28/07/2025                                                                            
                                    
                                                                            
                                            নামাজ শেষে, কিংবা রাতে একাকী বসে যখন চোখ বন্ধ করি—হঠাৎ মনে পড়ে যায় এক মানুষ, যিনি ছিলেন এই উম্মাহর নির্ভরতার প্রতীক, যিনি ছিলেন আলেমদের ছায়া, শিক্ষকদের আশ্রয়, মসজিদ-মাদ্রাসার ঢাল, সাধারণ ওলামা-মাশায়েখদের জন্য নির্ভীক এক পাহারাদার। আল্লামা হাফেজ তৈয়্যেব রহ. এখন আর আমাদের মাঝে নেই। এই সত্যটা বুকের ভেতর এমনভাবে কাঁপে, যেন পুরো জাতি এক অভিভাবক হারিয়েছে।
যখন মসজিদের ইমাম হেনস্তার শিকার হতেন, লোকেরা জিজ্ঞেস করত—"কোথায় যাব?" উত্তর হতো: তৈয়্যেব সাহেব।
যখন কোনো শিক্ষককে অন্যায়ভাবে অপদস্থ করা হতো, যখন হাফেজ, আলেম, মুত্তাকী ওস্তাদ মামলা-মোকদ্দমার ফাঁদে পড়তেন—সমাধান একটাই: হাফেজ তৈয়্যেব রহ.
যখন কোনো মাহফিল প্রশাসনের বাধায় বন্ধ হয়ে যেত, কিংবা কোনো সরকারি হস্তক্ষেপে ইসলামি কাজ থেমে যেত, তখন সবাই জানতো—এখন ফোন করতে হবে তৈয়্যেব সাহেবকে।
তিনি শুধু একজন মানুষ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি ছিলেন এক আশ্রয়, যাকে জানতাম, ধরলে সমাধান হবে ইন শা আল্লাহ।
আজকের দিনে যখন আমরা ফিরে তাকাই, তখন বুঝি—এই মহান মানুষটি ব্যক্তিগত সুবিধার পেছনে দৌড়াননি, বরং উম্মতের বৃহৎ স্বার্থকে সামনে রেখেছেন। এজন্যই তিনি সরকারের সব মহলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেন, যেন মসজিদ-মাদ্রাসার ক্ষতি না হয়, আলেমদের অপমান না হয়, উম্মতের শির উঁচু থাকে।
কিন্তু আফসোস! ৫ আগস্টের পরে, যখন পরিস্থিতি বদলে গেল, তখন সেই মানুষটিকেই অনেকে আওয়ামী লীগের ‘দালাল’ বলে গালি দিল। যারা নিজে কোনোদিন একটাও মাদ্রাসা বানাতে পারেনি, একটাও আলেমের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারেনি, তারাই শিন্নি খেয়ে, মোল্লা চিনলিনা! আজ তার নাম মুখে নিতেও দ্বিধা করে অনেকে। অথচ যে মানুষটি শত ব্যস্ততার মধ্যেও অপরিচিত এক হুজুরের জন্য থানায় ছুটে যেতেন, জেলখানায় যেতেন, সময় দিতেন, সাহস দিতেন—আজ তার শূন্যতা কাঁদায়।
আজ তাকে দালাল বলার কেউ নেই। কারণ, তিনি আর বেঁচে নেই। এখন আর তাকে কেউ অপমান করবে না, আবার কেউ তাঁর কাছে গিয়েও আর সান্ত্বনা পাবে না। এখন বুঝি, আমরা কি হারিয়েছি! এমন একজন মানুষ, যার বিকল্প এখনো আসেনি।
আল্লাহ তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। তার মত আর একজন তৈয়্যেব যদি আমাদের মাঝে থাকতো—আল্লাহ! আমাদের সমাজ, আমাদের ওলামা, আমাদের মসজিদ-মাদ্রাসা এতটা অসহায় লাগত না।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লামা হাফেজ তৈয়্যেব রহ. আপনি আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবেন।
আপনি ছিলেন মজলুম উম্মাহর ছায়া—আজ সেই ছায়া কেবলই স্মৃতি…