
01/02/2025
"প্রতিশোধের প্রেম "
✑ওবাইদুল্লাহ ✑
পর্ব:(০১)
-অজানা চোখের রহস্য _
শীতের ভোর। ঢাকার আকাশ ঘন কুয়াশায় মোড়া। "হোপ ক্লিনিক" ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে। চারপাশে রোগীদের ভিড়, ক্লিনিকের কর্মীরা একেকজন ব্যস্তভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। রিসেপশনের দিকে রোগীদের দীর্ঘ লাইন।
ডা. মিতু রহমান নিজের গাড়ি পার্ক করে ক্লিনিকের প্রবেশপথে পা রাখল। মাথায় বেঁধে রাখা সাদা ওড়না আর চোখে কালো ফ্রেমের চশমা তাকে আরও গম্ভীর এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। সাফল্যের দ্যুতি তার চোখেমুখে ঝলমল করছে। ঢাকার অন্যতম সেরা তরুণ ডাক্তার সে, বয়স মাত্র ছাব্বিশ।
ক্লিনিকের দরজা দিয়ে ঢুকেই মিতু রিসেপশনের রাহিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজ কতজন রোগী?”
রাহিমা ফাইল উল্টাতে উল্টাতে বলল, “আজ ১২ জন রোগী। তবে একজন নতুন রোগী এসেছে, একটু অন্যরকম মনে হলো।”
মিতু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “অন্যরকম মানে?”
“তার চোখের মধ্যে অদ্ভুত এক ধরনের গভীরতা। যেন এক রহস্য লুকিয়ে আছে। আর খুবই চুপচাপ। আমাকে কিছুই ভালোভাবে বলেনি।”
মিতু মাথা নাড়ল, কিন্তু কথাটা গুরুত্ব দিল না।
“সবাই তো আর নিজের কথা খুলে বলতে পারে না। যা-ই হোক, আমার ফাইলগুলো নিয়ে আসো।”
ক্লিনিকে কাজের চাপ সবসময়ই বেশি। কিন্তু আজ যেন কাজ শুরু করার আগে থেকেই মিতুর মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। রাহিমার কথাগুলো তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে পেশাদারিত্বের খাতিরে সে দ্রুত মনোযোগ দিল ফাইলগুলোর দিকে।
ঠিক তখনই চেম্বারের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে শুভ। লম্বা গড়ন, ছিপছিপে শরীর। তার মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। শুভ এক হাতে মাথা চেপে ধরে আছে। তার চোখেমুখে যেন কোনো এক চাপা যন্ত্রণা খেলা করছে।
“ডাক্তার, আমি খুব কষ্টে আছি,” বলেই চেয়ারটায় বসে পড়ে শুভ।
মিতু কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল। রোগীদের মধ্যে অনেককে সে দেখেছে, কিন্তু শুভর চোখের সেই গভীরতা—এমন কিছু আগে দেখেনি। তার চোখে এক অজানা রহস্য লুকিয়ে আছে, যা প্রথম দেখাতেই যে কারো নজর কাড়বে।
“আপনার কী সমস্যা?” মিতু পেশাদার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল।
শুভ মাথা নিচু করে বলল, “মাথা ঘুরছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভালো ঘুম হয়নি। কখনো বুক ধড়ফড় করে, কখনো এমন হয় যে যেন শরীরটাই ঠিক নেই। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
মিতু তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল। তারপর তার প্রেসার মাপল, পালস পরীক্ষা করল। শুভর রক্তচাপ কিছুটা বেশি।
“আপনার রক্তচাপ একটু বেশি। আপনি কি নিয়মিত ঘুমাচ্ছেন?”
“না, ডাক্তার। ঘুমানোর চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না। কিছু চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় ঘুরতে থাকে। আর সেই চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।” শুভর গলা ভারী হয়ে আসে।
মিতু ভ্রু কুঁচকে শুভর দিকে তাকাল।
“চিন্তা সকলেরই জীবনে থাকে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। আপনার কাজ কী?”
শুভ হেসে বলল, “আমার কাজ এমন, যা আপনাকে বললে আপনি হয়তো অবাক হবেন। তবে সে গল্প পরে হবে। আপাতত আপনার লেখা ঔষুধ আমার দরকার।”
মিতু শুভর সেই রহস্যময় উত্তর শুনে খানিকটা অস্বস্তি বোধ করল।
“ঠিক আছে, কিন্তু নিয়ম মেনে চলতে হবে। ঔষুধের পাশাপাশি আপনার রুটিন ঠিক করা জরুরি।”
শুভ মৃদু হাসল। তার হাসি যেন কেমন জানি একধরনের বিদ্রূপের আভাস দেয়।
“ডাক্তার, আমার জীবনের কিছু জিনিস বদলানো সম্ভব নয়। তবে আপনার কথা শুনব।”
এই কথায় মিতু কিছুটা বিরক্ত হলো। সে শুভর দিকে আরেকবার ভালো করে তাকাল। তার চোখের গভীরতা, কণ্ঠের ভার, আর প্রতিটি শব্দ যেন রহস্যের পরত খুলে রাখে।
শুভ বিদায় নিতে নিতে বলল,
“ডাক্তার, আপনি ভালো মনের মানুষ। আশা করি, একদিন আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবে।”
মিতু তার কথাগুলো শুনে থমকে গেল। এই রোগী সাধারণ নয়। তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি দৃষ্টি যেন কোনো না কোনো কারণে মিতুর মনে দাগ কেটে গেল।
চেম্বারে একা বসে মিতু শুভর কথাগুলো নিয়ে ভাবতে থাকে। সে বুঝতে পারছিল, এই মানুষটির জীবনে কিছু এমন ঘটনা আছে যা সাধারণ নয়। শুভ কি তাকে ইঙ্গিত করেই কথা বলছিল? নাকি তার এসব শুধু রোগীর সঙ্গে পেশাদার সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
একদিকে মিতুর পেশাদার মন বলে, “এটা একজন রোগী মাত্র। তাকে নিয়ে ভাবার দরকার নেই।” কিন্তু অন্যদিকে তার মন বলছে, “কেন যেন মনে হচ্ছে, তার সঙ্গে তোমার জীবনের কোনো না কোনো ছেদ ঘটবে।”
মিতু জানে না, এই প্রথম সাক্ষাৎ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। শুভর রহস্য, তার চোখের গভীরতা, তার কথার ধোঁয়াশা—সবকিছু যেন এক অদ্ভুত কৌতূহল তৈরি করে রাখল।
.........................
পরবর্তী পর্ব গুলো পড়তে চোখ রাখুন আমার প্রোফাইল এ।গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবাই।