07/06/2025
🌼 অংশ ও কলা কী? (Aṁśa o Kalā ki?)
“অংশ” এবং “কলা” — এই দুটি শব্দ ভগবানের অবতার সম্পর্কিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। এগুলো মূলত শ্রীমদ্ভাগবতম্-এ পাওয়া যায়, এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতারদের প্রকৃতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
🔹 অংশ (Aṁśa)
অর্থ:
“অংশ” শব্দের অর্থ হল “অংশিক প্রকাশ”। ভগবান যখন স্বয়ং তাঁর এক বা একাধিক শক্তি প্রকাশ করেন, তখন সেই প্রকাশকে ‘অংশ’ বলা হয়। এরা ভগবানের শক্তিসম্পন্ন হলেও সব শক্তির অধিকারী নন।
উদাহরণ:
মহাবিষ্ণু
গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু
ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু
বরাহদেব
পরশুরাম
নৃসিংহদেব
এরা সকলেই ভগবানের বিভিন্ন রূপ, যাঁরা বিশ্ব সৃষ্টি, সংহার ও রক্ষা করেন।
🔹 কলা (Kalā)
অর্থ:
“কলা” মানে “অংশেরও অংশ” — অর্থাৎ আরও ক্ষুদ্রতর প্রকাশ। এদের মধ্যে ভগবানের কিছু গুণ বা শক্তি থাকে, কিন্তু পূর্ণ শক্তি প্রকাশিত হয় না।
উদাহরণ:
ঋষভ
কপিল
বুদ্ধ
ব্যাসদেব
তাঁরা ভগবানের দেহধারী অবতার — বিশেষ উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে আগমন করেন।
🔸 শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা
শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ (১.৩.২৮)-এ বলা হয়েছে:
> "ete cāṁśa-kalāḥ puṁsaḥ
kṛṣṇas tu bhagavān svayam"
📖 অর্থ:
“এই সব অবতারগণ ভগবানের অংশ বা কলা; কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং পরম ভগবান।”
👉 এই শ্লোকটি গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের মূল ভিত্তি — যার মাধ্যমে প্রমাণ করা হয় যে শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান (Svayam Bhagavān) এবং অন্যান্য সব অবতার তাঁরই প্রকাশ।
🔸 অংশ ও কলা – পার্থক্য সূচক ছক
বিষয় অংশ (Aṁśa) কলা (Kalā)
প্রকাশের রূপ ভগবানের অংশিক শক্তির প্রকাশ ভগবানের অংশেরও অংশ
শক্তির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে পূর্ণ তুলনামূলকভাবে সীমিত
ঈশ্বরত্ব ঈশ্বরতুল্য ঈশ্বরের প্রতিনিধি
উদ্দেশ্য সৃষ্টির রক্ষা বা সংহার বিশেষ ধর্মীয় বা দার্শনিক শিক্ষা
উদাহরণ নারায়ণ, মহাবিষ্ণু, বরাহ বুদ্ধ, ঋষভ, কপিল, ব্যাস