
18/12/2022
ইউরোপ-আমেরিকাতে প্রবাসী বাঙালিরা ভালো থাকে তবে স্বর্গে থাকে না। শুনতে বাৎসরিক স্যালারি অনেক বেশি মনে হলেও; প্রায় ২৫% এর মতো ট্যাক্স, হেলথ ইন্সুরেন্স এর প্রিমিয়াম, বাসা ভাড়া, বাসা/গাড়ির লোনের কিস্তি, হরেক রকমের বিল/ইন্সুরেন্স, (দুই-একটা বাচ্চা থাকলে তার ডায়াপার এবং অন্যান্য খরচ), দেশে রেগুলার কিছু টাকা পাঠানো, প্লাস বছরে একবার দেশে গেলে, বছর শেষে কানাকড়ি হাতে থাকে না। কেমনে কেমনে যে টাকা পয়সা সব হাওয়া হয়ে যায়--টেরও পাওয়া যায় না।
বিদেশে উন্নত চিকিৎসা (!) এর সুযোগ পাওয়া যায়, কিন্তু একবার ইমার্জেন্সিতে গেলে টের পাওয়া যায়, কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখে আর হেলথ ইন্সুরেন্স এর চিপা দিয়ে কপাৎ করে পকেট কাটে। বিদেশে ডাক দিলেই এম্বুলেন্স চলে আসে কিন্তু এম্বুলেন্স এর বিল দেখলে অনেক সময় সুস্থ হার্টও ফেইল করে বসতে পারে। ডেন্টিস্ট এর বিল দেখলে মনে হবে দাঁত খুলে প্যাকেট করে তাদের দান করে দেই। নতুন রোগী হিসেবে সিরিয়াল পেতে গেলে অনেক সময় ২-৩ মাস অপেক্ষা করতে হয়। আর এসব কিছুর মধ্যে সবচেয়ে কষ্টকর হচ্ছে: সিরিয়াস অপারেশন, নতুন বাচ্চাকাচ্চা হলে হেল্পিংহ্যান্ড বা আত্মীয় স্বজনের যত্ন পাওয়া যায় না।
আবার উল্টোটা আরো ভয়াবহ: দেশে ক্লোজ কেউ মারা গেলে, বিদেশে বসে চোখের পানি ফেলতে পারে কিন্তু শেষ জানাযায় অংশ গ্রহণ করতে পারে না অনেকেই।
মাঝে মধ্যে ঈদের দিনেও কাজ করতে হয়, পরীক্ষা দিতে হয় কাউকে কাউকে। বিদেশে বেশিরভাগ রাস্তা-ঘাট ভালো তবে মেগা সিটিতে ঠিকই মেগা ট্রাফিক জ্যাম হয়। জায়গামতো পেয়ে গেলে চুরি,ছিনতাই, খুন, বন্দুকের গুলিও খেয়ে ফেলতে হয়। আর অফিসিয়ালি না হলেও, টুকটাক চুপেচাপে ডিস্ক্রিমিনেশন হয়, স্কুল-কলেজে ভালো পরিমাণ বুলিংয়ের শিকার হয় কেউ কেউ।
সব কথার শেষ কথা-- দুনিয়াতে স্বর্গ বলতে কিছু নাই। বরং সব কিছুই আপেক্ষিক। অন্যের চোখে তুমি সুখী, সফল আর ধনী হতে পারো। নিজের ভিতরে ভিতরে কি অবস্থা, সেটা তুমিই জানো। তাছাড়া সুখ-শান্তি-তৃপ্তি-ভালো থাকা সব মনের ভিতরে, কোথায় আছো; কি করছো, কি টাইটেল পাইছো সেটার ভিতরে না।