30/06/2025
বেশকিছুদিন ধরে নতুন বাসাটার নিচের রুম থেকে কি বীভিৎস একটা কান্নার আওয়াজ আসছে।শুধু আমি নই আমরা যে তিনজন একসাথে আছি সবাই মাঝে মধ্যে এই আওয়াজ টা শুনি।যখনি একসাথে আলো নিয়ে দেখতে যায় কিছুই দেখতে পাই না।সবাই কে বুঝাতে চেষ্টা করি এইটা আমাদের মনের ভুল হয়ত।আমার অশরীরী, ভূত,প্রেআত্মা,এগুলোর ব্যাপারে কোন বিশ্বাস ই নেই।এগুলো হয় আমাদের মনের কল্পনা থেকে,,,,,।
তাই খুব বেশী একটা গুরুত্ব দিই নি।
ওও,,,আমাদের ব্যাপারে তো বলাই হয়নি।আমি- দীপ্ত ,আর আমার দুইজন রুমমেট একটা ব্যাচেলর বাসায় থাকতাম।তিনজনই অনেকটা সমবয়সী, তাই সবসময় অনেক মজা করতাম বাসায়।এমনি চলছিলো দিনকাল।হঠাৎ ই জমিদার কাছ থেকে শুনতে পাই যে আমাদের বাসাটা ছেড়ে দিতে হবে,উনি সম্ভবত নতুন বিল্ডিং বানাবেন।তাই অনুরোধ করলেন বাসাটা ১ মাসের মধ্যে ছাড়তে হবে।
যদিও বাসাটায় খুবই ভাল ছিলো, তারপর ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম।বেশ কিছুদিন ঘুরাঘুরির পর এই বাসাটা নিলাম। অনেক সুন্দর একটা বাসা।দোতলা বাড়ি।নিচের রুমটা খালি,আমরা দোতলায় বাসাটা নিয়েছিলাম।নিচের রুমটা সবসময় বন্ধ থাকতো। বাসার সামনে ছোট একটা উঠানের মতো,আর চারপাশে সব গাছপালা।একটা বড়ো বেলগাছের ঢাল আমাদের বেলকনি পর্যন্ত ছিলো।শো শো বাতাস,আর রজনীগন্ধা র সুভাস মুগ্ধ করে দিতো।পুরো বাড়িটি খুব নিজর্ন থাকতো,যেহেতু আমরা তিনজন বাদে বাকী কেউ ছিলো না।আগে নাকি বেশ কয়েকটি পরিবার এখানে থাকতো, এখন চলে গেছে কিছু সমস্যার কথা বলে।যে কোন পরিবার আসলে এখানে বেশী দিন থাকতো না।
তাই জমিদার ব্যাচলর ভাড়া দিচ্ছেন।ঝড়, তুফান গেলে হয়ত ব্যাচেলর দের উপর দিয়ে যাবে।
সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।তেমন কোন সমস্যা দেখিনি বাসাটা নেওয়ার পর।আমাদের সাথে ১ ম সমস্যাটা শুরু হয় ৩ য় দিন থেকে।আমরা তিনজনই ভার্সিটি তে পড়তাম আর তিন জনই টিউশনি করিয়ে বাসায় আসতে বেশ দেরি হতো।ওই দিন অবশ্য আমি ভার্সিটি যায় নি।তাই বিকেলের আগে আমি বাসা থেকে বের হলাম টিউশনি করার জন্য।১ ম সমস্যাটা ওইখানেই সৃষ্টি হয়।একজন খুব বয়ষ্ক মহিলা গেইটের সমনে দাড়িয়ে আছে,,,,,কাপড় গুলো খুব ময়লা।চেহারা টা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না একটা লম্বা ঘোমটা দিয়ে ঢাকা।মনে হলো হয়ত ভিক্ষা চাইছেন।পকেট থেকে ১০ টাকার একটি নোট দিলাম।উনি ওইটা আমার দিকে ছুড়ে মারলেন।
আর একটা কথা বলে হাঁটা শুরু করলেন।
- এইখান থেকে চলে যা,মরবি সব মরবি,এখানে কেনো আসলি,তাড়াতাড়ি চলে যা,
বেশ কয়েকবার বলে হাঁটাশুরু করলো,আমি আর পিছু নিলাম না।পাগল কিংবা রাস্তার এই সব মানুষের কথাবার্তা কিছুটা এবনরমাল এই টাইপের হয়।
চলে গেলাম টিউশনিতে।আসতে আসতে রাত প্রায় ৯ টা বেজে গেলো।
বাসার গেইটেই এসে কিছুটা অবাক হলাম,আমি যাওয়ার সময় বাইরের লাইট টা জ্বালিয়ে গিয়েছিলাম।ওইটা ভেঙে নিচে পড়ে আছে।
ইদানিং কিছু কিছু স্থানীয় ছেলেরা খুব বেপরোয়া হয়ে গেছে।নিশ্চয় ওরা ভেঙে দিয়ে গেছে।উফ এমনিতেই জমিদার বলছিলো সারারাত আলোটা জ্বালিয়ে রাখতে।তর উপর লাইটাই ভেঙে ফেললো।ভাবতে ভাবতেই মোবাইল আলো জ্বালিয়ে ঢুকা শুরু করলাম।
দোতলায় আলো জ্বলছে না।তারমানে এখনো কেউ আসে নি।যাক রান্নাটা আজকে আমাকেই করতে হবে।
নিচের তলায় কাছাকাছি এসে বুকটা ধুপ করে উঠলো,
এই বুড়ি তোকে এখানে ঢুকতে দিলো কে??
আর এখানে তালা মারা ছিলো,কিভাবে খুললি??
পুরো ঘরের সব দরজা জানালা খুলে রাখলি,গালিগালাজ করছিলাম।কারন আমি একটা জিনিসকে খুব ভয় পাই,,,,
পাগল।
বাতাসে সব দরজা জানালা গুলো হালকা হালকা দুলছে।আলো জ্বালিয়ে ধাক্কা দিয়ে পাগল টাকে বাহিরে দিয়ে আসলাম।কি আবোল তাবোল কথা বলেই যাচ্ছে।
- এই,ছাড়, এইটা আমার ঘর।আমি মেরে ফেলবো।আমি বলছি,তোরা এখান থেকে চলে যা,যা
ছাড় আমায়।
আমি- গেইটের ভিতরে আরেকবার দেখলে, খবর আছে,বলে দিলাম।
ফিরে এসে সব বন্ধ করে আমাদের রুমটাতে চলে আসলাম।কিছুটা ঘেমে গিয়েছিলাম।এত কষ্ট করে এসে এগুলার জ্বালায় হাফিয়ে উঠলাম।
খুব তাড়াহুড়া করে বাথরুমে ডুকলাম,যাতে রান্নাটা করে ফেলতে পারি।কিন্তু আসল লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে তখনি,,,,,,,
পানির ট্যাপ ছাড়তেই পানিগুলো লাল রঙের।পুরো রক্তের মতো।আগের বাসাটার পানিতে আয়রন ছিলো,পানি কিছুটা লালচে ছিলো তবে এই রকম না।জিনিসটা খুব বিচলিত করে তুলেছিলো।না বেশ কিছু সময় পর দেখছি পানি আগের মত স্বাভাবিক।বিষয়টা আমার কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলো।বাথরুম থেকে বের হয়ে রুমে চলে আসলাম।সারাদিনটািই আজকে অদ্ভুদ কিছু ঘটনা ঘটছে।যাই হোক একটু পরেই সিড়ি দিয়ে কেউ যেনো উঠার শব্দ পাচ্ছি। বের হওয়ার আগে,,,,,,, কয়েকবার ডাকলাম।
- কে??
দরজায় কে??
কিরে কে??
---- আমি।
- আমি কে??
((আর কোন শব্দ হচ্ছে না,আমার ঠাকুরমা বলতেন কেউ যদি একবার ডাকে তাহলে নাকি দরজা না খুলতে,অশরীরা নাকি একবার ডাকার পর আর কাউকে ডাকে না। ওই কথাটা তখনি মনে পরে গেলো।আর দরজার দিকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না))
আবার দরজায়,,,,,,, বাড়ি,,,,,
(( দৌড়ে গিয়ে খাটের নিচ থেকে লোহার রড টা নিয়ে দরজাটা খুললাম))
কিরে- দীপ্ত?? রড হাতে নিয়ে দরজা খুলতে হয়??
- না দোস্ত, প্রথমে, আমি! বলে আওয়াজ টা কি তুই দিছিলি??
- কোন আওয়াজ?? কখন??
- একটু আগে।
- আরে আমি এখন আসলাম,,,,,,,,,
- তাহলে
- কিরে,কোন সমস্যা হয়েছে??
- না দোস্ত।
(( আসলে আজকে বিকেল থেকে আমার সাথে কিছু একটা হচ্ছে দোস্ত, ঘটনাটা খুলে বললাম,,,,,মিঠু আর সৌরভ কে।দুইজনই অট্ট হাসিতে ফেটে পরে।))
ওইরাতে তেমন কিছুই আর হয়নি,,,,,,,,,,
ভয়াবহ দিনটা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো এর পরদিনের জন্য।
সেদিন ছিলো,,,,,,,,,,,,,,,,,,
শুক্রবার!!!!!!
চলবে।
আত্মা
#পর্ব_০১
লেখা_টগর।