্প অল্প করে হাততালি দিচ্ছিল ঠিক সেসময় বড় ভাইয়া, মেঝ ভাইয়াদের সাথে তাজদার সিদ্দিকীকে দেখা গেল। চোখাচোখি হতেই শাইনা ধীরেধীরে ঘুরে দাঁড়ালো। পিঠ করে দাঁড়ালো। নাচনেওয়ালীদের ভীড়ের মধ্যে সরে সরে থাকলো যাতে তাজদার সিদ্দিকীকে চোখে না পড়ে। তার হাসিমাখা চেহারা মলিন হয়ে এসেছে আবারও।
নাচগান শেষ হতে হতে প্রায় রাত আড়াইটা পার হয়ে গিয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে বাচ্চার মায়েরা চলে গেল। ধীরেধীরে ছাদ হালকা হতে লাগলো। শাইনা এককোণায় বসেছিল ভাইবোনের সাথে। ছাদে তখন শুধু বড় বউয়ের ভাইবোন, ভাবি আর দুলাভাইরা। তারা সবাই বসে আগাম পরিকল্পনা করছে গায়ে হলুদে সবাই কি রঙের গ্রুপ ড্রেস কিনবে, আর কি কি করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শাইনা চুপচাপ। তাজদার সিদ্দিকী মাঝেমধ্যে কথা বলছে ভাইদের সাথে। তখন সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠছে।

সবাই শলাপরামর্শ করে বেরিয়ে যেতে লাগলো একে একে। শাইনাকে রেখে সবাই চলে যাচ্ছিল। শাইনা শাড়ির কুঁচি ধরে লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে দরজা অব্দি যেতেই বড় আপা চোখ রাঙিয়ে বলল,
“কথা বল। বসে আছে ওখানে। ঠাস ঠাস করে চড় মারব সব শিখিয়ে দিতে হলে।”
শাইনার নিঃশ্বাস ফেঁপে উঠছে। হাতের তালু, পায়ের তালু ঘামছে। ছাদের দরজা টেনে বন্ধ করে দিল বড় আপা। তাজদার সিদ্দিকী দূরে একটা চেয়ারে বসেছে পিঠ কুঁজো করে হাঁটুতে কনুইয়ের ভর রেখে। চোখদুটো শাইনার দিকেই।

শাইনা একবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তাজদার সিদ্দিকীকে তার দিকে তাকাতে দেখে, এই প্রকান্ড ছাদে সে এই লোকটার সাথে একা এইসব ভাবতেই সে আগপাছ কিছু না ভেবে অনবরত দরজায় ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
অনেকগুলো পায়ের শব্দ একসাথে শোনা গেল। ছাদের দরজা খুলে দিতেই শাইনা সশব্দে কেঁদে উঠে বড় আপার উপর মেজাজ দেখিয়ে নেমে যেতে লাগলো বকতে বকতে।
“গোটা গুষ্ঠি মিলে নাটক শুরু করেছে আমার সাথে। সরো সামনে থেকে। আরেকটা কথা বললে কেয়ামত ঘটবে এখানে।”
শারমিলা আর শাবরিন একে অপরের দিকে তাকালো। বলল,

“উনি কি মনে করবেন বল তো?”
শাইনা ঘরে এসে আবারও চেঁচামেচি জুড়ে দিল। সবাই জড়ো হয়েছে তার ঘরে। বড় আপা বলল,
“আশ্চর্য, তোদের কথাবার্তা হয়নি তাই কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিলাম।”
শাইনা বলল,”কীসের কথাবার্তা? দরজা বন্ধ করে দিয়েছ কোন সাহসে?”
দাদীমা বললেন,”ওমা! ও ভুল কি করলো? একছাদে দাঁড়াতে না পারলে একঘরে থাকবি কেমনে?”
কথাটা শুনে মা চাচীরা সরে যাওয়ার পর আপা আর ভাবিরা সবাই হাসতে লাগলো। শাইনা দাদীর উপর খেপে বলল,
“সবাই যাও তো এখন। বের হও আমার ঘর থেকে। ফালতু প্যাঁচাল করতে আসে কানের কাছে।”
সবাইকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সে।
তারপর শাড়ি সাজ খুলে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম থেকে দেরী করে উঠলো সে। দাদীমা ঠেস মেরে বলল,

“নতুন বউ দেরী করে ঘুম থেকে উঠছে। সবাই সরে দাঁড়াও।”
হাসাহাসি করতে লাগলো তারা। শাইনা দাঁতে ব্রাশ চালাতে চালাতে বাইরে বেরিয়ে এল। পুরোনো অভ্যাস। পুকুরে মুখ ধোয়ার টানটা এখনো যায়নি। ঘাটে বসে ব্রাশ করতে লাগলো সে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ওড়নাটা কোনোমতে বুকের সামনে ভাঁজ করে পড়েছে। চোখে রোদ পড়ায় চোখদুটো কুঁচকে আছে।
ব্রাশ শেষে পুকুরঘাটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তার চোখে পড়ল তাজউদ্দীন ভিলার ছাদে একটা লম্বা ছায়া। কানে ফোন চেপে ধরা। পাশে থুতু ফেললো এদিকে তাকাতে তাকাতে।

তাজমহল পর্ব ৩

শায়না কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছায়াটার দিকে তাকিয়ে থাকল ব্রাশ হাতে স্থির হয়ে। থুতু ফেলতে দেখে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে আরেক পা বাড়াতেই পা পড়ল শ্যাওলা ভেজা ঘাটে। হঠাৎই পায়ের নিচের জমিন সরে গেল। সে ছিটকে গিয়ে পুকুরে পড়ে গেল জল ছিটিয়ে।

Address

Chittagong

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Jannat's mom posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share