13/10/2025
ছেলেরা বিদেশে যায় বা দেশেই প্রচুর টাকা আর্ন করতে চায়। একটা বিশেষ কারণে তা হল তার মাকে রাণী করা এবং বাবাকে সমাজের লোকদের কাছে আরও সম্মানিত করা।” — মোশাররফ করিম
এই কথাটি মূলত একটি সাধারণ কিন্তু গভীর সামাজিক মনস্তত্ত্বকে ছুঁয়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে পরিবারকেন্দ্রিক মূল্যবোধ প্রবল, সেখানে এই চিন্তাভাবনা বাস্তবে ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়।
---
১. প্রবাসে যাওয়া ও অর্থ উপার্জনের সামাজিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শ্রম ও পেশাগত কারণে অভিবাসন করে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নতি ও পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন। বিদেশে গিয়ে উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে পরিবারের জন্য ঘর তৈরি, ব্যবসা শুরু, শিক্ষার ব্যয় বহন—এসবের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা অর্জন করা অনেকের লক্ষ্য।
এখানে “মাকে রাণী করা” বলতে বোঝানো হয়েছে পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও যত্নের প্রতীকী প্রকাশ, আর “বাবাকে সমাজে সম্মানিত করা” বলতে বোঝানো হয়েছে সমাজে পরিবারের অবস্থান উঁচুতে তোলা।
---
২. সামাজিক সম্মান ও আত্মমর্যাদার সংযোগ
বাংলাদেশে সামাজিক কাঠামো এখনও অনেকটাই পারিবারিক মর্যাদাভিত্তিক। কেউ যদি বিদেশে গিয়ে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারে, তবে তার পরিবার সমাজে “সম্মানিত” পরিবার হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছেও পরিবারের অবস্থান পরিবর্তিত হয়। এই সম্মান অর্জনের সামাজিক চাপ ও অনুপ্রেরণাই অনেক তরুণকে প্রবাস বা উচ্চ আয়ের পথে ঠেলে দেয়।
---
৩. অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে আবেগের সংমিশ্রণ
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে—এই আকাঙ্ক্ষা শুধুই অর্থনৈতিক নয়, গভীর আবেগের সঙ্গে যুক্ত। অনেক তরুণের কাছে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানোই সাফল্যের প্রকৃত মাপকাঠি। অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে তারা শুধু আর্থিক নিরাপত্তাই নয়, সামাজিক মর্যাদা ও আত্মতৃপ্তিও অর্জন করতে চায়।
---
⚖️ ৪. সমালোচনামূলক দিক
তবে, এই মানসিকতা কিছু সময় বাস্তবিক চাপও সৃষ্টি করে। সমাজের “সম্মান” পাওয়ার জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা, অস্থিরতা ও মানসিক চাপ দেখা যায়। অনেক সময় তরুণরা নিজেদের প্যাশন বা পেশাগত আগ্রহ বাদ দিয়ে কেবল সামাজিক মর্যাদার জন্য পেশা বা প্রবাস বেছে নেয়। এতে হতাশা বা মানসিক ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
--