Sajjad Hossain Vhuban

Sajjad Hossain Vhuban আসসালামু আলাইকুম ��
আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বদা সর্বোত্তম পরিকল্পনা। আল্লাহর স্মরণ অন্তরে শান্তি আনে।

02/11/2025
অর্থবিত্ত থাকা সত্ত্বেও আমি আমার একমাত্র ছেলেকে কখনো দশ টাকার বেশি টিফিন খরচ দিইনি। সে তার বন্ধুদের দেখিয়ে বলত, "বাবা দে...
18/07/2025

অর্থবিত্ত থাকা সত্ত্বেও আমি আমার একমাত্র ছেলেকে কখনো দশ টাকার বেশি টিফিন খরচ দিইনি। সে তার বন্ধুদের দেখিয়ে বলত, "বাবা দেখো, সুমন আজ ব্রাণ্ডেড ঘড়ি পরে এসেছে। বাবা দেখো, রাজুর স্কুল ব্যাগটা ইম্পোর্টেড। সুন্দর না বাবা!"

আমি চুপ করে থাকতাম। আমার ছেলের সাহস হয়নি কখনোই আমার কাছে ওই জিনিসগুলো চাওয়ার। একদিন ও খেলতে খেলতে পায়ে ব্যথা পেল। পরদিন স্কুলে যাওয়ার সময় আমাকে বলল, "বাবা, আমাকে তোমার সাথে অফিসের গাড়িতে করে স্কুলে নামিয়ে দেবে?"

আমি ওর অবস্থা দেখে বললাম, "ঠিক আছে।"

এরপর সপ্তাহখানেক ও আমার সাথেই গেল — আমার অফিসের গাড়িতে। আমি ওকে স্কুলের গেটে নামিয়ে দিতাম। এরপর থেকে ছেলের আর স্কুলে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে না! বাধ্য হয়ে আমি বলেই দিলাম, "অফিসিয়াল জিনিস ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। বাড়ি থেকে স্কুল দশ মিনিটের পথ। স্কুল টাইমের খানিকক্ষণ আগে বের হবে, তাহলে সময়মতো পৌঁছে যাবে।"

ছেলে আমার প্রচন্ড মন খারাপ করে বসে রইল। ছেলের মায়েরও মুখ গোমড়া। আমি এমন করি কেন? সবাই তো অফিসের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে। তাহলে আমার সমস্যা কোথায়?

সেদিন সন্ধ্যায় ছেলে বাড়িতে এসে বলল, "জানো, আমার বন্ধু শহরের সবচেয়ে সেরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আমিও.....।"

এর বেশি কিছু বলার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম, "বাবা, প্রতিষ্ঠান সেরা হয় নাকি ছাত্র? ধরো আমি তোমাকে সেই স্কুলে দিলাম, কিন্তু তুমি ফেল করলে। তাহলে আমি কি বলব, তুমি ফেল নাকি তোমার স্কুল?"

ছেলে বলল, "বুঝেছি বাবা!"

আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, "এই পর্যন্ত তোমার ক্লাসের কোনো ছেলেই তোমাকে টপকে যেতে পারেনি। বরাবর তুমিই ফার্স্ট হয়েছ। সুতরাং, তুমি যেখানে পড়বে, সেই স্কুলই শহরের সেরা স্কুল।"

এরপর সে আর কিছু বলেনি।

এক বিকেলে ছেলে বলল, "বাবা, আমার এক্সট্রা টিউটর দরকার। ম্যাথ আর ইংলিশে একটু সমস্যা হচ্ছে।"

জবাবে আমি বললাম, "রাতে যখন আমি বাড়িতে ফিরব, আমার কাছেই তুমি ম্যাথ আর ইংলিশ শিখবে।"

ছেলে বলল, "বাবা, তুমি অনেক পরিশ্রম করে বাড়িতে আসো, তাইনা?"

আমি হেসে বললাম, "বাবা, আমার এত সামর্থ্য নেই তোমাকে এক্সট্রা টিউটর দেওয়ার। আমি বরং একটু কষ্ট করি, কি বলো?"

ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "ঠিক আছে বাবা।"

আমার স্ত্রী রাতে ঘুমাতে গিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি এরকম দশটা টিউটর রাখতে পারো, তাহলে ছেলেকে ওই কথাগুলো বললে কেন?

আমি বললাম, "আমি চাই আমার সন্তান বুঝুক আরাম করে কিছু পাওয়া যায় না। মানুষের জীবনে অভাব আসলে তা কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় সেটা শিখুক।"

আমার স্ত্রী চুপ হয়ে গেল।

মাঝে মাঝে আমার ছেলেকে নিয়ে আমি ফুটপাতে হাঁটি। পথশিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সম্পর্কে ধারণা দিই। সে জানুক, পৃথিবী শুধু চিন্তায় সুন্দর, বাস্তবে খুব কঠিন! চাওয়া মাত্রই কিছু তাকে আমি কখনও দেই না। একদিন সে বলেছিল, "বাবা, তুমি এরকম কেন?" আমি জবাব দিয়েছিলাম, "সময় হলে বুঝবে!"

একবার সে বায়না ধরল ইলিশ মাছ খাবে। আমি বললাম, "টাকা তো কম! তোমার কাছে কিছু আছে? থাকলে ইলিশ আনা যাবে।"

ছেলে আমার হাতে পঞ্চাশটা দশ টাকার নোট বের করে দিল। আমি অবাক হয়ে বললাম, "তুমি খরচ করনি!" সে মুচকি হেসে বলল, "না বাবা! জমিয়েছি। আমার এক বন্ধু মাঝে মাঝে স্কুলে না খেয়ে আসে। আসলে ও খুব অসহায়। আমি ওকে ক্ষুধার্ত দেখলেই বুঝতে পারি। তখন ওকে সাথে নিয়ে খাই। অন্যান্য দিন সব টাকা খরচ করি না, জমিয়ে রাখি, কারণ বাড়ি থেকে তোমরা যা দাও তা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। কিছু মানুষ তো সামান্যটুকুও পায় না!"

আমি ছেলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সেই জমানো টাকা দিয়ে সেদিন বাজার থেকে ইলিশ এনে ছেলেকে খাওয়ালাম। এভাবে ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে ছেলেকে অভাব অনুভব করাতাম, যাতে সে বোঝে জীবনটা কঠিন, অনেক কঠিন।

একবার মার্কেটে গিয়ে তাকে বললাম সাধ্যের মধ্যে কিনতে। সে একটা প্যান্ট নিল শুধু। আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করলে বলল, "তোমার জন্য পাঞ্জাবি আর মায়ের জন্য শাড়ি নাও।"

আমি হাসলাম।

সে বুঝতে শিখেছে টাকা কিভাবে খরচ করতে হয়। একদিন সন্ধ্যায় আমি চা খাচ্ছিলাম। ও বলল, "বাবা, সায়নটা আর মানুষ হলো না! অথচ আংকেল ওর জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। যখন যা চেয়েছে, তাই পেয়েছে।" আমি ছেলেকে বললাম, "আমি তো তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি!" ছেলে আমার কোলে মাথা রেখে বলল, "প্রতিটা চাহিদা পূরণ না করে তুমি শিখিয়েছ অভাবে যেন স্বভাব নষ্ট না হয়। তুমি জীবনে যে শিক্ষা দিয়েছ, তা সবকিছুর উর্ধ্বে। তুমি শিখিয়েছ, অভাবকে কিভাবে ভালবাসতে হয়। আমি এখন জানি, আমার বাবার আমি ছাড়া আর কিছু নেই। বাকিটা আমাকে গড়ে নিতে হবে। আমি সাধারণ জামাকাপড়েও হীনমন্যতায় ভুগি না। কারণ আমি জানি আমি কে! তোমার দেওয়া শিক্ষা আমি সারাজীবন ধরে রাখব বাবা। চাওয়া মাত্রই পেয়ে গেলে আমি কখনো জানতামই না পঞ্চাশ দিন না খেয়ে টিফিনের টাকা জমালে পাঁচশো টাকা হয়। তুমি ছিলে বলেই সবকিছু সম্ভব হয়েছে। আমি মানুষকে মানুষের চোখে দেখি। আমি বুঝি জীবন কত কঠিন!"

আমার স্ত্রী এখন নিজে থেকেই অনেক খুশি। সে বুঝতে পেরেছে আমার উদ্দেশ্যটা। ছেলে নিজের রোজগারে প্রাইভেট কার কিনে আমাকে হাসতে হাসতে বলল, "দুই বছর ধরে টাকা জমিয়ে কিনেছি এটা!" তখন বুঝেছিলাম ছেলে আমার সঞ্চয়ী হয়েছে। আমার শিক্ষা বৃথা যায়নি।

সেদিন যাবতীয় সম্পত্তি ওকে বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, "সামলে রেখো।" ছেলে দলিলগুলো আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, "তোমরা সাথে থেকো, আর কিছু লাগবে না।"

ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ছেলের মাকে বললাম, "দেখেছ, আমি ভুল করিনি। আমি আমার সন্তানকে মানুষ করতে গিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাটাই দিয়েছি — যেমনটা আমার বাবা আমাকে দিয়েছিলেন। আমি ওকে অভাবে লজ্জিত হওয়া নয়, বরং দৃঢ় থাকতে শিখিয়েছি। ওকে আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছি, কারো উপর নির্ভর না করে চলতে শিখিয়েছি। ছেলে আমার মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে!"
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

Celebrating my 1st year on Facebook. Thank you for your continuing support. I could never have made it without you. 🙏🤗🎉
31/12/2024

Celebrating my 1st year on Facebook. Thank you for your continuing support. I could never have made it without you. 🙏🤗🎉

Address

Shaidisori
Cumilla
1340

Telephone

+8801519604581

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sajjad Hossain Vhuban posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share