04/08/2025
বনি ইসরাইলে একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন। তার এক পুত্র ও একটি গরু বাছুর ছিলো। একদিন তিনি গরুর বাছুরটি জঙ্গলে নিয়ে যান এবং আল্লাহর দরবারে এই মর্মে প্রার্থনা করেন- ‘হে আল্লাহ! এ বাছুরটি তোমার কাছে সোপর্দ করছি। যাতে আমার ছেলে বড় হলে এটি তার কাজে আসে’।
বাছুরটি জঙ্গলে ছেড়ে আসার কিছুদিনের মধ্যে লোকটির মৃত্যু ঘটে এবং বাছুরটি জঙ্গলে যৌবনে পৌঁছে।
মায়ের অত্যন্ত ভক্ত, অনুগত ও খেদমতগুজার ছেলেটিও বড় হয় এবং যৌবনে পৌঁছে। তার অবস্থা ছিল এই যে, রাতের অংশকে সে তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ তার মায়ের সেবাতে কাটাতো, এক ভাগ আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতো এবং এক ভাগ সে নিজের আরামে ব্যয় করতো।
ছেলেটির মা একদিন তাকে বললেন- ‘তোমার পিতা উত্তরাধিকার হিসেবে একটি গরুর বাছুর রেখে যান এবং ওটা আল্লাহর নামে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তুমি সেখানে যাও এবং আল্লাহ্র নিকট দোয়া করো যেনো তিনি ঐ বাছুরকে তোমার কাছে সমর্পণ করেন’।
ছেলেটি তার মায়ের কথা মতো জঙ্গলে গিয়ে বাছুরটিকে দেখতে পায়। সে গাভীকে ডাকতেই গাভী দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায়।
আল্লাহর নির্দেশে গাভী বাকশক্তির অধিকারী হয়ে বলে ওঠে- ‘তুমি আমার পিঠে সোয়ার হয়ে যাও, এতে তোমার আরাম হবে, যাত্রা সহজ হবে’।
ছেলে বললো- ‘আমি এরূপ করবো না। কেননা, আমার মা আমাকে সোয়ার হওয়ার জন্য বলেননি’।
গাভী বলল- ‘তুমি আমার ওপর সোয়ার হলে আমি কিছুতেই তোমার নিয়ন্ত্রণে আসতাম না। আর তোমার মায়ের সেবা-তাঁবেদারির কারণে তোমার মধ্যে এমন শানমর্যাদার সৃষ্টি হয়েছে যে, তুমি যদি পর্বতকে নির্দেশ করো তোমার সাথে আসতে, তাহলে সে তাই করবে’।
ছেলেটি যখন গাভীটি নিয়ে তার মায়ের কাছে আসে, তখন তার মা বললেন- ‘বেটা, তুমি দরিদ্র। তোমার কাছে টাকা-পয়সা ও অর্থ নেই। সারারাত জাগ্রত থাকা এবং দিনে কাঠ সংগ্রহ করা তোমার পক্ষে খুব কষ্টকর কাজ। তাই তুমি এ গাভী বাজারে নিয়ে তিন দিনারে বিক্রি করে দাও। তবে বিক্রি করার আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে’।
ছেলে গাভীটি বাজারে নিয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন।
ফেরেশতা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘গাভীটি কত দামে বিক্রি করবে’?
জবাবে সে বললো তিন দিনার দামে বিক্রি করবে।
ফেরেশতা বললেন- ‘আমি এর মূল্য তোমাকে ছয় দিনার দেব। শর্ত হলো, তোমার মায়ের সাথে পরামর্শ করতে পারবে না’।
ছেলে জবাবে বলল- ‘তুমি যদি গাভীর শরীরের লোম পরিমাণও মূল্য দিতে চাও আমি তা গ্রহণ করবো না, যতক্ষণ না আমার মায়ের সাথে পরামর্শ করবো’।
অতঃপর ছেলে তার মায়ের কাছে গিয়ে পরামর্শ করলে মা তাকে অনুমতি দিলেন।
ছেলে আবার বাজারে যায়। ফেরেশতারা এবার বারো দিনার দিতে চান। ছেলেটি গৃহে প্রত্যাবর্তন করে এবং তার মাকে সব বর্ণনা করে।
ছেলের বিবরণ শুনে মা বললেন- ‘বেটা! সম্ভবত লোকটি মানুষের আকারে কোনো ফেরেশতা হবেন। তিনি তোমার পরীক্ষা করতে চাইছেন। এবার যদি তিনি তোমার কাছে আসেন, তাকে জিজ্ঞাসা করবে যে, আমাদের গাভীটি আমাদের বিক্রি করতে দেবে, নাকি দেবে না’।
সুতরাং ছেলে অনুরূপ বলে। এবার ফেরেশতা ছেলেকে বললেন- ‘তোমার মাকে গিয়ে বলে দাও, গাভীটি এখন বেঁধে রাখতে এবং বিক্রি করার ইচ্ছা হতে আপাতত বিরত থাকতে। কেননা, কিছু লোক আসবে যারা এই গাভীর লোম (কেশ) পরিমাণ সোনা দেবেন। তাদের কাছে বিক্রি করবে’।
তারা ফেরেশতার পরামর্শ অনুযায়ী গাভীটি বেঁধে রাখে। এরপর একদিন সেই দামে বিক্রি করে।
মায়ের প্রতি ছেলের আনুগত্যের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে কত বড় পুরস্কার দিয়েছেন। আমরাও যদি আমাদের পিতা মাতার প্রতি অনুগত হই তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকেও এভাবে পুরস্কৃত করবেন।
আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের মাতা পিতার সেবা করা তাওফিক দিন, আমীন।