17/10/2025
জুলাই সনদ (বাংলাদেশ) নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা 👇
১. প্রেক্ষাপট ও কারণ:
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষার্থী ও জনতা অসদ্ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সামাজিক-রাজনৈতিক অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনে নামেন।
(ক) এই আন্দোলন দ্রুত রাষ্ট্রীয় গতিবিধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে একটি নতুন চাপ সৃষ্টি করে।
(খ) আন্দোলনকে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে, এবং ভবিষ্যতের একটি “নতুন চুক্তি” গড়তে “জুলাই সনদ / জুলাই ঘোষণা / July Declaration / July Charter” প্রস্তাব করা হয়।
(গ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার প্রস্তাব প্রস্তুত করে।
২. উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
“জুলাই সনদ” মূলত একটি রাজনৈতিক সংস্কার ও সমঝোতার দলিল, যার লক্ষ্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে রাজনীতিতে নতুন মোড় নেওয়া:
(ক) জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্র ও সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
(খ) রাষ্ট্রীয় কাঠামো, শাসনব্যবস্থা ও আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় মৌলিক সংস্কার আনা — যেমন বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা ইত্যাদি।
(গ) সংবিধান সংশোধন, নতুন আইন প্রণয়ন বা বিদ্যমান আইন-রূপ পরিবর্তন করে সনদের ধারা বাস্তবায়ন।
(ঘ) আন্দোলনে নিহত ও আহতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, ক্ষতিপূরণ ও সুষ্ঠু বিচার।
(ঙ) রাজনীতিতে ঐক্য, সংলাপ ও সহমত ভিত্তিক পরিবেশ গঠন করা।
৩. গঠন ও প্রক্রিয়া
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনায় জড়ায়।
(ক) চূড়ান্ত সনদে মোট ৮৪ দফা প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
(খ) তার মধ্যে ৪৭টি বিষয় “সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে” এবং ৩৭টি বিষয় “আইন/অধ্যাদেশ/বিধি-প্রবিধি সংশোধন দ্বারা” বাস্তবায়ন সম্ভব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
(ঘ) সব রাজনৈতিক দল ও জোটকে এই সনদে স্বাক্ষর ও সমর্থন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
(ঙ) সনদে সাত দফা অঙ্গীকারনামা (Commitments) রাখা হয়েছে যা রাজনৈতিক দল ও সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য।
৪. গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও প্রতিশ্রুতি
কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি ও ধারায় রয়েছে:
সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো পক্ষ আদালতে প্রশ্ন তুলবে না।
(ক) গুম, হত্যা, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের মর্যাদা ও পরিবারকে সহায়তা।
(খ) সংবিধান, নির্বাচন, বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য আইন, বিধি বা নতুন আইন প্রণয়ন।
(গ) অবিলম্বে রূপায়ণযোগ্য ধারা দ্রুত কার্যকর করা হবে, কোনও বিলম্ব হবে না।
৫. চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
“জুলাই সনদ”–এর কার্যকর বাস্তবায়নের পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
বিচার ও বাস্তবায়ন গ্রহণযোগ্যতা:
(ক) সনদে প্রতিশ্রুত বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন কতটা দ্রুত ও কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট সরকারের ইচ্ছাশক্তি ও রাজনৈতিক বিরোধ শক্তির সহযোগিতার ওপর।
— বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে সনদ বাস্তবায়ন বিশ্বাসযোগ্য হবে।
(খ) বিরোধ ও নোট অব ডিসেন্ট (Notion of Dissent):
কিছু রাজনৈতিক দল কিছু ধারা নিয়ে “নোট অব ডিসেন্ট” বা আপত্তি তুলেছে — ফলে সনদ সব জায়গায় সর্বসম্মত নয়।
(গ) কানুনগত ও সাংবিধানিক বাধা:
অনেক প্রস্তাব সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষ — অর্থাৎ ইতিমধ্যে গৃহীত সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া ছাড়া তা প্রয়োগ করা যাবে না।
(ঘ) কেন্দ্র ও স্থানীয় স্তরের সমন্বয়:
কেন্দ্রীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হলেও জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন স্তরে বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জটিল হতে পারে।
(ঙ) জনমত ও বিশ্বাস:
সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন এবং তাদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে; অন্যথা, সনদ শুধু লিখিত প্রতিশ্রুতি হিসেবে থেকে যেতে পারে।
৬. সারাংশ
“জুলাই সনদ ২০২৪ / জুলাই জাতীয় সনদ (বা জুলাই ঘোষণাপত্র / July Declaration)” একটি রাজনৈতিক সংস্কার ও ঐকমত্য ভিত্তিক দলিল, যা ২০২৪ সালের গণআন্দোলনকে রাষ্ট্র ও সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে চায়, এবং ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক, জবাবদিহি ও নিষ্ঠার প্রতি ভিত্তি তৈরি করার লক্ষ্য রাখে। যদিও ধারা ও প্রতিশ্রুতি সমৃদ্ধ, তার বাস্তবায়ন ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।