14/03/2025
সুদখোর: ইসলাম এবং বাস্তবতা
সুদ খোরের সমস্যা সমাজে এক গভীর এবং বিপজ্জনক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। সুদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণ, দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পৃথিবীজুড়ে যেখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে সুদের ব্যাপারটি এখনও একটি গুরুতর সমস্যা। ইসলাম এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং একে একটি বড় অন্যায় হিসেবে গণ্য করেছে।
সুদ কী?
সুদ হলো ঋণের ওপর নির্দিষ্ট হার বা সুদের মাধ্যমে অর্থ লাভ করা। সহজভাবে বলা যায়, যখন কেউ কোনো ঋণ দেয় এবং সেই ঋণের ওপর তার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা মুনাফা দাবি করে, তা হলো সুদ। সুদ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক দিক, কারণ এটি ঋণগ্রহীতাকে আর্থিকভাবে শোষিত করে। ঋণগ্রহীতা তার ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করলে সেই ঋণের ওপর সুদ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা পরিশোধ করা তার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে সুদের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিকে শোষণ করতে থাকে।
ইসলামে সুদ:
ইসলামে সুদ হারাম (নিষিদ্ধ)। কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী শরিয়াহ এর বিপক্ষে সুদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদগ্রহণকারী এবং সুদদাতাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা আল-বাকারা (২: ২৭৫-২৭৯) এ বলা হয়েছে:
"যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) দাঁড়িয়ে থাকবে, যেমনটি দাঁড়িয়ে থাকে শয়তান যার মাধ্যমে তাকে প্রভাবিত করেছে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, বেচাকেনা তো সুদের মতো। অথচ আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম।"
ইসলামে সুদখোরের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুদগ্রহণকারী ব্যক্তি যদি তার অবস্থার পরিবর্তন না করে, তবে তাকে আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদের ক্ষতিকর প্রভাব:
১. অর্থনৈতিক শোষণ: সুদ ব্যবস্থায়, ঋণগ্রহীতা যদি তার ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তবে তাকে আরও বেশি পরিমাণ সুদ দিতে হয়। এর ফলে তার ওপর আর্থিক চাপ আরও বেড়ে যায়। এভাবে, সুদ তাকে বিপর্যস্ত করে এবং সে কখনও নিজের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয় না। ফলস্বরূপ, ধনী আরও ধনী হয় এবং গরীব আরও গরীব হয়।
২. সামাজিক অস্থিরতা: সুদের কারণে একজন ব্যক্তির জন্য নিজের ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে সে সামাজিক অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারে। অনেক সময় ঋণগ্রহীতা আত্মহত্যা বা বিপথগামী হয়ে পড়ে। সমাজে এর ফলে হতাশা, অপরাধ এবং অস্থিরতা বাড়ে।
৩. বিশ্বস্ততার অভাব: সুদের মাধ্যমে একে অপরের বিশ্বাসের ওপর আঘাত আসে। যখন সুদ খোর অর্থের মাধ্যমে অন্যকে শোষণ করে, তখন সমাজে একে অপরের প্রতি আস্থা কমে যায়। এর ফলে সামাজিক সম্পর্কগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানুষের মধ্যে সম্মান ও বিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি হয়।
৪. অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি: সুদের কারণে আর্থিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। সুদ গ্রহণকারী আর্থিকভাবে শক্তিশালী থাকে, কিন্তু ঋণগ্রহীতা ক্রমেই দুর্বল হয়। এতে করে ধনী আরও ধনী হয় এবং গরীব আরও গরীব হয়ে যায়, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
ইসলামের বিকল্প:
ইসলাম সুদের পরিবর্তে ব্যবসা, বাণিজ্য এবং মুনাফা অর্জনের জন্য হালাল উপায় অবলম্বন করতে উৎসাহিত করে। ইসলামে ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে যেখানে সুদ মুক্ত লেনদেন করা হয়। ইসলাম মুনাফা লাভের জন্য যে সব উপায় গ্রহণ করার কথা বলে, তা হলো ব্যবসা, পণ্য বিক্রয়, সেবা প্রদান, অংশীদারি ইত্যাদি।
ইসলামি অর্থনীতি:
ইসলামে অর্থনীতির ভিত্তি হল ন্যায় এবং সুষম বিতরণ। এখানে সম্পদ নিপুণভাবে সমাজে বণ্টিত হয়। যেহেতু ইসলাম সুদকে নিষিদ্ধ করেছে, তাই ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের সুদ না পাওয়া যায়। এতে বিনিয়োগকারী এবং ঋণগ্রহীতা উভয়েই লাভবান হয়। এভাবে ইসলামী অর্থনীতি একটি সুস্থ, ন্যায্য এবং সুদমুক্ত ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
উপসংহার:
সুদ সমাজে এক অশান্তি ও শোষণ সৃষ্টি করে। ইসলামের দৃষ্টিতে সুদখোরদের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর, কারণ এটি সমাজের শৃঙ্খলাবদ্ধতা, ন্যায়বিচার এবং শান্তির জন্য বিপজ্জনক। ইসলামে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ন্যায় এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের উপর কোনো ধরনের শোষণ না হয়। সুদের পরিবর্তে ইসলামী অর্থনীতি ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য বৈধ ও ন্যায্য পদ্ধতি তুলে ধরে যা সবার জন্য উপকারী। সুদ ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে একটি সুস্থ, শান্তিপূর্ণ এবং ন্যায্য সমাজ গঠন সম্ভব, যেখানে প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা হবে।
1.
2.
3.
4.
5.
6.
7.
8.
9.
10.
11.
12.
13.
14.
15.
16.
17.
18.
19.
20.
21.
22.
23.
24.
25.
26.
27.
28.
29.
30.
31.
32.
33.
34.
35.
36.
37.
38.
39.
40.
41.
42.
43.
44.
45.
46.
47.
48.
49.
50.
51.
52.
53.
54.
55.
56.
57.
58.
59.
60.
61.
62.
63.
64.
65.
66.
67.
68.
69.
70.
71.
72.
73.
74.
75.
76.
77.
78.
79.
80.
81.
82.
83.
84.
85.
86.
87.
88.
89.
90.
91.
92.
93.
94.
95.
96.
97.
98.
99.
100.