19/02/2025
মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষা: মানসিক দাসত্বের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
#সংক্ষেপে_হেযবুত_তওহীদ ২৫
রসুলের হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদী একদেহ এক প্রাণ হয়ে সংগ্রাম করে অর্ধ পৃথিবীতে এক সোনালি সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু ইতিহাসের একটা পর্যায়ে যখন তারা দীন প্রতিষ্ঠান সংগ্রাম ত্যাগ করল এবং দীনের খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল তখন তারা হাজারো ফেরকা-মাজহাবে বিভক্ত হয়ে পড়ল। তখন শত্রুরা সহজেই মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে সামরিক শক্তিবলে দখল করে নিল এবং তাদেরকে পদানত করে রাখার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করল। এরই অংশ হিসাবে তারা দুই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করল - সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা। এই দুটো শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে দুই ধরনের মনোভাব শিক্ষা দেওয়া হল যার ফলে আমাদের শিক্ষিত সমাজ আদর্শিক ও মানসিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেল।
প্রথমেই লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সনে কলকাতায় আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলেন। সেখানে নিজেদের মনগড়া একটি বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইসলামবিদ্বেষী খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা অনেক গবেষণা একটি সিলেবাস তৈরি করল। এখান থেকে তারা ইসলামের জাতীয় জীবনের সকল কিছু বাদ দিয়ে দিল, কারণ জাতীয় রাষ্ট্রীয় জীবন তো চলবে ব্রিটিশের আইন দিয়ে। তওহীদের অর্থ ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহকে একমাত্র হুকুমদাতার পরিবর্তে একমাত্র উপাস্য/মাবুদ হিসাবে মানার শিক্ষা দিল। দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদকেও সিলেবাস থেকে বাদ দিল। শুধু ব্যক্তিগত আমলের খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েল, ফতোয়া, দোয়া-কালাম, মিলাদের নাত, বিশেষ করে বিভিন্ন মতবিরোধপূর্ণ বিষয় সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হল যেন সেগুলো নিয়ে মুসলিমরা তর্ক, বাহাস, মারামারিতে লিপ্ত থাকে।
একে একে ২৬ জন খ্রিষ্টান পণ্ডিত সেখানে অধ্যক্ষপদে থেকে ১৪৬ বছর ধরে মুসলিম জাতিকে সেই বিকৃত ইসলামটি শিখিয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য কী ছিল তা নিয়ে আলিয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইয়াকুব শরীফ লিখেছেন, “মুসলমানরা ছিল বীরের জাতি, ইংরেজ বেনিয়ারা ছলে-বলে-কৌশলে তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্র¶মতা কেড়ে নিয়ে তাদের প্রচলিত ধর্ম, শিক্ষা ও মর্যাদা হরণ করার জন্য পদে পদে যেসব ষড়যন্ত্র আরোপ করেছিল, আলিয়া মাদ্রাসা তারই একটি ফসল।” [দেখুন- আলীয়া মাদ্রাসার ইতিহাস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ]।
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসে অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি কর্মমুখী (Vocational) কোনো কিছুই রাখা হল না। ফলে মাদ্রাসাশিক্ষিতরা এক প্রকার বাধ্য হলেন নামাজের ইমামতি, ওয়াজ, মিলাদ, কোর’আন খতম, বিয়ে ও জানাজা পড়ানো ইত্যাদি কাজ করাকে জীবিকার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করতে। অথচ দীনের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। জীবিকার স্বার্থে এই মহাসত্যকে তারা গোপন করে খ্রিষ্টানদের তৈরি ঐ বিকৃত বিপরীতমুখী ইসলামটাই প্রচার করে সমগ্র মুসলিম জাতির মধ্যে গেড়ে দিলেন। আলেমদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে এত যে দ্বন্দ্ব তার কারণ মাদ্রাসার সিলেবাসের মধ্যেই নিহিত।
মাদ্রাসার পাশাপাশি ইংরেজ শাসকদের দাপ্তরিক কাজে সহযোগিতা করার জন্য ব্রিটিশরা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করল। সেখানে দীন সম্পর্কে প্রায় কিছুই শিক্ষা দেওয়া হল না। বরং সুদভিত্তিক অংক, ব্রিটিশ রাজা-রানির ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, গণিত, পাশ্চাত্যের ধর্মহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা, পাশ্চাত্য বস্তুবাদী দর্শন ইত্যাদি শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম সম্পর্কে, বিশেষ করে ইসলাম সম্পর্কে একটা বিদ্বেষভাব (A hostile attitude) শিক্ষার্থীদের মনে প্রবেশ করানো হল। এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দুনিয়ামুখী, বস্তুবাদী একটি শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে উঠল যাদের হাতে দেশ চালনার দায়িত্ব দিয়ে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে গেল।
সেই কেরানি তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা আজও চলছে এবং সেখান থেকে লক্ষ লক্ষ কথিত আধুনিক ও শিক্ষিত লোক বের হচ্ছেন যাদের দু চারজন বাদে সকলেই চরম আত্মকেন্দ্রিক, যারা নিজেদের বৈষয়িক উন্নতি ছাড়া আর কিছু ভাবেন না। এদের অধিকাংশই ধর্মকে মনে করেন সেকেলে ধ্যানধারণা ও পৌরাণিক কল্পকাহিনী। এ যুগে ধর্ম অচল। তাদেরকে শেখানো হল আধুনিক সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পশ্চিমাদের উদ্ভাবন। কিন্তু এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত্তি যে মুসলিমরাই নির্মাণ করেছিল সেটা তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হল না। এদের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় বা আল্লাহর হুকুমের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকায় এরা সরকারি দায়িত্ব পেয়ে সীমাহীন দুর্নীতি, ঘুষ, অর্থ পাচার ইত্যাদি অপরাধে লিপ্ত হতে কোনো প্রকার বিবেকের দংশন অনুভব করেন না।
এই দুইপ্রকার শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষিতজনেরা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। মাদ্রাসা শিক্ষিতরা মনে করছেন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরা জাহান্নামে যাবে আর সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরা তাদেরকে কাঠমোল্লা, দুনিয়া সম্পর্কে বেখবর, অজ্ঞ বলে চরম অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেন। একই জাতির মধ্যে এই যে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব - এর মূল কারণ এই ষড়যন্ত্রমূলক জাতিবিনাশী শিক্ষাব্যবস্থা। এটি দূর করার জন্য আমাদেরকে অত্যন্ত কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটা হচ্ছে ঔপনিবেশিক যুগে প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে নিজেদের জাতির লক্ষ্য মোতাবেক একটি একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে, যে শিক্ষা মানুষকে একদিকে বস্তুগত শিক্ষায় সমৃদ্ধ করবে অন্যদিকে তাদেরকে নৈতিকভাবে চরিত্রবান, ন্যায়নিষ্ঠ, মানবিক, সত্যবাদী মো’মেন হিসাবে গড়ে তুলবে।
এ লক্ষ্যে আমরা হেযবুত তওহীদ ইতোমধ্যে নোয়াখালীতে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি যা সমগ্র জেলায় সকল বিষয়ে সুনাম সুখ্যাতি ও কৃতিত্ব অর্জন করেছে।