
16/04/2025
একজন পিতার বিদায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেস্টেশনের কোনো এক নিস্তব্ধ দুপুর। গ্রীষ্মের ক্লান্ত সূর্য যেন আকাশের বুক চিরে তাকিয়ে ছিল একা এক বৃদ্ধের শেষ অপেক্ষার দিকে। তার স্ত্রী চলে গেছেন আট মাস আগে—যেন বুকের এক পাশ ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে সময়। দুই ছেলে, দুই মেয়ে; কিন্তু পিতার কপালে শান্তির ছায়া নেই। প্রথমে পালা করে রাখল সবাই, যেন কোনো বোঝা। তারপর শুরু হলো অবহেলার পালা—
ঝগড়া, অপমান, উপেক্ষা—সন্তানদের ভালোবাসার বদলে তিনি পেলেন শুধুই কাঁটা।
রাত কেটেছে উঠানের মাটিতে ভেতরের দরজাগুলো বন্ধ ছিল, খোলা ছিল শুধু আকাশ আর নিঃশ্বাস নিতে থাকা কিছু বাতাস। শেষ সকালটায়, পিতৃত্বকে চূর্ণ করে দুই পুত্রবধূ লাগলো ঝগড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে উঠল— “এই বার বাড়ি ছাড়ুন। দুই ছেলেও মাথা নিচু না করে বাবার থলে, কম্বল, ও শেষকৃত্যর স্মৃতিগুলো উঠানে ছুড়ে দিল। তিনি বেরিয়ে এলেন—না কোনো অভিমানে, না কোনো অভিশাপে—শুধু নিঃশব্দে। ভোর থেকে রাজশাহী রেলস্টেশনে বসে ছিলেন। নিশ্চুপ। নিরাহার। চারপাশে শহরের কোলাহল, অথচ তার ভেতরে এক মৃত্যুপুরীর নীরবতা।
দুপুর হতেই জীবনের শেষ পাতায় কলমের এক চিরুন আঘাত বৃদ্ধ আত্মহত্যা করলেন। না, তিনি নিজেকে মেরে ফেলেননি সমাজ, সন্তান, সময়—সবাই মিলে তাকে মেরে ফেলেছে অনেক আগেই। এই তো কেবল দাফনটা বাকি ছিল।