06/06/2025
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিনা নোটিশে চাকরি থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে ইসলামিক স্কলার, প্রফেসর, আম্মার জাকারিয়া যা বলেছেন:
গত কয়েকদিন ধরে উখিয়া কক্সবাজারে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন দেখলাম। ১২৪০ শিক্ষককে বাজেট সংকটের কথা বলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এটার জন্য সবাই UNICEFকে দায়ী করছে। তাদের আন্দোলনে দ্বিমত করার খুব একটা সুযোগ নেই। মুটামুটি সব দাবিই ন্যায্য। তবে ভিন্ন কিছু জায়গায় আমি ব্যক্তিগতভাবে আপত্তি করছি।
আমরা আসলে পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে কতটুকু সচেতন? মিশনারি এক্টিভিজমের ব্যাপারে কতটুকু জানি?
যারা আন্দোলন করেছে তাদের ৫০% এর মত বা তার চাইতে বেশি নারী। একটা সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকার বেতনের চাকরির জন্য রাস্তায় নেমে এসেছে এই নারীরা। অথচ তারা বুঝতেই পারেনি যে, যারাই তাদের চাকরিচ্যুত করেছে তাদের উদ্দেশ্যই ছিলো নারীদের রাস্তায় নামানো। একবার তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে মানেই তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের শিকারে পরিনত হয়েছে।
'Women Empowerment' বা নারীর ক্ষমতায়ন পশ্চিমাদের দেওয়া টার্ম। এরকম আরো হাজারো টার্ম আছে যা দিয়ে পশ্চিমারা এধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন পরিচালনা করে। এটাকে বলা হয় 'Terminological War' বা পারিভাষিক যুদ্ধ। আপনাকে শুধু পরিভাষা দিয়েই তাদের অনুগত করে ফেলছে যেটা আপনি বুঝতেই পারবেন না। বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের প্রথম কাজই হলো আপনার মগজ ধোলাই করে চিন্তার কোশগুলোকে নিস্তেজ করে ফেলা। তাদের এক্টিভিজমকে এতই ভাল লাগবে যে, আপনি তার কোন নেগেটিভিটিকে ধ্বংসাত্মক হিসেবে মানতে নারাজ হবেন। আপনি বুঝতে পারবেন না যে, কেউ একজন আপনার লাগাম টেনে আছে।
আজকে যারা আন্দোলন করছে তারাই এ আগ্রাসনের শিকার। পশ্চিমা আগ্রাসনের মূল টার্গেটই হলো নারী। একজন নারীকে যখন ওয়েসটার্নাইজড করা যাবে তখন অটোমেটিক তার সংসার শেষ হয়ে যাবে। এভাবে আস্তে আস্তে গোটা মুসলিম সমাজকে ধ্বংস করে দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের মুসলিম নারীকে তার ইমান আক্বীদা নষ্ট করে দিয়ে পশ্চিমা নোংরা সংস্কৃতির চাদরে আবৃত করার জন্য পশ্চিমারা কী করেনি?
নারী স্বাধীনতার নামে মুসলিম নারীদের মগজ ধোলাই, নারীর ক্ষমতায়নের নামে নারীদের ঘর বিমুখ করে তোলা, কো-এডোকেশনের নামে অবৈধ সম্পর্ককে নর্মালাইজ করা, সম অধিকার আদায়ের জন্য পুরুষের অধীনে থেকে লাইফ লীড করতে অস্বীকৃতি জানানো, নারীদের পশ্চিমা কালচারে গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিশেষ কারিকুলাম তৈরি করা, নারীদের এসব বকোয়াস অধিকার আদায়ের জন্য অজস্র বেসরকারী সংস্থা গঠন করে সেগুলোকে পেট্রোনাইজ করা, পশ্চিমাদের সহযোগী নারীবাদীদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা ইত্যাদি ইমান ও চরিত্র বিধ্বংসী কোন কিছুই তারা বাকি রাখেনি।
কখনো কি ভেবে দেখেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামীন অঞ্চলগুলোতে সব সেক্টরের প্রজেক্ট বন্ধ হলেও নারী সচেতনতা মূলক সো কল্ড 'এওয়ারনেস', 'প্রটেকশন', 'ফ্যমিলি প্ল্যানিং' কেন্দ্রিক প্রজেক্টের জন্য ডোনেশন কেন বন্ধ হয়না? রোহিঙ্গাদের খাদ্য বাজেট কমে, শিক্ষা কার্যক্রমে যথেষ্ট রেস্ট্রিকশন থাকে, আরো কত মৌলিক চাহিদা পূরণে সংকট দেখা যায়, অথচ এসব ফালতু মিনিংলেস কাজের জন্য কখনো বাজেটের অভাব হয়না।
এগুলাই তাদের মূল কাজ। যে কাজে তাদের স্বার্থ অর্জিত হবে তারা সেখানেই খরচ করবে বেশি। বাকিগুলো শুধু লোক দেখানো।
কখনো কি ভেবে দেখেছেন, শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে BRAC এর মত একটা মিশনারি এনজিওকে অপরিপক্ক প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন থাকা সত্বেও জাতিসংঘ কেন তাদের ৫০% এরও বেশি ডোনেট করে থাকে? যেখানে কত শত এনজিও যথার্থ প্রজেক্ট প্ল্যান সাবমিট করার পরেও ডোনেশন পায়না?
কারণ হলো, তারাই ক্যাম্পে কাজ করতে পারে যারা মিশনারি এক্টিভিজম সার্ভ করে।
আমি এতক্ষণ যা বললাম তা অন্তত কক্সবাজারে ৯০% এর মত প্রতিফলিত হয়েছে। এই অঞ্চলে নারীদের নৈতিক অবক্ষয়ের হার যথেষ্ট এলার্মিং। কক্সবাজারকে এখন বেইশ্যা সিটি বলতে মানুষ দ্বিধা করেনা। বেসরকারী লোকাল ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মিশনারি এক্টিভিজমের শিকার হয়ে এ অঞ্চলের নারীদের যে নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে তাতে যে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়েছে তার অন্যতম হলো:
১. ডিভোর্সের হার বেড়ে অকল্পনীয়ভাবে পারিবারিক বিচ্ছেদ ঘটেছে।
২. নারীদের ধর্মীয় মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে গেছে।
৩. হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত ও পালিত ইসলামিক আইন ও শাসনকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।
৪. বিবাহের সময় নৈতিক অবক্ষয়ের দোহাই দিয়ে নারীদের প্রতি পুরুষের আগ্রহ কমে গেছে। এর ফলে ক্যাম্পে চাকরি করে এমন নারীকে এখন কেউ বিয়ে করতে চায়না।
৫. সর্বোপরি এ অঞ্চলের গোটা মুসলিম সমাজটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে এই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অনেকেই এখনো নিজের ইমান নিয়ে টিকে আছে, যারা আসলেই পশ্চিমা আগ্রাসন নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। এদের সংখ্যাটা খুবই কম।
যারা এখন রাস্তায় নেমে অল্প বেতনের একটা চাকরির জন্য নিজেদের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে আন্দোলন করছেন, আপনাদের উচিত ছিল নিজেরা সচেতনতার সাথে পড়াশোনা করে যে কোন একটা ডিসিপ্লিনে দক্ষতা অর্জন করে নিজেই নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা। এসব ইমান বিধ্বংসী সল্পমেয়াদী চাকরির তোয়াক্কা না করে যেখানে নিজের চরিত্র ঠিক রেখে ইমানের উপর অটল থেকে কাজ করা যায় সেখানে গিয়ে চাকরি করা। এ বিষয়টা আপনি বুঝতে পারেননি বলে আপনাকে আমি শিক্ষকতার অযোগ্য মনে করছি।