23/07/2025
আমরা বাঙালি—তিলকে তাল বানানো আমাদের সহজাত স্বভাব!২১শে জুলাই, মাইলস্টোন কলেজের পাশে যে বিমান বিধ্বস্ত হলো, সেই ঘটনাস্থলে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম।
অনেক কিছু আমার নিজের চোখে দেখা।বিশ্বাস করুন, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মি, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, স্বেচ্ছাসেবক দল—সবাই তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ছিল। কারও চোখে অবহেলা ছিল না। কেউ বসে ছিল না।
এই ছবিতে যে আর্মি ভাইটিকে আপনারা দেখছেন, তাকে আমি বারবার ছোটাছুটি করতে দেখেছি—কারো জীবন বাঁচাতে, কারো সহায়তায়, কারো কান্না থামাতে। সেই নিষ্ঠা, সেই মানবতা দেখে আমার মনে হলো—এই ছবিটা তোলা উচিত, ইতিহাসের সাক্ষী রাখতে।
একটা দুর্ঘটনা মানেই নাটক নয়!
আমরা জাতি হিসেবে ঘটনার সত্যতা জানার আগেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই। কেউ বললো, বিমান স্কুলে ফেলে দিয়েছে ইচ্ছা করে! কেউ বললো, এটা বিএনপি-আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র! কেউ বললো, ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তাই এই দুর্ঘটনা।
আর কেউ কেউ তো বলে ফেলল, পাইলট প্যারাশুট নিয়ে আগেই ঝাঁপিয়ে বাঁচে গেছে!
ভাই, আসল কথা হলো—আমরা এখন আর সত্য জানার আগ্রহী না, আমরা শুধু তথ্যবিহীন গুজব ছড়াতে ভালোবাসি।
উদ্ধার কাজের বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন
অনেকেই বলছে, পানি পাওয়া যায়নি, অথচ আমি নিজ চোখে দেখেছি পিকআপ ভর্তি পানি, ভ্যান ভর্তি পানি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা ছোটাছুটি করছে।
পানির অভাব ছিল না, বরং যারা সেগুলো নিতে পারবে—তাদেরই সংকট ছিল।
তবুও সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা চালিয়ে দিলাম: "২ লিটার পানি ৬০০ টাকা"!
একটুও যাচাই না করে। না দেখে, না শুনে, না জেনে।
উদ্ধার কাজে বাধা, আর তার পেছনের বাস্তবতা
হাজার হাজার মানুষ একসাথে ভিড় জমায়। কেউ যায় ভিডিও করতে, কেউ লাইভ দিতে, কেউ কৌতূহল নিয়ে, কেউ আবার সুযোগ নিতে।
এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়—তখন আমরা বলি: "আর্মি মানুষ মারতেছে!"
কিন্তু ভাই, আপনার বাসার সামনে যদি ৫০০০ মানুষ একসাথে দৌড়াদৌড়ি করে, আপনি তখন কী করতেন?
স্কুল কেন থাকবে? বিমান কেন ওখানে উড়বে?
এই প্রশ্নগুলো করার আগে আমাদের জানা দরকার, মাইলস্টোন কলেজ সেখানে আজ হঠাৎ গড়ে ওঠেনি। বিমানবাহিনীর ট্রেনিং এরিয়ার পাশেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল, আছে।
তাহলে এখন হঠাৎ করে এসব প্রশ্ন আসে কেন?
কারণ, আমরা ইতিহাস জানি না, জানতে চাই না, শুধু মতামত দিতে চাই।
---
আমরা আসলে কোন জাতি?
আমরা এমন একটা জাতি, যারা অসত্যের ওপর ভিত্তি করে চিৎকার করি,
যেখানে সত্যিকারের যোদ্ধারা চুপচাপ কাজ করে যায়।
আসল মানুষগুলো খবর হয় না,
গুজব ছড়ানো লোকগুলোই ভাইরাল হয়!
আমরা যে নির্লজ্জভাবে সত্যকে আড়াল করে, গুজবকে লালন করি—তা আজ প্রমাণিত।
শেষ কথা:
একটু থামুন।
একটু ভাবুন।
ঘটনার সত্যতা জানুন।
তারপর বলুন, লিখুন, বা শেয়ার করুন।
দায়িত্বশীল জাতি হয়ে উঠা আমাদের জন্য সময়ের দাবি। একটা দুর্ঘটনা যেন আরেকটা গুজবদুর্ঘটনায় পরিণত না হয়—এটা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।
Fahim's story