24/05/2023
অনেকদিন থেকেই মনে হচ্ছে, আহা! যদি কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষক হতে পারতাম আর সেখানে শিক্ষক থাকা অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর হতে (১৯৯২-৯৩) অদ্যাবধি অসংখ্য প্রভাবশালী শিক্ষকের শেষবিদায় দেখেছি। কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রায় সবার জানাযা হয়েছে এবং কোনো জানাযাতেই উল্লেখ করার মতো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল না।
যারা ছিল, তাদের চোখেও প্রিয় হারানোর বেদনায় ঝরা অশ্রুধারা দেখিনি। কেন্দ্রীয় মসজিদে, জাতীয় ঈদগাহে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনেক বরেণ্য রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, সংগ্রামী, সমাজকর্মী, সংস্কৃতি কর্মী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকের শেষযাত্রাও দেখেছি।
আনুষ্ঠানিকতা ও সামাজিকতার দাবিতে এসেছেন অনেকেই, কিন্তু মৃতের রুহের মাগফিরাতে অশ্রুভেজা হাত উত্তোলিত হতে দেখেছি কমই। অনেক জানাযায় তো কাতারে দাঁড়ানো লোকদের মধ্যেও হাস্যরসে মেতে ওঠা ছবি গণমাধ্যমে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সাবেক বা বর্তমান শিক্ষকের মৃত্যুর খবরে সাবেক শিক্ষার্থীরা তো সেভাবেই আসেই না এমনকি ছাত্রাবাসে অবস্থানকারীরাও সবাই অংশগ্রহণ করে না। অথচ কেন্দ্রীয় মসজিদ হতে সবগুলো হল এক কিলোমিটারের মধ্যেই।
ঢাকায় একজন খ্যাতিমান শিক্ষক ও লেখক নিজের ফ্লাটে নিঃসঙ্গ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাও জানা গেছে কয়েকদিন পর। আরেকজন বরেণ্য শিক্ষক ও রাষ্ট্রপতির জানাযায় গুটিকতেক লোকই উপস্থিত হয়েছিলেন।
বিপরীতে কাওমী মাদ্রাসার ব্যাপার পুরোটাই ভিন্ন রকম। কোনো শিক্ষকের ইন্তিকালের খবরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাহাকার পরে যায়। মাইলের পর মাইল কষ্টকর ভ্রমণ শেষে শিক্ষার্থীরা জানাযায় হাজির হয়। তাঁদের চোখে অশ্রু, মুখে তাসবীহ, হৃদয়ে স্বজন হারানো প্রগাঢ় বেদনা।
এমনভাবে বিদায় নিতে বিরাট ভাগ্যের প্রয়োজন।
মাঝে মাঝে এমন ভাগ্যবান হতে প্রচণ্ড লোভ হয়।
আহা! আহা!
ছবি: সিলেটের মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী রহ.-এর জানাযায় আগত সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও স্বজনরা। ছবিটি ফেইসবুক হতে নেয়া।
লেখক: ইব্রাহিম খলিল
সহযোগী অধ্যাপক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।