Paranormal Story

Paranormal Story পড়ুন বাংলা ভাষায় আপনার মনের মতো ভৌতিক গল্প প্যারানরমাল স্টোরি পেইজে আপনাদের স্বাগতম।
আপনাদের ভৌতিক ও রহস্যময় বিষয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্যই আমাদের পেইজ। ❤️

30/06/2025

বেশকিছুদিন ধরে নতুন বাসাটার নিচের রুম থেকে কি বীভিৎস একটা কান্নার আওয়াজ আসছে।শুধু আমি নই আমরা যে তিনজন একসাথে আছি সবাই মাঝে মধ্যে এই আওয়াজ টা শুনি।যখনি একসাথে আলো নিয়ে দেখতে যায় কিছুই দেখতে পাই না।সবাই কে বুঝাতে চেষ্টা করি এইটা আমাদের মনের ভুল হয়ত।আমার অশরীরী, ভূত,প্রেআত্মা,এগুলোর ব্যাপারে কোন বিশ্বাস ই নেই।এগুলো হয় আমাদের মনের কল্পনা থেকে,,,,,।

তাই খুব বেশী একটা গুরুত্ব দিই নি।
ওও,,,আমাদের ব্যাপারে তো বলাই হয়নি।আমি- দীপ্ত ,আর আমার দুইজন রুমমেট একটা ব্যাচেলর বাসায় থাকতাম।তিনজনই অনেকটা সমবয়সী, তাই সবসময় অনেক মজা করতাম বাসায়।এমনি চলছিলো দিনকাল।হঠাৎ ই জমিদার কাছ থেকে শুনতে পাই যে আমাদের বাসাটা ছেড়ে দিতে হবে,উনি সম্ভবত নতুন বিল্ডিং বানাবেন।তাই অনুরোধ করলেন বাসাটা ১ মাসের মধ্যে ছাড়তে হবে।

যদিও বাসাটায় খুবই ভাল ছিলো, তারপর ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম।বেশ কিছুদিন ঘুরাঘুরির পর এই বাসাটা নিলাম। অনেক সুন্দর একটা বাসা।দোতলা বাড়ি।নিচের রুমটা খালি,আমরা দোতলায় বাসাটা নিয়েছিলাম।নিচের রুমটা সবসময় বন্ধ থাকতো। বাসার সামনে ছোট একটা উঠানের মতো,আর চারপাশে সব গাছপালা।একটা বড়ো বেলগাছের ঢাল আমাদের বেলকনি পর্যন্ত ছিলো।শো শো বাতাস,আর রজনীগন্ধা র সুভাস মুগ্ধ করে দিতো।পুরো বাড়িটি খুব নিজর্ন থাকতো,যেহেতু আমরা তিনজন বাদে বাকী কেউ ছিলো না।আগে নাকি বেশ কয়েকটি পরিবার এখানে থাকতো, এখন চলে গেছে কিছু সমস্যার কথা বলে।যে কোন পরিবার আসলে এখানে বেশী দিন থাকতো না।
তাই জমিদার ব্যাচলর ভাড়া দিচ্ছেন।ঝড়, তুফান গেলে হয়ত ব্যাচেলর দের উপর দিয়ে যাবে।

সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।তেমন কোন সমস্যা দেখিনি বাসাটা নেওয়ার পর।আমাদের সাথে ১ ম সমস্যাটা শুরু হয় ৩ য় দিন থেকে।আমরা তিনজনই ভার্সিটি তে পড়তাম আর তিন জনই টিউশনি করিয়ে বাসায় আসতে বেশ দেরি হতো।ওই দিন অবশ্য আমি ভার্সিটি যায় নি।তাই বিকেলের আগে আমি বাসা থেকে বের হলাম টিউশনি করার জন্য।১ ম সমস্যাটা ওইখানেই সৃষ্টি হয়।একজন খুব বয়ষ্ক মহিলা গেইটের সমনে দাড়িয়ে আছে,,,,,কাপড় গুলো খুব ময়লা।চেহারা টা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না একটা লম্বা ঘোমটা দিয়ে ঢাকা।মনে হলো হয়ত ভিক্ষা চাইছেন।পকেট থেকে ১০ টাকার একটি নোট দিলাম।উনি ওইটা আমার দিকে ছুড়ে মারলেন।
আর একটা কথা বলে হাঁটা শুরু করলেন।
- এইখান থেকে চলে যা,মরবি সব মরবি,এখানে কেনো আসলি,তাড়াতাড়ি চলে যা,
বেশ কয়েকবার বলে হাঁটাশুরু করলো,আমি আর পিছু নিলাম না।পাগল কিংবা রাস্তার এই সব মানুষের কথাবার্তা কিছুটা এবনরমাল এই টাইপের হয়।
চলে গেলাম টিউশনিতে।আসতে আসতে রাত প্রায় ৯ টা বেজে গেলো।

বাসার গেইটেই এসে কিছুটা অবাক হলাম,আমি যাওয়ার সময় বাইরের লাইট টা জ্বালিয়ে গিয়েছিলাম।ওইটা ভেঙে নিচে পড়ে আছে।
ইদানিং কিছু কিছু স্থানীয় ছেলেরা খুব বেপরোয়া হয়ে গেছে।নিশ্চয় ওরা ভেঙে দিয়ে গেছে।উফ এমনিতেই জমিদার বলছিলো সারারাত আলোটা জ্বালিয়ে রাখতে।তর উপর লাইটাই ভেঙে ফেললো।ভাবতে ভাবতেই মোবাইল আলো জ্বালিয়ে ঢুকা শুরু করলাম।

দোতলায় আলো জ্বলছে না।তারমানে এখনো কেউ আসে নি।যাক রান্নাটা আজকে আমাকেই করতে হবে।

নিচের তলায় কাছাকাছি এসে বুকটা ধুপ করে উঠলো,

এই বুড়ি তোকে এখানে ঢুকতে দিলো কে??
আর এখানে তালা মারা ছিলো,কিভাবে খুললি??
পুরো ঘরের সব দরজা জানালা খুলে রাখলি,গালিগালাজ করছিলাম।কারন আমি একটা জিনিসকে খুব ভয় পাই,,,,
পাগল।

বাতাসে সব দরজা জানালা গুলো হালকা হালকা দুলছে।আলো জ্বালিয়ে ধাক্কা দিয়ে পাগল টাকে বাহিরে দিয়ে আসলাম।কি আবোল তাবোল কথা বলেই যাচ্ছে।

- এই,ছাড়, এইটা আমার ঘর।আমি মেরে ফেলবো।আমি বলছি,তোরা এখান থেকে চলে যা,যা
ছাড় আমায়।

আমি- গেইটের ভিতরে আরেকবার দেখলে, খবর আছে,বলে দিলাম।

ফিরে এসে সব বন্ধ করে আমাদের রুমটাতে চলে আসলাম।কিছুটা ঘেমে গিয়েছিলাম।এত কষ্ট করে এসে এগুলার জ্বালায় হাফিয়ে উঠলাম।

খুব তাড়াহুড়া করে বাথরুমে ডুকলাম,যাতে রান্নাটা করে ফেলতে পারি।কিন্তু আসল লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে তখনি,,,,,,,

পানির ট্যাপ ছাড়তেই পানিগুলো লাল রঙের।পুরো রক্তের মতো।আগের বাসাটার পানিতে আয়রন ছিলো,পানি কিছুটা লালচে ছিলো তবে এই রকম না।জিনিসটা খুব বিচলিত করে তুলেছিলো।না বেশ কিছু সময় পর দেখছি পানি আগের মত স্বাভাবিক।বিষয়টা আমার কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলো।বাথরুম থেকে বের হয়ে রুমে চলে আসলাম।সারাদিনটািই আজকে অদ্ভুদ কিছু ঘটনা ঘটছে।যাই হোক একটু পরেই সিড়ি দিয়ে কেউ যেনো উঠার শব্দ পাচ্ছি। বের হওয়ার আগে,,,,,,, কয়েকবার ডাকলাম।
- কে??
দরজায় কে??
কিরে কে??

---- আমি।

- আমি কে??

((আর কোন শব্দ হচ্ছে না,আমার ঠাকুরমা বলতেন কেউ যদি একবার ডাকে তাহলে নাকি দরজা না খুলতে,অশরীরা নাকি একবার ডাকার পর আর কাউকে ডাকে না। ওই কথাটা তখনি মনে পরে গেলো।আর দরজার দিকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না))

আবার দরজায়,,,,,,, বাড়ি,,,,,
(( দৌড়ে গিয়ে খাটের নিচ থেকে লোহার রড টা নিয়ে দরজাটা খুললাম))

কিরে- দীপ্ত?? রড হাতে নিয়ে দরজা খুলতে হয়??

- না দোস্ত, প্রথমে, আমি! বলে আওয়াজ টা কি তুই দিছিলি??

- কোন আওয়াজ?? কখন??

- একটু আগে।

- আরে আমি এখন আসলাম,,,,,,,,,

- তাহলে

- কিরে,কোন সমস্যা হয়েছে??

- না দোস্ত।
(( আসলে আজকে বিকেল থেকে আমার সাথে কিছু একটা হচ্ছে দোস্ত, ঘটনাটা খুলে বললাম,,,,,মিঠু আর সৌরভ কে।দুইজনই অট্ট হাসিতে ফেটে পরে।))
ওইরাতে তেমন কিছুই আর হয়নি,,,,,,,,,,
ভয়াবহ দিনটা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো এর পরদিনের জন্য।
সেদিন ছিলো,,,,,,,,,,,,,,,,,,
শুক্রবার!!!!!!

চলবে।

আত্মা
#পর্ব_০১
লেখা_টগর।

30/06/2025

#দ্যা_অ্যানিমেল
্ব_একসাথে
#লেখক_নাঈম

#পর্ব_০১_০২
https://web.facebook.com/share/p/16XBhzVidU/

#পর্ব_৩_০৪
https://web.facebook.com/share/p/1CT18vb1nc/

#পর্ব_৫_৬_০৭
https://web.facebook.com/share/p/15oRbmaWvC/

#পর্ব_৮_৯_১০
https://web.facebook.com/share/p/16fqbMa1n1/

#পর্ব_১১_১২_ও_শেষ_পার্ট
https://web.facebook.com/share/p/15sojB8Vw4/

30/06/2025

দি অ্যানিমেল
#পর্ব_১১_১২_ও_শেষ_পার্ট

ইতোমধ্যে প্রাণীগুলো দরজার কাছে চলে এসেছে। ভারী লোহার দরজাটা শক্ত করাঘাতে বারবার কেঁপে উঠছে। সেটা আর কতক্ষণ টিকে আছে বলা মুশকিল। মনিটরে দেখা যাচ্ছে, আরো অসংখ্য প্রাণী লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে আসছে এদিকে। একটু পর সবকয়টা মিলে একসঙ্গে দরজায় আঘাত করবে। চোখের সামনে নিশ্চিত বিপদ দেখে ক্যাপ্টেন আসিফের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে অফিসার হাবিব, "স্যার, যা অবস্থা দেখছি, পুরো একটা ব্যাটালিয়ন নিয়ে আসলেও ওদের থামানো সম্ভব হবে না। তাহলে কি আমরা এখানেই হার মেনে নেব?"

হাবিবের কণ্ঠস্বরে কাঁপন টের পেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন ক্যাপ্টেন আসিফ, "তোমার কি ভয় লাগছে হাবিব?"

ক্যাপ্টেন মারুফ একটা অত্যাধুনিক অস্ত্র হাবিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, "ধরো, এতদিন ট্রেনিং নিয়েছ। এখন সেটা প্রয়োগ করার সময় এসেছে।"

"স্যার!" বলে অস্ত্রটা হাতে তুলে নেয় অফিসার হাবিব। তার হাত কাঁপছে দেখে ক্যাপ্টেন আসিফ প্রশ্ন করেন, "তুমি কি ভয় পাচ্ছো হাবিব?"

হাবিব পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, "নো স্যার। কয়েক বছর আগে মৃত্যুকে জীবনসঙ্গী করে আর্মিতে জয়েন করেছিলাম। এরপর আর কোনোদিন মৃত্যুভয় আমাকে ছুঁতে পারেনি।" কথা শেষ হলে ঢোক গিলল হাবিব। কাঁপা হাতে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে অত্যাধুনিক রাইফেলটা দু'হাতে ধরে কাঁধের সাথে তাক করে রাখল। এতক্ষণে দরজাটা অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় প্রাণীগুলো ভেতরে চলে আসতে পারে। এ-নিয়ে হাবিবের ভয় নেই। নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের তরে নিজেকে সপে দিয়েছিল সে। এখন তার উপর কত দায়িত্ব! কত কত মানুষ শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে তার মতো আর্মি অফিসারের জন্য! পুরো দেশটাকেই সে নিরাপত্তা দিচ্ছে। 'রিয়েল লাইফ হিরো' বলতে সাধারণত তার মতো মানুষকেই তো বোঝায়! এসব ভাবতে গিয়েই হাবিবের রক্ত গরম হয়ে যায়। নিজ দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্বশীলতা একসাথে উথলে উপচে পড়তে শুরু করে।

জীবনের পরোয়া হাবিব কখনোই করে না। নিজের জন্য তার ভয় নেই। কিন্তু তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আছে, স্ত্রীর গর্ভে জমজ কন্যাশিশু ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। হাবিব ইতোমধ্যে মেয়েদের নামও ঠিক করে ফেলেছে। এক মেয়ের নাম ইনু অন্য মেয়ের নাম রিনু। এটা সে এখনও কাউকে বলেনি। মেয়েদের জন্মের পর কথাটা প্রকাশ করবে বলে ভেবে রেখেছিল হাবিব। বাড়িতে রেখে আসা স্ত্রী-সন্তানের কথা ভাবতেই হাবিবের বুকের ভেতর শীতল হয়ে যায় তার। সহসা মনের গভীরে একটা অচিন ঢেউ ফুলে ফেঁপে উঠে। তবে কি শেষবার ওদেরকে চোখের দেখা দেখতে পারবে না সে? কে জানে!

জানালা ভেঙে কয়েকটা প্রাণী ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিল। ক্যাপ্টেন আসিফ ধুমধাম কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে এদিকটা সামলে নিলেন। কিন্তু দরজাটা যদি একবার ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে আর নিস্তার নেই। চোখের পলকে শত শত জন্তু ভেতরে চলে আসবে। তারপর যা ঘটবে, তা হতে চলেছে ইতিহাসের সবচে' ভয়ঙ্কর ঘটনা।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অফিসার হাবিব একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। বিশাল বড়ো এই ঘরটায় অতি বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেই গ্যাস এতটাই শক্তিশালী যে, নিঃশ্বাস নেওয়ার মাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে যে কেউ ধপাস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে বাধ্য। কারণ এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করতেই দেহে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে গ্যাস গ্রহণকারী, হোক সে মানুষ কিংবা পশু, শুধুমাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে প্যারালাইসড্ হয়ে পড়ে। এবং এক মিনিটের মধ্যে সে মারা যায়।

সেই অতি ভয়ঙ্কর গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অফিসার হাবিব। এতে করে প্রাণীরা যদি এ-ঘরে চলে আসে, তাহলে আক্রমণ করা তো দূর, তিন সেকেন্ডের বেশি টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ-ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে মাত্র দু'টো। তারা মানুষ তিনজন। দু'টো সিলিন্ডার নাহয় ক্যাপ্টেন আসিফ আর ক্যাপ্টেন মারুফ ব্যবহার করলেন। কিন্তু তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ হাবিবের কী হবে?

দরজাটা প্রায় ভেঙে ফেলা হয়েছে।
শেষ শব্দটা এত জোরে হলো যে, হাবিবের মনে হয়েছিল, এবার বুঝি প্রাণীগুলো পিঁপড়ের মতো দলবদ্ধ হয়ে ঘরে ঢুকে গেল! কিন্তু না, এখনও তা হয়নি।

শেষবার স্ত্রী-সন্তানকে স্মরণ করে নেয় অফিসার হাবিব। চোখ বন্ধ করে সহধর্মিণী রাবেয়ার মুখটা শেষবারের মতো দেখে নেওয়ার চেষ্টা করে সে। রাবেয়া হাসছে, গায়ের উপর ঢলে পড়ে বলছে, "তুমি এত ভীতু! আর্মি অফিসার হয়ে নিজের বউকে এতটা ভয় পাও সেটা শুনলে লোকে কী বলবে শুনি?"

কল্পনা করতে গিয়ে একবুক দুঃখ নিয়েও শুকনো হাসল হাবিব। সময় নষ্ট না করে দ্রুত অক্সিজেনের সিলিন্ডার দু'টো টেনে এনে ক্যাপ্টেন আসিফ আর ক্যাপ্টেন মারুফের কাছে এগিয়ে দিলো। কান্ড দেখে দু'জনেই প্রশ্ন করলেন, "কী করছো হাবিব? অক্সিজেন দিয়ে কী হবে?"

হাবিব বিষণ্ন হেসে বলে, "অক্সিজেন মাস্কটা পরে নিন স্যার।"

বিস্মিত চোখে তাকিয়ে দু'জনেই অক্সিজেন মাস্ক মুখে লাগিয়ে নেন। সঙ্গে সঙ্গে হাবিব ছুটে যায় সুইচবোর্ডের কাছে। কালো বড়ো সুইচটা নিচের দিকে নামিয়ে দিতেই শি-শি-শ্ শব্দ করে বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে চোখের পলকে পুরো ঘরে মিলিয়ে যেতে লাগল। মাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে অফিসার হাবিব মেঝেতে ঢলে পড়ল। আসিফ ও মারুফ দু'জনে একসঙ্গে দৌড়ে এসে হাবিবের সামনে বসে পড়লেন। হাবিব তখনও চেয়ে আছে। তার চোখদু'টো ঝাঁপসা। ঠোঁটদু'টো কাঁপছে।

"দ-দ-দেশটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম স্যার।" শেষ কথাটা বলেই নীরব হয়ে গেল অফিসার হাবিব। এই একটু সময়ে তার পুরো দেহ নীলবর্ণ হয়ে গেছে। মুখটা ফ্যাকাশে। মৃত চোখদু'টো কেমন যেন দেখাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে দু'জন এক্স মিলিটারি, ক্যাপ্টেন আসিফ ও ক্যাপ্টেন মারুফ দু'জনেই দু'ফোঁটা চোখের জল ফেললেন।

ধুম করে একটা শব্দ হলো। তারপর পাঁচ, দশ, কুড়ি, ত্রিশ এভাবে অসংখ্য প্রাণী ঢুকতে লাগল। কিন্তু একটাও আসিফ কিংবা মারুফের ধারেকাছে পৌঁছুতে পারল না। তার আগেই ধপাস ধপাস করে মেঝের উপর ঝড়ে পড়ে যেতে লাগল।
বিশাল বড়ো এই ঘরটায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে অন্তত দেড়শো প্রাণী এসে জড়ো হলো। বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে সবগুলো মরে গেছে। সব।

ক্যাপ্টেন আসিফ ও মারুফ দু'জনে বুক উঁচু করে দাঁড়ালেন। চোখের জল মুছে হাবিবের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট করলেন। তারপর ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, "তোমার এই ত্যাগ পুরো দেশ, পুরো জাতি কখনো ভুলবে না। মরে গিয়ে অমর হয়ে যাওয়া তোমার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। আমরা তোমাকে সম্মান জানাই।"

#পর্ব_১২_ও_শেষ_পার্ট

ষোলো কিংবা সতেরো বছরের এইটুকুনি একটি মেয়ে। খুবই সাধারণ ছিমছাম গড়নের দেহের অধিকারী এবং অতি সুন্দরী হওয়ায় বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, মেয়েটি এত সাহসী, এত নির্ভীক, নির্লিপ্ত! আরো একটা ব্যাপার আছে। এই মেয়েটির জায়গায় অন্য কেউ নিলে নির্ঘাত কেঁদে মরত। কারণ তার একমাত্র আপনজন তার বাবা। সেই মানুষটাকেই অদ্ভুত প্রাণীরা তুলে নিয়ে গেছে। এতক্ষণে হয়তো তিনি আর বেঁচে নেই। অথচ মেয়েটি একটুও কাঁদছে না। তার বিশ্বাস, সে এখনই নিজের বাবাকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। কিন্তু ওপারের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, কতটা বিপদ উদ্-গ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে, কতশত ভয়ানক প্রাণীরা ওত পেতে বসে আছে সেই ধারণা বোধ করি মেয়েটির নেই।

টলটলে জলের ভেতর থেকে হেঁটে হেঁটে তীরে উঠে গেল সে। আমি যাচ্ছি তার পিছু পিছু। পায়ের শব্দে নির্জনতার ঘুম ভেঙে যায় এই ভয়ে অতি সাবধানে এগোতে হচ্ছে। মানুষহীন মৃত শহরের বুকে গভীর রাতে দু'টো মানুষ নেমে এসেছে এটা যেন কোনো কীটপতঙ্গ-ও টের না পায় এমন ভঙ্গিতে হাঁটছি আমরা। চারপাশে কত বাড়িঘর, কত যানবাহন, কত দোকানপাট, রাস্তা, ল্যাম্পপোস্ট, ড্রেন, ডাকবাক্স যা যা চোখে পড়ে সবকিছু আজ ফেলনা। পড়ে থাকতে থাকতে গাড়িতে জমেছে ধুলো, ড্রেনে জমেছে শুকনো মরা পাতা, যানবাহনগুলো আজ পড়ে থাকতে থাকতে অকেজো। রাস্তা, পিচঢালা রাস্তার বুকে উঠেছে বড়ো বড়ো ঘাস। প্রকৃতির এই করুণ পরিবর্তন দেখতে দেখতে কখনো সখনো দাঁড়িয়ে পড়ছিল মেয়েটি।

আমি ভালো নেই।
আর এগিয়ে যাওয়ার শক্তি নেই। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে আমি বিধ্বস্ত। চলতে হবে বলে চলছি। এই মুহূর্তে হঠাৎ কতগুলো প্রাণী এসে আমার দেহটা ছিন্নভিন্ন করে ফেললে আমি খুব একটা অবাক হব না। আফসোসও থাকবে না। কারণ আমি একবার এখান থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পেরেছিলাম। এটা আমার সেকেন্ড চান্স, বোনাস লাইফ; হিসেবের বাইরে জীবন। সুতরাং নিজেকে নিয়ে আমার ব্যস্ততা নেই। তবে খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, আমাকে যিনি একদিন আশ্রয় দিয়েছিলেন, নদীর তীর থেকে তুলে নিয়ে নিজের ঘরে ঠাঁই দিয়েছিলেন, সেই মানুষটি আজ আমারই কারণে মৃত্যুপথযাত্রী। আজকের পর আর কোনো ভোর তাঁর জীবনে আসবে কি না জানা নেই।

এতটা পথ চলে আসার পরও কোনো প্রাণীর দেখা মিলেনি বলে একটু অবাক লাগছিল৷ তাহলে কি প্রাণীগুলো তাদের নিত্যদিনের কাজ সেরে ফেলেছে? তুলে আনা মানুষটিকে জঘন্যভাবে খুন করে ফেলেছে?

আমার ধারণাই সত্যি হলো। অনেকটা পথ চলে আসার পর রাস্তায় একটা ছিন্নভিন্ন লাশ পাওয়া গেল। মেয়েটা লাশের দিকে ঝুঁকে কী যেন দেখল, তারপর তিন লাফে দূরে সরে গিয়ে চাপা আর্তনাদ করে আঙুলের ইশারায় লাশ দেখিয়ে বলল, "আব্বু। আমার আব্বু।"

এইবার সে কাঁদছে। খুব কাঁদছে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সাধ্য আমার নেই। তবে তার কান্না দেখে আমারও খুব মন খারাপ হলো। যদিও আমার এতদিন কেউ ছিল না। আমি এতিম, একলা একটা মানুষ। তবে আজ এই মুহূর্তে আমার মনে হলো, এই মানুষটা আমার আপন কেউ ছিল। এজন্যই চোখে জল আসছে।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে গিয়ে অজান্তেই বলে ফেলেছিলাম, "মেজর এতটা নির্দয় লোক, ছিঃ!"

মেয়েটা কান্নাভেজা গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, "মেজর কে?"

"মেজর জোবায়েদ। যার নির্দেশে আপনার বাবা খুন হয়েছেন।"

সঙ্গে সঙ্গে ফুলে উঠে মেয়েটি। চোখ মুছে বলে, "তাই নাকি? কোথায় থাকে সেই কুকুরটা?"

আমি আঙুল দিয়ে ইশারা করি দূরের ওই বিল্ডিংয়ের দিকে, যেখানে মেজর জোবায়েদ থাকেন। বলি, "ওই বাসায়।"

মেয়েটি আর একটি কথা না বলে এগিয়ে যেতে থাকে। আমি অবাক হয়ে ডাকি, "কোথায় যাচ্ছেন?"

একবার পেছন ফিরে তাকায় মেয়েটি। ধরা গলায় জানিয়ে দেয়, "আজ আমি মরব নাহয় ওই কুকুর মরবে।" ফোঁস করে কথাটা বলেই সামনে অগ্রসর হতে থাকে। অথচ আমি জানি, মেজরের বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি ওইসব প্রাণীরা থাকে। হয়তো বিল্ডিংয়ের ভেতরেও থাকে। সুতরাং ওদিকে যাওয়া মানেই স্বেচ্ছায় মৃত্যু ডেকে আনা!

অফিসার হাবিবকে সম্মান জানিয়ে চলে এসেছেন ক্যাপ্টেন আসিফ ও ক্যাপ্টেন মারুফ। তাঁদের রিসার্চ-রুমে প্রায় দু'শো প্রাণী মরে পড়ে আছে। বাইরে যে-কয়টা ছিল, সবগুলোকে গুলি করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

এই শহর সুস্থ, স্বাভাবিক। শহর থেকে একটু দূরে একটা খাল। আকারে নদীর মতো খাল পেরোতে হলে যা দরকার, অর্থাৎ বুট, নৌকা এসবের কিছুই নেই। পথ একটাই, সাঁতরে ওপারে যেতে হবে। কিন্তু এভাবে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই নিজেরা মিলে একটা মাঝারি আকারের ভেলার মতো তৈরি করে নিলেন তাঁরা। অতঃপর সেই ভেলাতেই ভারী অস্ত্র বোঝাই করে রওনা দিলেন।

নাইট ভিশন বাইনোকুলার দিয়ে দূর দূর পর্যন্ত কোনো প্রাণীর দেখা মিলল না। তবে এগিয়ে যেতে যেতে একসময় থেমে গেলেন ক্যাপ্টেন আসিফ। একটা প্রাণী রাস্তার উপর ঘুমাচ্ছিল৷ অন্ধকারে সেটা খেয়াল না করেই প্রাণীটার হাতের উপর পা দিয়েছেন তিনি। প্রাণীটা সঙ্গে সঙ্গে ইয়া বড়ো থাবা বসিয়ে দিতে যাচ্ছিল আসিফের বুকে। একটুর জন্য ক্যাপ্টেন আসিফ মারা পড়তেন। কিন্তু তার আগেই গুলি চলল৷ ক্যাপ্টেন মারুফের গুলির আঘাতে এক পলকে শান্ত হয়ে গেল প্রাণীটা৷ সাইলেন্সার আছে বলে শব্দ হয়নি। আর কোনো প্রাণী টের পায়নি। দু'জনে এবার আরো সতর্ক হয়ে এগোচ্ছেন।

একবার থেমে গিয়ে ম্যাপ দেখে নিলেন ক্যাপ্টেন আসিফ। তারপর সামান্য বাঁ দিকে এগিয়ে চলার নির্দেশ দিলেন৷ একটু দূরেই চারতলা সেই বিল্ডিংটা, যেখানে মেজর জোবায়েদ আছেন৷ আসিফ এবং মারুফের টার্গেট এখন স্বয়ং মেজর জোবায়েদ। কারণ তারা যতদূর রিসার্চ করে জেনেছেন, জোবায়েদ আছেন বলেই প্রাণীগুলো এত ভয়ঙ্কর। নাহলে ওরা শান্তশিষ্ট হওয়ার কথা। তাছাড়া ওরা মানুষ খুন করা তো দূর, একটা মুরগি পর্যন্ত মারবে না। কারণ রক্ত-মাংসের প্রতি তাদের লোভ নেই৷ তাদের এক এবং একমাত্র খাবার হচ্ছে লতাপাতা, ফলমূল এইসব।

বাড়ির ভেতরে ঢুকতে হলো খুবই সতর্কতার সহিত। একতলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দোতলায় উঠতে গিয়ে সিঁড়িতে চোখ আটকে যায় তাঁদের। আসিফ এবং মারুফ দু'জনেই পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক্স মিলিটারি। দু'জনের হাতে আছে দুনিয়ার সবচে' অত্যাধুনিক, সবচে' ভয়ানক অস্ত্র। তবুও থেমে গেলেন তাঁরা। তবুও গুলি চালাতে সাহস হলো না তাঁদের। কারণ মাত্র তিন হাত দূরে একটা বিশাল প্রাণী ওত পেতে দাঁড়িয়ে আছে। সেটার চোখ সরাসরি ক্যাপ্টেন আসিফের চোখ বরাবর। দৃষ্টি একটু নড়ে গেলেই এক মুহূর্তের ব্যবধানে আসিফের প্রাণ চলে যেতে পারে। মারুফ গুলি করতে যাচ্ছিলেন, তখনই আরো কয়েকটা প্রাণী উপরতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল।

ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তারা৷ ওদের মধ্যে একটুও অস্থিরতা নেই। আসিফ এবং মারুফ একটুও নড়ছেন না। লোহার মতো দাঁড়িয়ে আছেন। দু'জনের কপালে ঘাম জমেছে। দু'জনেই একদৃষ্টে চেয়ে আছেন। মৃত্যু আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড দূরে। চোখের পাতা এক করলেই প্রাণপাখি উড়ে যাবে নিশ্চিত।

প্রথম প্রাণীটা লম্বা করে নিঃশ্বাস নিল৷ তারপর ধীরে ধীরে যেন তার মধ্যে প্রবল হিংস্রতা ভর করতে লাগল। আস্তে আস্তে সে উঠে দাঁড়াল। বাঁ হাত উঁচু করে যেই না থাবা বসাবে, ঠিক এমন সময় উপরতলায় গুলি চলল। মুহূর্তেই পরিস্থিতি বদলে গেল। প্রাণীগুলো হন্তদন্ত হয়ে উপরতলায় ছুটে গেল। সাথে ক্যাপ্টেন আসিফ এবং মারুফও ছুটে গেলেন। তিনতলায় ছুটে গিয়ে একটা বিরল দৃশ্য চোখে পড়ল তাঁদের।

মেঝেতে ওলট-পালট হয়ে পড়ে আছেন মেজর জোবায়েদ। তাঁর গুলিবিদ্ধ মাথা থেকে টকটকে লাল রক্তে ভেজে যাচ্ছে চারপাশ। হাত তিনেক দূরে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট একটি মেয়ে। এবং মেয়েটির পাশেই ভীত সন্ত্রস্ত একটি ছেলে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে।

এমন কিছু হয়ে যাবে আমি কল্পনাও করিনি।
লুকিয়ে লুকিয়ে তিনতলা পর্যন্ত উঠে আসার পর এই পুঁচকে মেয়েটি মেজরের রিভলবার দিয়ে মেজরকেই গুলি করে দিলো! মেজর জোবায়েদের মৃতদেহটা আমার সামনেই পড়ে আছে। গুলি করার পর এ-ঘরে বেশ কয়েকটি প্রাণী ছুটে এসেছে। সঙ্গে দু'জন মানুষও এসেছেন। তাঁদেরকে দেখতে অনেকটা আর্মিদের মতো মনে হচ্ছে। আমি যেমন অবাক হয়েছি, ঠিক তেমনি অবাক হয়ে তাকাচ্ছে প্রাণীগুলো। তারা হয়তো ভাবছে, তাদের মুনিব আর নেই। এবার তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে?

আর্মির মতো দু'জন একাধারে গুলি করে অসংখ্য প্রাণী মেরে ফেললেন৷ ওরা আক্রমণ করা তো দূর, একটু নড়লও না। যে যার মতো গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়তে লাগল৷ আর্মির মতো দু'জন তাঁদের পরিচয় দিলেন৷ একজন ক্যাপ্টেন আসিফ আর দ্বিতীয়জন ক্যাপ্টেন মারুফ। তাঁদের সঙ্গে যখন রাস্তায় বেরিয়ে এসেছি, তখন ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। অদ্ভুত প্রাণীগুলো দিনের আলোয় চোখে কম দেখে তা-ও নিজেদের মুনিবের মৃত্যুসংবাদ ওরা কীভাবে যেন পেয়ে গেল। সবাই একসঙ্গে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে এল এদিকে। আর ক্যাপ্টেন আসিফ এবং মারুফ গুলি করতে থাকলেন।

সবার শেষে এল বাচ্চা প্রাণীটা, যেটাকে একবার আমি বাথরুমে আটকে রেখেছিলাম। সেটা আমার গায়ের গন্ধ কীভাবে টের পেল কে জানে! আর কারোর দিকে না গিয়ে সোজা আমার কাছে এসেই নিজেকে সমর্পণ করল। আমার কাঁধের কাছে মুখ ঘষতে ঘষতে গোঁত গোঁত আওয়াজ করতে লাগল। অর্থাৎ তার আদর চাই। আমি পিঠে হাত দিয়ে আদর দিতে লাগলাম। তখনই ক্যাপ্টেন আসিফ পিস্তল তাক করলেন। আমি বললাম, "এটাকে না মারলে হয় না?"

তিনি বেজার মুখে জানালেন, "এটা শান্তশিষ্ট ঠিকই আছে। তবে যেকোনো সময় আবার হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। এই একটা প্রাণীর জন্য পুরো শহর, পুরো দেশের মানুষের জীবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে। আপনি কি তা-ই চান?

এ-কথার জবাব হয় না। কিন্তু এই প্রাণীটার জন্য খুব খারাপ লাগছিল আমার। প্রাণীটা যখন গুলি খেয়ে ছটফট করতে করতে মরে গেল তখন অজান্তেই চোখের কোলে জল জমে গেল। মনে হলো যেন, খুব আপন একটা প্রাণীকে হারিয়ে ফেলেছি৷ যে প্রাণীটা আসলে ভয়ঙ্কর নয়, ভয়ঙ্কর হলো অদ্ভুত মানুষগুলো। যারা নিজের স্বার্থের জন্য অবুঝ প্রাণীদেরকে ব্যবহার করতে দু'বার ভাবে না।

শেষমেশ প্রাণীটার জন্য ফুঁপিয়ে কাঁদলাম আমি। ইশ! আদর পাবার জন্য কী আদুরে সুরে গোঁত গোঁত করে ডাকত! এই প্রাণীটার নাম জানা নেই। কখনো নাম দেওয়াও হয়নি। একে আমি "সেই প্রাণী" হিসেবেই জানি। অর্থাৎ "দি অ্যানিমেল"

টানা তিনদিন আলাদা দু'টো ঘরে আটকে রাখা হলো আমাদের। দফায় দফায় জেরা করা হয়ে গেলে আজ তিনদিন পর ছেড়ে দেওয়া হলো। রাস্তায় নেমে এসে থমকে দাঁড়াল মেয়েটি৷ আমি বললাম, "কী হলো? চলুন!"

"কোথায় যাব? কার কাছে যাব?"

"কারোর কাছে যেতে হবে না৷ আমার সাথে চলুন।"

"আপনার সাথে?"

"হুম, আমার সাথে। আমার রাজপ্রাসাদে।" বলে তার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। নিজেকে দেখিয়ে বললাম, "এই ছোট্ট মানুষটা তার রাজপ্রাসাদে আপনাকে রানি করে রাখতে চায়। আপনি শুধু তিনবার কবুল বলবেন।"

মেয়েটি চোখ নামিয়ে নিলো।

"আমি জানি আপনার বয়স কম। তাই আপনার আঠারো বছর হওয়া অবধি আমরা আলাদা আলাদা থাকব। তবে কোনোকিছুতে আপনার কমতি হতে দেব না। চলবে তো?"

মেয়েটি মুখ লুকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। এর মানে কী? সে রাজি? কে জানে!

সমাপ্ত

20/03/2025

Check comment box ❤️💝

19/03/2025

Check Comment ❤️💝

19/03/2025

দি অ্যানিমেল
#পর্ব_আট_নয়_দশ

একেবারে সাধারণ ভঙ্গিতে হেঁটে আসছেন মেজর জোবায়েদ। তাঁর হাতে কোনো অস্ত্র নেই। ছোট্ট রিভলবার কিংবা উজি, সাবমেশিন কিছুই নেই। খালি হাতে এগিয়ে আসছেন তিনি। তাঁর পেছনে অসংখ্য মানুষখেকো প্রাণী। অথচ তাঁর চেহারায় বিন্দুমাত্র ভয়ের ছাপ নেই!

খুব কাছাকাছি এসে তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। হাত দিয়ে ইশারা করতেই সবগুলো প্রাণী একসঙ্গে থেমে গেল। ওরা মেজরের কথা শুনছে! আশ্চর্য!
মেজরের মুখ দেখে মনে হচ্ছে তিনি আমার উপর খুব বেশি বিরক্ত। গলা টান করে কড়া স্বরে তিনি বললেন, "ভেবেছিলাম তুই প্রমাণ-টমান জোগাড় করেছিস। এজন্য এতক্ষণ বাঁচিয়ে রেখেছি। প্রথম যেদিন তোকে দেখি, সেদিনই সন্দেহ হয়েছিল। সেদিন প্রথমবার কেউ নিয়ম ভেঙে এই শহরে উপস্থিতি দিয়েছিল। আর সেটা হচ্ছিস তুই। তোর আগে বহু মানুষকে জেল থেকে ছাড়া হয়েছিল শুধুমাত্র আমার এই প্রাণীগুলোর খোরাক হওয়ার জন্য। প্রতি রাতেই একটা করে মানুষ ছাড়া হত আর এরা মানুষটাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলত। কিন্তু তুই এসে সেই নিয়ম ভেঙে দিলি। তুই প্রথম মানুষ যে কিনা রাতের অন্ধকারে এই শহরের বুকে পা রেখে এখনও বেঁচে আছে। তাই তোর উপর আমার প্রাণীগুলো ভীষণ রেগে আছে। ভীষণ।"

বলতে বলতে তিনি হাত বাড়িয়ে দিতেই একটা প্রাণী মেজরের হাতের নিজে মাথা পেতে দিলো। মেজর প্রাণীটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, "আমার বাচ্চারা (প্রাণীরা) এখন তোকে ইচ্ছেমতো আঘাত করতে করতে মেরে ফেলবে। তোর রক্ত মাংসের স্বাদ নেবে।"

"তার মানে আপনিই এই প্রাণীগুলোর আবিষ্কারক?"

তিনি তাচ্ছিল্য করে বললেন, "না রে! আমি কেন ওসব করতে যাব? যা করার ওই পাগল বিজ্ঞানীটাই করেছিল। আমি তো শুধু এদেরকে ট্রেইন করেছি। এমন ট্রেইন করেছি যে ওরা নিজেদের মুনিবকেই খুন করে ফেলেছে, হা হা হা!"

"কেন এমন করলেন?" প্রশ্ন শুনে মেজর হাসি থামিয়ে বললেন, "কেন এমন করেছি? কারণটা বুঝতে পারছো না? এটাও বলে দিতে হবে?"

"আপনি এতটা জঘন্য লোক তা আমি ভাবতেও পারিনি।"

তিনি বিদ্রুপ করে হেসে বললেন, "রাজনৈতিক নেতারা যখন হাজারো মানুষকে মিথ্যে আশ্বাস দেয়, লোক ঠকায়, এমনকি মানুষ খুন করাতেও দ্বিধাবোধ করে না সেখানে আমি কেন পারব না? আফটারঅল সবার লক্ষ্য তো ওই এতটাই। পাওয়ার। এই পাওয়ারের জন্য সবাই কত কী করে। আমি নাহয় কিছু মানুষকে কোরবান করে দিলাম। আমি নাহয় কিছু স্বাভাবিক প্রাণীকে অস্বাভাবিক করে তুললাম। নাহয় দিলাম একটু আতঙ্ক ছড়িয়ে। এতে যদি সামান্য কিছুদিনের মধ্যে পুরো শহরটা দখল করে ফেলতে পারি তাতে ক্ষতি কী?"

"তার মানে এই প্রাণীগুলো মাংসাশী নয়। আপনি এদেরকে তাজা মাংস খাওয়া শিখিয়েছেন!"

"ভুল বললে। আমার পেছনে যাদেরকে দেখছো, তারা কেউই মাংস খায় না। তাদের প্রধান খাদ্য কলার খোসা, ঘাস, লতাপাতা, ফলমূল। এরা তো মানুষ খুন করে আমার জন্য। আমাকে খুশি করার জন্য। যাতে আমি পুরো শহরে রাজত্ব করতে পারি। দেখছো না কীভাবে অল্প সময়ে পুরো শহরটা খালি হয়ে গেছে? এখন এই পুরো শহর আমার। শহরের সবগুলো বাড়ি, সবগুলো গাড়ি, সব দোকানপাট, গাছপালা, রাস্তা, খোলা মাঠ, শহরের প্রতিটি ইট, প্রতিটি... সব আমার, সব। শীঘ্রই এমন একটা দিন আসবে যখন পুরো দেশটাই আমার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমিই হব এদেশের একমাত্র নাগরিক।" বলতে বলতে মেজরের চোখদু'টো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

"কিন্তু এটা কি ঠিক?"

"ঠিক বেঠিকের ধার আমি ধারি না। পাওয়ারের জন্য আমি সব করতে পারি। শীঘ্রই এই দেশটা ফাঁকা হয়ে যাবে। এদেশের সব মানুষ ভয়ে আতঙ্কে দেশ ছেড়ে পালাবে। আমার ভয়ে পালাবে। আমিই হব এখানকার একমাত্র জীবিত মানুষ!"

"তার আগে আমি আপনাকে খুন করে ফেলব।" ভীষণ রাগে কথাটা বলে ফেলার পর দেখি মেজর বিশাল প্রাণীটার মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সাত ফুট উঁচু প্রাণীটা সোজা হয়ে দাঁড়াল। মেজর ধীর গলায় বললেন, "শেষ ইচ্ছে?"

"আপনার মতো অমানুষকে খুন করা।"

"হা হা হা! অল দ্য বেস্ট। কাম, কাম হিট মি। কিল মি। কিল মি বাডি। জাস্ট ডু ইট। হা হা হা হা হা!" অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন তিনি। বড়ো প্রাণীটাকে ইশারা করতেই সেটা আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। এমন সময় হঠাৎ মনে হলো চারপাশে ঝড় বইতে শুরু করছে। গাছপালাগুলো অস্বাভাবিকভাবে নড়ছে। দূর থেকে কীরকম একটা শব্দ আসছে। লম্বা প্রাণীটা মাথা উঁচু করে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে বাকি প্রাণীরাও আকাশের দিকে তাকাল। মেজর জোবায়েদও চোখ তুললেন। আমিও। দেখি আকাশের কালো অন্ধকার থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে মস্ত একটা হেলিকপ্টার!

হেলিকপ্টার নিয়ে তিনজন এক্স মিলিটারি রওনা দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে ভারী অস্ত্র। ভারী মানে খুবই ভারী। অদ্ভুত কিছু দেখলেই গুলি ছোঁড়া হবে।

এখন রাত হওয়ায় নিচের সবকিছু ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। তাই সামান্য উঁচু দিয়ে উড়ে চলেছে হেলিকপ্টারটা। একজন একটা ভারী অস্ত্র নিচের দিকে তাক করে পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অপরজন বসে বসে চারদিকটা ভালো করে দেখে নিচ্ছেন। তার হাতে নাইট ভিশন বাইনোকুলার। তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ ক্যাপ্টেন মারুফ হেলিকপ্টার উড়াচ্ছেন। তিনি তাঁর দুই সহযোগী ক্যাপ্টেন আসিফ এবং ক্যাপ্টেন শাওনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তোমাদের কী মনে হয়? এই অন্ধকারে বিশেষ কোনো ক্লু পাওয়া যাবে?"

বাইনোকুলার দিয়ে যিনি দেখছিলেন, অর্থাৎ ক্যাপ্টেন আসিফ বিড়বিড়িয়ে জবাব দিলেন, "ক্লু'র জন্যই আমরা বেরিয়েছি। আমার মনে হয় এই সময়টাই ইনভেস্টিগেশন করার জন্য বেস্ট।"

তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ ক্যাপ্টেন শাওন তাঁর পুুরু ঠোঁটে ঢাউস সাইজের জ্বলন্ত সিগারেটটা রাখতে রাখতে বললেন, "ইনভেস্টিগেশন করার টাইম আছে নাকি? অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই ধাম ধাম ধাম ফায়ারিং করব। ব্যাস, কিচ্ছা খতম।"

"কিন্তু নিচে জীবন্ত মানুষও থাকতে পারে। তোমার এই বেখেয়ালির জন্য একটা নির্দোশ মানুষের প্রাণ যেতে পারে সেটা কি তুমি জানো?" তীব্র বিরক্তি নিয়ে ক্যাপ্টেন শাওনের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন আসিফ। শাওন সিগারেটে টান দিয়ে বললেন, "অত ভাবার টাইম নেই। নিচে কিছু দেখলেই ফায়ারিং করব। ফাইন্যাল।"

"না, তুমি এটা কখনোই করবে না।" প্রতিবাদ করে বলে উঠলেন আসিফ। ক্যাপ্টেন মারুফ পেছনে তাকিয়ে বললেন, "তোমরা আবার শুরু করলে? এভাবে ঝগড়া করলে মিশন সাকসেসফুলি কমপ্লিট করা সম্ভব?"

"স্যরি।" আসিফ ও শাওন দু'জনেই চুপ মেরে গেলেন। আসিফ আবারো বাইনোকুলার দিকে চারপাশ দেখছেন। শাওন ভারী অস্ত্রটা একদিকে তার করে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু আগে ওয়ার্কআউট করায় তার হাতের বিশাল মাংসপেশি ফুলে শক্ত হয়ে আছে। হাতের শিরাগুলো চামরার উপরে উঠে এসেছে। কপালে ঘাম। গায়ের পাতলা টি-শার্ট ঘেমে জবজবা হয়ে আছে তাঁর। রাতের প্রায় একটা। তবুও এই তিনজনের কারোর চোখে ঘুম নেই। একটুও ক্লান্তি নেই। তিনজনেই সজাগ, সতর্ক। যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে তাঁরা সদা প্রস্তুত।

হঠাৎ ক্যাপ্টেন আসিফ চিৎকার দিয়ে উঠলেন, "মাই গড!" তারপর বাইনোকুলার দিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলেন। মারুফ বললেন, "কী হয়েছে?"

আসিফ বিস্মিত গলায় জানালেন, "ওই যে দু'টো জীবিত মানুষকে দেখা যাচ্ছে! একটা মানুষ একা দাঁড়িয়ে আছে। অপর পাশে দ্বিতীয় মানুষটা। তার পেছনে অদ্ভুত রকমের অসংখ্য প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণীগুলোর মধ্যে কোনো অস্থিরতা নেই। যেন তাদেরকে কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ করছে!"

হেলিকপ্টারটা যখন প্রাণীগুলোর মাথার উপর চলে এসেছে তখন সুযোগ পেয়ে ক্যাপ্টেন শাওন গুলি করতেই যাচ্ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেন আসিফ ঝাঁপিয়ে পড়ে বললেন, "ডোন্ট শুট। আই সেইড ডোন্ট শুট।"

ক্যাপ্টেন মারুফ বললেন, "গায়েজ, এটা আমি কী দেখছি?"

আসিফ এবং শাওন দু'জনেই কৌতূহলী হয়ে বললেন, "কী?"

মারুফ বললেন, "এদিকে এসো। হারি!"

ওঁরা দু'জনে এগিয়ে এসে দেখেন। তারপর দু'জনেই একসঙ্গে বলে উঠেন, "ও মাই গড!"

অ্যানিমেল #নয়

তারপর তিনজন একসঙ্গে বলে উঠলেন, "ইটস্ ইমপসিবল!"

ক্যাপ্টেন মারুফ বিস্মিত গলায় বললেন, "সত্যিই ইনি মেজর জোবায়েদ তো? কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব?"

তড়িৎ গতিতে পাল্টা প্রশ্ন করলেন ক্যাপ্টেন শাওন, "আমি নিজে দেখেছি সিক্রেট এজেন্সির শ্যুটার মেজরের বুকে পরপর দু'টো গুলি করেছে। লোকটা তখনই মারা গিয়েছিল৷ তাহলে দু'বছর পর সে আবার ফিরে আসল কীভাবে?"

ক্যাপ্টেন আসিফ বাইনোকুলারটা চোখ থেকে নামিয়ে বললেন, "আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর এটা মেজর জোবায়েদ।"

মারুফ বললেন, "তার মানে সে তার অতীতের বদলা নিচ্ছে?"

শাওন বাধা দিয়ে বলে উঠলেন, "বদলা আবার কী? সে নিজের স্বার্থের জন্য ছয়টি তাজা আর্মিম্যানকে কোরবান করেছিল। সেটা সিক্রেট এজেন্সির হ্যাডের কানে যেতেই তিনি ব্যবস্থা নিলেন। মেজর যা করেছে এজন্য গুলি খাওয়া তার প্রাপ্প। সুতরাং এখন সে বদলা নিচ্ছে না বরং ক্রাইম করছে।"

আসিফ বললেন, "মেজর কি তাহলে এই প্রাণীগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে?"

"হুমম, তা-ই তো মনে হচ্ছে।" বললেন ক্যাপ্টেন মারুফ। তাঁদের মধ্যে সবচে' মাথা গরম যার, অর্থাৎ ক্যাপ্টেন শাওনের মেজাজ সব সময়ই একটু খারাপ থাকে। এখনও আছে। তিনি সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বললেন, "এইবার শালাকে জীবনের শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব।" বলেই তিনি ভারী অস্ত্রটা দু'হাত দিয়ে ঝাপটে ধরলেন। ক্যাপ্টেন মারুফ ও আসিফ দু'জনেই চেঁচিয়ে গুলি করতে নিষেধ করলেন কিন্তু ক্যাপ্টেন শাওন সেসব কানে না তুলে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে লাগলেন। গুলির শব্দে সবগুলো প্রাণী যে যেদিকে পারে ছুটে যেতে লাগল। তবে মেজর জোবায়েদ এক পা-ও নড়লেন না। যেখানে যেমন ছিলেন তেমনি দাঁড়িয়ে রইলেন।

গুলিবর্ষণ শেষ হতেই ব্যাকপ্যাকে রাখা ধারালো চাকুটা বের করে নিলেন ক্যাপ্টেন শাওন। বললেন, "শালার কপাল ভালো। একটা গুলিও লাগেনাই। তবে এবার সে আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না।" বলেই প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়লেন তিনি। ক্যাপ্টেন মারুফ ও ক্যাপ্টেন আসিফ একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলেন কিন্তু ততক্ষণে ক্যাপ্টেন শাওন হেলিকপ্টার থেকে লাফিয়ে পড়েছেন।

শাওন যখন প্যারাসুট নিয়ে মাটিতে নেমে এসেছেন, তখন আশপাশে একটি পোকাও ছিল না। ধারালো নাইফ হাতে নিয়ে সন্তর্পণে এগোচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু অদ্ভুত প্রাণীগুলো যে গুলি শব্দে পালিয়ে গেলেও দূর থেকে মেজর জোবায়েদের ইশারার অপেক্ষা করছে সেটা ক্যাপ্টেন শাওনের ধারণার বাইরে ছিল। তাইতো তিনি যখন মেজরের থেকে মাত্র হাত দশেক দূরে, তখনই জমিন কাঁপিয়ে অসংখ্য প্রাণী ছুটে এল! একটা না, শত শত, হাজার হাজার প্রাণী! কিছু বুঝে উঠার আগেই ওরা ক্যাপ্টেন শাওনের দেহটা ছিন্নভিন্ন করে ফেলল। তাই দেখে মেজর সরু হাসলেন। তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে হেলিকপ্টারটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তোদেরকেও দেখে নেব।"

গুলির শব্দে প্রাণীগুলো যখন দিশেহারা হয়ে প্রাণপণে ছুটতে শুরু করেছিল, তখন সুযোগ পেয়ে আমিও পালিয়ে আসি। টানা কয়েক ঘন্টা হাঁটার পর একটা নদী কিংবা খালের সামনে এসে পৌঁছেছি। এপারে সব থমথমে হলেও, সব বাড়িগুলো পরিত্যক্ত হলেও ওপারের দৃশ্যটা অন্যরকম মনে হলো। তখন দূরে কোনো এক মানুষকে হেঁটে যেতে দেখে বুকে পানি এল। জীবিত মানুষ! তার মানে ওপার নিরাপদ!

সারা রাত হেঁটে আসায় ভীষণ ক্লান্ত লাগছে আমার। গত ক'দিন খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম হয়েছে। তার উপর আজব আতঙ্ক। গতকাল রাতে ধকল গেছে সবচে' বেশি। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার পর প্রায় আধা ঘন্টা একটানা দৌড়েছি। এতেই আমার এনার্জি খতম হয়ে গেল। তারপর আবার সারা রাতের হাঁটাহাঁটি। এখন সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও আমার নেই অথচ সামনের এই মস্ত খাল বা নদীটা সাঁতরে পার হতে হবে।

পানি ভেঙে যখন ভেজা শরীর নিয়ে কোনোমতে তীরে উঠেছি, তখন আর আমি আমার মাঝে নেই। মনে হলো, এখনি চোখ লেগে আসবে আমার। তারপর এখানেই মৃত্যু হবে। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো, এদিকটায় আমি একজন মানুষকে দেখেছিলাম! জীবনটাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাকে আরো একবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখাল। প্রাণটা যাই-যাই করছে। দেহটা তিরতির করে কাঁপছে। চোখদু'টোয় নেমে আসছে ঝাঁপসা কালো অন্ধকার। নামমাত্র শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলার পণ করেও এগোতে পারলাম না। ভোরের চকচকে সূর্যের আলো এসে পড়েছে নদী বা খালের গর্ভে। পেছন ফিরে তাকিয়ে সেই দৃশ্যটাই দেখলাম একবার। তারপর আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হলো না। ধপাস করে কাদাপানিতে দেহ অর্পণ করলাম।

তখনও আমার নিঃশ্বাস চলছে।
একটা লোক কোত্থেকে যেন ছুটে এসে আমার মুখের উপর ঝুঁকে পড়েছে। তার চাপা কণ্ঠস্বর শোনা গেল, "এই, কে আপনি? এই যে, শুনতে পারছেন? কোত্থেকে এসেছেন আপনি? এই!"

একটা ছায়ার মতো দৃশ্য দেখলাম এক পলক।
তারপরই আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হয়ে এল। মনে হলো আমি মারা গেছি। পরলোকে চলে আসার পর এখন বিশ্রাম করছি৷ কিন্তু আমার মাথার কাছে যে মেয়েটি বসে আছে সে কে? বেহেশতের হুর? রাশভারী চেহারায় সে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তার চোখদু'টো কী গভীর! দৃষ্টিতে কী মমতা! ছোট্ট গোলাকার নথে এতটাই মানিয়েছে তাকে! মাথার চুলগুলোও প্রসংশা করার মতো। এলো চুলগুলো এক করে খোঁপা বেঁধে দিতে ইচ্ছে করল। পরে মনে হলো, এত চুল বুঝি খোঁপায় ধরবে না! খুব বেশি ফরসা নয়, দুধের মতো নয়, কেমন যেন তার গায়ের রং। বোঁচা নাকে এই প্রথমবার কাউকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে। তা-ও এতটা! অবচেতনে গায়ের ওড়নাটা যে এলোমেলো হয়ে পড়েছে সেদিকে মেয়েটির খেয়াল নেই। থুতনিতে হাত দিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে সে। তবে জ্ঞান নেই। অন্যমনস্ক মেয়েটি এখনও আন্দাজ করতে পারেনি যে আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি।

আজকের আগে আমি কারোর প্রতি মুগ্ধ হইনি, কখনো কাউকে দেখে এইটুকু আগ্রহ জাগেনি। এই প্রথমবার আমি কারোর চোখের প্রেমে পড়লাম। চোখের প্রেমে! সত্যিই তার দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে। কিন্তু কী আছে? কে জানে!

"কে আপনি?"

প্রশ্ন শুনে হিতাহিত জ্ঞান ফিরে পায় মেয়েটি। দূরে সরে গিয়ে বলে, "আপনার জ্ঞান ফিরেছে? আব্বুকে ডাকি।"

কিছুক্ষণ পর অনুমানে চল্লিশ কিংবা পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সি ভদ্রলোক ঘরে এলেন। তাঁর পিছু পিছু মেয়েটি। পুতুলের মতো মেয়ে। যে কেউ দেখলে ঘরে নিয়ে সাজিয়ে রাখতে চাইবে। আমারও সাধ জাগল। কিন্তু যার ঘর-ই নেই সে আবার পুতুল সাজাবে!

ভদ্রলোকের সাথে বিশেষ কথা হলো না। তিনি গম্ভীর মুখে জানালেন, রাত হয়ে গেছে। আমি নাকি প্রায় বারো ঘন্টা পর জেগেছি। আমার শরীর এখনও দুর্বল। তাই এখনই কিছু বললেন না। বিশ্রাম নিতে বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন। রাতে ওই মেয়েটি সামান্য খাবার দিয়ে গেল। খেয়েদেয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। তখন রাতের কয়টা বাজে জানি না। কারোর চিৎকার শুনে সজাগ হয়ে যাই। চেয়ে দেখি সেই মেয়েটি এবং তার বাবা দু'জনেই এ-ঘরে চলে এসেছেন। আমাকে জেগে উঠতে দেখে বললেন, "জন্তুগুলো ওপারে ছিল। খাল পার হয়নি কোনোদিন। আজ মনে হয় খাল পেরিয়ে এপারে চলে এসেছে। যদি সত্যিই চলে আসে তাহলে কাউকে বাঁচতে দেবে না।"

ঢোক গিললেন তিনি। মেয়েটি বাবাকে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভীত মেয়েটিকে আরো সুন্দর লাগছে! তার বয়স কত হবে? ষোলো? সতেরো? এরকমই কিছু একটা হবে। সালোয়ার কামিজে এমনই মনে হচ্ছে। শাড়ি পরলে হয়তো আঠারো বছরের মনে হতে পারে।

অ্যানিমেল #দশ

সেই রাতে একই এলাকা থেকে তিনটি মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। এরপর মাত্র বারো ঘন্টার মধ্যে অধিকাংশ পরিবার প্রাণ হাতে নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেল। যারা রইল, তারাও শীঘ্রই চলে যাবে। আমি পুরোপুরি ঠিক হতে পারিনি বলে কোথাও যাইনি। আজ আবার কী হয় এই ভেবে আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু এতোটা ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাবে তা আমার ভাবনার বাইরে ছিল।

তখন রাতের কয়টা তা ঠিক জানি না। ভরা আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে আমার। অনেকটা সময় চোখ বন্ধ রেখেও ঘুম না আসায় একরকম বিরক্তি নিয়ে শুয়ে ছিলাম। ধীরে ধীরে একটু তন্দ্রার ভাব চলে এসেছিল। এমন সময় একটা ধারালো আওয়াজ আমার ঘোর কাটিয়ে দিলো। কেমন একটা গড়গড় আওয়াজ। এমন শব্দ আমি আগেও শুনেছি, যখন প্রথমবার অদ্ভুত প্রাণী আমার সামনে এসেছিল।

আওয়াজটা যখন আরো একটু তীব্র হলো, তখন আর বুঝতে বাকি রইল না যে, এটা ওই প্রাণীরই আওয়াজ! তার মানে ওরা এখানে চলে এসেছে! লাফ দিয়ে উঠে বসার আগেই দরজা ভাঙার শব্দ পাই। মুহূর্তের মধ্যে মৃদু আর্তনাদের শব্দ শোনা গেল। তারপরই মনে হলো যে, বিপদটা হাওয়ার বেগে ভাঙা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে!

দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি ভদ্রলোকের বিছানা ফাঁকা। মেঝেতে ফিনকি দিয়ে পড়া রক্ত! ফোঁটা ফোঁটা রক্ত দরজার দিকে চলে গেছে!

আমি দৌড়ে বাইরে যাই, ছুটে যাই সেই খাল বা নদীর সামনে। গিয়ে যা দেখি, তাতে আমার গায়ে কাঁপন ধরে যায়। অতি বিস্মিত গোল গোল চোখে দেখি, প্রায় ন' ফুট লম্বা একটা প্রাণী হাতের থাবায় একটা মানুষ নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নদী পার হয়ে যাচ্ছে! যন্তুটার হাতে সেই ভদ্রলোক, যিনি আমাকে তাঁর বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন।

প্রাণীটা ও-পারে উঠে গিয়ে কেন জানি থেমে গেল। তারপর কী একটা মনে পড়তেই যেন পেছনে ফিরে আমার চোখ বরাবর তাকাল। দূর থেকেও প্রাণীটার চোখ-মুখ আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম। আজকের আগে এত ভয়ঙ্কর চেহারা আমি জীবনে দেখিনি! চোখে চোখ পড়তেই আমি দৃষ্টি নামিয়ে ফেলি। তখনই সেটা লাফিয়ে লাফিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

ভেবেছিলাম আজকের আতঙ্ক এখানেই শেষ। কিন্তু যাকে ধরে নিয়ে গেছে তাঁর মেয়ে, যে মেয়েটির বয়স এখনও আঠারো বছর হয়নি, সেই পুঁচকে মেয়েটাই আমাকে অবাক করে দিয়ে চোখের জল মুছে শক্ত গলায় বলল, "আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে হবে।"

আমি হতভম্ব হয়ে বলি, "আজব প্রাণী ধরে নিয়ে গেছে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত।"

"তবুও আমি যাব। আব্বু আমার একমাত্র আপনজন। তাঁকে আমার লাগবেই।"

"কিন্তু..."

মেয়েটি কথা শুনল না। ভাবলেশহীনভাবে সরু হাসি দিয়ে বলল, "আপনার ভয় লাগলে এখানেই থাকুন। আমি যাচ্ছি। আব্বুকে নিয়ে তবেই ফিরব।" বলেই হেঁটে হেঁটে জলে নেমে গেল মেয়েটি! মুহূর্তেই গভীর রাতের টলটলে জলের ভেতরে প্রবেশ করল সে। পায়ে হেঁটে বুক অবধি ডুবে গেল। একসময় গলা। তারপর তার পুরো দেহটাই জলের নিচে চলে গেল। অগত্যা পেছন থেকে বিক্ষিপ্ত আওয়াজ দেই, "দাঁড়ান! আমি আসছি।"

দ্রুত ছুটে নেমে যাই জলে। তারপর মেয়েটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাঁতরাতে থাকি। সামনে মৃত্যু অনিবার্য জেনেও আমরা এগিয়ে চলি। জানি, ওপারে হাজার হাজার প্রাণী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। একবার মানুষের অস্তিত্ব টের পেলেই...

ক্যাপ্টেন শাওনের আকস্মিক মৃত্যুটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁর দুই সহচর ক্যাপ্টেন আসিফ ও ক্যাপ্টেন মারুফ। দু'জনেই একগাদা মনিটরে কীসব দেখছিলেন। গত চব্বিশ ঘন্টায় তাঁরা দু'জনে মিলে কিছু ক্লু বের করেছেন। তাঁদের ধারণা, অবিশ্বাস্য হলেও খুব শীঘ্রই এই জটিল রহস্যের সমাধান করে ফেলবেন তাঁরা। যদিও রহস্য প্রায় খোলাসা হয়েই গেছে। সমস্যা অন্য জায়গায়। প্রভলেম সলভ্ করতে গিয়ে বেগ পেতে হবে তাঁদের। কারণ তাঁরা মাত্র দু'জন। আর প্রতিপক্ষ হাজার হাজার।

গত ক'দিন আগে তাঁরা তিনজন মিলে সিক্রেট অ্যাজেন্সির একটা মিশন কমপ্লিট করে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে কিছুই নেননি। তবে আজ বিনিময় হিসেবে কিছু অ্যাডভান্সড্ টেকনোলজি আর বিশেষ কিছু অস্ত্র যা পৃথিবীতে খুব কমই আছে, সেইসব নিয়ে এসেছেন। প্ল্যান অনুযায়ী আজ রাতেই তারা ফাইন্যাল মিশনে নামার কথা। শেষ প্রস্তুতি চলছে। হঠাৎ অফিসার হাবিব এই বিশাল ঘরটায় পা রেখে বুক উঁচু করে স্যালুট দিয়ে বলল, "স্যার!" উই গট অ্যা ভেরি ব্যাড নিউজ।"

আসিফ এবং মারুফ একসঙ্গে অফিসার হাবিবের দিকে তাকালেন। আসিফ বললেন, "ব্যাড নিউজ? হুয়াট?"

"স্যার, ওই অদ্ভুত প্রাণীগুলো এতদিন একটি করে মানুষ চাইত। ডিমান্ড অনুযায়ী প্রতিদিন একটি মানুষ দিতে স্থানীয় সরকার বাধ্য। নাহলে ওরা শহরে তান্ডব চালাবে, নিরীহ মানুষ খুন করবে। তাই এতদিন জেলখানার আসামিদের মধ্যে থেকে প্রতিদিন একজন করে ওই প্রাণীদের কাছে পাঠানো হত। একটি মানুষ পেলে তারা আর কাউকে ডিস্টার্ব করত না। কিন্তু গতকাল রাতে ওই প্রাণীগুলো কী কারণে যেন পুরো জেলখানায় যতজন লোক ছিল সবাইকে খুব বাজেভাবে খুন করেছে। এমনকি শহরের বাইরে থেকেও লোকজনকে তুলে নিয়ে গেছে। আজ রাতে আবার কী হতে চলেছে বুঝতে পারছি না। সুতরাং আমার মনে হয় খুব দ্রুত কিছু একটা করতে হবে, স্যার। কারণ গতকাল থেকে ওই প্রাণীগুলো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। কেন এরকমটা হচ্ছে বুঝতে পারছি না স্যার।"

ক্যাপ্টেন আসিফ ও মারুফ দু'জনেই মুখচাওয়াচাওয়ি করলেন। তবে কিছু বললেন না। কারণ তারা জানেন, প্রাণীগুলো কেন এমন করছে। এই সবকিছু হচ্ছে ক্যাপ্টেন শাওনের জন্য। শাওন গতরাতে এলোপাথাড়ি গুলি করেছেন। কিছু গুলি হয়তো প্রাণীগুলোর গায়েও লেগেছে!

হঠাৎ কী মনে করে যেন ক্যাপ্টেন মারুফ উঠে দাঁড়ালেন। তারপর অফিসার হাবিবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "উই গট অ্যা নিউ ব্যাড নিউজ।"

"হুয়াট, স্যার?" বলল অফিসার হাবিব।

মারুফ একটি মনিটরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, "সি।"

"এটা তো এই বিল্ডিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজ স্যার। লাইভ চলছে।"

"তা তো আমিও জানি। তুমি এখানে দ্যাখো, লিফটের কাছে।"

অফিসার হাবিব মনিটরের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে ফেটে পড়ল, "অদ্ভুত একটা প্রাণী এই বিল্ডিংয়ে চলে এসেছে, স্যার!"

"এক্সাক্টলি।"

কথা শুনে ক্যাপ্টেন আসিফও মনিটরে মনোযোগ দিলেন। হঠাৎ অন্য মনিটরে তাঁর চোখ পড়তেই তিনি বললেন, "একটা নয়, অনেকগুলো প্রাণী দেখা যাচ্ছে। এই দ্যাখো।"

আসিফের দেখানো মনিটরে চোখ রেখে আরো একবার আঁতকে উঠে হাবিব। ভরাট গলায় বলে, "স্যার, প্রাণীগুলো তো এদিকেই আসছে! লিফটে অনেকগুলোকে দেখা যাচ্ছে। সিঁড়ি বেয়ে আরো অসংখ্য প্রাণী ছুটে আসছে! এখন কী হবে স্যার?"

(চলবে)

মো. নাঈম

Address

Cumilla

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Paranormal Story posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Paranormal Story:

Share