18/07/2025
এই ছবিটির শিরোনাম দিতে পারেননি কেউ। এমনকি, এর চিত্রগ্রাহক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো'র ফটোগ্রাফার নিজেও, ছবিটির শিরোনাম-বিষয়ক প্রশ্নে চুপ থেকেছেন চিরকাল। ছবির দু'জনের একজন─ মা, সোমায়েহ্ মেহরি, ২৯ বছর বয়সী তরুণী; অপরজন তাঁর কন্যা, ৩ বছর বয়সী─ রানা আফগানিপোর। দক্ষিণ ইরানের ব্যাম শহরে বাড়ি তাঁদের। খুব প্রিয়তম মানুষটি─ সোমায়েহ্'র স্বামী, রানা'র বাবা─ অ্যাসিড ছুঁড়ে মেরেছিলো স্ত্রী-কন্যার দেহে। চিরতরে চেহারার স্বাভাবিক রূপ হারিয়ে ফেললেন দু'জন মানুষ। আহ্!
বহু চেষ্টা শেষে, মা ও কন্যা, উভয়কেই বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হলেন চিকিৎসকেরা। সুস্থ হওয়ার পরে, এই ছবির দৃশ্যটিই ছিল তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ, হাসপাতালে। কন্যার মুখখানা দেখে, মায়ের বুকের ভিতরে কেমন ছিল ওসময়কার হৃৎপিণ্ডটির ধুকপুক? কেউই জানে না। জানে না, কন্যার ছোট্ট অন্তরটুকু ফেটে যাচ্ছিলো কিনা চিরচেনা মায়ের ওই রূপটুকু চোখে পড়তেই! ফটোগ্রাফার, ক্যামেরার আই-হোলে রেখেছিলেন তাঁর ঝাপসা চোখ। আশপাশ কাঁদছিলো নিশ্চুপে। ওসময়েই, পরস্পরের দিকে, একছুটে দৌড়ে গিয়েছিলেন কন্যা-জননী। বুকে-বুক মেখে, এই চুমুটি রেখেছিলেন তাঁরা, পৃথিবীর বুকে জমা। এই দৃশ্যের কী নাম দেবেন আপনি?
তবুও মানুষ বেঁচে থাকবে, বিলিয়ন বছর আরও বাঁচবে মানুষ। পৃথিবী আর কতো বিলিয়ন বছর পুরনো হলে পর, একজন পিতা তাঁর কন্যাকে বুকে লুকিয়ে রেখে আশ্বাসে বলবেন─ "আছি তো মা! আছি তো!" একজন স্ত্রী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকবেন না তাঁর স্বামীর সম্মুখে আর কতো বিলিয়ন বছর বয়স হলে মানবজাতির?
একজন মা তাঁর শিশুকন্যাকে ঘুমের ভিতরেই জড়িয়ে ধরে আছেন, অ্যাসিডে দগ্ধ। "ভয় লাগে মা?" পৃথিবী রে!
এরকম আরেকটি হৃদয়বিদারক দৃশ্য না-দেখুক পৃথিবী। মানুষ মানুষকে ভালোবাসুক। রানা, তুমি ভালো থেকো সোমায়েহ্'র বুকে। কী আসে যায় রূপে? এমন আর একটি চুমু মানুষ দিতে পারেনি পরস্পরকে মানবেতিহাসে। বড়ো মমতার চুমু। বড়ো দুঃখের চুমু।
Salah Uddin Ahmed Jewel
#যে_দৃশ্যের_নাম_হয়_না