
03/10/2025
১. অর্জুনের দ্বিধা
*ভগবান বলছেন "বুদ্ধি কর্ম অপেক্ষা শ্রেয়" → মানে কর্মের উপরে জ্ঞান/বিবেক/বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ।
*আবার যুদ্ধ করতে বলছেন, যা হিংসাত্মক কর্ম।
*তাই অর্জুন দ্বিধায় → “যদি জ্ঞান বড় হয়, তাহলে শুধু জ্ঞান চর্চা (সন্ন্যাস) করাই কর্তব্য। যুদ্ধের মতো কর্ম কেন করতে হবে?”
২. অর্জুনের প্রশ্ন
*সংসারে থেকে কর্ম করব নাকি সব ছেড়ে সন্ন্যাস নেব?
*তিনি একটিই পথ চান (স্পষ্ট সিদ্ধান্ত)।
৩. শ্রীকৃষ্ণের উত্তর/গীতার শিক্ষা
*জ্ঞান (সংখ্য/জ্ঞানযোগ) এবং কর্ম (কর্মযোগ)—এ দুটো আলাদা পথ মনে হলেও গীতা বলে এরা একই লক্ষ্যে নিয়ে যায়।
*জ্ঞান ও কর্ম কখনো একে অপরের বিরোধী নয়, বরং পরিপূরক।
*“কর্ম ত্যাগ” মানে বাহ্যিক কর্ম ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং কামনা-বাসনা বর্জন করে কর্ম করা।
*প্রকৃত সন্ন্যাস মানে সংসার ছেড়ে পালানো নয়, বরং সংসারে থেকে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা।
৪. পরবর্তী দার্শনিক প্রভাব
#পরে শঙ্করাচার্য মায়াবাদ প্রচার করেন → সংসার মিথ্যা, তাই ত্যাগই পরম পথ।
#অধিকাংশ গীতা ভাষ্যকার শঙ্করের এই দৃষ্টিভঙ্গী অনুসরণ করেছেন।
★কি, কেন?
ক) কি বলা হয়েছে?
কর্ম ও জ্ঞানকে একসাথে নিয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কর্ম করাই গীতার মূল শিক্ষা।
খ) কেন?
কারণ শুধু কর্ম করলে কামনার ফাঁদে পড়া হয়, আর শুধু জ্ঞান করলে বাস্তব জীবনে বিচ্ছিন্নতা আসে।
দুটো মিলেই ব্রহ্মনিষ্ঠা/স্থিতপ্রজ্ঞা/মোক্ষলাভ হয়।
⚠️লক্ষণীয় পয়েন্ট⚠️
১. কর্ম ত্যাগ নয়, কামনা-বাসনা ত্যাগই আসল সন্ন্যাস।
২. সংসার ছেড়ে পালানো গীতার শিক্ষা নয়, বরং সংসারে থেকে ঈশ্বরনিষ্ঠ হয়ে কাজ করা।
৩. জ্ঞান ও কর্ম বিরোধী নয়, বরং পরস্পরের পরিপূরক।
৪. যে কোনো পথ (জ্ঞান বা কর্ম) দিয়ে শুরু করা যায়, কিন্তু শেষ লক্ষ্য এক—ব্রাহ্মীস্থিতি/মোক্ষ।
৫. গীতা কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তিকে একত্রিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ যোগের শিক্ষা দিয়েছে।
🌼সারকথা⬇️
অর্জুন ভেবেছিলেন—“জ্ঞানই যদি শ্রেষ্ঠ হয়, তবে কর্ম ছাড়ি, সন্ন্যাস নিই।”
কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ শিখালেন—
👉 কর্ম ছেড়ে পালানো নয়, বরং কামনা ছাড়া কর্ম করা = প্রকৃত যোগ।
👉 জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি—এই তিনকে মিলিয়ে জীবন যাপন করতে হবে।
👉 সংসারে থেকেও ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে কাজ করাই সত্য ত্যাগ ও সন্ন্যাস।
👉কর্ম ত্যাগ নয়, কামনা ত্যাগই আসল সন্ন্যাস।
👉সংসার ছেড়ে পালানো নয়, সংসারে থেকেও ঈশ্বরনিষ্ঠভাবে কর্তব্য করা।
👉 জ্ঞান ও কর্ম বিরোধী নয় → একই লক্ষ্য পূরণের দুটি পথ।
👉 শেষে দুটো পথ একত্রিত হয়ে নিয়ে যায় ব্রহ্মনির্বাণে।
🌼সহজভাবে বললে🌼
👉কেউ কাজ করার আগে ভাবে: “এটা করলে আমি লাভবান হবো, মানুষ আমাকে প্রশংসা করবে, বা আমি এই ফল পাবো।” → এটা আসক্তি/কামনা-যুক্ত কর্ম।
👉আর কেউ ভাবে: “এটা আমার কর্তব্য, তাই করব। ফল যাই হোক, ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী হোক।” → এটাই গীতার মতে আসল সন্ন্যাস।
🗣️শ্রীকৃষ্ণের ভাষায়
“কর্ম করো, কিন্তু কর্মের ফলে আসক্ত হয়ো না।”
“কামনা–বাসনা বর্জন করে কর্তব্যকর্ম করাই প্রকৃত ত্যাগ ও সন্ন্যাস।”
🎓 উদাহরণ
1. কামনাসহ কর্ম → ছাত্র শুধু ভালো চাকরির জন্য পড়াশোনা করছে। / কেউ পড়াশোনা করে শুধু চাকরির আশায় → এটা আসক্তিসহ কর্ম।
2. নিষ্কাম কর্ম (সন্ন্যাসী মনোভাব) → ছাত্র জ্ঞান অর্জনের আনন্দে বা কর্তব্যবোধে পড়ছে, চাকরি হোক বা না হোক। / কেউ পড়াশোনা করে কর্তব্যবোধে, জ্ঞান অর্জনের আনন্দে → ফল যাই হোক ঈশ্বরের ইচ্ছা → এটাই নিষ্কাম কর্ম, আসল সন্ন্যাস।
👉 তাই আসল সন্ন্যাস = কামনা–ফলহীন কর্ম।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য🙏