17/08/2025
🌈 সাহায্য করুন, তবে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী… এবং নিজের শর্তে।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বিখ্যাত উপন্যাস দারুচিনি দ্বীপ-এর শেষ দিকে নায়ক শুভ্রকে তার বাবা বলেছিলেন—
> “তুই একটা ফার্স্ট ক্লাস বগি অফার করিস, সবাই তোকে পছন্দ করবে। কিন্তু ট্রেনে খাওয়ার সময় চেষ্টাট করবি যেন অন্য কেউ বিল দেয়।”
শুভ্র বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “আমি যদি একটা ফুল ফার্স্ট ক্লাস বগি অফার করতে পারি, তাহলে সামান্য চায়ের বিল দিতে পারি না?”
তার বাবা হেসে উত্তর দিয়েছিলেন
> “না পারবি না। কারণ তুই যদি সব সময় বিল দিতে থাকিস, সবাই তোকে দেখবে দুগ্ধবতী গাভী হিসেবে যারে ইচ্ছা মতো দোয়ানো যায়। তোকে বুঝাতে হবে তুই চাইলে খরচ করতে পারিস, কিন্তু কখন করবি সেটা নির্ভর করবে তোর মুড আর চয়েজের উপর।”
এই কথাটা ভীষণ সত্য এবং রিলেটেবল।
বাংলাদেশে কারো ইনকাম একটু ভালো হলেই আশেপাশের কিছু মানুষ আচমকা এমন ভাব নেয়, যেন তার আয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সব চাহিদা মেটানো। আপনি যদি একবার সাহায্য করেন, তারা সেটা কৃতজ্ঞতা হিসেবে নয় অধিকার হিসেবে দেখতে শুরু করবে। আর আপনি না বললেই শুরু হবে কিপটেমির তকমা, অহংকারের অভিযোগ, “টাকা দেখেছে, মানুষ বদলে গেছে” ইত্যাদি।
এটাই সবচেয়ে বড় টক্সিক মানসিকতা সাহায্য নেয়া নয়, বরং সুবিধা নেয়ার অভ্যাস।
যারা এভাবে আপনাকে ব্যবহার করে, তারা আসলে আপনার ভালো থাকার চাইতে আপনার পকেটের খেয়াল বেশি রাখে।
মনস্তাত্ত্বিকভাবে, এরা “Emotional Blackmail” বা “Guilt Trip” ব্যবহার করে। মানে তারা আপনাকে অপরাধবোধে ফেলতে চাইবে
“তুমি তো এত ভালো অবস্থায় আছো, এটা করতেই পারো।”
“আমরা তো তোমাকে ভাই/বন্ধু/আত্মীয় ভেবেছি।”
“তুমি দিলে তোমার কী কমে যাবে?”
এই ধরনের চাপ খুব ধীরে ধীরে আপনার mental peace শেষ করে দেয়। আর আপনি বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যায় আপনি নিজের স্বপ্ন, নিজের পরিকল্পনা, নিজের উন্নতি সবকিছু থামিয়ে দিয়েছেন অন্যদের প্রত্যাশা পূরণ করতে করতে।
মনে রাখবেন:
সাহায্য করা খারাপ নয় বরং মহৎ কাজ। কিন্তু সেটা আপনার ইচ্ছায়, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং সম্মানের সঙ্গে হতে হবে।
যারা শুধু প্রয়োজনের সময় মনে করে, তারা কখনোই আপনার প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী নয়।
বারবার চাপ দিলে স্পষ্টভাবে “না” বলতে শিখুন। না বলা মানে আপনি খারাপ নন বরং আপনি নিজের সীমা বুঝতে পারছেন।
যদি সবসময় হ্যাঁ বলেন, মানুষ আপনার উপস্থিতিকে মূল্য দেবে না, বরং আপনাকে “চলমান এটিএম” ভেবে নেবে।
💡 লাইফ হ্যাক:
সাহায্যের ক্ষেত্রে “Budget for giving” তৈরি করুন—যেটা প্রতি মাসে বা বছরে অন্যদের জন্য ব্যয় করতে পারেন, কিন্তু তার বাইরে কিছু দেবেন না।
যেকোনো সাহায্যের আগে ভাবুন এটা কি একবারের? নাকি এভাবে সাহায্য করলে তারা পরেরবার আবার প্রত্যাশা করবে?
যারা কেবল প্রয়োজনের সময় যোগাযোগ করে, তাদের থেকে ধীরে ধীরে দূরে থাকুন।
শেষ কথা—Help, but on your terms.
নিজের time, energy, money—সবকিছুই রিসোর্স, এবং এগুলো আপনি কাকে দেবেন তা ঠিক করার অধিকার একমাত্র আপনার।
Collected...
゚