23/12/2024
আজকের সমাজে হারাম সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনকেও ধ্বংস করছে। বিশেষ করে আমাদের তরুণ সমাজ, যারা জীবনের শুরুতেই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে, শয়তানের মায়াজালে আটকে যায়। প্রেম, ভালোবাসা এবং সম্পর্কের নামে হারাম পথ বেছে নেওয়া তাদের কাছে সহজ আর গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি, এইসব সম্পর্ক আমাদের জীবনে আসলে কী প্রভাব ফেলে?
হারাম সম্পর্কের ভয়াবহতা শুধু পাপের বেড়াজালে আটকে যাওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ধীরে ধীরে মানুষের অন্তরকে কঠিন করে তোলে, আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এমন সম্পর্কের পরিণামে একজন মানুষ তার পরিবার, তার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিক শান্তি হারিয়ে ফেলে। হারাম সম্পর্ক যতই মধুর মনে হোক না কেন, এর শেষ পরিণতি সবসময়ই তিক্ত। একদিকে আত্মসম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে হৃদয়ে অপরাধবোধের বোঝা চেপে বসে।
তরুণদের জন্য এটা এক ভয়াবহ ফাঁদ। জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে তারা এই পথ বেছে নেয়, কিন্তু বাস্তবে তা দ্বীনের পথে ফিরে আসার সবচেয়ে বড় বাধা। তারা জানে না, এই পথ তাদের অন্তরের প্রশান্তি কেড়ে নেয় এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। হারাম সম্পর্কের কারণে তাদের নামাজ, রোজা, ইবাদতসহ সব নেক আমলে বিরতি ঘটে। এমনকি অনেক সময় তারা হতাশা এবং ডিপ্রেশনের শিকার হয়, কারণ হারাম কখনোই অন্তরের প্রশান্তি আনতে পারে না।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের একটি প্রশ্ন করা উচিত—এই পথ কি আমাদের জন্য আসলেই কল্যাণকর? আমরা কি চিরস্থায়ী জীবনের সফলতা বিসর্জন দিয়ে সাময়িক আনন্দকে বেছে নিচ্ছি? আমাদের অন্তর কি আল্লাহর প্রেম ও দয়া পাওয়ার পরিবর্তে শয়তানের প্রলোভনে আটকে পড়েছে?
তরুণ সমাজকে সঠিক পথ দেখানো এবং হারাম সম্পর্কের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। আজই নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের এই ফাঁদ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আমাদের সেই পথে ডাকছেন, যা আমাদের অন্তর ও জীবনকে শান্তিতে ভরিয়ে তুলবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে আমাদের সতর্ক করে বলেন:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং অত্যন্ত খারাপ পথ।
(সূরা আল-ইসরা: ৩২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, শুধু ব্যভিচার করা নয়, এর কাছেও যাওয়া নিষিদ্ধ। কেন? কারণ এটি এমন একটি গুনাহ যা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, বরং তার পরিবার, সমাজ, এবং আখিরাতকেও ধ্বংস করে। হারাম সম্পর্ক এমন এক পথ, যা মানুষকে নৈতিকতা, আত্মসম্মান এবং আল্লাহর পথে চলার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে।
হারাম সম্পর্কের প্রধান কারণ হলো আল্লাহর ভয় এবং আখিরাতের চিন্তার অভাব। বর্তমান প্রজন্ম সহজলভ্য প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এবং অপসংস্কৃতির প্রভাবে সহজেই গুনাহের পথে পা বাড়াচ্ছে। “সবাই করছে, আমিও করব”—এই মানসিকতা আজকের তরুণদের বিভ্রান্ত করছে। শয়তান তাদেরকে প্রলুব্ধ করছে, আর আমরা ভাবতে শুরু করেছি যে, এতে কোনো ক্ষতি নেই।
অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) কত কঠোরভাবে আমাদের সতর্ক করেছেন তিনি বলেন:
لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ
ব্যভিচারকারী ব্যভিচার করার সময় প্রকৃত মুমিন থাকে না।
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৬৮১০; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ১১২)
এই হাদিস আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় এবং গভীরভাবে ভাবায়। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ব্যভিচার বা যে কোনো হারাম সম্পর্কের মধ্যে লিপ্ত থাকা অবস্থায় একজন ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন থাকে না। অর্থাৎ, এমন গুনাহ আমাদের ঈমানকে সরাসরি আঘাত করে এবং আল্লাহর নিকট থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়।
গুনাহ শুধু আমাদের দুনিয়ার জীবনকেই বিপর্যস্ত করে না, বরং আখিরাতের জীবনের ওপরও এর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। গুনাহর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি হারিয়ে ফেলি। আল্লাহর সন্তুষ্টি হারানো মানে আখিরাতে চিরস্থায়ী শান্তি এবং মুক্তি থেকে বঞ্চিত হওয়া। দুনিয়ায় কিছু ক্ষণিকের আনন্দের জন্য যদি আমরা গুনাহ করি, তবে আখিরাতে তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা কল্পনাও করা কঠিন। সেদিন, যখন কারও ধন-সম্পদ, বন্ধু-বান্ধব, কিংবা আত্মীয়স্বজন কাজে আসবে না, তখন একমাত্র আমাদের নেক আমলই আমাদের প্রকৃত বন্ধু হবে। আর যদি আমল নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আখিরাতে আমাদের জন্য কোনো সফলতার আশা থাকবে না।
এখানে আরও একটি বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী, যদি কেউ হারাম সম্পর্কে লিপ্ত থাকে এবং সেই অবস্থায় তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে প্রকৃত ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারবে না। হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা মানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার আদেশ লঙ্ঘন করা এবং শয়তানের প্ররোচনায় আত্মসমর্পণ করা। এমন একজন ব্যক্তি যদি তাওবা ছাড়াই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার জন্য আখিরাতের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারবো না।
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা আমার, আমরা কি এমন অবস্থায় থাকতে চাই, যেখানে আমাদের ঈমান হুমকির মুখে পড়ে? দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী আনন্দের জন্য চিরস্থায়ী জীবনের সফলতাকে বিসর্জন দেওয়ার কি কোনো যুক্তি আছে? এই হাদিস থেকে আমাদের স্পষ্ট শিক্ষা নেওয়া উচিত। হারাম সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো পথ নেই, যদি আমরা প্রকৃত মুমিন হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে চাই।
দোয়া করি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আমাদের হারাম সম্পর্ক এবং গুনাহ থেকে বাঁচার তাওফিক দিন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।
হারাম সম্পর্কের ধ্বংসাত্মক প্রভাব
১. আত্মিক ধ্বংস
হারাম সম্পর্ক সর্বপ্রথম মানুষের আত্মাকে দূষিত করে। যখন কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তখন তার অন্তর থেকে আল্লাহর ভয়, তাকওয়া এবং তাওয়াক্কুলের অনুভূতি কমে যেতে থাকে। ইবাদতের যে প্রশান্তি এবং তৃপ্তি অন্তরে সৃষ্টি হয়, তা হারিয়ে যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي
নিশ্চয়ই আত্মা মন্দের দিকে প্ররোচিত করে, যদি না আমার প্রভু দয়া করেন।
(সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)
হারাম সম্পর্কের কারণে অন্তরে যে অপবিত্রতা সৃষ্টি হয়, তা মানুষের আত্মিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে। মানুষ নিজেকে ইবাদতের জন্য অযোগ্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনুপযুক্ত বলে মনে করতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই গুনাহ অন্তরে একটি কালো দাগ ফেলে, যা একসময় বড় হয়ে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং আনুগত্যের অনুভূতিকে ম্লান করে দেয়।
২. পরিবার ও সমাজের উপর প্রভাব
হারাম সম্পর্ক কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই ক্ষতিকর নয়, বরং তা পরিবার এবং সমাজের ভিত্তিকেও দুর্বল করে দেয়। যখন কেউ হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তখন তার পরিবারে অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং অশান্তি সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বৈবাহিক জীবনে এর প্রভাব মারাত্মক। একজন ব্যক্তি যদি গোপনে হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তবে তা বৈবাহিক বন্ধনে অবিশ্বাসের বীজ বপন করে। এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় এবং একসময় তা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়।
হারাম সম্পর্কের কারণে সন্তানদের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। বাবা-মায়ের মধ্যে বিরোধ বা সম্পর্কের অবনতি সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তারা সঠিক দিশা এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে থাকে।
এছাড়া সমাজও এই গুনাহের বিষাক্ত প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। হারাম সম্পর্ক সমাজের নৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে। আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করার কারণে সমাজে বরকত কমে যায়, এবং শয়তানের প্রভাব বাড়তে থাকে।
৩. মানসিক অশান্তি
হারাম সম্পর্ক থেকে সাময়িক আনন্দ পাওয়া গেলেও, তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী সুখ বা প্রশান্তি আনতে পারে না। বরং এটি মানুষের অন্তরে গভীর অপরাধবোধ এবং শূন্যতা সৃষ্টি করে। এমন সম্পর্কের ফলে মনে হয়, কিছু সময়ের জন্য আনন্দ মিলেছে, কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে যে মানসিক অশান্তি তৈরি হয়, তা অসহনীয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا
যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, তার জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন।
(সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪)
হারাম সম্পর্ক মানুষের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। প্রথমে মনে হয়, এটি সুখের একটি উৎস, কিন্তু তা আসলে মিথ্যা সুখ। এর ফলস্বরূপ, মানুষ হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং আত্মসম্মানের অভাব অনুভব করতে থাকে। এই মানসিক শূন্যতা থেকে বের হয়ে আসা তখন তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
হারাম সম্পর্ক থেকে মুক্তির পথ
হারাম সম্পর্ক মানুষের জীবনে যেসব ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে, তা থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই আল্লাহর দেওয়া পবিত্র জীবনধারার দিকে ফিরে আসতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা শুধু আপনাকে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতার পথে নিয়ে যাবে না, বরং আপনাকে একজন ভালো মুসলিম এবং একজন সৎ ব্যক্তিতে পরিণত করবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য আপনাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারি, যা আপনাকে হারাম সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
১. আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত করুন
আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা মানুষকে যেকোনো গুনাহ থেকে দূরে রাখে। অন্তরে যদি আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং ভয় জন্মে, তাহলে কোনো গুনাহ আপনার কাছে সহজ বলে মনে হবে না। আল্লাহর ভয় জাগ্রত করার অন্যতম প্রধান উপায় হলো নিয়মিত নামাজ আদায় করা, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা এবং আল্লাহকে স্মরণ করা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।
(সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৪৫)
আপনার গুনাহের প্রকৃতি যাই হোক না কেন, আল্লাহর আদেশ এবং শাস্তির কথা স্মরণ করলে আপনার অন্তর আরও সচেতন হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী আনন্দের জন্য আল্লাহর অসন্তুষ্টি গ্রহণ করা মুমিনের কাজ নয়।
২. সৎ সঙ্গ নির্বাচন করুন
যে সঙ্গী বা বন্ধুরা আপনাকে আল্লাহর পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে, তারাই আপনার প্রকৃত সঙ্গী। আর যারা আপনাকে গুনাহের পথে উত্সাহিত করে, তাদের থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
একজন ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীনের উপর চলে, তাই তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই যেন দেখে কাকে সে বন্ধু বানাচ্ছে।
(আবু দাউদ, হাদিস নং: ৪৮৩৩)
হারাম সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে হলে, এমন মানুষদের সঙ্গ বেছে নিন, যারা আপনাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যাবে। আপনার জীবনকে আরও সুন্দর এবং অর্থবহ করে তুলতে সৎ এবং দ্বীনদার সঙ্গীর ভূমিকা অপরিহার্য।
৩. তওবা করুন এবং আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন
তওবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি মহৎ পথ। আপনি যত বড় গুনাহই করুন না কেন, আল্লাহর রহমত তার চেয়ে অনেক অনেক বড়। তওবার মাধ্যমে আল্লাহ আপনার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন।
তওবা করার অর্থ শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা নয়, বরং সেই গুনাহ থেকে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় সংকল্প করা। তওবার মাধ্যমে অন্তর পবিত্র হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
তাওবা নিয়ে বিস্তারিত স্বতন্ত্র একটি আলোচনা সামনে করব ইনশাআল্লাহ।
৪. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং শয়তানের ধোঁকাকে প্রত্যাখ্যান করুন
শয়তান মানুষের অন্তরে গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে হারাম সম্পর্কের ক্ষেত্রে, শয়তান মানুষকে প্রেম এবং ভালোবাসার নামে বিভ্রান্ত করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সত্যিকারের ভালোবাসা কেবল আল্লাহর জন্যই হতে পারে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সতর্ক করেছেন:
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا
নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তোমরা তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো।
(সূরা ফাতির, আয়াত: ৬)
আপনার ভালোবাসার উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি হয়, তবে তা কখনোই হারাম হতে পারে না। হারাম সম্পর্কের জন্য শয়তানের ধোঁকায় পা না দিয়ে, নিজেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করুন।
৫. নিজের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করুন এবং ভবিষ্যতের কথা ভাবুন
দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য নিজের আখিরাতকে নষ্ট করা কখনোই যুক্তিসঙ্গত নয়। আপনি যদি আপনার জীবনের মূল লক্ষ্য ঠিক করেন এবং জান্নাতের পথে নিজেকে পরিচালিত করেন, তবে হারাম সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা সহজ হবে।
হারাম সম্পর্ক আপনাকে দুনিয়াতে সাময়িক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু আখিরাতে তা আপনাকে চরম বিপদের মুখে ফেলবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেছেন:
يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ، إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ
সেদিন কোনো ধন-সম্পদ বা সন্তান-সন্ততি কাজে আসবে না, বরং সেই ব্যক্তি সফল হবে যে পবিত্র অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।
(সূরা আশ-শু'আরা, আয়াত: ৮৮-৮৯)
প্রিয় ভাই এবং বোনেরা আমার, আমাদের বুঝতে হবে, হারাম সম্পর্ক কখনোই প্রকৃত সুখ এনে দিতে পারে না। দুনিয়ার এই মোহময় ভালোবাসা চিরস্থায়ী নয়। প্রকৃত ভালোবাসা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। যদি আমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে আমাদের জীবন পরিচালনা করি, তবে আল্লাহ আমাদের অন্তরকে শান্তিতে পূর্ণ করবেন এবং আখিরাতে জান্নাতের পথে নিয়ে যাবেন বিইযনিল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হারাম সম্পর্কের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করুন এবং পবিত্র জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখা— Arif Ibn Hasan