19/07/2025
কুয়েট বন্ধের পঞ্চম মাসেও শিক্ষার্থীরা দিশেহারা, অভিভাবকরা অনিশ্চয়তায়—প্রধান উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অন্যতম প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ঘটে যাওয়া এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এ বন্ধে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় সাত হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার আজ চরম হতাশা, উদ্বেগ ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে নেই কোনো উপাচার্য, নেই স্থায়ী প্রশাসনিক নেতৃত্ব। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ, গবেষণা বন্ধ, পরীক্ষা বন্ধ-সব মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেন এক প্রকার অচল অবস্থায় পতিত। এ অবস্থায় পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে তারা। অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাসিন্দা অভিভাবক মো. আবদুল্লাহ বলেন,
"আমার ছেলে কুয়েটের শিক্ষার্থী। এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ, এটা অকল্পনীয়। ও এখন সারাদিন মোবাইলে ডুবে থাকে, কোনো পড়ালেখার আগ্রহ নেই। আমরা ভয় পাচ্ছি, ছেলেটা ভবিষ্যতে পথ হারিয়ে ফেলবে।"
এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বরিশালের আরেক অভিভাবক রমজান (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন,
"আমি একজন দিনমজুর মানুষ, অনেক কষ্টে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন সে পাঁচ মাস ধরে বাড়িতে বসে আছে। ক্লাস নেই, দিকনির্দেশনা নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। আমাদের তো আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সামর্থ্য নেই!"
গাজীপুরের রুমানা (ছদ্মনাম) নামে একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
"ছোটবেলা থেকে মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখিয়েছি প্রকৌশলী হবার। কুয়েটে চান্স পাওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম জীবন বদলে যাবে। কিন্তু এখন এই পাঁচ মাসে মেয়েটা শুধু হতাশ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র যদি এই সংকটে পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে এসব মেধাবীদের ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে?"
প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন করতে পারছে না, পিএইচডি স্কলারশিপ হাতছাড়া হয়েছে, সরকারি চাকরির পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে না পারায় হতাশা চরমে পৌঁছেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বশূন্যতার কারণে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, কুয়েটের মতো একটি জাতীয় মানের প্রতিষ্ঠানে এত দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি অশনি সংকেত। এই অচলাবস্থা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের সংকট নয়—এটি একটি প্রজন্মের স্বপ্নভঙ্গ।
এই অবস্থার নিরসনে অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পুনর্গঠন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা এখন সময়ের দাবি।
জাতি আজ জানতে চায়-
আর কতদিন চুপ থাকবে প্রশাসন? আর কত মেধা পুড়ে ছাই হবে অনিশ্চয়তার অগ্নিকুণ্ডে?
এখনই সময় দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তের। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে, রাষ্ট্রকে তার প্রকৃত কারিগরদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ হয়ে থাকা মানে একটি জাতির স্বপ্ন বন্ধ হয়ে যাওয়া।